নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এখন সওয়া ছ-টা। শিক্ষক হুইসিল বাজালেন। সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শিক্ষক তাদের মন্ডল আকারে বসতে বলেন। ধুলোর ওপর বসে পড়ে তারা। এর পর কী কী অনুষ্ঠান আছে সেগুলো জানান শিক্ষক। এগুলো অবশ্য বাংলায় বলা হয়, হিন্দিভাষী এলাকায় হিন্দিতে; কারণটাও পরিষ্কার—না শিক্ষক না ছাত্র, কেউই সংস্কৃতে কথা বলতে বা বুঝতে পারে না—সংস্কৃতে নির্দেশ দেওয়াটা “হিন্দু সংস্কৃতি”-র প্রতীক, যেমন সামরিক ধরণের মার্চ করানোটা সামরিক শৃঙ্খলার প্রতীক।
এবার শুরু হয় “চর্চা” (তাত্ত্বিক আলোচনা): “আমাদের সংগঠনের পুরো নাম কী?” কয়েকজন উত্তর দেয়, বাকিরা চুপ। “আমাদের লক্ষ্য কী?” “হিন্দু সংগঠন—হিন্দুদের সংগঠিত করা”। “আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা কে?” একজন উত্তর দেয়, “ডঃ কেশবরাও বলিরামরাও হেডগেওয়ার”। “সঙ্ঘ আর জনসঙ্ঘ (এখন বিজেপি) কি এক?” “না”—সমস্বরে উত্তর আসে। এই প্রশ্নোত্তর পর্বটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রায় প্রতিদিনই এটি অনুষ্ঠিত হয়।
এবার গান শুরু হয়। সঙ্ঘ-সদস্যদের কাছে খুব চেনা এ গানটি। প্রাচীন দেশ ভারত আর তার হিন্দু সংস্কৃতির প্রশংসাসূচক এই গান। প্রধান গায়ক এক লাইন গায়, তারপর অন্যরা সেটা কোরাসে গায়। পুরো ব্যাপারটাই প্রায় একঘেয়ে। কোনও কিছুতেই স্বতঃস্ফূর্ততার কোনও ছাপ নেই। সব কিছুই পূর্ব নির্ধারিত, শৃঙ্খলা-বদ্ধ একটা ব্যাপার। আনন্দ পাওয়াটা বাড়তি। খোলাখুলি আলোচনা একবোরেই পাত্তা পায় না। আসল জিনিস হল শৃঙ্খলা। সঙ্ঘ এভাবেই তার সদস্যদের, তাদের “অখন্ড” ভারতের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রশিক্ষিত করতে চায়।
এরপর হবে প্রার্থনা। সবাই গেরুয়া পতাকা বা “ভাগোয়া ধ্বজ”-এর দিকে মুখ করে নিজ নিজ লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। আজ দূর থেকে একজন অতিথি স্বয়ংসেবক এসেছেন। তিনি হয়ত পুরো শহরের একজন অন্যতম প্রধান কার্যনিবার্হী। তাঁর সঙ্গে মোটর সাইকেলে তাঁর এক সহকারীও এসেছেন। এঁরা ঝান্ডার কাছে নতমস্তক হন আর তারপর মুখ্য শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে ভেতরে আসার অনুমতি চান। অতিথি হিসেবে আলাদা একটা লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। সঙ্ঘে অভিবাদন জানানো হয় ঊনবিংশ শতকের মহারাষ্ট্রের বয়- স্কাউট ধরনে—ডান হাতের কনুই ভাঁজ করে সোজা জড়ো করে বুকে ঠেকানো হয়, বাঁ হাত ও পা থাকে অ্যাটেনশনের ভঙ্গিতে, তারপর মাথা নিচু করা হয়।
পূর্ব নির্ধারিত একজন স্বয়ংসেবক শিক্ষকের দিকে এগিয়ে যায়। মনোনীত এই সদস্যটি কুড়ি লাইনের সংস্কৃত প্রার্থনা স্তোত্রটি আবৃত্তি করে—প্রতিটি লাইন আবৃত্তির পর সবাই একযোগে সেটি আবৃত্তি করে। মুখ্য শিক্ষক এবার ঝান্ডাকে অভিবাদন জানানোর নির্দেশ দেন—“ধ্বজপ্রণাম এক, দো, তিন”। ঐ মনোনীত ছেলেটি এবার ঝান্ডার দিকে এগিয়ে যায়, আরএসএস-এর ঢঙে পতাকাকে অভিবাদন জানিয়ে সেটিকে নামিয়ে আনে। বাঁ হাতটি সমকোণে মুড়ে সে গেরুয়া পতাকাটিকে ভাঁজ করে শিক্ষকের দিকে এগিয়ে যায়। শিক্ষক এবার সেদিনের মত জমায়েতের সমাপ্তি ঘোষণা করেন—“সঙ্ঘ বিকিরঃ” (সবাই যে যার দিকে চলে যাও)। বেশির ভাগ ছেলে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
সন্ধে ৭-৪৫। মুখ্য শিক্ষকের সঙ্গে কিছু কথাবার্তার পর ঐ দুই বরিষ্ঠ কর্মকর্তা চলে গেছেন অনেক্ষণ হল। তারপর ঘন্টাখানেক যেসব স্বয়ংসেবক আজকের শাখায় আসেনি। তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন মুখ্য শিক্ষক। এর পর কী অনুষ্ঠান আছে তা জানিয়েছেন এইসব নিয়মিত ও অনিয়মিত সদস্যদের। এখন তিনি তার ঘনিষ্ঠ সদস্যদের মিষ্টির দোকানে নিয়ে গিয়ে জিলিপি বা অন্য কিছু খাওয়াবেন। তাদের সঙ্গে আসল ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কথাবার্তা বলবেন—সামনের নির্বাচন, স্থানীয় জনসংঘ প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা ভোটকেন্দ্রে কাকে কাকে পার্টির এজেন্ট রাখা যায়, কার কার কাছে অস্ত্র আছে, কংগ্রেসের গুন্ডারা বোমা মারলে কর্মীদের উদ্ধার করবে কারা—এই সমস্ত সিরিয়াস ব্যাপার!
এবার সবাই বিদায় নিচ্ছে। এর পর আজকের কাজ কী হল সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার আর কালকে কী হবে তা নিয়ে ভাবার পালা। মুখ্য শিক্ষককে কাজকর্ম সব ঠিকঠাক করতে হবে। শহরের প্রধান কার্যালয়ে সাপ্তাহিক মিটিং আছে। “ভেতরকার মূল” সেবকরা এবার বাড়ির পথ ধরে। স্কুল-কলেজের পড়াশোনা? সাধারণ মানের ছাত্রদের জন্য সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। অনেকেই কবে পড়া শেষ হবে তার প্রতীক্ষায় আছে। অতি মধ্য বা নিম্নমানের ছাত্র প্রায় সবাই। অনেকে বাড়ির ব্যবসায় কাজ শুরু করে দিয়েছে। বাবার বকুনি, মায়ের চোখের জল? বাড়ির কাজ? আরে, বাড়িতেই তো আছি (আর ভারতীয় পুরুষরা আবার ঘরের কাজ করবে কেন? সে তো মেয়েদের কাজ!)। “দেশের কাজ” হল সবার আগে।
হিন্দু মাতৃভূমিকে উদ্ধার করতে হবে। স্থানীয় জনসংঘ বা এবিবিপি প্রার্থীকে জেতাতে হবে। এগুলো আগে—অন্য কাজ পরে। নইলে “ভারতবর্ষের পুণ্যভূমি” চলে যাবে “লোভাতুর ধর্মান্ধ মুসলমান, বিদেশি মিশনারি আর কমিউনিস্টদের” হাতে!
“হিন্দুত্ববাদী দেশপ্রেমিকরা” কি তা হতে দিতে পারে?... (ক্রমশ)
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৭
গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: প্রিয় পাঠক বন্ধু, ধন্যবাদ আপনি ঠিক বলেছেন। আমি প্রথমে তেমনই ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে ভাবলাম, বেশি বড় পর্ব হলে অনেক পাঠক-বন্ধুর কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এরকম ত্রুটির জন্য পরামর্শ দিলে আমি খুব খুশি হব। ভাল থাকবেন, আবার আসবেন। শুভেচ্ছা !!
২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: ধীরে ধীরেই পোষ্ট করুণ। এত তাড়া কিসের?
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:০৫
গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ, রাজীব নুর ভাই আপনার উপদেশ বা পরামর্শ'র জন্য। ভারতে এখন বড় দুঃসময়! আর এর দুষ্প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে, আরও পড়বে, বাংলাদেশসহ, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি ও বিশ্বের অন্যত্র। আপনি একটু খোঁজ নিলেই বুঝতে পারবেন। কোনও মারণ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আগে, তার নিয়ন্ত্রণ যেমন অতি আবশ্যক, এই গ্রন্থটিতে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে। এটা কোনও কাল্পনিক উপন্যাস নয় যে ধীরে ধীরে স্বপ্নলোকে বিচরণের কথা ভাবলেই হবে। আমার অনুরোধ, প্রতিটি পর্ব মন দিয়ে পড়ুন, বুঝতে পারবেন- কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে চলেছে(?)। প্রয়োজনে সদর্থক আলোচনা করুন। কিন্তু দয়া করে এই লেখার গতিরোধ করার প্রচ্ছন্ন অনুরোধ করবেন না। শুভেচ্ছা !!
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ১৬-১৭ এক সাথেই দিতে পারতেন।