![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসেন পরিচিত হই।
প্রশাসন ক্যাডারের মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম
‘ডিসি’ মানে কি ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার না ডিভিশনাল কমিশনার? ‘কমিশনার’ তো অনেক রকম আছে। প্রশাসন কাডারের কমিশনাররা আবার কোন ধরণের কমিশনার। পুলিশের তো পুলিশ কমিশনার আছে, কাস্টমস্ ও ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের আছে কাস্টমস্ বা ট্যাক্স কমিশনার, তাহলে প্রশাসন কাডারের কমিশনার আবার কি, তার কাজই বা কী? প্রশাসন ক্যাডারের ঐতিহ্যবাহী এসব পদ নিয়ে সাধারণ মানুষের নানারকম অস্পষ্টতা রয়েছে।
একদিন একজন যুবক এলেন কমিশনার অফিসে। এসে বললেন, “আমার একটি জাতীয়তা সনদ প্রয়োজন”। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বললেন, “আপনি কি সত্যায়িত করার জন্য এসেছেন?” তিনি বললেন, “না, না, অরিজিনাল সার্টিফিকেটের জন্য এসেছি”। কোনভাবে মেলাতে না পেরে উক্ত কর্মকর্তা বললেন, “আপনি আসলে কোন অফিসে এসেছেন বলে মনে করেন? এখানে তো জাতীয়তা সনদ দেয়া হয় না।” তিনি বললেন, “এটা ওয়ার্ড কমিশনারের অফিস না?”
বাংলাদেশে এখন কত প্রকার কমিশনার আছে তার শেষ নাই। নির্বাচন, তথ্য, মানবাধিকার, কাস্টমস্, ট্যাক্স, পুলিশ ইত্যাদি বিভাগ ও কমিশনের নানা কমিশনার রয়েছেন।
সাধারণ মানুষের মত অনেক শিক্ষিত মানুষও সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদ/পদের ক্রম/কাজের প্রকৃতি সম্পর্কে জানেন না। সত্য হল এই, প্রশাসন বা কমিশনার কথাটি যেভাবে নানা বিভাগ/দপ্তর কর্তৃক আত্নস্থ করে জনসম্মুখে বহুল প্রচার হয়ে চলেছে, আদতে এই শব্দগুলি যে একান্তই সিভিল সার্ভিস প্রশাসনের সুপ্রাচীনকালের ঐতিহ্য, অন্য কারো নয় একথাটা অনেকেই জানেন না। আবার, একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমানকালের প্রশাসনের সামগ্রিক ধারণায় বিভাগ-দপ্তর নির্বিশেষে সরকারের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তি হতে সর্বনিম্ন পদে কর্মরত সকল কর্মচারীই প্রশাসনের অংশ, তবে বিভাগ বা দপ্তরওয়ারী নিজস্ব নামকরণের যে বর্তমান ধারা তাতে ‘প্রশাসন’ কিংবা ‘কমিশনার’ শব্দ বা পদগুলি দ্বারা সাধারণ মানুষের বিভ্রান্ত হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই আমরা কিছুটা ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হলে ১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে মোগল সম্রাট শাহ আলমের সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সন্ধি অনুযায়ী বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যার দেওয়ানী বা রাজস্ব আদায়ের ভার কোম্পানী গ্রহণ করে। মূলত রাজস্ব আদায়ের দিকে কোম্পানীর মনোযোগ ছিল বিধায় দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার দিকে খুব একটা তৎপরতা তাদের ছিল না। কিন্তু ভারতে কোম্পানীর কর্মচারীগন প্রশাসনিক ক্ষমতার ভাগীদার হতে প্রথম থেকে আগ্রহী ছিলেন। কোম্পানীর নীতিনির্ধারকগণ সমগ্র দেশের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য একটি শক্তিশালী প্রশাসনিক ইউনিট গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফলে ইংরেজগণ রাজস্ব প্রশাসনব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারী ও সাধারণ প্রশাসন গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেয়।
ছিয়াত্তরের মনান্তর (১৭৬৯-১৭৭০) এর কারণে এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যুর ফলে রাজস্ব আদায় মারাত্নক হুমকির মুখে পড়ে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সিলেক্ট কমিটি তাই ১৭৬৯ সালের ১৬ আগস্ট রাজস্ব আদায় তদারকির জন্য তৎকালীন বাংলাকে ১৯টি জেলায় ভাগ করে একজন করে ইংরেজ সুপারভাইজার নিয়োগ করেন। রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি তারা তৎকালীন পরিস্থিতিতে সাধারণ প্রশাসনিক কাজও কিছুটা সম্পন্ন করে থাকতেন। অবশ্য এই সুপারভাইজারগণকে তখনই কলকাতা ও চব্বিশপরগণা জেলায় কালেক্টর হিসাবে অভিহিত করা হত। ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস ক্ষমতায় আসার পর রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় এবং ভারত উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ায় ১৭৭৪ সালে ইংরেজ সুপারভাইজারদের বাদ দিয়ে দেশীয় কালেক্টর নিয়োগ করেন। দেশের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা, প্রজা অসন্তোষ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদি একই সূত্রে গাঁথা বিধায় এরই ফলশ্রুতিতে রাজস্ব আদায়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছেনা তা বুঝতে পেরে ইংরেজগন বোর্ড অব রেভিনিউয়ের প্রধান হিসাবে ১৭৮৬ সালে কালেক্টরগণকে সাধারণ প্রশাসনের এবং ১৭৮৭ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তখন জেলা জজের দায়িত্ব পালন করতেন। ডেপুটি কমিশনার বা জেলা প্রশাসক হিসাবে অফিসিয়ালী না হলেও কার্যত তখন থেকেই জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। ইংরেজগণ এদেশে বিদ্রোহের মুখে ধীরে ধীরে উপলব্ধি করে যে, শুধুমাত্র ভূমি রাজস্ব থেকে শোষনের ভূমিকায় থেকে এদেশে তাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করা সম্ভব নয় বিধায় জনকল্যাণমূলক কাজের দিকে কিছুটা মনোনিবেশ করার চেষ্টা করেন। এদেশীয় নিযুক্ত শিক্ষিত কালেক্টরগণের মাধ্যমে সাধারণ প্রশাসনের ভার দিয়ে ইংরেজগণ কিছুটা হলেও জনমুখী প্রচারণায় প্রয়াসী হয়ে তাদের ইমেজ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। ১৭৭২ থেকে ১৭৯৩ সাল পর্যন্ত জেলা ব্যবস্থায় নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। এভাবে ইংরেজগন জেলা প্রশাসনে রাজস্ব ব্যবস্থা, ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিচার এবং সাধারণ প্রশাসনকে অন্তর্ভু্ক্তি ঘটায়। ফলে প্রশাসন ব্যবস্থায় ‘কালেক্টরেট প্রশাসন’ বা জেলা প্রশাসন একটি শক্তিশালী ইউনিট হিসাবে কাজ করে যা বিগত দুইশত বছরের অধিক সময় ধরে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এদেশে টিকে আছে।
১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইংরেজগণ রাজস্ব আদায়বিষয়ক চিন্তাভাবনা থেকে মোটামুটি মুক্ত হয়ে রাজ্যসীমা বিস্তার ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে মন দেয়। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে (দি বেঙ্গল রেভিনিউ কমিশনারস্ রেগুলেশন) কালেক্টরের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য সার্কিট হাউজে বিভাগীয় কমিশনারের হাতে কেবল রাজস্ব এবং ফৌজদারী বিষয়ক আপীল শ্রবণের ক্ষমতা রাখা হয়। কমিশনার পদটি তখন থেকে সৃষ্ট। তখন কমিশনারগন কয়েকদিন যাবৎ সার্কিট হাউজে (তৎকালীন সার্কিট কোর্ট) অবস্থান করে রাজস্ব ও ফৌজদারী আপীল শ্রবণ করতেন। একথা বলে রাখা ভাল, সার্কিট হাউজ তৈরী করা হয় কমিশনারের আপীল শ্রবন ও রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখভাল ও পরিদর্শনের জন্য। এজন্য সার্কিট হাউজকে কমিশনারের ‘Extended Home’ বা বর্ধিত বাসভবন বলা হয়ে থাকে এবং এ কারণে একমাত্র কমিশনারকেই সার্কিট হাউজের ভাড়া প্রদান করতে হয় না (সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারাও তা নির্ধারিত)। (অবশ্য, সার্কিট হাউজে এখন নানা পদের ‘ভিভিআইপি’গণ নিজের বাসস্থান হিসাবে হরহামেশাই ব্যবহার করে থাকেন এবং কমিশনারগণও কোন কোন সময় তার বর্ধিত বাসভবনে জায়গা পান না।) পরবর্তীকালে অবশ্য সাধারণ প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও কমিশনারকে দেয়া হয় যা অদ্যাবধি বহাল আছে। ১৮৩১ সালের শেষ দিকে জজ-ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে দেওয়ানী বিচার ব্যবস্থা পৃথক করে সিভিল জজের পদ সৃষ্টি করায় জেলায় দু’জন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি হয়। কালেক্টর জেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে রাজস্ব আদায়সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিম্ন ফৌজদারী বিচার এবং সিভিল জজ দেওয়ানী মামলা ও উচ্চতর ফৌজদারী মামলাসমূহ বিচার করতেন। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারগণ উক্ত তিন জেলার জেলা ও দায়রা জজের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতেন।
১৮৩৬ সালে ‘বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট অ্যাক্ট’ পাশ হলে জেলা গঠনের প্রথম আইনগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে ডেপুটি কমিশনার বা জেলা প্রশাসক এবং কমিশনার শব্দটি আইনীভাবে চালু রয়েছে। ‘কমিশন’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘বিশেষ দায়িত্ব’। সেই অর্থে ‘কমিশনার’ শব্দটির অর্থ ‘কোন বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি’। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় তৎকালীন বঙ্গদেশে ১৮২৯ সালে অন্তত: ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর প্রত্যেক জেলায় তাদের অধ:স্তন হিসাবে পূর্ব সৃষ্ট কালেক্টরগণকে ডেপুটি কমিশনার, যা বাংলায় জেলা প্রশাসক হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তখন পর্যন্ত পুলিশ, কাস্টমস্, ট্যাক্স, পররাষ্ট্র ইত্যাদির মত অন্যান্য দপ্তর সৃষ্টি হলেও কোর সার্ভিস হিসাবে আত্নপ্রকাশ করেনি। বাংলাদেশে স্বাধীন হবার পর পূর্বতন মহকুমাগুলি জেলায় উন্নীত করায় এখন ৬৪ জেলায় ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং ৭ জন বিভাগীয় কমিশনার রয়েছেন। (প্রসঙ্গত: কমিশনার পদটিকে বর্তমানে বিভাগীয় কমিশনার বলা হয়ে থাকে। নানা ধরণের কমিশনারের ভীড়ে আসল কমিশনার কোনটি তা বুঝে উঠতে সমস্যার কারণে বিভাগীয় কমিশনার’ নামকরণের মাধ্যমে সাম্প্রতিককালে সরকার কিছুটা স্পষ্টীকরণের চেষ্টা করেছেন। আবার ইত্যবসরে অন্যান্য দপ্তরও ডিসি পদটি চালু করেছেন যা ডেপুটি কমিশনার বা জেলা প্রশাসকের আদলে করার চেষ্টা করা হয়েছে।)
যাহোক, নানারূপ পট পরিবর্তন ও বিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডার বর্তমানে যে রূপরেখা ধারণ করছে তার কিছুটা ধারণা নিচে দেয়া হল:
প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্রমসোপান নিম্নরূপ
মাঠ পর্যায়ে
সচিবালয়ে
সহকারী কমিশনার সহকারী সচিব
সিনিয়র সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সিনিয়র সহকারী সচিব
ডেপুটি কমিশনার উপসচিব
কমিশনার যুগ্মসচিব
কমিশনার অতিরিক্ত সচিব
সচিব
উপরের ছক থেকে বোঝা যায়, মাঠ পর্যায়ে যিনি সহকারী কমিশনার তিনি সচিবালয়ে সহকারী সচিব। অন্যান্য পদের নামকরণের ক্ষেত্রেও মোটামুটি একই রকম নিয়ম, তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে উপসচিব হিসাবে অনেক কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। আবার জেলা প্রশাসকগণের অনেকেই পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে যুগ্মসচিব হলেও সরকারের পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত পদেই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দায়িত্বাবলী:
সহকারী কমিশনার ও সিনিয়র সহকারী কমিশনারের দায়িত্ব: একজন নবীন কর্মকর্তা প্রশাসন কাডারে যোগদান করলে সহকারী কমিশনার বা পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হলে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের অধীনে কাজ করতে হয়। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বও পালন করতে হয়। একটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মোটামুটি ১৮-২৫টি পর্যন্ত শাখা থাকে। এর মধ্যে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি), রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি), জেনারেল সার্টিফিকেট শাখা (জিসিও), ভূমি অধিগ্রহণ শাখা (এল এ) ইত্যাদি মূলত সিনিয়র সহকারী কমিশনারদের পদ হলেও সাম্প্রতিক কালে কালেক্টরেটে সিনিয়র সহকারী পদে কর্মরত কর্মকর্তা না থাকায় নবীন সহকারী কমিশনারগণই এসকল দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ব্যতিত জেএম (জুডিসিয়াল মুন্সিখানা) শাখা, সাধারণ শাখা, সংস্থাপন শাখা, শিক্ষা ও কল্যান শাখা, গোপনীয় শাখা, আর এম (রেভিনিউ মুন্সিখানা শাখা), প্রবাসী কল্যাণ শাখা, ব্যবসা বাণিজ্য শাখা, পাসপোর্ট শাখা, লাইব্রেরী শাখা, ফর্মস এন্ড স্টেশনারী শাখা, স্থানীয় সরকার শাখা, আইসিটি শাখা, ত্রাণ ও পূনর্বাসন শাখা, অভিযোগ ও তথ্য শাখা, রেকর্ড রুম শাখা, ট্রেজারী শাখা ইত্যাদি শাখাসমূহ সকল কালেক্টরেটেই বিদ্যমান। ক্ষেত্রবিশেষে কোন কোন জেলায় প্রয়োজনীয়তার নিরিখে আরো কয়েকটি শাখা রয়েছে যেমন প্রটোকল, গুচ্ছগ্রাম, উপজাতীয় পুনর্বাসন ইত্যাদি। কর্মকর্তার সংখ্যা, বিশেষ বিষয়ে পারদর্শিতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় জেলা প্রশাসকগণ কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার ও সিনিয়র সহকারী কমিশনারগণকে এক বা একাধিক পদের দায়িত্ব পালন করতে দেন। এর পাশাপাশি ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭-১৪৫ ধারায় অপরাধ নিরোধমূলক কার্যক্রমের আওতায় নিয়মিত আদালত পরিচালনা এবং জনস্বার্থ রক্ষায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। এছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশনা মোতাবেক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিস্থিতি মোতাবেক সর্বপ্রকার দায়িত্ব পালন, মৃত ব্যক্তির দাফনকৃত লাশ উত্তোলন, মরণাপন্ন ব্যক্তির ডাইং ডিক্লারেশন রেকর্ড, বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, প্রটোকল দায়িত্ব পালন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব পালন, জাতীয় দিবস পালন, সমাজ কল্যানমূলক কাজে সহযোগিতা, কেন্দ্রীয় পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনায় জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বসহ জেলা প্রশাসক এবং সরকারের নির্দেশে নানাবিধ দায়িত্ব সম্পাদন করতে হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র দায়িত্ব: সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা যারা তাদের চাকুরি স্থায়ীকরণ করেছেন এবং মোটামুটি ৩ বছর জেলা প্রশাসকের অধীনে কাজ করেছেন। ভূমি মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চাহিদা প্রেরণ করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী উক্ত কর্মকর্তাদের তালিকা ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। ভূমি মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে উক্ত কর্মকর্তাদের চাকরি ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করেন এবং তাদের বেতন ভাতাদি সকল কিছুই তখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
১৯৮২ সালে উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) (তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ) এর পদকে উপজেলা রাজস্ব অফিসার পদে রূপান্তর করা হয়। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনকে গতিশীল করতে পরবর্তীতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণকে ১৯৮৮ সাল হতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়।
বাঙালী জাতির জন্য একখন্ড জমির মতো আপন এবং প্রাণপ্রিয় বস্তু আর কিছু আছে বলে মনে হয় না। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে অদ্যবধি জমিই মানুষের সবচেয়ে যক্ষের ধন আবার এই জমিই সকল সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আর জটিলতর আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ভূমি ব্যবস্থাপনাকে দিন দিন আরো জটিলতর করে তুলছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে প্রায় নবীন একজন কর্মকর্তাকে তাই দক্ষতা, সততা এবং কর্তব্যনিষ্ঠা দিয়ে এই জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মামলা-মোকদ্দমার সূচনা জমি থেকে সৃষ্ট হলেও এ বিষয়ে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং সিস্টেমেটিক এপ্রোচ নেই যাতে প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরো সহজতর, জনমুখী করতে পারি। এক্ষেত্রে চৌকষ কর্মকর্তা হিসাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গণ যতটা ভূমিকা করতে পারবেন অন্য কেউ তা করতে পারবেন না একথা অনস্বীকার্য। (অথচ, ইদানিংকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র মত ১ম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসারদের সরিয়ে ২য় বা ৩য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের হাতে ভূমি ব্যবস্থাপনা অর্পন করে আমরা অবাস্তব চিন্তাভাবনা করছি।)
সহকারী কমিশনার (ভূমি)র দায়িত্বাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি নিম্নরুপ:
রেকর্ড হালকরণ -স্বত্বলিপি প্রণয়ন, নামপত্তন ,জমা খারিজ ও জমা একত্রীকরণের মাধ্যমে খতিয়ান সংশোধন , সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ তে বর্ণিত বিধানসমূহ প্রতিপালন সাপেক্ষে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর নিয়ন্ত্রণ ও রেকর্ড হালকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রাকৃতিক কারন ব্যতীত অন্য কারণে ভূমির প্রকৃতি পরিবর্তন রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন, ১৯৭২ সালের পি,ও, ৯৬ ও ৯৮ এর প্রয়োগ (ভূমি সংস্কার আইন ১৯৮৪ এর আলোকে), লা-ওয়ারিশ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা , সিকস্তি পয়স্তি জমির ব্যবস্থাপনা এবং রেকর্ড হালকরণ , এল,এ, কেইসের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এই সংক্রান্ত রেজিস্টারসমূহ হালকরণ।
খাস জমি ব্যবস্থাপনা-খাসজমি চিহ্নিতকরণ , খাসজমি উদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণ ,এস,এ,অপারেশনে ভুলবশতঃ ব্যক্তির নামে রেকর্ডসহ, নদী পয়স্তি জমি চিহ্নিতকরণ, দিয়ারা জরিপের ব্যবস্থা ও রেজিস্টারভূক্তি, ভূমি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ, ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বিতরণ কাযক্রম ত্বরান্বিতকরণ, আদর্শ গ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন, চারণ ভূমি,হালট,গোপাট ইত্যাদি তদারকি দখল/সীমানা বহালকরণ, পরিত্যক্ত নদী/জলাশয় তদারকি,সীমানা নির্ধারন এবং খাস তালিকা হাল-নাগাদকরণ, ইউয়িন ভূমি অফিস তথা কাছারী কম্পাউন্ডের খাস জমি রক্ষণাবেক্ষণ, লা-ওয়ারিশ/পরিত্যক্ত জমি খাস খতিয়ানভূক্তির পদক্ষেপ গ্রহণ।
অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা-অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত পাঁচটি রেজিষ্টারের যথাযথ সংরক্ষণ, অর্পিত সম্পত্তি তালিকা ( ক ও খ তফসিলভূক্তসহ সেন্সাস তালিকা) এবং অর্পিত সম্পত্তি কেইসের তফসিলসহ তালিকা সংরক্ষণ, মৌজাওয়ারী প্লটওয়ারী অর্পিত সম্পত্তির ভোগদখলকারীদের তালিকা প্রস্ত্তত, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পদক্ষেপ গ্রহণ ,অর্পিত সম্পত্তি যথাযথ ইজারার ব্যবস্থা, প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অর্পিত সম্পত্তির হোল্ডিংগুলি চিহ্নিতকরণ এবং ঐ সকল হোল্ডিংয়ে কোন নামপত্তন জমা খারিজ বা জমা একত্রীকরণ হয়ে থাকলে তার সংশ্লিষ্ট অংশটুকু বাতিলকরণ , অর্পিত সম্পত্তি ২নং জমাবন্দি রেজিস্টারের প্রতিটি সংশ্লিষ্ট হোল্ডিংয়ে লাল কালি দিয়ে মার্ককরণের ব্যবস্থা গ্রহণ, এই সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল মোকদ্দমার ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, অর্পিত সম্পত্তির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ, অর্পিত সম্পত্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রেরণ , অর্পিত সম্পত্তি থেকে অবমুক্তির বিষয়ে মতামত প্রদান।
ভূমি হুকুম দখল সংক্রান্ত দায়িত্বাবলী-অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নোটিশ জারিতে সহায়তা (৩ ধারার নোটিশ), বিভিন্ন সংস্থার অনুকূলে বরাদ্দকৃত অব্যবহৃত জমি চিহ্নিতকরণ, এল,এ,কেইসের মাধ্যমে প্রাপ্ত এরূপ অব্যবহৃত জমি সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ জেলা প্রশাসক তথা জেলা কালেক্টরের নিকট প্রেরণ, জেলা প্রশাসক/জেলা কালেক্টরের অনুমোদনক্রমে এ সকল জমি সরকারের রাজস্ব বিভাগের আওতাধীনে নেওয়া ও ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন সংস্থার এরূপ অধিগ্রহণকৃত জমির পূর্ণাঙ্গ তালিকা সংরক্ষণ, এল,এ,কেইসের মাধ্যমে হস্তান্তরিত জমির নামপত্তন/রেকর্ড হালকরণ।
ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য ও আদায়-ভূমি উন্নয়ন করের বকেয়া ও হাল দাবী নির্ধারণের ব্যবস্থা গ্রহণ, বিভিন্ন সংস্থার নিকট পাওনা বকেয়া ভূমি উন্নয়ন করের বিবরণী প্রস্ত্তত, বিভিন্ন সংস্থার নিকট থেকে দীর্ঘদিন অনাদায়ী দাবী সম্পর্কে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যবস্থা, দাবী আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও আদায় নিশ্চিতকরণ খেলাপী তালিকা প্রস্ত্তত (রিটার্ণ-৩), ভূমি উন্নয়ন কর সংক্রান্ত মোকদ্দমা নিম্পত্তি, সার্টিকেট মোকদ্দমার জন্য রিকুইজিশন দাখিলের ব্যবস্থা, আদায়কৃত অর্থ যথাযথ খাতে জমাকরণের নিশ্চয়তা বিধান
সার্টিফিকেট কার্যক্রম (রেন্ট সার্টিফিকেট)-সার্টিফিকেট অফিসারের দায়িত্ব পালন রিকুইজিশন দাখিল ও আদায় প্রতিবেদন সংগ্রহ, সংশ্লিষ্ট রেজিষ্টারসমূহ পরীক্ষা, রেজিস্টার ৯ ও ১০ মিলকরণ , যথাযথভাবে প্রসেস/নোটিশ জারি নিশ্চিতকরণ, সার্টিফিকেট সংক্রান্ত অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ , সার্টিফিকেট সেল (নিলামে বিক্রয়) সংক্রান্ত পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ
দেওয়ানী মোকদ্দমা- সরকারী খাস জমি/অর্পিত সম্পত্তি/পরিত্যক্ত সম্পত্তি/অন্যান্য প্রক্রিয়ায় অর্জিত সরকারী সম্পত্তি সম্পর্কিত, দেওয়ানী মোকদ্দমা তদারকি, দেওয়ানী মোকদ্দমার প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি অফিস (তহসীল অফিস) থেকে তথ্য আহরণ ও জেলা প্রশাসকের দফতরে প্রেরণের হিসাব সংরক্ষণ, সরকারি সম্পত্তির ইজারার বিষয়ে দায়েরকৃত, দেওয়ানী মোকদ্দমা তদারকিতে সহযোগিতা , সরকারী সম্পত্তি রক্ষার প্রয়োজনে দেওয়ানী/ফৌজদারী মোকদ্দমা দায়ের, যে সকল মোকদ্দমায় শুধু সরকারকে বিবাদী করা হয় সে সকল মোকদ্দমার অনুচ্ছেদওয়ারী তথ্য বিবরণী(এস,এফ) প্রেরণের ব্যবস্থা ও বিশেষ দৃষ্টি রাখা।
সায়রাতমহল ব্যবস্থাপনা- হাট বাজার, হাট-বাজারের তালিকা সংরক্ষণ ও হালনাগাদকরণ, হাট-বাজারের পেরিফেরী নির্ধারণ/পুনঃ নির্ধারণ, বাজার ও চান্দিনা ভিটির সীমানা নির্ধারণ , নতুন হাট-বাজার স্থাপন ও তালিকাভুক্তির পদক্ষেপ, হাট-বাজারে ইজারা প্রদানের সহায়তা ও ইজারা মূল্য নোটকরণ, হাট-বাজার ইজারার যে অংশ সরকারী খাতে জমা করার বিধাণ রয়েছে তা জমা করা হয়েছে কিনা যাচাই করা ও নোট করা, ইজারাকৃত হাট-বাজারের দখল প্রদান ও টোল নির্ধারণে সহায়তা, অনুমোদিত টোল চার্ট প্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে রাখা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ/অবৈধ দখল রোধ, অবলুপ্ত হাট-বাজারের তালিকা সংরক্ষণ করা।
ফেরী ঘাট-ব্যবস্থাপনা- ফেরী ঘাটের তালিকা সংরক্ষণ ও হালকরণ, ইজারা অর্থের সরকারী অংশ জমার হিসাব সংরক্ষণ
জলমহাল ব্যবস্থাপনা-উন্মুক্ত ও বন্ধ সকল জনমহালের সঠিক ও হালনাগাদ তালিকা প্রণয়ন ও বিবরণী প্রস্ত্তুতকরণ, খাস পুকুর/দীঘি ও, বদ্ধ জলাশয়ের সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখল থেকে খাস পুকুর/দীঘি/বদ্ধ জলাশয় পুনরুদ্ধার, ইউনিয়ন পরিষদ/উপজেলা পরিষদ/পৌরসভা/পৌর কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ন্যস্ত জলাশয়গুলির সঠিক তালিকা সংরক্ষণ, খাসজমিতে চিংড়ীমহালের তালিকা প্রস্ত্তত , অন্যান্য চিংড়ী মহাল থাকলে তার তালিকা প্রস্ত্তুত ও আদায়রে ব্যবস্থা করণ, এ সকল মহালর বন্দোবস্ত প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ ও সহযোগিতা।
ভাসানমহাল-ভাসানমহালের এলাকা চিহ্নিতকরণ ও তালিকা প্রস্ত্তত, ভাসানমহাল ইজারা প্রদানের বিষয়।
বিবিধ সায়রাতমহাল- বালু মহাল/পাথর মহালসহ অন্যান্য সকল মহালের এলাকা চিহ্নিতকরণ , বিবিধ শ্রেনীর মহালের তালিকা/বিবরণী প্রস্ত্তত ও সংরক্ষণ, বিবিধ মহালের ইজারা প্রদানে সহায়তা/কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
জরিপ ও রেকর্ড বিভাগের কাজ-উপজেলা পযার্য়ে জরিপ ও রেকর্ড বিভাগের কাজের তদারকি ও পরিচালনা , জরিপ ও রেকর্ড বিভাগের, কাজে সাথে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধন ও নিয়ন্ত্রণ।
সংস্থাপন বিষয়াদি- উপজেলা ভূমি অফিস কর্মচারী প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ নির্ধারিত রিপোর্ট/রিটার্ণ প্রদান, বাজেট স্বীয় দফতর পরিদর্শন, বিভাগীয় মামলা নিস্পত্তি, অধস্তন দফতর পরিদর্শন/ তদারকি , অর্থ আত্মসাতের কেইস নিষ্পত্তি, তদন্ত অডিট আপত্তিসমূহের বক্ষমান জবাব, সভা অনুষ্ঠান, আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব, গার্ডফাইল সংরক্ষণ, বিভিন্ন প্রকার কর ও বিল পরিশোধ) তথ্য সংগ্রহ (ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জরিপ বিষয়ক তথ্যাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, পিও ১০/৮৪ ও অন্যান্য সংস্কারমূলক অধ্যাদেশের নির্দেশাবলী প্রতিপালন , অধস্তন কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর দায়িত্ব: উপজেলা নির্বাহী অফিসার মূলত একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনার যিনি ইউএনও পদের শূন্যতা ও ব্যাচের জ্যেষ্ঠতার ক্রমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (তৎকালীন ‘সংস্থাপন মন্ত্রণালয়) কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং কোন নির্দিষ্ট বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে তাকে পদায়নের জন্য ন্যস্ত করা হয়। এরপর বিভাগীয় কমিশনার তাকে কোন একটি উপজেলায় পদায়ন করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। আবার একইসাথে তিনি উপজেলা পরিষদের স্থানীয় সরকারের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা পরিষদের প্রধান হিসাবে উপজেলা চেয়ারম্যানকে হস্তান্তরিত দপ্তরসমূহের (২০০৯ সালের সংশোধিত উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী) কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করাও তাঁর দায়িত্ব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলার বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়নমূলক কাজের সমন্বয় সাধন, উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে ১৪৪ ধারা জারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে খাদ্যসহ রিলিফ সামগ্রী গ্রহণ, বিতরণ ও মওজুদ করণসহ জরুরী দায়িত্ব পালন, ভিআইপিগণের প্রোটোকল দায়িত্ব পালন, উপজেলার রাজস্ব ও বাজেট প্রশাসন তদারক, উপজেলার সকল বিভাগের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সমন্বয় সাধন, সরকার কর্তৃক গৃহীত বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন, আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন, অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের তদারকী, এলাকাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনা, ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি)র কার্যাবলীতে সহযোগিতা প্র্রদান, সামাজিক বনায়ন, নির্বাচন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক যাবতীয় কাজ সম্পাদন, আদর্শ গ্রাম প্রকল্প ও আবাসন প্রকল্প, আদমশুমারী, মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কাজ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তামূলক সরকার গৃহীত কার্যক্রমের বাস্তবায়ন, উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক সকল কাজে অংশগ্রহণ ইত্যাদি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্পাদিত কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সময়ে সময়ে সরকার এবং জেলা প্রশাসক নির্দেশিত বিশেষ কাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সম্পাদন করতে হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের সবচাইতে ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক ইউনিট হিসাবে উপজেলায় একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মূলত সকল বিভাগের সকল কার্যক্রমের সাথে কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে অত্যন্ত অল্প বয়সেই একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ অফিসার হয়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়া হয়। সাধারণ জনগণের সেন্টিমেন্ট উপলব্ধি, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষমতা, সমস্যা ও সমাধানের সম্ভাব্য রূপরেখা প্রণয়নের ক্ষমতা ইত্যাদি যাতে তিনি পরবর্তী অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনকালে ধাপে ধাপে কাজে লাগাতে পারেন এবং কোন নির্দিষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়নে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারেন তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে যতটা বোঝা সম্ভব হয় অন্য দায়িত্বে ততটা সম্ভব হয় না। একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সর্বোচ্চ ৫ বছর ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা চাকুরিকাল ৫-৬ বছর সম্পন্ন হলে ইউএনও হতে পারেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও তার দায়িত্ব: অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকও মূলত একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনার তবে তিনি মাঠ পর্যায়ে অন্তত: তিন বছর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালন না করলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন না। মূলত দুইটি দিক চিন্তা করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের পদটি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রথমত: জেলা প্রশাসককে প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করার জন্য, দ্বিতীয়ত: ক্রমান্বয়ে অধিক দায়িত্বশীল পদে দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরে সমগ্র জেলার অধিক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ প্রদান। এতে ভবিষ্যতে যেন তিনি জেলা প্রশাসক বা কমিশনারের মত পদে দায়িত্ব পালনকালে মাঠ প্রশাসনের খুঁটিঁনাটি সম্পর্কে অবগত থাকেন।
সাধারণত প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অন্তত: তিন জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক থাকেন; অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যারা যথাক্রমে জেলা প্রশাসকের পক্ষে সাধারণ প্রশাসন, কালেক্টর হিসাবে ভূমি প্রশাসন এবং ফৌজদারী ও আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক বিষয়াদি দেখে থাকেন। প্রাক্তন বৃহত্তর জেলাসমূহে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) আরেকটি পদ রয়েছে যিনি শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখে থাকেন। ব্যতিক্রমভাবে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) একটি পদ রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এই পদটি বিশেষভাবে তৈরী হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সকল জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানব সম্পদ উন্নয়ন) নামে দু’টি নতুন পদ সৃষ্টি করেছে। তবে এখনও কোন কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়নি। আবার স্থানীয় সরকার শাখাটি পূর্বে একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনার বা সিনিয়র সহকারী কমিশনার দায়িত্ব পালন করলেও কিছুকাল পূর্বে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং বর্তমানকালে সরকারের একজন উপসচিব এ দায়িত্ব পালন করছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে জেলার সাধারন প্রশাসনের দায়িত্বাবলী সম্পাদন করে থাকেন। তাঁর অধীনে সাধারণ শাখা, ট্রেজারী, ত্রান ও পূণর্বাসন, ব্যবসা বাণিজ্য, নেজারত, সংস্থাপন, আইসিটি, ফর্মস ও স্টেশনারী, লাইব্রেরী, অভিযোগ ও তথ্য শাখা সহ আরো কয়েকটি শাখা ন্যস্ত থাকে। এছাড়া নবীন শিক্ষানবীস কর্মকর্তাদের সকল ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন। মূলত: তাঁর হাতেই শিক্ষানবীস কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের হাতেখড়ি সম্পাদিত হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি রাজস্ব ও ভূমি অধিগ্রহন সম্পর্কিত বিষয়াদি সম্পন্ন করে থাকেন। ভূমি রাজস্ব সম্পর্কিত কোয়াসি জুডিসিয়াল মামলায় তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে প্রশাসনিক কাজে তিনি জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর অধীনে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা, রেকর্ডরুম, আরএম শাখা, রেজিস্ট্রেশন শাখা (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে) এবং জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার দায়িত্ব পালন করেন এবং তাদের কাজের তদারকী করেন। রাজস্ব মামলার আপীল কর্তৃপক্ষ হিসাবে তিনি শুনানী গ্রহণ করেন এবং চূড়ান্ত আদেশ প্রদান করেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে জেলার আইন-শৃঙ্খলা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ফৌজদারী কার্যবিধির অপরাধ নিরোধমূলক ধারার মামলাসমূহ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কার্যাবলী সম্পাদন করেন। জুডিসিয়াল মুন্সিখানা শাখা ও সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার অধীনে কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকেন। জেলা প্রশাসকের প্রত্যক্ষ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নবীন কর্মকর্তাদের আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন।
জেলা প্রশাসকের দায়িত্বাবলী: রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক পদটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। জেলা পর্যায় জেলা প্রশাসক কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। জেলা পর্যায়ের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক সরাসরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করেন। এ জন্য বিভিন্ন আইনে জেলা প্রশাসককে ব্যাপক ক্ষমতা অর্পন করা হয়েছে। এ কারণে জেলা প্রশাসককে মাঠ পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের মৌল স্তম্ভ (Pivot) বলা হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, জেলা প্রশাসক সরকারের একজন উপসচিব তবে তিনি সাধারণত নির্দিষ্ট সময়কাল উপসচিব হিসাবে থাকার পরে ফিটলিস্টভুক্ত এবং সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডে নির্বাচিত হবার পরে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে জেলা প্রশাসক হন।
কোন কাজ সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করে বিভিন্নমুখী কাজ কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য একজন সমন্বয়ক ব্যতিত বিভিন্নমুখী কাজ প্রোগ্রাম মোতাবেক যথামসয় সমাপ্ত করা যায়না। কারণ যে কোন কাজ বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি ও সংস্থার কাজ সমন্বয় প্রয়োজন হলে তখন এ দায়িত্ব পালনের জন্য একজন সমন্বয়কারী আবশ্যক হয়। এ আবশ্যকতা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সরকারী বিভাগ আছে। ঐ সব বিভাগের মাধ্যমে সরকারি নীতি, প্রশাসন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। কোন দপ্তরই সকল কাজ এককভাবে করতে পারেনা বিধায় কোন না কোন ভাবে অন্য দপ্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। একাধিক দপ্তর বা বিভাগের সহযোগিতা আবশ্যক হলে তাদের উদ্বু্দ্ধ করার জন্য প্রশাসন কৌশলে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ একজন কর্মকর্তা প্রয়োজন হয়। এখানে টেকনিক্যাল কৌশলের চেয়ে সাধারণ প্রশাসন ব্যবস্থাপনা, সমাজ বিজ্ঞান ও প্রশাসনিক কৌশল সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা বেশী প্রয়োজন। এ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা ও কৌশল জেলা প্রশাসক যতটা পূরণ করতে সক্ষম অন্য কেউ তা পূরণ করতে সক্ষম নন। কারণ এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ আছে। তাছাড়া ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রশাসনের সুবিধার জন্য জেলা প্রশাসককে বিভিন্ন আইনে অবারিত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতীক হিসাবে জেলা প্রশাসক পদটি সরকারের প্রতিনিধিত্বি করার জন্য সৃষ্ট। অন্যান্য পদের কর্মকর্তারা তাদের নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন মাত্র। জেলা প্রশাসক যে কোন বিষয়ে যে কোন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে কোন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সরকারের নজরে আনার অনুরোধ বা অবগতি করতে পারেন।
জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব উল্লেখ করতে হলে কয়েক’শ পৃষ্ঠার একটি পুস্তক রচনা করতে হয়। সেদিকে না গিয়ে বলা যায়, মোটা দাগে জেলা প্রশাসক হিসাবে জেলার সাধারণ প্রশাসনিক কার্যক্রম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং কালেক্টর হিসাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়গুলি দেখে থাকেন। এছাড়া নির্বাচিত সরকারের বিশেষ কর্মসূচি এবং চলমান সকল উন্নয়নমূলক কাজে জেলা প্রশাসক তদারকি করে থাকেন।বিগত এক বছর পূর্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল জেলা প্রশাসক কতটি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, প্রায় ১৯০টি বিভিন্ন কমিটির সভাপতি হিসাবে জেলা প্রশাসকগন দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা, বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভা, রাজস্ব সভা, জেলা চোরাচালান টাস্কফোর্স, কর্ণধার কমিটি, এনজিও সমন্বয়, খাসজমি বরাদ্দ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ কারণে জেলা প্রশাসকের কোন নির্দিষ্ট চার্টার অব ডিউটি নেই। জেলা প্রশাসকের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে তাই সবার প্রথমে ঘুম থেকে উঠতে হয় এবং রাতের শেষ খবরটি জেনে এবং ফাইল নিষ্পত্তি করে ঘুমাতে যেতে হয়।
বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব: প্রশাসনিক বিভাগের বিভাগীয় প্রশাসন পরিচালনা করেন বিভাগীয় কমিশনার। তিনি প্রশাসন ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ যুগ্মসচিব অথবা অতিরিক্ত সচিব হিসাবে বিভাগীয় কমিশনার হন। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে দু’জন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক ও রাজস্ব), একজন পরিচালক-স্থানীয় সরকার, তিনজন সহকারী কমিশনার কর্মরত থাকেন। ব্যতিক্রম রয়েছে শুধুমাত্র ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে। ঢাকায় একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (এপিএমবি) (অ্যাবানডন্ড প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট বোর্ড বা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড) এবং চট্টগ্রামে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নামে একটি অতিরিক্ত পদ রয়েছে। একইভাবে একজন করে অতিরিক্ত সহকারী কমিশনারও রয়েছে যারা উক্ত শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে কর্মসম্পাদন করেন।
বিভাগীয় কমিশনার মাঠ পর্যায়ের সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা। ১৮২৯ সালে কমিশনার পদ সৃষ্টি হলে তখন তিনি শুধুমাত্র জেলা প্রশাসকের রাজস্ব ও ফৌজদারী মামলার আপীল শুনানী গ্রহণ করতেন এবং রায় প্রদান করতেন। কালের প্রবর্তনে কমিশনারগণকে সাধারণ প্রশাসনের সকল দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার ক্ষমতা প্রদান করেন। এটি মূলত মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের মন্ত্রণালয়ের মধ্যবর্তী একটি পদ। এক সময় মনে করা হতো কমিশনার পদটি একটি আলংকারিক পদ মাত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে কমিশনার পদের কার্যকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসকগণ যে সকল সমস্যা সমাধান করতে পারেন না, বিভাগীয় কমিশনারগন প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, ভূমি, খাদ্য ও দুর্যোগ, শিক্ষা ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সভায় সে সমস্ত সমস্যার বাস্তবতা তুলে ধরেন এবং করণীয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবনা প্রদান করেন। সে প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। তিনি একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসাবে জেলা প্রশাসকগণকে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করে মাঠ প্রশাসনকে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সহায়তা করেন। এদিক থেকে বিভাগীয় কমিশনার পদটি একটি সুপারভাইজরী, অ্যাডভাইজরী এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইন্টারভেশনারী পদ।
একটি বিভাগে কর্মরত সহকারী কমিশনার হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পর্যন্ত সকল কর্মকর্তার চাকুরি প্রকৃতপক্ষে বিভাগীয় কমিশনারের উপর ন্যস্ত। বদলী, পদায়ন, বিধিগত ব্যবস্থা ইত্যাদি সকল কিছুই বিভাগীয় কমিশনার দেখাশোনা করেন। অধিকন্তু সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) কিংবা ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) এমনকি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ-সকলেই কমিশনারের অধীন। কারণ, কর্মক্ষেত্রে কমিশনার যেমন তাঁর অধীনস্ত সকল কর্মকর্তার দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও রাষ্ট্রনীতির প্রতি আনুগত্যের মূল্যায়ন করেন তেমনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক এবং জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে প্রতিস্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করে থাকেন।
কমিশনারের স্বাভাবিক দায়িত্বের মধ্যে জেলা প্রশাসকদের কাজ তদারক, তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়, ভূমি রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত কাজ তদারক, তত্ত্বাবধান ও ভূমি সংক্রান্ত আপিল মামলার শুনানী, বিভাগীয় জনকল্যান ও উন্নয়নমূলক সকল পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগনে পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার বদলী ও পদায়ন, বিভাগীয় বিভিন্ন দপ্তরের কাজের সমন্বয় সাধন, বিভিন্ন প্রকার তদন্ত কার্য সম্পাদন, বিভিন্ন অফিস ও প্রকল্প পরিদর্শন এবং মন্ত্রণালয় ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন ও অন্যান্য এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
সূত্র:
১. আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থাপনা- জনাব আবদুল কাদের মিয়া
২. জেলা প্রশাসন বাংলাদেশ-এ আর এম খালেকুজ্জামান
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৬
রাজীব৪৪ বলেছেন: আমার ব্লগে প্রথম কমেন্ট করার জন্য তোমাকেও ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
শাওন সিকদার বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট, ধন্যবাদ রাজীব