নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার সবথেকে ভাল উপায় হলো প্রশ্ন করা

অসির চেয়ে মসির শক্তি বেশি। কিন্তু অসির কাজ মসি দিয়া হয় না

রাজীব৪৪

আসেন পরিচিত হই।

রাজীব৪৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিতর্কিত বিষয়ে মুসলিমদের প্রতি আমাদের অবস্থান

১৮ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৭

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

ঘটনা ১

দ্বিতীয় হিজরী সনের রজব মাসে রাসূল (সা) আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা) এর নেতৃত্বে একটি সারিয়্যাহ প্রেরণ করেন। অভিযানের নেতৃত্ব প্রদানকারী আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশকে (রা) একটি চিঠি দিয়ে বলা হয়, চিঠিটি যেন দু’দিন পর খুলে পড়া হয়। চিঠিতে লেখা ছিল,“আমার এই চিঠি পাঠ করার পর তোমরা সামনে অগ্রসর হয়ে মক্কা এবং তায়েফের মধ্যবর্তী স্থান নাখলায় অবতরণ করবে এবং সেখানে কুরাইশদের একটি কাফেলার অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকবে এবং আমাদের জন্য কাফেলার খোঁজ নেবে।” চিঠিতে আরো বলা হয় এ অভিযানটি হচ্ছে সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক – কারো ইচ্ছা হলে যাবে, না হলে যাবে না। তারপরেও সংশ্লিষ্ট মুসলিমগণ স্বেচ্ছায় এ অভিযানে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে দুইজন সাহাবী পেছনে পড়ে যান।

নাখালায় তারা কুরাইশদের কাফেলা দেখতে পান। সেখানে কিসমিস, চামড়া এবং অন্যান্য ব্যবসা পণ্য ছিল। কাফেলায় আব্দুল্লাহ ইবনে মুগীরার পুত্র ওসমান এবং নওফাল, আমর ইবনে হাদরামী, হাকিম ইবনে কায়ফান এবং একজন দাস ছিল। তারা নাখালায় পৌছে আল্লাহর রাসূল (সা) এর সাহাবীদের দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এই কাফেলাকে আক্রমণ করা হবে কিনা- এই সিদ্ধান্তে মুসলিমরা দ্বিধায় পড়ে যান। কারণ সে দিনটি ছিল রজব মাসের শেষ দিন, আর রজব মাস ছিল নিষিদ্ধ মাস যে মাসে আরবরা যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হত না। আবার তারা যদি একটি দিন দেরি করে আক্রমণ করেন তাহলে নিষিদ্ধ মাসের নিষেধাজ্ঞা থাকবে না, কিন্তু সেই একদিনে কাফেলাটি মক্কার মধ্যে ঢুকে পড়বে আর হারাম-শরীফের সীমানায় যুদ্ধ করা হারাম। মুসলিমরা রজব মাসে অর্থাৎ নিষিদ্ধ মাসেই আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারা কাফেলা আক্রমণ করলেন, আমর ইবনে হাদরামী তীরাঘাতে মৃত্যুবরণ করে। ওসমান এবং হাকিম বিন কয়সানকে তারা গ্রেফতার করেন এবং কাফেলার জিনিষপত্র গণিমতের মাল হিসেবে মদীনায় নিয়ে আসেন।

কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা) তাদের এ কাজকে স্বীকৃত দিলেন না। তিনি বললেন, “আমি তো তোমাদেরকে হারাম মাসে যুদ্ধ করতে বলি নি”। তবে কুরাইশ কাফেলা থেকে আটককৃত মালামাল এবং দুজন বন্দীর ব্যাপারে তিনি হস্তক্ষেপ করেন নি। (মতান্তরে তিনি এগুলোও গ্রহণ করেন নি)

এ ঘটনার সুযোগে কুরাইশরা এটাকে বড় ইস্যু বানিয়ে ফেলে। তারা বলতে থাকে, মুসলিমরা আল্লাহর করা হারাম মাসকেও হালাল করে নিয়েছে। তারা নিষিদ্ধ মাসে হত্যা করেছে, সম্পদ লুট করেছে, যুদ্ধবন্দী গ্রহণ করেছে। তারা মুসলিমদের বিপক্ষে জনমত গঠন করতে থাকে। অনেক সাহাবা সারিয়ায় অভিযানকারী মুসলিমদের বলতে থাকেন তোমরা কেন এমন করেছ? মুসলিমরা ব্যাকফুটে চলে যায়। সারিইয়্যায় অংশগ্রহণকারী মুসলিমরা খুব হতাশ হয়ে পড়ে। কারণ তারা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটা অভিযান থেকে ফিরে এসেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। আল্লাহ তা’আলা কুর’আনে তখন আয়াত নাযিল করলেন,

“সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদেরকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।” [সূরা বাক্বারাহ ২১৭]

প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের অপরাধের কথা বললেন। এরপরই তাদেরকে নিস্তার দিলেন এই বলে যে, মুশরিকরা এর থেকেও বড় অন্যায় করছে। এবং পরের আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদেরকে একধরনের কৃতিত্বের মর্যাদা দিলেন যে, এরা হচ্ছে “আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী”! এই আয়াতের পর আল্লাহর রাসূল (সা) জব্দকৃত সম্পদ এবং যুদ্ধবন্দীদের গ্রহণ করেন। যুদ্ধবন্দীদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেন।

ঘটনা ২

উসামা ইবন যায়িদ (রা) এর বর্ণনা থেকে –

রাসূল (সা) আমাদেরকে ‘হারকা’র দিকে পাঠালেন। শত্রুরা পরাজিত হয়ে পালাতে শুরু করলো। আমি এক আনসারী সিপাহীর সাথে পলায়নরত এক সৈনিকের পিছু ধাওয়া করলাম। যখন সে আমাদের নাগালের মধ্যে এসে গেল, জোরে জোরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে উঠলো। তার এ ঘোষনায় আনসারী হাত গুটিয়ে নিল; কিন্তু আমি বর্শা ছুড়ে তাকে গেঁথে ফেললাম। সে মারা গেল। অভিযান থেকে ফেরার পর বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কর্ণগোচর হল। তিনি আমাকে বললেনঃ উসামা, কালিমা তাইয়্যেবা পড়ার পর তুমি একটি লোককে হত্যা করেছ! আমি বললাম, প্রাণ বাঁচানোর জন্য সে এমনটি করেছে। তিনি আমার কথায় কান দিলেন না। একই কথা বার বার আওড়াতে লাগলেন। আমি তখন এত অনুতপ্ত হলা যে, মনে মনে বললাম, ‘হায়! আজকের পূর্বে যদি আমি ইসলাম গ্রহণ না করতাম।

আচ্ছা এ ঘটনার পর কি রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে পরিত্যাগ করেছিল কিংবা বয়কট?? কিংবা বাঁকা চোখে তাকানো?? সাহাবী উসামা ইবন যায়িদের মর্যাদাতো আমাদের অনেকেরই জানা!! হুনাইনের যুদ্ধে যে ছয়জন অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে পরাজয় থেকে বিজয়ের রূপ দিয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাদের একজন। মক্কা বিজয়ে তিনি ছিলেন রাসূল (সা) এর সংগী, একই বাহনের সওয়ার হয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) অত্যন্ত ভালোবাসতেন তাঁকে। রোমান বাহিনীর জন্য যে সেনাবাহিনী প্রস্তুত করা হয়েছিল রাসূল (সা) সেই বাহিনীর নেতৃত্বের দায়িত্ব অর্পন করে উসামাকে, যে বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল আবূ বকর, উমার ইবন আল খাত্তাব, সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ও আবু উবাইদা ইবনে জাররাহর (রা.) মত প্রথম কাতারের সমর বিশারদগণ!!

ঘটনা ৩

রাসূলুল্লাহ (সা) হিজরী নবম সনে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) কে দাওয়াতী কাজে বনী জুজাইমা গোত্রে পাঠান। খালিদের দাওয়াতে তারা ইসলাম গ্রহণ করে। তবে অজ্ঞাতবশত সঠিক ভাষায় তা ব্যক্ত না করায় খালিদ ভুল বোঝেন। তিনি আক্রমণের নির্দেশ দেন, ফলে এই গোত্রের বহু লোক হতাহত হয়। রাসূল (সা) তা শুনে খুব দুঃখিত হন। তিনি হাত উঠিয়ে দুয়া করেন, ‘হে আল্লাহ্‌! আমি খালিদের এই কাজের ব্যাপারে সম্পূর্ণ দায়মুক্ত”। তারপর হযরত আলীর (রা) মাধ্যমে তাদের সকল ক্ষতিপূরণ দান করেন, এমনকি কুকুরগুলোরও ক্ষতিপূরণ দেন।

আচ্ছা খালিদের এই ভুলের কারণে কি রাসুল (সা) খালিদকেই বর্জন করেছিলেন! আমরা দু’আর দিকেও লক্ষ্য করতে পারি, তিনি আল্লাহ্‌র কাছে খালিদের এই কাজের ব্যাপারে দায়মুক্তি বলেছেন, খালিদের ব্যাপারেই নয়।

হিজরী দশম সনে রাসূল (সা) সেই খালিদকেই নাজরানের বনু আবদিল মাদ্দান গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দিতে পাঠান। এবার যাত্রার পূর্বে বলে দিয়েছিলেন, কেবল ইসলামের দাওয়াতই দিবে, কোনো অবস্থাতেই তলোয়ার উঠাবে না।” তাঁর দাওয়াতে পুরো গোত্রই ইসলাম কবুল করেছিল!!

তাছাড়া ইসলামের প্রসারে খালিদ ইবনে ওয়ালিদের ভূমিকা আলোচনার অপেক্ষা রাখে না।

***

বাছাইকৃত এ ঘটনাগুলো থেকে আমাদের জন্য শেখার আছে অনেক কিছু। এ ধরণের নাজুক মূহুর্তগুলোতে আমাদের আচরণ কি ধরণের হওয়া উচিত সে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আমরা পাই এই ঘটনাগুলোতে।

সাধারণত যখনই কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সবাই বলতে শুরু করে, আমাদের মুসলিমদের মাঝেই প্রায়শ এক ধরণের মানসিকতা কাজ করে যে, সব দোষ মুসলিমদের, মুসলিমদের ভুলের জন্যেই আজ এই অবস্থা, কাফেরদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, ব্লা ব্লা ব্লা। তাই আমাদের হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে আর মুসলিমদের দোষারোপ করতে হবে। আরে ভাই মুসলিমদের দোষ তো আছেই কিন্তু কাফেরদের সাথে মুসলিমদের যে চিরন্তন শত্রুতা চলে আসছে সেটাতো মুসলিমদের দোষের জন্য স্থগিত হয়ে যাবে না।

আরেক ধরনের লোক আছে উম্মাহর রক্তক্ষরণে তাদের মধ্যে কোনো উদ্বিগ্নতা কিংবা চিন্তা-ফিকির দেখা যায় না। ইসলামের শুধু স্প্রিরিচুয়াল কিছু আসপেক্ট নিয়েই উনাদের বিচরণ। এতটুকু হলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু তারা এখানেই থেমে থাকেন না, বরং কেউ যখন উম্মাহর রক্তক্ষরণে নিজেদের জান-মাল নিয়ে এগিয়ে আসবে তখনই তাদের সমালোচনায় এই গোত্রের লোকেরা অগ্রগামী। ধরে নিলাম মুজাহিদদের কিছু বিষয় তারা তাদের মতের সাথে মিলছে না। সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা দেখি মুজাহিদিনদের ‘ভুল’গুলোই সমালোচনা করতে, উল্টো তাঁদের কাজের পক্ষে দলীল থাকার পরেও খাওয়ারিজ, গোমরাহ কিংবা বিভ্রান্ত ট্যাগ দিতে। কখনো আমরা দেখি না মুজাহিদিনদের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে তাঁদের সংশোধন করতে, তাঁদের ভালো কাজগুলোর সমর্থন দিতে, তাঁদের সেক্রিফাইসকে একনলেজ করে বাহবা দিতে!!!!

একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। ভাই, যদি ভুল হয়েও থাকে তবে বুঝতে হবে ময়দানে যারা নেমেছে তাদের দ্বারাই ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে।

ভুল হয়েছিল আবদুল্লাহ ইবেন জাহাশ (রা.), উসামা ইবেন যায়িদ (রা.), খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)। যারা নিজেদের হাত পা গুটিয়ে রেখেছে তাদের কি আর ভুল হবে!! তারাতো ভুলের মাঝেই নিমজ্জিত আছে যেমনি করে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিল তৎকালীন মুনাফিকরা, আবদুল্লাহ ইবনে উবাইরা, তার অনুসারীরা।

আল্লাহু আ’লাম।

সূত্রঃ

১) তাফসীর ইবনে কাসির, আয়াত ২:২১৭

২) আসহাবে রাসূলের (সা) এর জীবনকথা – ড. মুহাম্মদ আব্দুল মাবুদ

৩) আর রাহীকূল মাখতুম – আল্লামা ছফিউর রহমান

৪) The Life of Prophet Muhammad (SAW) – By Sheikh AAA


মূল লেখা এখানে Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.