নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আরএসএস—রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ
সঙ্ঘ কী, এবং কী নয়
‘যিশুখ্রিস্ট একটি ফালতু ধারণা। হিন্দুদের জানার সময় হয়েছে যে যিশুখ্রিস্ট কোন আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বা নৈতিক শক্তির প্রতীক নন, তিনি সমাজবাদী আগ্রাসনের নৈতিক ভিত্তি তৈরির একটা উপাদান মাত্র। এ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদীদের কাজে লেগেছেন তিনি। হিন্দুদের তাই জানা উচিত যে তাদের দেশের ও সংস্কৃতির পক্ষে যিশুখ্রিস্ট সমস্যা ছাড়া কিছু নয়’।
আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও তাত্ত্বিক, যিশুখ্রিস্ট সম্পর্কে তাঁর বইয়ে একথা লিখেছেন।
১৯২৫ সালের হিন্দুদের পুণ্যতিথি বিজয়া দশমীতে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ডঃ কে বি হেডগেওয়ার আরএসএস সংগঠনটির পত্তন করেন। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এই দিনে শ্রীরাম রাক্ষসরাজ রাবণের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলেন। সঙ্ঘ ও তার সন্তান সংগঠনগুলি (যেমন বিজেপি) হিন্দু ভোট পাওয়ার জন্য ও মুসলিম-বিরোধী ঘৃণা উসকে দেওয়ার জন্য সাফল্যের সঙ্গে রামের নাম ব্যবহার করে আসছে। মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পাশাপাশি ভারতীয় জনসঙ্ঘ (এখন বিজেপি) এবং ভিএইচপি (বিশ্ব হিন্দু পরিষদ) ভারতে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অভিযুক্ত।
আরএসএস-এর এখন আরও দুটো গুরুত্বপূর্ণ শাখা-সংগঠন আছে—বজরং দল (ভিএইচপি’র যুব শাখা) এবং বনবাসী কল্যাণ আশ্রম—আদিবাসীদের তাদের দলভুক্ত করার লক্ষ্যে যে সংগঠনটির জন্ম দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আছে ছাত্র সংগঠন এবিভিপি এবং শ্রমিক সংগঠন বিএমসি (ভারতীয় মজদুর সংস্থা)।
বিজেপি-র সংসদীয় নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী সারা জীবন আরএসএস-এর সদস্য ছিলেন। এখনকার মোদী, শাহ যোগীর মতো প্রথম সারির নেতারাও তাই। বিজেপি-র বেশিরভাগ নেতা ও সক্রিয় কর্মী এসেছে আরএসএস থেকে। তারা হিন্দু আধিপত্যবাদের তত্ত্বে আপাতমস্তক ডুবে আছে। বাজপেয়ী আগে ছিলেন সঙ্ঘের পুরো সময়ের কর্মী, যেমন ছিলেন আদবানি। পরে তাকে বিজেপির কাজে ছেড়ে দেওয়া হয়। যেমন আমার বাবা জিতেন্দ্রনাথ, যিনি বাজপেয়ী ও আদবানির সতীর্থ ছিলেন, তাঁকেও আরএসএস জনসঙ্ঘের কাজ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গে পাঠায়। এ বিষয়ে পরে আরও বিশদ বিবরণ আছে।
তাঁর রচিত এক কবিতায় বাজপেয়ী বললেন, “হিন্দু হিন্দু মেরা পরিচয়”। অর্থাৎ ‘আমার পরিচয় হল আমি হিন্দু’। এ থেকে সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রচারের সময় তাঁর বক্তৃতার কথা মনে পড়ে যায়। “এদেশে হিন্দু হওয়া কি অপরাধ?” এখনও বাজপেয়ী সেই হিন্দুত্ববাদী হিন্দু। শুধু তাঁর কথা একটু পরিশীলিত হয়েছে, একটু সংযমের ছাপ পড়েছে। বিজেপির সাম্প্রতিক কাজকর্মের ধরনে সাম্প্রতিক কালে যেমন একটু পালিশ পড়েছে।
বিজেপির এই উল্কা-সম “অস্পৃশ্য” ধর্মীয় সংখ্যলঘু ও নারী—যারা চিরাচরিতভাবে নিপীড়িত—তাদের ওপর আরও সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। বিজেপি-র মিত্র শিবসেনা ও শিবসেনার নেতা বাল ঠাকরে খোলাখুলি ভাবেই নিপীড়ক সামাজিক ব্যবস্থার সমর্থক। ঠাকরে বলেছিলেন যে ভারতের জন্য গণতন্ত্র ঠিক নয়—ভারতীয়দের জন্য দরকার একটি “ভালো একনায়কতন্ত্র”। বিজেপি-র গুরুত্বপূর্ণ নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদবানি এখন খোলাখুলি ভাবে ভারতের বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী-কেন্দ্রিক ব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রপতি-কেন্দ্রিক ব্যবস্থার প্রস্থাব এনেছেন। এ প্রস্তাব খুবই চিন্তার ব্যাপার। এটি স্বৈরাচারী শাসনের সূচক।
গোয়ালিয়র রাজ পরিবারের রানিমা বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া বে-আইনী ঘোষিত “সতী” প্রথার পক্ষে কথা বলেছেন। কথা বলছেন হিন্দুদের জাতপাত ব্যবস্থার পক্ষে—যেখানে ব্রাহ্মণ ও উঁচু জাতির লোকেরা সমাজের নেতা, আর নিচুতলায় দারুণ দারিদ্রের মধ্যে, মৃত্যুর মধ্যে অবস্থান নিচু জাত ও অস্পৃশ্যদের। এম এস গোলওয়ালকর ও বালাসাহেব দেওরস যদিও আজকের এই “অধঃপতিত” জাত-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বলেছিলেন, কিন্তু তাঁরা জাতিভেদ প্রথা তুলে দেওয়ার কথা বলেননি।
আরএসএস ও তার বিভিন্ন শাখা সংগঠনে জাত-ব্যবস্থা মানা হয়, প্রয়োগও করা হয়। হিন্দুত্ববাদ মাফিয়ারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে দলিত ও তথাকথিত নিচু জাতের মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন করে যাচ্ছে। এরা অনেকে সরাসরিভাবে হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত। অনেকে আবার হাওয়ায় ভেসে আসা সমর্থক গুন্ডা।
তবে সব জাতের হিন্দুদের তাদের কৃত্রিমভাবে তৈরি “ঐক্য প্ল্যাটফর্মে” একত্রিত করার উদ্দেশ্যে ইসলাম ও অন্যান্য “বিদেশী” ধর্মের প্রতি ঘৃণার একটি ধারণা তৈরি করা হয়েছে। দলিত, বনবাসী ও সমাজের অন্যান্য নিপীড়িত শ্রেণীগুলির সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্যে বীরসা মুন্ডা-র মতো “নিচু জাত”-এর বিখ্যাত সব বীরদের নাম আরএসএস-এর একাত্মতা স্তোত্রে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবীদের কোনো নাম নেই।
ভারতীয় রাজনীতির নতুন তারকা বিজেপি সম্পর্কে জানতে হলে আরএসএস কী (?) তা খোলা মনে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল ভারতীয়রা, বিশেষ করে যাদের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক বিশ্বাস নেই, তাঁরা আরএসএস সম্পর্কে, বিশেষ করে আরএসএস কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বিশেষ জানেন না, অথবা পূর্ব ধারণার কারণে সেগুলি দেখতে অস্বীকার করেন। তাঁদের অনেকেরই চোখে নানা রঙের চশমা আছে। আমার মতে, এই অজ্ঞতা, এই অস্বীকারের ফলে সঙ্ঘের নানা সংগঠনগুলি এত দ্রুত বেড়ে উঠতে পেরেছে।
আসলে আরএসএস-কে তার নিজের খেলাতেই পরাস্ত করতে হবে। তাদের আধিপত্যবাদী ও বিভাজনকারী হিন্দুত্বের তত্ত্বকে হারাতে হবে হিন্দুধর্মের অসাম্প্রদায়িক এবং সবাইকে নিয়ে চলার ধারণা দিয়ে—যে হিন্দুধর্ম শ্রীচতৈন্য, রামমোহন রায়, রামকৃষ্ণ পরমহংস ও ভক্ত কবীরের ধর্ম। এঁদের সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবার ও অন্যান্য সামাজিক-ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর ফারাক দেখিয়ে দিতে হবে। তবেই, একমাত্র তবেই, সব বিষয়ে তাদের ধর্মান্ধতা ও প্রতারণা ঠিক কতটা, সেটা ঠিকমত বোঝা যাবে ও তার মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।...(ক্রমশ)
২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: সব ধর্মই ভ্রান্ত ধারনার উপর গড়ে উঠেছে।
৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২২
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সকল ধর্মই অনাচারের সৃষ্টি করে,হাজার হজার উদাহরণ আছে বাংলাদেশে।পিটিয়ে মেরে আগুনে পোড়ানোএই ঘটনা কয়েক মাস আগে ঘটেছে।এটা আরএস এস করে নাই।হিন্দুরাও করেনাই এটা করেছে আমাদের দ্বীনি ভাইরা।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: তাদের কিছু অনাচারের উদাহরণ দিলে ভালো হত। কোন কোন ক্ষেত্রে এদের ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা মানুষ জানতে পারত।