নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যথাসময়ে মিছিল গিয়ে শেষ হলো যমুনা নদীর তীরে—সুন্দর মুক্ত প্রাঙ্গণে এক বাংলোর সামনে । আমরা অতিথিবর্গ সেখানে উন্মুক্ত চত্বরে আসন গ্রহণ করলাম ।
মিনিট দশেক পরে শিরাজী সাহেব সমাগত জনতাকে সম্বোধন করে অনুরোধ জানালেন—এখন কবি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন । রেল ভ্রমণের পর তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন । আপনারা দয়া করে এখন চলে যান । কবি যা বলবেন তা শুনবার জন্যই প্রকাশ্য অধিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । আপনারা অবশ্যই সেই অধিবেশনে কবির বাণী শুনবার সুযোগ লাভ করবেন ।
যমুনার তীরে অবস্থিত বাংলোয় আমাদের থাকার সুব্যবস্থা কবির উপযোগী ও মুগ্ধকর হয়েছিল ।
প্রকাশ্য অধিবেশনে যথেষ্ট ম্রোতার সমাগম হয়েছিল । কবির অভিভাষণ সমবেত শ্রোতৃবৃন্দকে মুগ্ধ করেছিল । দ্বিতীয় দিবসে কবির কন্ঠে তাঁর ‘নারী’ কবিতার আবৃত্তি সমবেত সকলকে অভিভূত করে ফেলেছিল ।
বক্তাদের মধ্যে অনেকেই ভাল বক্তৃতা করেছিলেন । তাঁদের মধ্যে উল্লখযোগ্য হচ্ছেন মরহুম সৈয়দ আকবর আলী—ইনি দেশ বিভাগের পরে বার্মায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন, মরহুম ইজ্জত আলী পেশকার, মরহুম আফজর মোক্তার, জনাব আসাদউদ্দৌলা শিরাজী, এবং প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী মরহুম গিয়াসউদ্দীন । বন্ধুবর জনাব মহম্মদ এরশাদ আলী, ঢাকা জিঞ্জিরার দানবীর হাফেজ সাহেবের ভাগিনেয় এবং অবসরপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিক্ট জজ্, তিনি তখন ছাত্র ছিলেন । ঢাকা থেকে যুব প্রতিনিধি হিসাবে তিনি সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন । তিনি পূর্বাহ্নেই অধিবেশনে আমাকে পর্দা-প্রথা সম্পর্কে বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন । আমি বাংলার মুসলিম নারী সমাজের ‘অবরোধ বনাম শ্বাসরোধ’ বিষয়ের উপর বক্তৃতা করেছিলাম, আজো আমার মনে পড়ছে সেই বক্তৃতায় আমি বেশি সময় নিয়েছিলাম । মরহুম গিয়াসউদ্দিন সাহেব তখন সম্মেলনের সভাপতি কবি নজরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । কিন্তু কবি তাঁকে বললেন—বলতে দিন্, শ্রোতারা আগ্রহের সঙ্গে শুনছেন । সে যাক, সেই সম্মেলনে কবির নিজের গান এবং আব্বাসউদ্দীনের কন্ঠে বিভিন্ন নজরুল সঙ্গীত সিরাজগঞ্জ শহরকে অপার আনন্দ হিল্লোলে এবং কল-কল্লোল বন্যার স্রোতে সেদিন ভাসিয়ে নিয়েছিল ।
এতদিন পরেও বেশ মনে পড়ছে, সম্মেলন শেষে মরহুম আফজল মোক্তার সাহেবের বাড়ীতে কবি ও আমাদের জন্য এক সম্বর্ধনা ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল । ভোজ পর্বের শেষে আমরা ঘোড়ার গাড়ীতে চেপে বসলাম । গাড়ী সবেমাত্র চলতে শুরু করেছে এমন সময় আফজল সাহেব বেশ জোরে জোরে চিৎকার করেই গাড়োয়ানকে বললেন—থামাও, থামাও !
আমরা রীতিমতো বিস্মিত হলাম । ব্যাপার কী ! তিনি গাড়ীর দরজার কাছে এসে হেসে বললেন—কবিকে দেখার জন্য বাড়ির মেয়েদের একান্ত ইচ্ছা । কবি একটু কষ্ট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেই তাদের মনের আশা মিটে যায় । কবি হো-হো করে হেসেই আকুল ! বললেন—কী মুশকিল ! খোলা গাড়ী ছিল, কবি অবশ্য দাঁড়ালেন । মেয়েরা আধ আড়াল থেকে কবিকে একনজর দেখে নিলেন ।
সেখান থেকে মরহুম সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর সমাধি জিয়ারত করার জন্য কবি এবং আমরা আসাদউদ্দৌলা শিরাজী সাহেবের বাড়ি—বাণীকুঞ্জে গেলাম । মুসলিম বাংলার অগ্নিপুরুষ অনল প্রবাহের কবি, অনন্যসাধারণ বাগ্মী ও জনপ্রিয় দেশনেতা মরহুম সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর সমাধি পার্শ্বে দাঁড়িয়ে কবি অশ্রুসজল নয়নে দুহাত তুলে আল্লার দরগায় তাঁর আত্মার মুক্তির জন্য দোয়া করলেন ।
অতঃপর তিনি বেদনাসিক্ত কন্ঠে বললেন—কবি হিসাবে আমাকে অনল প্রবাহের লেখক যে আদর দেখিয়েছেন, তা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম পাওয়া । এমন আদর সারা বাংলায় আর কারো কাছ থেকে পেয়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে মনি-অর্ডার যোগে দশটি টাকা আমাকে পাঠিয়েছিলেন এবং কুপনে লিখেছিলেন—এই সামান্য দশটি টাকা আমার আন্তরিক স্নেহের নিদর্শন স্বরূপ পাঠালাম । এই কটি টাকা দিয়ে তুমি একটা কলম কিনে নিও । আমার কাছে এর বেশি এখন নেই । যদি বেশি থাকতো আমি তোমাকে আরও বেশি পাঠিয়ে দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতাম । তা হলো না ।
কবির কন্ঠ সেই মহান পরম পুরুষের স্নেহ-স্মৃতি স্মরণে বেদনাবিধুর হয়ে উঠল । বহু স্মৃতি-বিজড়িত শ্রদ্ধা-সিক্ত-গ্রন্থির উন্মোচনে সেদিন আমাদের চোখও তখন অশ্রুসজল ! আমার স্মৃতির মনি-কোটায় কবির সেই গদগত স্বগতোক্তি চির অনির্বাণ ভাস্বর হয়েই রইলো । (ক্রমশঃ)
২০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৫
গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ভাই আমার কিছু মনে করার নেই। এটা আমার পোস্ট হলেও কথাগুলি নজরুল-ঘনিষ্ঠ সুফী জুলফিকার হায়দারের। আমার কাজ শুধু এটুকুই যে, অনেক অজানা তথ্য-সম্বলিত এই অতি মূল্যবান গ্রন্থটির বক্তব্য অগণ্য নজরুল-ভক্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া । আর কোনও কৃতিত্ব আমার নেই । আশা করি আমার এই কথাগুলি আপনি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন । শুভেচ্ছা রইলো !!
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: কিছু মনে করবেন না, একটা সত্য কথা বলি- কেন জানি আপনার পোস্ট পড়ে আমার পাচ্ছি না।