নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

SLOGAN (স্লোগান)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:২৮

আন্দামান থেকে বলছি / রইসউদ্দিন গায়েন
SLOGAN (স্লোগান)
এই শব্দটির একটা যুতসই বাংলা প্রতিশব্দ দরকার । তাহলে আলোচনার সুবিধে হয় । অনেকে অনেক রকম বলেছেন, অভিধানেও নানারকম—কোথাও দেখি কোনো দল বা গোষ্ঠীগত জিগির, কোথাও দলের বাঁধাবুলি, কোথাও দেখি বিজ্ঞাপনী । না, কোনোটাই পছন্দ হ’ল না । অনেক খোঁজাখুজির পর মোটামুটি পছন্দের দুটো শব্দ পেলাম । প্রথমটা ‘নীতিবাণী’ আর দ্বিতীয়টা ‘রণধ্বণি’। আর এই দুটো শব্দ নিয়ে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক । অনেকদিন থেকে একটা স্লোগান আমার কাছে প্রশ্নসূচক হয়ে উঠেছে । পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান প্রধান রাজনৈতিক দল তৃণমূলের যেকোনো সভায় ‘জয় হিন্দ্’ ও ‘জয় বাংলা’ উচ্চারিত হতে শোনা যায় । নেতাজী অনুপ্রাণিত ‘জয় হিন্দ্’ স্লোগান অবশ্যই আমাদের সর্বোত্তম প্রাপ্তি । এ-প্রসঙ্গে আমার কোনো প্রশ্ন নেই । কিন্তু ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রশ্নসূচক । প্রশ্নসূচক শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, প্রতিটি বাংলাপ্রাণ মানুষের কাছে অবশ্যই প্রশ্নসূচক ব’লে মনে করি । আসুন, ইতিহাসের পাতায় কিছুক্ষণ চোখ রাখি—‘১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনে শিক্ষা দিবসের প্রস্তুতিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মিসভায় আফতাব আহমাদ এই স্লোগান প্রথম উচ্চারণ করেন। আফতাব আহমাদের সেদিনের সেই স্লোগানের প্রথম প্রতি-উত্তর করেছিলেন চিশতি শাহ হেলালুর রহমান । ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মীস্তর থেকে আকস্মিকভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত যাদের নাম পাওয়া যায় পারস্পরিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সবাইকে সুনির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না । তবে মোটামুটি নিশ্চিতদের মধ্যে আ ফ ম মাহবুবুল হক, গোলাম ফারুক, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক, শামসুদ্দিন পেয়ারা, রায়হান ফিরদাউস মধু, ইউসুফ সালাহউদ্দিন, মোস্তফা জব্বার, বদিউল আলমের নাম উল্লেখযোগ্য । আফতাব আহমাদের ওই অংশটির নেতৃত্ব দিতেন আ ফ ম মাহবুবুল হক । ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে ‘নিউক্লিয়াস’ দলের স্বাধীন বাংলার আকাঙ্ক্ষা থেকে এই স্লোগানের উৎপত্তি। এই স্লোগানের উদ্ভব ও প্রচলনের ইতিহাস খুব প্রত্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্টদের অনেকে এখনো জীবিত আছেন, তাই বিস্মৃত হওয়ার অবকাশ নেই’।
আর একটু এগিয়ে যাওয়া যাক । ‘জয় বাংলা’ এই স্লোগানটি হয়ে উঠল মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান । এখন এটিকে পূর্বোল্লেখিত প্রতিশব্দ ‘রণধ্বনি’ বলা যথোপযুক্ত মনে করছি । পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পাওয়ার পর সারা পূর্ববঙ্গে মানুষের কন্ঠে ছিল ছিল এই রণধ্বনি । শুধু তাই নয়, ঢাকার বাংলাদেশের জনক মুজিবর রহমান নিজেই রমণা পার্কে প্রকাশ্য জনসভায় তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের শেষ অংশে বলেন—‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম । এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম । জয় বাংলা’।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এই স্লোগানটি ছিল বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান । এরপর এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যা সকলেরই জানা—বঙ্গবন্ধু হত্যা । ১৯৭৫ সালে এই ঘটনার পর দেশের প্রেসিডেন্ট পদে মোস্তাক আহমেদ থাকার সময় ‘জয় বাংলা’-র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ জাতীয় স্লোগান করা হয় । কিন্তু বাংলার প্রতিবাদী মানুষ সেই ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি পরিত্যাগ করতে চায়নি । দীর্ঘকাল পরে হলেও আইনজীবী বশির আহমেদ ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি বা নীতিবাণী পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ হাইকোর্টে মামলা করেন ২০১৭ সালে । তিন বছর ধ’রে শুনানি চলার পর অবশেষে ২০২০ সালের ১০ই মার্চ বাংলাদেশ হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’ এই রণধ্বনি বা নীতিবাণী-কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করে । এই হ’ল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ।
এখন আমরা ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, এটা পশ্চিম বাংলার দলীয় স্লোগান কীভাবে হতে পারে ? এই প্রশ্ন পশ্চিমবঙ্গ’র মানুষ কেন তুলে ধরছেন না ? একদল মানুষ ‘জয় শ্রীরাম’ দলীয় স্লোগান দিচ্ছেন ব’লে, আমাদেরও কি পাল্টা ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি তুলে ধরতে হবে? আর যদি দিতেই হয় ‘জয় বাংলা’ ছাড়া আর কি কোনও কথা পাওয়া গেল না? বলা বাহুল্য, এটা অন্য একটি দেশের জাতীয় স্লোগান । আমাদের যেমন অন্য কোনো দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া উচিত নয়, তেমনি সেই দেশের জাতীয় স্লোগান এদেশে উচ্চারিত হওয়া ঠিক নয়—এ-কথা কে না জানে? এটা কি সেই দেশের জাতীয়তার ওপর আঘাত নয়? এ-প্রশ্ন’র জবাব কে দেবে?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: জয় বাংলা স্লোগান টি সাবেক সচিব আলী কবীর স্যার দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর ছেলের সংগ্রঠনের জন্য আলী কবীর স্যার এই স্লোগান প্রথম দেন। তারপর এই স্লোগান মুখে মুখে ছড়িয়ে যায় সারা দেশে।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৮

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য! কিন্তু লিখিত কোনও তথ্যসূত্র থেকে পাইনি। দয়া ক'রে আপনি যদি এবিষয়ে কোনো ঐতিহাসিক তথ্য পরিবেশন করেন, উপকৃত হ'ব।

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: Slogan শব্দটার বাংলা পরিভাষা 'রণধ্বনি' উপযুক্ত মনে হচ্ছে। স্লোগান শব্দটাই এত বহুল ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যে চেয়ার, টেবিল, মোবাইল ফোনের মত এটাও বাংলার ভাষার অংশ হয়ে গেছে । তারপরেও যদি খুঁজতে হয়। ভাষা নিয়ে যারা কাজ করেন। তারা 'নীতিবাণী' কিংবা 'রণধ্বনি'-র থেকে আরো উপযুক্ত শব্দ হয়তো খুঁজে পাবেন। তবে আপনার লেখার মূল আলোচ্য বিষয় এটা নয় যতটুকু বুঝেছি। 'জয় বাংলা' আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। এর মানে এই নয় যে এই স্লোগান অন্য কেউ দিতে পারবে না। কেউ দিলেও আমরা তাকে কিছু বলতে পারি না। এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি না এটা আমার জাতীয়তার উপর আঘাত। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত একই সাথে রবীন্দ্র সঙ্গীতেরও অংশবিশেষ। এখন যে কেউ রবীন্দ্র সঙ্গীত হিসেবে এটি গাইতে পারে। 'জয় বাংলা' র বাংলা পশ্চিম বাংলার সাথেও সম্পর্কিত। যদি পঃ বাংলার মানুষ জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করেন তাহলে আমাদের আপত্তির সুযোগ কম। তবে আমার মনে হয়, পঃ বাংলার মানুষের উচিত ছিলো নতুন কোন স্লোগানের সন্ধান করা। যেহেতু 'জয় বাংলা' স্লোগানটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নামের সাথে জড়িয়ে গেছে। আলাদা আইডেন্টিটি তৈরির জন্য নিজস্ব স্লোগান থাকা জরুরি।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২৮

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় লেখক-পাঠকবন্ধু, আপনার সুচিন্তিত স্বাধীন সাবলীল মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য !! আপনার বক্তব্য'র শেষের কথাগুলি আমার ভাবনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। 'তবে আমার মনে হয়, পঃ বাংলার মানুষের উচিত ছিলো নতুন কোন স্লোগানের সন্ধান করা। যেহেতু 'জয় বাংলা' স্লোগানটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নামের সাথে জড়িয়ে গেছে। আলাদা আইডেন্টিটি তৈরির জন্য নিজস্ব স্লোগান থাকা জরুরি।'...আপনার এই কথাগুলির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন !!

৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: আগের মন্তব্যের প্রথম বাক্যের শেষে '... মনে হচ্ছে না।' হবে।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২০

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: বেশ, আপনার কথাই থাক ! Slogan শব্দটার বাংলা পরিভাষা 'রণধ্বনি' উপযুক্ত মনে হচ্ছে(না)।

৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫৪

পদ্মপুকুর বলেছেন: বেশ অনেকদিন পর আপনার লেখা পেলাম।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২৫

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ, লেখক-পাঠকবন্ধু, আমাকে মনে রাখার জন্য ! আমার উপস্থিতি এখানে বেশি থাকা প্রয়োজন মনে করি, কিন্তু সময় হয়ে ওঠে না। চেষ্টা করবো, নতুন কোনো লেখা নিয়ে আজ-কালের মধ্যে আবার এখানে আসার। ভাল থাকবেন !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.