নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বাংলাদেশী উদ্বাস্তু শিক্ষকের মানপত্র

০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:০২

বিদায়ী শিক্ষক শ্রী শান্তি রঞ্জন পান্ডে’র সৌজন্যে
স্মারকলিপি
স্বাধীনোত্তর পূর্ব-বাংলা। স্বর্গীয় নিশিকান্ত পান্ডে ও স্বর্গতা ললিতা পান্ডে তাঁদের ছোট্ট শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধ’রে,খুলনা জেলার বড়-গাঁওলা গ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন শুধু একটু নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। বিদায়মুহুর্তে পিছুডাক: ‘হিজল গাছের ফুল টুপ্ টুপ্ ক’রে তখনও পড়ছে জলের ওপর—বলছে কোথায় যাবে? একটু দূরেই মাঠে কালো মেঘের মতো ধান হয়েছে—লক্ষ্মীবিলাস ধান। তারও এক প্রশ্ন—যাবে কোথায়? আরও দূরে ছলছলাৎ পাগলি নদীর ঢেউ, তার ওপর চলেছে পাল তোলা ডিঙি, ময়ূরপঙ্খী। বলছে—আমাদের ফেলে কোথায় যাবে? আমরা কি শুধু তোমার গতজন্মের বন্ধু? এ জন্মের কেউ নই? স্বজন নই?’’...অশ্রুসজল চোখে বার বার পিছু ফিরে দেখতে দেখতে, স্বদেশের শেষ সীমানা পেরিয়ে পৌঁছলেন আর এক বাংলায়— শরণার্থী শিবির ধাত্রি-গ্রাম। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ডাক এল দ্বীপান্তরে স্বেচ্ছা-নির্বাসনের। দুস্তর পারাবার ‘কালাপানি’র পথে যাত্রা। ১৯৫৯-এর এক স্বর্ণালি সকাল বয়ে নিয়ে এল নতুন বার্তা— পুনর্বাসন। নতুন দেশের নতুন ঠিকানা কৃষ্ণপুর, উত্তর আন্দামান। সময়ের ডাকে সেদিনের সেই শিশুকে গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার পর, দুর্গম পথ পেরিয়ে উচ্চ-শিক্ষালাভের জন্য যেতে হ’ল ডিগলিপুর। বাংলা মাধ্যমে তখন পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক না থাকার জন্য, সেই শিশু-কিশোরের কন্ঠে উচ্চারিত হ’ল ছাত্র-আন্দোলনের ভাষা। প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছাত্র, ১৯৭৫-এ স্কুল-গন্ডি পেরিয়ে মুখ্যভূমির হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজে প্রবেশাধিকারলাভ করলো। সেখানেও প্রতিধ্বণিত হ’ল কলেজ কর্তৃপক্ষের অন্যায় আচরণের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ। অমানবিক দমন-পীড়ন দুর্নীতি প্রয়োগে ছাত্র-সংগঠন ভেঙে যাওয়ায়, অভিমানী বিদ্রোহী-কিশোরকে ফিরে আসতে হ’ল সবুজ দ্বীপের ঠিকানায়। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০— জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং-এর পর ১৯৮০’র ১৮ই অগাস্ট, প্রথম শিক্ষকতার দায়িত্বগ্রহণ করতে হ’ল, সরকারি জুনিয়র বেসিক স্কুল কৃষ্ণপুর, উত্তর আন্দামানে। আজ তাঁর সাম্মানিক পরিচয়— শিক্ষক শ্রী শান্তি রঞ্জন পান্ডে।
হে সত্যান্বেষী,
সহকর্মীদের স্বাধিকার-অর্জন প্রয়াসে যোগ দিতে হয়েছিল, ‘সরকারি কর্মচারী সংগঠন’-এ। সৃজনাত্মক ফরিয়াদী ভাষার প্রতিক্রিয়ায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের উপহার ছিল ‘দুর্গম বনাঞ্চলে মূহুর্মূহুঃ স্থানান্তর’। তবুও সাংস্কৃতিক চেতনায়, সত্য-প্রতিষ্ঠায় অবিচল, ব্যক্তিজীবনে যাত্রাপালায় সার্থক অভিনয়—সমাজ-জীবনে তার পরিলক্ষিত প্রতিফলন ছিল এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
হে কর্মবীর,
সংঘর্ষময় কর্মজীবনে একদিন শোনা গেল সাফল্যের জয়ধ্বণি। ২০০৮-এর ১১ জুলাই স্বাগত জানালো শহিদ-স্বরাজ দ্বীপের রাজধানী পোর্টব্লেয়ারস্থিত সরকারি রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়। ‘চলতে ওরা চায় না মাটির ছেলে / মাটির পরে চরণ ফেলে ফেলে / আছে অচল আসনখানা মেলে / যে যার আপন উচ্চ বাঁশের মাচায় / আয় অশান্ত আয় রে আমার কাঁচা।।‌’
হে বিজয়ী,
গোধুলির শেষ আলোকরেখার পথ ধ’রে এবার ঘরে ফেরার পালা।‘যাবার বেলায়, শেষ কথাটি যাও ব’লে / কোনখানে যে মন লুকানো দাও ব’লে।’ এখানে মুক্ত বাতায়নে আলো-ছায়ার খেলা অবিরাম, পাহাড়ি-বনবীথিকার শ্যামল মায়ায় গড়া রাবীন্দ্রীক ভাবনার এ প্রাণকেন্দ্র থাকবে অনন্তকাল— আর অবিস্মরণীয় ইতিহাস হয়ে থাকবে, এ পান্থ-নিকেতনে আগত সত্যান্বেষী-কর্মবীর-বিজয়ীদের বিজয়গাথা।
সুজনেষু,
দুঃখ-সুখের পালাবদলের খেলা অপ্রতিরোধ্য। তাই আজ এই শুভ বিদায়ের দিনে, বিষন্নতার অশ্রু-বরিষণ নয়—কবিগুরুর আশীর্বাণী পড়ুক ঝ’রে! জয় হোক জীবনের— জয় হোক সত্য ও সুন্দরের!!

শুভেচ্ছান্তে ইতি:-
রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয় পরিবার,
সরকারি রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়,
পোর্টব্লেয়ার,দ: আন্দামান।
তারিখ: ৩১-০৩-২০১৬

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:১০

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ ও প্রত্যাশা আমার এ লেখাটি প্রথম পাতায় প্রকাশ করবেন, পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য !

২| ১২ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪০

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ পোস্ট, অন্তত আমার জন্য। শিক্ষক শ্রী শান্তি রঞ্জন পান্ডের জীবনকাহিনী অত্যন্ত অনুপ্রেরণার। দেখা হলে ওনাকে আমার সহস্র প্রণাম জানাবেন।

আমি কোনো জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করিনা, একটি মানুষজাতিতেই বিশ্বাসী। তবুও আন্দামানের গভীর জঙ্গলে বাঙালীর এমন পদচারণা আমাকে কেমন জানি অভিভূত করলো। এটি একেবারেই জানা ছিল না। আপনার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখে আসতে ইচ্ছে করছে সেই ভয়ঙ্কর দ্বীপান্তরের দেশেও আমার প্রাণের মানুষেরা, প্রতিবেশীরা জীবনের তাগিদে কেমন করে সংগ্রাম করছে, বেঁচে আছে, এখনও বাংলা ভাষায় কথা বলে চলেছে।

আমার সামান্য পরিচয় দিয়ে রাখি। আমার নিকের ছবিটি একজন নারীর, ওটি আমার ভালবাসা লাঞ্ছিত বাংলাদেশের প্রতিক। আমি একজন পুরুষ। তবে বিশদ পরিচয় দিতে পারব না। কারণ, আমাদের দেশটিতে বর্তমানে মতামত প্রকাশ এবং নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, বিশেষ করে আমার মতো যারা প্রতিবাদী লেখা লেখে তাদের জন্য একেবারেই নেই। তাই পরিচয় গোপন করে চলতে হয়।

সর্বাঙ্গীন কুশল কামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.