নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দানবের পেটে দু\'দশক (মূল গ্রন্থ- IN THE BELLY OF THE BEAST) পর্ব-১২

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৯



আরএসএস কি সত্যিই ফ্যাসিবাদী?
কোনো কোনো মহলে আরএসএস-কে ফ্যাসিস্ট বলা হয়ে থাকে। এ দাবির সারবত্তা কতটা? কাউকে ফ্যাসিস্ট বলা হয় কেন? আরএসএস বা বিজেপি-কে ফ্যাসিস্ট বলার আগে দেখে নিতে হবে ফ্যাসিস্ট কথাটার মানে কী, আর তাদের ধারণাগুলির সঙ্গে “সঙ্ঘ” পরিবারের কাজকর্ম মেলে কিনা।
ফ্যাসিবাদ বলতে বোঝায় ১৯২০-র দশকে ইউরোপে জনপ্রিয় হওয়া কিছু বিশ্বাসগুচ্ছ—অনেক সময় আবার একে অপরের সঙ্গে মেলে না। জার্মানির যোহানেস গুটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মার্ক ট্রিশ-এর কথা অনুসারে, কোনও দল বা সংগঠন নিম্নলিখিত ধারণাগুচ্ছ (বা এর কিছু অংশ) মেনে চললে তাকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দেওয়া যায়—
১) “জাতির প্রাচীন গৌরবে” ফিরে যাওয়ার তত্ত্ব প্রচার—যা হিটলার করেছিল;
২) স্তর-বিভাজিত, সামরিক ধরণের কর্পোরেট সামাজিক সংগঠন—অর্থাৎ হিটলারের আদলে গেস্টোপো বা এসএস বাহিনি এবং তার নানা স্তর;
৩) নেতাকে প্রায় পুজো করা—যা এখন ভারতের মিডিয়ার কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে করা হচ্ছে (কিন্তু আসল চালক হলেন আরএসএসের নেতা)।;
৪) জাতীয় আত্মনির্ভরশীলতার ডাক দেওয়া;
৫) “পূর্ণ কর্মসংস্থান”-এর ডাক দেওয়া;
৬) আক্রমণাত্মক জাতীয়তাবাদী বিদেশ নীতি।
ডঃ ট্রিশ-এর কথা অনুসারে, এ সবগুলি পয়েন্ট মিললে তবেই সমস্যা দেখা দেয়, তবে প্রথম তিনটি পয়েন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আরএসএস এবং বিজেপি বা ভিএইসপি-র মত তার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলি কি এইসব ধ্যানধারণা মেনে চলে? দুঃখের বিষয়, এর উত্তর হল হ্যাঁ। প্রাচীন তথাকথিত হিন্দু জাতির “গৌরবোজ্জ্বল ভারতীয় প্রথা”-য় ফিরে যাওয়া হল তাদের প্রধান বিশ্বাস, প্রধান পথ। আরএসএস প্রতিদিন তার সামরিক ধরনের শাখা বা জমায়েতে তাদের কর্মী ও সমর্থকদের এই শিক্ষাই দেয় যে হিন্দুদের “সর্ব-প্রাচীন জাতি ভারতবর্ষ” ছিল বিশ্বে “সর্বশ্রেষ্ঠ”; তার অধিবাসীরা “সুখী, সমৃদ্ধিশালী ও ধার্মিক”। সঙ্ঘের নেতারা কখনোই এটা বলতে ভোলেন না যে ভারতের সব সমস্যার শুরু হল তখনই, যখন হিন্দুদের “অনৈক্যের ফলে” মুসলমান ও তারপর ব্রিটিশ আক্রমণকারীরা ভারতে হানা দেয় ও এই “পবিত্র ভূমি” দখল করে নেয়। সঙ্ঘ পরিবারের দীর্ঘকালীন লক্ষ্য হল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে “অখন্ড ভারত” গড়ে সেই “প্রাচীন গৌরবোজ্জ্বল যুগ” ফিরিয়ে আনা। অখন্ড ভারতের অর্থ “হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী” ও “গান্ধার থেকে ব্রহ্মদেশ”, অর্থাৎ উত্তরে তিব্বত থেকে ভারতের দক্ষিণ ও পশ্চিমে আফগানিস্তান থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, অর্থাৎ বার্মা, লাওস, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। সারা বিশ্বের হিন্দুদের সংগঠিত করে তাদের “ঐক্যের” এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে হবে।
আরএসএস সত্যিই একটি স্তর-বিভাজিত সামরিক ধরনের সংগঠন, যা তার কর্মীদের সেনাদলের কায়দায় প্রশিক্ষিত করে।
আরএএস-এর একজন সর্বোচ্চ নেতা আছেন—‘সরসঙ্ঘচালক’। ইনি নির্বাচিত নন। প্রকৃতপক্ষে আরএএস-এর কোনও নেতাই নির্বাচিত নন—এই সংগঠনের ভিতরে নির্বাচনের কোনও ব্যবস্থাই নেই। সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশ, বিনা প্রশ্নে পালন করা হয়। তাছাড়া সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ কেশবরাও বলিরামরাও হেডগেওয়ার, দ্বিতীয় ও সবচেয়ে বিখ্যাত সর্বোচ্চ নেতা মাধবরাও সদাশিবরাও গোলওয়ালকর বা “গুরুজী”—এদের যেভাবে প্রায় দেবজ্ঞানে ভক্তির সঙ্গে স্মরণ করা হয় তা প্রায় পূজার সামিল। এ দুজনকে আরএসএস অবতারের মর্যাদা দেয়। আরএসএস-এর অফিসে, তাদের দোকানে এদের ছবি পাওয়া যায়, সঙ্ঘের কর্মীদের বাড়ির দেওয়ালে এদের ছবি শোভা পায়। এদের জীবন সম্পর্কে নানা গল্প—প্রায়শ অতিরঞ্জিত—আরএসএস-এর শিবির ও অন্যান্য জমায়েতে নিয়মিতভাবে বলা হয়। এদের জীবন ও কাজের ওপর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা আহ্বান করা হয়, শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধগুলি পুরস্কার পায়। (ক্রমশঃ)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সম্ভবতো এই বইটির প্রতি আগ্রহী পাঠকের সংখ্যা কম।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:২৯

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ পাঠকবন্ধু, আপনি হয়তো ঠিকই বলেছেন। প্রসঙ্গক্রমে বলি- একটি ছোট্ট বীজের মধ্যে যে মহীরুহ লুকিয়ে থাকে, তা যেমন চোখে দেখা যায় না, বীজ টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেললেও কিছু চোখে পড়বে না। তেমনি এই বইটির মধ্যে কী আছে, তা সম্পূর্ণ বইটি না পড়লে বুঝতে পারা যাবে না। বইটি সম্পূর্ণ প্রকাশ করাই আমার উদ্দেশ্য। সাধারণ পাঠকের মুখ চেয়ে আমার এ উপস্থাপনা নয়। অদূর ভবিষ্যতে অনেক গবেষকদের কাজে লাগবে এই মূল্যবান গ্রন্থটি। বাংলাদেশের রেডিওতে সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠে একটা গান শোনা যায়, আশা করি আপনিও শুনেছেন--'কাউয়ায় কমলা খাইতে জানে না, মুর্গাায় সোনাদানা চেনে না'। ভাল থাকবেন--আবার কথা হবে।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্যের উত্তর ভালো দিয়েছেন।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:২৫

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: প্রিয় রাজীব নুর ভাই, আমার উত্তরটা অনেকের কাছে ভাল না লাগতেও পারে। তবু আমার যা মনে হল তাই বললাম। আর একটা কথা ভাই--এই যে নকল নামের পাঠক-বন্ধুরা কেন আসল নামে আসে না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। ছদ্মবেশী কেন এরা? এতে কী লাভ হয়? এসব বুঝি না ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.