নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির পথ ধ\'রে আন্দামানে (পঞ্চম পর্ব)

১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:২০



স্মৃতির পথ ধ’রে আন্দামানে (৫ম পর্ব)
ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে গ’ড়ে ওঠে কোনো জাতির সাহিত্য-সম্পদ।ভারতীয় সংস্কৃতি যে এক মিশ্র সংস্কৃতির সমন্বয় তা’আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই!ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলে যেমন ভিতর থেকে বাইরের কিছু দেখা যায়না,তেমনি মনের ফটক বন্ধ রাখলে মন বাইরে যেতে পারেনা;বাহিরকে সে জানতে পারেনা।তখন রবি-র(রবীন্দ্রনাথের) ‘ডাকঘর’-এ অসুস্থ অমলের মতো দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসে: “কবিরাজ আমাকে বেরোতে বারণ করেছে,তাই আমি সারাদিন এখানে বসে থাকি”।ভারতবর্ষের পূর্ব-পশ্চিম ফটক বন্ধ হওয়ায়,সত্যিই সেই দীর্ঘশ্বাসের আভাস পাই; নিরাশা ও দুশ্চিন্তার বোঝা মাথায় চেপে বসে!এই নিরাশা নিরসনের,নিরপেক্ষ উপায় অনুসন্ধানের আন্তরিক ইচ্ছা বা তাগিদ থাকা প্রয়োজন।আর সেটার-ই বড় অভাব।সাহিত্য-ইতিহাসের দু’চার পাতা খুঁজে সেই সত্যটার কাছে পৌঁছনো যায়না।এই কাজে সত্যানুরাগী হয়ে যোগ দেওয়ার মতো আমাদের মানসিক প্রস্তুতি নেই!কেন থাকবে?সত্য ও সুন্দরকে স্বীকার করতে যে আমরা বড় কষ্ট পাই! রইসউদ্দিনের মেয়ের নাম যদি পাখি হয়,ড: মহম্মদ আলির সহধর্মিনী যদি নমিতা ভট্টাচার্য্য হয়,কাজী নজরুল ইসলামের ছেলেরা যদি বুলবুল,সব্যসাচী,অনিরুদ্ধ নামে পরিচিত হয়,বড় বেমানান!এদের কি বাঙালি বলা যায়?বিবেকানন্দ নীতি মেনে চলবেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ;কিন্তু ইসলাম বা খৃস্টীয় আদর্শে বিবেকানন্দ-স্বীকৃতি থাকলে, তা’ মানানসই নয়!...আমাদের জেনে রাখা দরকার---মানবিক নীতিজ্ঞানের শিখা সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকার গুহায় প্রবেশ করেনা;আপস/সন্ধি/সমঝোতা করেনা ধর্মীয় গোঁড়ামির সাথে।সত্যিই অবাক হতে হয়,এদেশের মানুষের কাছে এখনও হিন্দু,মুসলিম বা খৃস্টান পরিচয় দেওয়াটা বাধ্যতামূলক!শুধু মানুষ পরিচয় দিয়ে বাস করা-ই যেন অপরাধ!তাই রাম ও রহিম নামে এত পার্থক্য!!
আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দলের অভাব নেই।সাম্প্রতিক কোনো এক দলের মহানায়ক তাঁর শীর্ষ বক্তব্যে মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় রামধুন-এর উল্লেখ ক’রে বললেন: “রঘুপতি রাঘব রাজারাম/পতিত পাবন সীতারাম—জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর এই সত্য উপলব্ধি ছিল,উদ্দেশ্যও ছিল ভারতকে রামরাজত্বে পরিণত করা। তাই আমরা দৈনন্দিন সকল কর্মে আমরা যেন রাম নাম উচ্চারণ ক’রে যেন প্রকৃত হিন্দুত্ব-র পথে চলতে পারি। জয় শ্রীরাম!জয় শ্রীরাম!!”
এই সংবেদনশীল বক্তব্য-র পরিপ্রেক্ষিতে আমার শুধু একটা সহজ কথা বলার আছে:- রামধুনের পরবর্তী পংক্তি দুটোও হৃদয়ঙ্গম করা উচিত; তা’ না হলে সত্যকে উপেক্ষা করা হয়,মানবিকতার চরম অবমাননা ঘটে!প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়াসনে পূজিত পংক্তিদ্বয় নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখেনা:“ঈশ্বর,আল্লাহ,তেরো নাম/সবকো সন্মতি দে ভগবান!”...এখানে সন্+মতি=সন্মতি কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সন্ মতি অর্থাৎ সৎ মতি/সৎ ইচ্ছা(সদিচ্ছা)।গান্ধীজী শুধু রামের কথা বলেননি,রহিমকেও সমান গুরুত্ব দিতে বলেছেন।তাই তিনি সদ্বুদ্ধির আশাও করেছেন;প্রার্থনা জানিয়েছেন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল ভারতবাসীর জন্য!
যে দেশ ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিধাবিভক্ত/ত্রিধাবিভক্ত হয়,সে দেশের মানুষ সগৌরবে গৌরবান্বিত হতে পারেনা।তবুও সেই দুর্ভাগ্যপূর্ণ কলঙ্করেখাকে মেনে নিতে হ’ল।কিন্তু অখন্ড বঙ্গভূমি দ্বিখন্ডিত হ’ল কেন?আর দ্বিধাবিভক্ত-ই যদি হ’ল--- বাঙালি ভেবে,স্বজন ভেবে একভাষী ভেবে আমরা একসাথে মিলতে পারিনা কেন?অনায়াসেই তো আমরা নেপাল,ভূটান যেতে পারি;কিন্তু পূর্ববঙ্গে(বাংলাদেশে)নয় কেন?ধর্মরূপী ভারতীয়তার কালসাপ যে আমাদের ছাড়ছেনা।এই নির্মম সত্যটা জেনেও জানিনা,বুঝেও বুঝিনা।কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথায় বলতে হয়:“আমরা যা’ ভাবি তা’ বলিনা,যা’ বলি তা’ করিনা, যা’করি তার স্বীকার পাইনা!আত্মার এরূপ দুর্গতি থাকতে সমাজগাত্রের অসংখ্য ছিদ্রপথ ভগবান স্বয়ং এসেও রূদ্ধ করতে পারবেননা”।
পশ্চিমবাংলার মানুষ শুধু শারীরিকভাবে ঘরকুনো নয়,মানসিকভাবেও।ক’জন সাহিত্য-প্রেমিক,সাহিত্যসেবী বাংলাদেশের সাহিত্য পাঠ করেন?নাকি বাংলাদেশে সচেতন লেখকের বই নেই?বাংলার বলিষ্ঠ লেখক প্রবীর ঘোষের কন্ঠে শোনা যাক মুক্তির আহ্বান:-“এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ওপার বাংলার লেখকদের কোনো বাজার গ’ড়ে ওঠেনি।গ’ড়ে না ওঠার কারণ পশ্চিমবঙ্গের ‘কুয়োর ব্যাঙ’ মার্কা মানসিকতার ‘আঁতেল’ ও ‘পড়ুয়ারা’।এঁরাই সংখ্যায় বেশি।এঁরা না পড়েই ওপার বাংলার লেখকদের নামে নাক সিঁটকোন।তাই যে হুমায়ুন আহমেদের বই বাংলাদেশে ৪০,০০০ ইম্প্রেশন দেওয়া হয়,সেই হুমায়ুন আহমেদের আটখানা উপন্যাস বের ক’রে কলকাতার প্রকাশক মুখ থুবড়ে পড়েন”।তসলিমা নাসরিনের জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন:-“মধ্যবিত্ত বাঙালি হুজুগে চরিত্রের কথা মাথায় রেখে সর্ববৃহৎ পত্রিকাগোষ্ঠী বিশাল প্রচারে তসলিমাকে যেভাবে তুলে এনেছেন,সেটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা।তারই সঙ্গে বাবরী মসজিদ্ ভাঙা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে,হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় উত্তেজনা,অবিশ্বাস ও ঘৃণার পরিবেশ তৈরী হয়েছিল।সেই পরিবেশে তসলিমার বই হিন্দু সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেবার কাজ করেছে”।
আমরা প্রাদেশিকতার কথা বলি।হিন্দুস্থানে হিন্দুয়ানার লেজ ধ’রে ঝুলে খাকবো;লেজঝাড়ার মার খেয়ে বঙ্গোপসাগরের ঘোলাজলে ডুবে মরবো তাও ভালো,তবু দুই বাংলা এক হয়ে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে একসাথে বাস করার কথা ভাবা যাবেনা।এই সঙ্কীর্ণতা,ধর্মাধর্মের এই অদ্ভুত আচরণ,ছোঁওয়া-ছুঁয়ি,খাদ্যাখাদ্যের বিভেদ-ই আমাদের সামুহিক শক্তিকে দূর্বল ক’রে দিয়েছে।তাই এক বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি অপর বাংলায় অগ্রহণযোগ্য ও অস্পৃশ্য বিবেচিত হয়েছে।
একথা ঠিক যে প্রতিবাদ সচেতনতার ভাষা।কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অচেতন থাকে,তবে সচেতনতার শব্দ-তরঙ্গ বন্ধ দরজায় ঘা খেয়ে নিষ্ফল প্রতিধ্বণি হয়ে ফিরে যাবে নিজের ঠিকানায়।পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিদের দূর্দশার কথা ভেবে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগীয় প্রাক্তন প্রধান শ্রদ্ধেয় ক্ষেত্র গুপ্ত তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস’ গ্রন্থে বাংলাভাষা ও সাহিত্যচর্চার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ গতিশীলতার বার্তা জানিয়েছেন:-“বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।বাংলাভাষা সাহিত্যকে বহন করে।বিশ্বের দরবারে তার যাতায়াত চলছে।বিশ্বের সাহিত্যও বাংলাভাষার সাহিত্যসভায় আসছে বাংলাদেশে—পশ্চিমবঙ্গে নয়।গুণে যাই হোক—ভারতে পশ্চিমবঙ্গ একটি রাজ্যমাত্র ব’লে,বিশ্বে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাসাহিত্যের গর্ব-সমুন্নত স্বীকৃতি বাধাপ্রাপ্ত।বাংলাদেশে বাংলা রাষ্ট্রভাষা।রাষ্ট্র, বাংলা সাহিত্যের অনুকূলে।কিন্তু ভারতে তা’ নয়।বরং বাংলার প্রতি ভারত সরকারের দাক্ষিণ্য নেই বললেই চলে”।
ভারতীয়তার সপক্ষে কথা বলা সাংবিধানিক শিষ্টাচার। এ ক্ষেত্রে অপ্রাদেশিকতার কথাও এসে যায়;যেমন বৃহত্তর ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের কথা আসে।এই সাধারণ অভিব্যক্তি অপরিহার্য্য অন্ততঃ ভারতীয় ঐক্য ও সংহতির কথা ভেবে।অপরদিকে প্রাদেশিকতার কথা এসে যায় তখন,যখন আঞ্চলিক ভাষার বিশেষতঃ মাতৃভাষার মাধ্যমে সাহিত্য-শিল্পকর্মের প্রশ্ন ওঠে।পশ্চিমবঙ্গ যতদিন ভারতীয় মিশ্রাঙ্গের অন্তর্ভূক্ত থাকবে,ততদিন আমরা মিশ্র-ভাবনার শিকার হ’ব। বীর বঙ্গসন্তানরা আত্মাহুতি দিয়ে যেভাবে বাংলাভাষা রক্ষা করেছেন,তেমনি সমগ্র বাঙালি জাতি শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও অখন্ড বঙ্গদেশকে রক্ষা করার প্রয়োজন ছিল।বঙ্গবিরোধী অশুভ শক্তির কাছে পশ্চিমবঙ্গ কেন পরাজিত?অথচ চোখের সামনেই কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছে!পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ঊষার সূর্যস্তবকালে একটু চোখ মেলে দেখুক পূর্ববঙ্গের(স্বাধীন বাংলাদেশের) রক্তিম সূর্যোদয়!আমি এখন আবার ফিরে আসি সবুজ-সোনায় গড়া আমার রূপসী আন্দামানে!!.....(চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩১

কল্লোল পথিক বলেছেন:




ধন্যবাদ মশাই।
আমার মনের কথাগুলো বলেছেন।

১৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:১৯

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: কল্লোক পথিক মশাই, ধন্যবাদ আপনাকে আমার লেখা পড়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য!

২| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৩:২০

কালনী নদী বলেছেন: interesting! i must read from beginning . . .

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৫

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ, পাঠকবন্ধু কালনী নদী, আপনার পাঠাগ্রহ প্রকাশ করার জন্য!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.