নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের ময়নাতদন্ত (গুজরাত ফাইলস) পর্ব--৬

১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৫

গুজরাত ফাইলস (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
সিনিয়রদের কাছে একটা বিস্তারিত মেল পাঠালাম । আরও গভীরে যাওয়ার উৎসাহ দিয়ে উত্তর দিলেন তাঁরা । ভাবনাচিন্তা শুরু করার পক্ষে এটুকুই যথেষ্ট ছিল । গুজরাতে প্রায় মাস তিনেক কেটে গেছে । তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে যাঁরা ইচ্ছুক তাঁদের সঙ্গে যে-পরিস্থিতিতে দেখা হয়েছে, তা থেকে বুঝেছি সামনের পথ রীতিমতো কঠিন । ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত যে-সব ব্যক্তি সত্য গোপন করে রাখতে চান, তাঁদের কাছ থেকে সত্যটা আদায় করা সহজ হবে না । আমার সহকর্মী আশিস খেতান একটা রোমহর্ষক কাহিনি উদ্ঘাটন করেছিলেন । বাবু বজরঙ্গী এবং স্থানীয় অন্যান্য বিজেপি ও ভিএইচপি নেতাদের ওপর স্টিং অপারশেন চালিয়েছিলেন তিনি । সেখানে এইসব নেতারা ২০০২ সালের দাঙ্গার হাড়-হিম করা বিবরণ শুনিয়েছিলেন । কিন্তু আমি সেইসব দাঙ্গাবাজদের নিয়ে কাজ করছি না যাদের একটু উসকে দিলেই গড়গড় করে নিজেদের বীরত্বের ব্যখ্যান শুরু করবে । আমার কাজ পোড় খাওয়া আইপিএস অফিসারদের নিয়ে, যাঁদের মধ্যে অনেকে ‘র’ (RAW) এবং ‘আই অ্যান্ড বি’ (I&B)-তেও সাফল্যের কাজ করেছেন ।
এঁরা একেবারে চাঁচাছোলা কূটনীতিবিদ । এঁদের দিয়ে কথা বলানোর জন্য ক্ষমতা ও কর্তৃত্বসম্পন্ন একজন দক্ষ ও সুকৌশলী তদন্তকারীর দরকার । ওগুলোর মধ্যে কোনো গুণটাই আমার নেই । পরিকল্পনাও আমাকে করতে হবে, কাজটাও আমাকে একাই করতে হবে । জানতাম অফিস থেকে কোনো জুনিয়রকে নিতে পারব না ।, কেননা সেটা বাড়তি ঝুঁকি হয়ে যাবে । আমাকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল—সম্পাদকরা আমার কাজের ওপর নজর রাখবেন, কিন্তু বাকি সবকিছুর দায়িত্ব আমার একার । কোনো লেখা পাঠালেই সোমা আর তরুণ উৎসাহব্যঞ্জক উত্তর দিত, যেমন, ‘দারুণ চালিয়ে যাও’ বা ‘তাক-লাগানো উদ্ঘাটন’। এগুলো আমাকে আরও এগিয়ে যেতে উৎসাহ জোগাত ঠিকই, কিন্তু বাস্তব সত্যটা ছিল—রণক্ষেত্রে আমি একা । নিজের খেয়ালও রাখতে হবে, আবার এই অনুসন্ধান থেকে যাতে সৎ, সত্যভিত্তিক ফলাফল বেরিয়ে আসে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে ।
এমন অনেকেই সত্যটা জানতেন যাঁরা স্থির করেছিলেন কখনো সেটা প্রকাশ করবেন না, এমনভাবে জীবন কাটিয়ে যাবেন যেন ঘটনাটা, ২০০২ সালের এই ঠান্ডা মাথায় ঘটানো রাজনৈতিক রক্তস্নানের ব্যাপারটা, কখনোই তাঁদরে জীবনের অঙ্গ ছিল না । ‘তেহেলকা’র মতো একটা অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক হিসেবে আমি জানতাম, সাহায্য ডাওয়ার প্রতিটা দরজাই আমার জন্য বন্ধ । আমারসামনে একটাই পথ খোলা ছিল, যে-পথটা সত্যসন্ধানী যে-কোনো সাংবাদিকের শেষ অবলম্বন; ছদ্মপরিচয়ে কাজ করা । আমার বয়স ২৬ বছর, আমি একজন মেয়ে, তা-ও আবার মুসলিম মেয়ে । এর আগে কখনো নিজের পরিচয় নিয়ে মাথা ঘামাইনি, কিন্তু ধর্মীয় ভিত্তিতে মেরুকরণ করা একটা রাজ্যে কাজ করতে গেলে এগুলো নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবতেই হবে । আমার বাড়ির লোকেদের ব্যাপারটা জানাতে হবে আমি কে বা কী হতে চলেছি । কারও সাহায্য ছাড়া কি কাজটা নিখুঁতভাবে করতে পারব ?
একসময় একটা সুপরিচিত ‘মাস কমিউনিকেশন’ কোর্সের ছাত্রী ছিলাম । সেটা এখন কাজে লাগল । আমার সহপাঠীদের মধ্যে এমন অনেক উচ্চাকাঙ্খী অভিনেতা ছিল যারা চলচ্চিত্র জগতে নিজেদের একটা জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছিল । অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা আমার সহপাঠী ছিল, এখন সে প্রতিষ্ঠিত নায়িকা । সম্প্রতি একটা সাক্ষাৎকারে রিচা বলেছিল একটা ছবির জন্য আমার সাংবাদিকতার জীবন ও অভিজ্ঞতা জানতে চায় সে, যে-ছবিতে রিপোর্টারের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে তাকে । যে অভিনেতা-বন্ধুটিকে সবথেকে ঘনিষ্ঠ মনে করতাম তাকে ‘আরে, অনেকদিন দেখা-টেকা নেই’ জাতীয় একটা ফোন করলাম । এই বন্ধুটির সাহায্যে রিচার মেক-আপ ম্যানের সঙ্গে একটা অ্যপয়েন্টমেন্ট করা গেল । পরের দিন মুম্বাই শহরতলির একটা স্টুডিয়োয় বসে চা খেতে-খেতে লাগসই পরচুলার ব্যাপারটা খুব সুবিধের হল না ।
তখন মনে হল নিজের পরিচিতিটাও পালটে ফেললে ভাল হয় । আমাদের প্রাক্তন সহপাঠীদের একটা গ্রুপের সদস্য ছিলাম আমি । হয়তো ভাগ্যক্রমেই সেই গ্রুপের আইডি-তে একজন সহকর্মীর একটা ই-মেল পেলাম যে লস্ অ্যাঞ্জেলেসের বিখ্যাত আরেকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট কনজারভেটরিতে যোগ দিয়েছিল । সে যেন এক ‘সব পেয়েছি’র মুহূর্ত । হ্যাঁ, এটাই হবে আমার পরিচয় । চলচ্চিত্র বানানোর জন্য আমেরিকা থেকে গুজরাতে আসা একজন চলচ্চিত্রকার । খুবই উচ্চাকাঙ্খী ভাবনা, তবে সেটা কাজে লাগার সম্ভাবনা যথেষ্টই ছিল ।
পরের কয়েকটা দিন ওই কনজারভেটরির কাজকর্ম, সেখানকার প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের বিবরণ, সংস্থার পক্ষ থেকে কী কী চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে, সে সম্বন্ধে পড়াশোনা করলাম । সেইসঙ্গে গুজরাত নিয়ে কী ধরনের চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে, সেগুলোর বিষয়বস্তু কী ছিল, তা-ও জেনে নিলাম । শেষে ঠিক করলাম, চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর দুয়ার উন্মুক্তই থাক, চিত্রনাট্যহীন এই কাহিনিতে যে-সব চরিত্র আসবে, তাদের কাছ থেকে কেমন আচরণ পাই তার ওপরেই নির্ভর করবে বিষয়বস্তু । আমাকে একটা নাম নিতে হবে । সুন্দর, রক্ষণশীল অথচ ব্যঞ্জনাময় একটা নাম ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অনলাইনে এর পিডিএফ পাওয়া যায়।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৫

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: অনলাইনে পিডিএফ পাওয়া যায় কিনা, বলতে পারছি না। আমি বইটি অনলাইনে অর্ডার দিয়ে আনিয়েছিলাম। দাম-২০০/-টাকা মাত্র, ভারতীয় মূল্য।

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৭

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ, জানি আপনি সঙ্গে আছেন, থাকবেনও । শুভেচ্ছা সর্বক্ষণ !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.