নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায় ২

১৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪০

সীতানাথ রোডের মোড়ের বাড়িতেই থাকতেন কবির বন্ধু কন্ঠশিল্পী নলিনীকান্ত সরকার । সেখানে এসেই আমি আর শিরাজী সাহেব দুজনে দুদিকে চলে গেলাম । সিরাজগঞ্জে নিখিলবঙ্গ যুব সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল এই দিনটির দিন- দশেক পরে—১৯৩২ সালের ৫ই এবং ৬ই নভেম্বর । কবির ওখানেই স্থির হয়েছিল তাঁর সাথে কলকাতা থেকে কে কে সিরাজগঞ্জে যাবেন । তাঁদের মধ্যে আমিও একজন ।
যথানির্ধারিত দিনে আমি আমার পার্কসার্কাসের বাসভবন থেকে গাড়ী ছাড়বার মিনিট ১৫ পূর্বে শিয়ালদা স্টেশনে গিয়ে পৌঁছলাম । সাথে সাথে কবিকে নিয়ে শিরাজী সাহেবও হাজির হলেন । তাঁদের সাথে রয়েছেন বন্ধুবর সুরশিল্পী আব্বাসউদ্দীন এবং মোমেনশাহী জেলার জামালপুরের একজন প্রাক্তন মন্ত্রী মরহুম জনাম গিয়াসউদ্দীন সাহেব । তিনি তখন বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন ।
গাড়ী যথাসময় স্টেশন ছেড়ে ছুটে চললো । এই সুদীর্ঘ রাস্তায় কবির অপূর্ব রসালাপের মধ্যে কি করে যে সময় কেটে গেলো, টেরও পেলাম না । একসময় নানান কথার মাঝে কবি বলে উঠলেনঃ পাঁঠা কেটে ভাগ দিন্ – পাঁঠা কেটে ভাগ দিন্ – পাঁঠা কেটে ভাগ দিন্ ! গিয়াসউদ্দীন সাহেব তখন বললেন—বুঝলাম না । আব্বাস সাহেব বললেন—বুঝবেন কি করে ? আমাদের ত আর কবির কান নয়, কাজীদার কানে ট্রেন চলার আওয়াজ এই নাকি শোনায় ! এবার ট্রেন চলার তালে তালে আব্বাস সাহেবও তাঁর সুরেলা কন্ঠে কয়েকবার আওড়ালেন—পাঁঠা কেটে ভাগ দিন্ –পাঁঠা কেটে ভাগ দিন্ ।
যথাসময়ে ট্রেন সিরাজগঞ্জ স্টেশনে এসে পৌছলো । আগে থেকে কয়েক সহস্র জনতা বিশেষ করে ছাত্র এবং যুবক কবিকে সম্বর্ধনা জানাবার জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছিল । গাড়ীর গতি স্টেশনে এসে স্তিমিত হয়ে আসতেই সহস্র কন্ঠের বারকয়েক ‘আল্লাহু-আকবার’, ‘কবি নজরুল ইসলাম জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে চারদিকের আকাশ-বাতাস আলোড়িত করে তুললো । কবি নামলেন । আমরাও সাথে সাথে নেমে পড়লাম । কবিকে মালা পরানো হলো । বয়স্করা করমর্দন করলেন, দুবাহু সম্প্রসারিত করে বুকে টেনে নিলেন । যুবক এবং ছাত্ররা করলো প্রণাম । এ অভূতপূর্ব সম্বর্ধনার দৃশ্য দেখে আমার দু’চোখ বেয়ে আনন্দাশ্রু ঝরে পড়লো ।
মিছিল করে জনতা কবিকে নিয়ে চললো নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থানে মুহু-র্মুহুঃ ‘বিদ্রোহী কবি জিন্দাবাদ’ আওয়াজ ধ্বনিত হতে লাগলো, আর সহস্র কন্ঠের সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে আশেপাশের, দূরদুরান্তের আলো-বাতাস সব কিছুকেই উজ্জীবিত করে তুললো । সে দিনে মিছিল-মত্ত বাংলার সিরাজগঞ্জ যেন পারস্য প্রতিভার মহান গৌরবে মহিমান্বিত সেই শিরাজ-নগরে ঐতিহাসিক মর্যাদায় মহীয়ান হয়ে উঠেছিল—তার আশা তার প্রাণের-ভাষা জাতির প্রিয় কবিকে স্বঃস্ফূর্ত প্রাণবন্যায় সেদিন অভিষিক্ত করে ধন্য হয়েছিল । (ক্রমশঃ)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি কবি নজরুলকে নিয়ে ১০০ পর্বের একটা ধারাবাহিক লেখা লিখব।

২০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৫৮

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: আপনার এ প্রত্যাশা প্রশংসনীয়, অথচ আমার অক্ষমতা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই দুটোর সমন্বয়ে একটু ধীর গতিতে এগিয়ে চললেও লক্ষ্যে অবিচল থাকার চেষ্টা করব--এ প্রতিশ্রুতি দিতেই পারি। ত্রুটি মার্জনীয়! শুভেচ্ছা নিরন্তর !

২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৮

অধীতি বলেছেন: ভালোলাগা।

২০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:০১

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ পাঠক-বন্ধু অধীতি, আপনার সংক্ষিপ্ত-সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য !

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৫

পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনার কয়েকটা লেখা একসাথে পড়লাম, পাশাপাশি কয়েকজনের লেখায় আপনার মন্তব্যও দেখে আসলাম। আন্দামান নিকোবারে থেকেও সুফী জুলফিকার হায়দারের বই কালেকশনে রেখেছেন দেখে একটা প্রশ্ন মনে আসলো- আপনি হয়তো বাংলাদেশের সাথে কোনওভাবে সম্পৃক্ত? দণ্ডকারণ্য'র আওতায় পূর্ববাংলার অনেককেই আন্দামানে অভিবাসন দেয়া হয়েছিলো দেশভাগের পর।

সুদূর আন্দামান থেকে এই ব্লগে আছেন, আরও দুটো অ্যাকাউন্ট আপনার ছিলো, এগুলো সবই বাংলার প্রতি আপনার ভালোবাসার প্রকাশ নিশ্চয়। আমার অভিনন্দন জানবেন। সম্ভব হলে ওখানকার জনজীবন এবং বাংলাভাষার অবস্থান নিয়ে লিখবেন।

৪| ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩০

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: প্রিয় পাঠক-লেখক বন্ধু পদ্মপুকুর, ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করার জন্য ! আপনার কৌতুহলী প্রশ্নসূচক বক্তব্য আমার ভাল লেগেছে । স্বাধীনতা-পূর্বোত্তর অখন্ড বাংলায় (তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে) খুব সম্ভবত আমাদের আদি বাসন্থান ছিল । কোনও কারণে তাঁরা দেশভাগের আগে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ'র দঃ ২৪ পরগনা জেলার চুনফুলি গ্রাম ও অন্যান্য কয়েকটা গ্রাম জুড়ে আমাদের জমিদারি ছিল। এরপর স্বাধীনোত্তরকালে জমিদারি উচ্ছেদ হওয়ার কারণে আমাদের পারিবারিক সমস্যা তৈরি হয়। অগত্যা একসময় আমাকে বাইরে বেরিয়ে পড়তে হয়। অজানার সন্ধানে একসময় আন্দামানে পাড়ি দেওয়া। আর তারপর থেকেই এই সবুজ সোনায় গড়া আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ আমার প্রিয় আশ্রয়ভূমি। এখানকার জনজীবন মূলতঃ আদিবাসী কেন্দ্রিক। সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় এঁদের সরকারি নিয়মে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, সেল্যুলার জেলে বন্দিজীবন শেষে যাঁরা এখানে সপরিবার বসবাস করছেন। এঁরা প্রি-'৪২ শ্রেণিভুক্ত । অর্থাৎ যাঁরা ১৯৪২-এর আগে থেকে যাঁরা এখানে বসবাস করছেন। এরপরে ১৯৪৯ থেকে যাঁরা পূর্ব-পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে জাতি-দাঙ্গার কারণে উদ্বাস্তু হয়ে আন্দামানে এসেছেন, এবং ভারত সরকারের সাহায্য-সহযোগিতায় বাস করছেন, তাঁরাই। এঁদেরকে'সেটলার' বলা হয়। এই 'সেটলার' বাঙালি এখন বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক । এবিষয়ে আমি বিস্তারিত আলোকপাত করেছি আমার লেখা 'স্মৃতির পথ ধরে আন্দামানে' প্রবন্ধে। আপনি আমার ব্লগের পুরনো পোস্টে অবশ্যই দেখতে পাবেন। মোট আটটি পর্বে লিখেছি। এসব পড়ার পর আপনি আপনার মন্তব্য প্রকাশ করবেন আশা করি ! শুভেচ্ছা রইলো !!

৫| ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭

পদ্মপুকুর বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার প্রতিমন্তব্যর জন্য। ঠিক কি জন্য জানিনা, তবে ব্লগে ধারাবাহিকগুলো পড়তে কষ্ট লাগে। তবুও 'স্মৃতির পথ ধরে আন্দামানে' পড়বো। কিছু মাস আগে আমি দেশভাগে সিলেট কেনো আমাদের হলো না, এ বিষয়ে একটা লেখার জন্য বেশ কিছু পড়াশুনা এবং ডকুমেন্টারি দেখার মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম যে ওই সময় কিছু মানুষকে আন্দামানেও সেটল করা হয়েছিলো।

তারপর থেকেই আন্দামান নিয়ে কিছূটা সফট ফিলিংস তৈরী হয়েছে। আগ্রহ নিয়েই পড়বো।

ভালো থাকবেন। শুভ ব্লগিং।

৬| ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩২

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় পদ্মপুকুর, আপনার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য! 'স্মৃতির পথ ধরে আন্দামানে' অন্য আর সব ধারাবাহিকের মত নয় । আপনি অন্যরকম এক ভাল-লাগা অনুভব করবেন, আশা করি । পড়ার পর আপনার মতামত জানালে খুশি হব এবং তারপরেই আন্দামান-সম্পর্কিত আরও অনেক অজানা তথ্য আমার ব্লগে নতুন করে প্রকাশ করবো। সঙ্গে থাকবেন, ভাল থাকবেন !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.