নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাশ্মীর প্রসঙ্গে--একটি ঐতিহাসিক দলিল (পর্ব-১৩)

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৭

এখন আমরা দেখব—কাশ্মীরের মানুষ দীর্ঘকাল ধ’রে ভারত সরকারের কূট-চক্রান্তের শিকার হয়েও, অমানবিক চরম নির্যাতিত জীবনের মাঝে কি তাঁরা এখনও তাঁদের স্বাধীন স্বপ্নের প্রতি আশাবাদী? তাঁরা কি এখনও তাঁদের স্বাধীনতা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ? আমার মনে হয়, কাশ্মীরী জনগণের সামনে আমাদের এ প্রশ্নের উপস্থাপনা বাহুল্য মাত্র—যখন দেখি, কাশ্মীরের শিশু-কিশোর-কিশোরী, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও, ভারতীয় সেনাদের বুলেটের গুলি প্রতিরোধ করার জন্য, পাথর নিক্ষেপ করছে । মহাভারতের ইতিহাসে তো নেই-ই—পৃথিবীর ইতিহাসে এটি এক বিরল দৃষ্টান্ত । পৃথিবীর রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট নেতারা, এই ঘটনাকে কীভাবে দেখবেন, তা’ আমাদের জানা নেই— তবে তাঁরা যে, বুলেটের সামনে মুষ্টিবদ্ধ প্রস্তর-খন্ড হাতে অসহায় কচি-কাঁচা যোদ্ধাদের প্রতি স্যালুট জানাবেন,তাতে কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকে না। অথচ, ভারতে সজ্ঞান-সচেতন রাজনেতারা তাদের বলেন-- 'পাত্থরবাজ' !
ইতিহাস কথা বলে-- সত্য উদ্ঘাটন করে । কাশ্মীরের করুণ ঘটনাগুলির সত্য-তথ্য, আজ তাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—অন্ধকার থেকে আলোর পথ কোনটি ।(?) ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’ নীতিকথা উচ্চারণ করলেই, আলোর পথে পৌঁছনো যায় না । ‘সত্যমেব জয়তে’-র গালভরা প্রচার করলেই, প্রকৃত সত্যানুসারী হওয়া যায় না ।...ফিরে আসি পূর্ব-আলোচিত বিষয়ে ।
১৯৫৪ থেকে ভারতের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব আরও প্রকট হয়ে ওঠে । কাশ্মীরকে সম্পূর্ণরূপে ভারত-ভুক্তির জন্য ভারতের রাজনৈতিক কূট-কৌশল চলতে থাকে । আমরা জানতাম যে মাত্র তিনটি বিষয়ে ভারত দায়িত্ব পালন করবে । ১) প্রতিরক্ষা.২) যোগাযোগ, ৩) বৈদেশিক বিষয় । কিন্তু, ১৯৫৪ সালে, কাশ্মীরের উপর, ভারত-কর্তৃক একটি ‘সাংবিধানিক নির্দেশ’ জারি করা হয় এই ব’লে,—‘ জম্মু-কাশ্মীরের প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং বৈদেশিক বিষয়ের বাইরেও যে-কোনও বিষয়ে আইন-প্রণয়নের ক্ষমতা ভারতের হাতে থাকবে’। ‘সত্যিই সলুকস্ কী বিচিত্র এই দেশ’! কাশ্মীরে ভারতের তৈরি বক্সী গুলাম মহম্মদ সরকার (ভারতের তৈরি ‘পুতুল সরকার’ বলা যেতে পারে) অনুগত ভৃত্যের মতো তা’ অনুমোদন ক’রে, ভারতের স্বেচ্ছাচারিতার আরও সুযোগ ক’রে দিল । এর ফলে, কাশ্মীর তার ‘স্বায়ত্ব শাসন’-এর অধিকার হারিয়ে ফেলল । ভারত সরকারের এই কূট-কৌশলের বিরুদ্ধে, ‘কাশ্মীরের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা’ ব’লে প্রতিবাদ করেছিলেন, শেখ আব্দুল্লার বিশ্বস্ত সহযোগী ‘মির্জা আফজল বেগ’ । শেখ আব্দুল্লাকে ১৯৫৩ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তা’ আমরা আগেই জেনেছি। ঠিক এ সময় থেকেই শেখ আব্দুল্লা-সহযোগী মির্জা আফজল বেগ, গণভোটের পক্ষে আন্দোলনের উদ্দেশ্যে একটি ফ্রন্ট (Plebiscite Front) তৈরি করেন । কিন্তু তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হ’ল, ১৯৫৫ সালের ৯ই অগাস্টে ।
কিন্তু, ভারতের কাছে এক নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হ’ল, যখন দেখা গেল— নতুন সংবিধান অনুসারে ১৯৫৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে বক্সী গুলাম মহম্মদের নেতৃত্বে, ন্যাশনাল কনফারেন্স ৭৫টি আসনের মধ্যে ৭০টি আসনে জিতল । ভারত তখন নতুন কৌশল প্রয়োগ করার চেষ্টা করল । স্বজন-পোষণ ও দুর্নীতির অপরাধে বক্সী সরকারকে বরখাস্ত ক’রে, ভারত-রক্ষা আইনে বক্সীকে গ্রেপ্তার করা হ’ল । ১৯৬৪ সালের ১লা মার্চ, ভারত সরকারের মনোনীত ‘গুলাম মহম্মদ সাদিক’-কে জম্মু-কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানো হ’ল । মজার ব্যাপার, প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানোর ক্ষেত্রে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মতামতের কোনও অধিকার দেওয়া হ’ত না । ভারতের চাপিয়ে দেওয়া পরিবর্তনগুলি মেনে নিতে হ’ত ।
শেখ আব্দুল্লাকে কারামুক্ত করা হ’ল ১৯৬৪-এর ৮ই এপ্রিলে । দীর্ঘ কারাবাস থেকে মুক্তির পর, অনেকটা দৃঢ় মনোবল নিয়ে, ‘ভারত-সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা’ প্রসঙ্গে আলোচনার জন্য নেহরুর সঙ্গে দেখা করলেন । তারিখটি ছিল ১৯৬৪-র ২৯শে এপ্রিল । নেহরু-আব্দুল্লার সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা, হয়তো কাশ্মীর-সমস্যা সমাধানে সহায়ক হ’তে পারত; কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, ১৯৬৪-র ২৭শে মে নেহরুর মৃত্যু হয় ।.... এরপর, ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনার আপাতত বিরাম রেখে (প্রয়োজনে আবার ফিরে আসা যাবে), ১৯৯০ সালের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক বিষয় তুলে ধরা যাক ।
১৯৯০-এর ২৮শে মার্চ থেকে ৩-রা এপ্রিল পর্যন্ত, ভারতের কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন মিলে, কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন মানুষ ও অনেক সংগঠনের সঙ্গে কথা ব’লে জানার চেষ্টা করেছিল—কাশ্মীরের জনগণ কী চায় । (?) এই বিশেষ রিপোর্ট তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছিল—১) পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ, ২) দ্য সিটিজেন ফর ডেমোক্রেসী, ৩) র‌্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, এবং ৪) মানব একতা অভিযান কমিটি ।
এই সংগঠনগুলির রিপোর্ট অনুসারে জানা যায়—‘কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষ ভারত বা পাকিস্তান, কোনও দেশে থাকতে চায় না । তাঁরা কাশ্মীরকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়’। ...(চলবে)

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:২১

জগতারন বলেছেন:
সে সক্কাল (যুক্ত রাষ্ট্র সময়) থেকে এখনও কোন মন্তব্য নাই !
বিস্ময় ! সামুর পাঠক-পাঠীকারা কই ?

আমি আপনার সাথে আছি ও মনোযোগ সহকারে পড়ছি।
আপনি চালিয়ে যান।

লেখকের শেষ দুটি বাক্যঃ

(১) ‘কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষ ভারত বা পাকিস্তান, কোনও দেশে থাকতে চায় না ।
(২) তাঁরা কাশ্মীরকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়’।


এটা কাশ্মীরিদের প্রানের দাবী। তারা পাকি'দের উগ্রতা ও গোড়ামী পছন্দ করে না। আবার
শয়তান মালু'দেরও পছন্দ করে না।

তার চায় স্বাধীন হয়ে বাঁচতে, তা কি মোনাফেক পাকি ও শয়তান মালু'রা তাদের থাকতে দেবে ?

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১২

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: প্রিয় পাঠক-বন্ধু জগতারন,
আপনার সমবেদনাপূর্ণ মন্তব্য প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ ! এই ব্লগে সামুর পাঠক-পাঠিকাদের মন্তব্য না থাকার জন্য আপনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন, কারণ আপনি অনেকটা প্রতিবাদী স্বভাবের মানুষ। অন্যদিকে দেখা যায় তার বিপরীত, যাঁরা শুধু স্বপ্ন-বিলাস নিয়ে থাকতে পছন্দ করেন। তাই স্বপ্নময় কিছু কবিতা ও কাল্পনিক কিছু গল্প-উপন্যাসের ব্লগে মন্তব্যকারীদের ভিড় বেশি। তাই আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমার ব্লগে পাঠকের সংখ্যা কম নয়--কিন্তু মন্তব্য প্রকাশ করার মানুষের বড় অভাব। এতে আমিও আশ্চর্য হই না, লিখে যাই, আমার কাছে যা' সত্য মনে হয়। 'এপার বাংলায় 'গোবিন্দ হালদার'এর গানের বাণী, আর ওপার বাংলায় 'আপেল মাহমুদ'-এর সুর ও কন্ঠধ্বণি--'মোরা,একটি ফুলকে বাঁচাবো ব'লে যুদ্ধ করি / মোরা, একটি মুখের হাসির জন্য যুদ্ধ করি' // আজও আমাকে সারাক্ষণ জাগিয়ে রাখে-- নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের মুখে, ফুলের মতো নির্মল একটু হাসি ফোটানোর জন্য !..। ভাল থাকবেন !

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: মন ভালো নেই। তাই মন্তব্য করবো না।

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৪

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ, রাজীব নুর ভাই, আপনার উপস্থিতির জন্য ! আপনার মন ভাল যখন ভাল থাকবে, তখন আবার মন্তব্য করবেন।... শুভেচ্ছা !

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৬

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ওখানে ভারতীয়রা প্রচন্ড অমানবিক নির্যাতন করে জনগনকে।

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৮

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: প্রিয় পাঠক-বন্ধু, ঠিক তাই-- অমানবিক নির্যাতনের শিকার কাশ্মীরী জনগণ । আর তা' করছে ভারত। ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য !

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৬

জগতারন বলেছেন:
এই সামু ব্লগের এক জ্ঞান তাপস ব্লগার ডঃ এম আলি, রহিঙ্গগাদের নিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন;
“একবার ভুলের সাগরে নিপতিত হলে সেখান থেকে উঠে আসাআর সহজ থাকে না"
এ মন্তব্যটিও যেন কাশ্মীর-এর জনগনের ব্যাপারেও যথাযথ।

১০ পর্বে আপনি উল্লেখ করেছিলেনঃ
 (১) রাজনীতি বড় কূট, জটিল এক গোলক-ধাঁধা, তা’ কাশ্মীরের জনগণ এমনকি জননায়ক স্বয়ং আব্দুল্লাও অনুধাবন করতে পারেননি। 
(২) নেহরুর একদিকে কাশ্মীরী স্বজন-প্রীতি, আর একদিকে শেখ আব্দুল্লা প্রোরোচিত ভারত-কাশ্মীর অন্তর্ভুক্তির প্রত্যাশা-- পন্ডিত নেহরুকে আইনী কৌশল প্রয়োগে উৎসাহিত করেছিল। 

(৩) এ জন্যেই শেখ আব্দুল্লা তাঁর ঐতিহাসিক ভুলের দায় এড়াতে পারেন না। 

(৪) খুব দৃঢ় মনোবল নিয়ে যদি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ’র নির্দেশিকা অনুসরণ করা হ’ত, তবে কাশ্মীরের স্বাধীনতা হরণের প্রশ্ন উঠত না। 

(৫)জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা যাঁচাই না ক’রে শেখ আব্দুল্লা-নেহরু স্ব-রচিত,স্ব-মনোনীত শর্তে নতুনভাবে চুক্তিবদ্ধ হতে থাকলেন।

আমি মন্তব্য করেছিলাম;
উপরের ৪ নম্বরই সকল ভুলের প্রবেশ দ্বার। 

পরের পর্বের অপেক্ষায় র'লাম।

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৯

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রিয় লেখক-পাঠক জগতারন,
আপনার অভিজ্ঞতালব্ধ কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য ! জ্ঞান-তাপস ব্লগাররা অভিনন্দিত হওয়ার যোগ্য,-- কারণ তাঁদের নতুন নতুন ভাবনায়, নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হবে। তবে, আপনার কথায়, একটু অন্যরকম ভাব প্রকাশ পাচ্ছে, মনে হয় । তা' হোক, সকলের কাছে তো সমান প্রত্যাশা করা যায় না।...শুভেচ্ছা নিরন্তর !

৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৩৯

রাকু হাসান বলেছেন: তাহলে ধরে নিব নেহেরুর মৃত্যুও একটা কারণ এই সমস্যা প্রকট হওয়ার ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.