নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেবার ১৯৯৭ সালে আমি যখন ভারতে ঘুরছিলাম, তখন কলকাতার এক বিজেপি-পন্থী সাংবাদিক আরএসএস-এর বাংলা সাপ্তাহিক ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকার এক সভায় আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন। ওখানে তিনি বলেন, বিজেপি নেতৃত্ব যে এখন নেহরু-পন্থী জাতীয়তাবাদকে আঁকড়ে ধরছে এবং কাশী মথুরার মন্দিরের বিষয়গুলিকে সরিয়ে রাখছে সেটা ভন্ডামি, আর এর একমাত্র উদ্দেশ্য হল কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল।
[এই বাংলা বইটি প্রকাশিত হবার সময়ে বিজেপি ও আরএসএস আবার অযোধ্যা রামমন্দির নিয়ে অতি-ব্যস্ত, কারণ তাদের অর্থনৈতিক জালিয়াতি মানুষের চোখে ধরা পড়ে গেছে। তাদের আবার এখন ধর্মের রাস্তা দরকার। মুসলমান বিদ্বেষ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিদ্বেষ এবং রামমন্দির—এগুলোই এখন সঙ্ঘ পরিবারের নতুন খেলার কৌশল।]
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরএসএস তার সামরিক ধরনের কাজের মধ্যে দিয়ে অজ্ঞ ও প্রশ্নহীন অনুগত সদস্যদের এক বাহিনী গড়ে তুলেছে, যারা সঙ্ঘের আসল চরিত্র জানেও না, জানতে চায়ও না। এই প্রশ্নহীন আনুগত্য আরএসএস-এর নানা স্তরের সদস্য ও সমর্থকদের মধ্যে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী চিন্তাভাবনা জাগিয়ে তোলা ও তাদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে সুবিধেজনক হয়েছে। এই হিন্দুত্ববাদী চিন্তাভাবনাগুলি কী রকম এবং সেগুলি কীভাবে এই গোষ্ঠীর মধ্যে বা বাইরে কোন প্রকৃত বিরোধিতার সম্মুখীন হয়নি বললেই চলে, সেটা আমি এই বই-এ ব্যাখ্যা করব। এই অত্যন্ত সংগঠিত ধর্মীয় দক্ষিণপন্থার আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের প্রগতিশীলরা বড়জোর দু-একটা অসংগঠিত প্রচেষ্টা করেছেন। আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে এমন আশ্চর্য মিল—ঠিক আমেরিকার মতোই ভারতেও দক্ষিণপন্থীরা যতদূর সম্ভব দক্ষিণে যেতে পারে, চরমপন্থী হতে পারে, কিন্তু মূল ধারার মধ্যপন্থীরা (যেমন কংগ্রেস পার্টি) তাদের মধ্যপন্থা প্রমাণ করতে এবং সমাজতান্ত্রিক গণআন্দোলন থেকে দূরত্ব রক্ষা করতে ব্যস্ত। কংগ্রেসের মধ্যে কোনো শক্তিশালী জাতীয় নেতৃত্ব আজ আর তেমন নেই।
আরএসএস-এর ভেতরে যেটুকু বিরোধীতা হয়েছে সেটা আবার এসেছে তাদের মধ্যে অতি দক্ষিণপন্থী অংশ থেকে। অযোধ্যায় রামমন্দিরের বিষয়টিকে সাময়িকভাবে সরিয়ে রাখার কৌশলের বিরোধীতা করেছেন স্বাধ্বী ঋতাম্বরা’র মতো নেতারা। নির্বাচনের আগে তাদের এই বিরোধীতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, কিন্তু ভিএইচপি ও আরএসএস মন্দিরের ইস্যুটিকে আবার সামনে নিয়ে আসছে। (বরং তাত্ত্বিক নেতা ও আরএসএস প্রচারক গোবিন্দাচার্য’র মতো দু’একজন ব্যতিক্রমী নেতা বিজেপি’র দরিদ্র-বিরোধী, জনবিরোধী কাজের সোচ্চার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এখন বিজেপি লাগামছাড়া। সৎ তাত্ত্বিক নেতাদের তারা আর গ্রাহ্য করে না। তাদের মিডিয়াগুলোতে মোদী, শাহ জাতীয় নেতা ছাড়া আর কারোর মুখ দেখানো হয় না।)
অদূর ভবিষ্যতে ভারতের সামাজিক কাঠামো অপরিবর্তনীয়ভাবে বদলে যাবে। এই বদল ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এক সময়ের নানা রঙের বাগানটি হয়ে উঠবে ধূসর, বিবর্ণ, পুষ্পপত্রহীন এক জঙ্গল—বাচ্চারা যেখানে খেলা করতে যায় না, যুবক-যুবতীরা প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে যায় না, প্রেম করতে যায় না। ওই জঙ্গলে যে কুৎসিত জীবটি বাস করে তাকে দেখলে সবাই ভয় পাবে। সে এখন ওখানকার দানব রাজা। ঔজ্জ্বল্যের প্রতি, সামাজিক প্রগতির প্রতি, ভালবাসা, স্বাধীনতা ও জীবনের প্রতি সে দানব নিষ্ঠুর।
পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমি আরএসএস এবং তার সন্তান যেমন বিজেপি, এবিভিপি ও ভিএইচপি আসলে কী এবং এই আরএসএস পরিবারকে, সঙ্ঘ পরিবারকে রুখতে গেলে আমাদের কী করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করব।
১। পবিত্র কুমার ঘোষ, বর্তমান, ১৯ জুন, ১৯৯৭। ওই সভাতে আরএসএস-এর তাত্ত্বিক এইচ.ভি.শেষাদ্রি জোর দিয়ে বলেন, যে ঊনবিংশ শতকের “বাংলার রেনেসাঁস” ছিল একটি হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন। হাস্যকর প্রস্তাব, কারণ আসলে তা ছিল হিন্দুধর্মের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এক প্রবল আন্দোলন। (ক্রমশঃ)
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৪
গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: প্রিয় পাঠক-লেখক বন্ধু স্বামী বিশুদ্ধানন্দ, আপনার বিশুদ্ধ মনোভাব প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ! এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে বিশেষ একটি গোষ্ঠির পক্ষপাতদুষ্ট ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের জন্য, ভারতের মতো অসাম্প্রদায়িক দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়নো হচ্ছে অহরহ। তাই, ডঃ পার্থ বন্দ্যোপাদ্যায়ের এই বিশেষ গ্রন্থটি আমি এত গুরুত্বপূর্ন মনে করে, সম্পূর্ণ বাংলায় প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, (যদিও বইটি অনলাইন থেকে ক্রয় করা যায়) যাতে প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘরে, সম্প্রীতির বার্তা পৌছয়। ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা সর্বক্ষণ !!
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০৪
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: দুঃখজনক হলেও চরম সত্য যে ভারত ও তার নেতৃত্ব একটি নিষ্ঠুর একচোখা দানবের উদরে চলে যাচ্ছে। যে ভারত সেকুলার ও কল্যানমুলক কনসেপ্টের উপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাচ্ছিলো আজ তা পুরোপুরি চরম দক্ষিণপন্থী গলাকাটা ক্যাপিটালিজম ও সামন্তবাদের একটি মিশ্রনে পরিণত হয়েছে।