![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিতান্তই গ্রামের এক সহজ সরল ছেলে। সাধারনত বন্ধু বান্ধব এর সাথে কিছুক্ষন সময় আড্ডা আর এলাকার হয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার সাথে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা নিয়েই আমার দিন কাটে। বাংলার বিভিন্ন গল্প পড়তে খুব ই ভালবাসি। মাঝে মাঝে চেষ্টা করি কিছু একটা লিখতে কিন্তু খুব একটা ভাল হয় না। যৎসামান্য যা কিছু লিখেছি তার মাঝেই আমি সীমাবদ্ধ। সবাই ভাল থাকবেন।
ক্লাস করে বের হবো মাত্র এমন
সময়ে ঝুম বৃষ্টি নামলো । সকালে ঘুম
থেকে উঠেই দেখি আকাশ প্রচণ্ড
কালো ।
মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে ।
আবার থেমে যাচ্ছে ।এমন দিনে সকাল
আটটা বাজে সজীব স্যার এর ক্লাস ।
সামান্য দেরী হলেই পারসেন্টিস দেয়
না । তাই
তাড়াহুড়ো করে ছাতিটা আনতেই
ভুলে গেছি ।
আমরা যারা ছাতি আনিনি তাদের
মধ্যে দু গ্রুপ তৈরি হলো ।
দাঁড়িয়ে থাকা গ্রুপ আর স্বেচ্ছায়
বৃষ্টির হাতে আত্মসমর্পণ গ্রুপ ।
পরের গ্রুপটিতে দু তিনজন ছাড়া আর
কেউ আগ্রহ দেখালোনা ।
অনেকে মাথার উপরে ব্যাগ
দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে ।
আমি ধীরে ধীরে বৃষ্টির মধ্যেই
হাটা শুরু করলাম ।
সরাসরি হলে যাবো নাকি
ক্যাফেটেরিয়ায় যাব
ভাবছি । অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম
ক্যাফেটেরিয়া থেকে এক কাপ গরম
কফি খেয়ে যাবো । ক্যাফেটেরিয়ায়
তেমন মানুষ জন নেই । পিছনের
দিকে এক জোড়া কাপল
ল্যাপটপে সম্ভবত কিছু দেখছে । আর
একজন জানালার
পাশে বসে
বৃষ্টি দেখছে শিঙাড়ার শেষ অংশটুকু
হাতে ধরে । আমি কফির অর্ডার
দিয়ে বসে আছি । পকেট
থেকে মোবাইলটা বের
করে ফেইসবুকে লগইন করলাম ।
না কেউ ম্যাসেজ দেয় নি । দুই
একটা নোটিফিকেশন চেক করলাম ।
হোম পেইজে নতুন একটা ভালোবাসার
গল্প দেখলাম । হায়রে ভালোবাসা !
মাঝে মাঝে একটা হাতের
এতো প্রয়োজন অনুভব করি কিন্তু সেই
হাত বাড়ানোর কোনো মানুষ নেই । এই
ব্যাপারে সম্পূর্ণ ফ্রাস্ট্রেটেড
হয়ে গেছি ।
কফি খাচ্ছি আর
গল্প পড়ছি তাই আশেপাশের পরিবেশ
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম । হঠাৎ
পানির ছিটায় আবার বাস্তব
জগতে ফিরে আসলাম । আমার খুব
কাছে দাঁড়িয়েই দুইটা ছেলে আর
তিনটা মেয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো । কোন
কারনে
একটা মেয়ে একটা ছেলেকে গ্লাস
থেকে পানি ছিটিয়ে মারতে গিয়ে
আমার গায়ে মিস টার্গেট করলো ।
কখন আসলো এরা ? আমার
গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়ার পর
পুরো গ্রুপটা চুপ হয়ে গেলো ।
যে মেয়েটি পানি ছিটিয়েছিল ,বসে
ছিলাম বলে তাকে এতক্ষন ঠিক
মতো দেখতে পারছিলাম না ।
মেয়েটি আমার সামনে এসেই খুব অনুনয়
করে সরি জানালো ।
মেয়েটাকে দেখে আমি অনুভূতি শুন্য
হয়ে গেলাম ।
মানুষ এতো
কিউট হয় কিভাবে !লাল ফ্রেমের
চশমা পরা ।কার্ভ চুল । ফ্যানের
বাতাসে চুল
গুলো এলোমেলো হয়ে বারবার ওর মুখের
উপর আছড়ে পড়ছে । মেয়েটি আমার
কাছে শুনতে চাচ্ছে
" ওকে । ঠিক আছে ।সমস্যা নেই " এমন
কিছু । কিন্তু আমি কিছুই
না বলে হা হয়ে তাকিয়ে আছি ।
কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর যখন
ওরা বুঝলো যে আমি কিছুই বলবনা তখন
ওরা নিজেরাই লজ্জায় ক্যাফেটেরিয়া
থেকে বের হয়ে
গেলো । আমি কি খুব অদ্ভুত একটা কাজ
করে ফেললাম । মিনিমাম " ইটস
ওকে " টাইপ একটা ছোট রিস্পন্স
দিলে কি হতো !
আমি একা একা হাঁটতে অনেক পছন্দ
করি । আগে কোন উদ্দেশ্য থাকতো না ।
এখন
সেই কার্ভ চুল ,লাল ফ্রেমের
চশমা পরা মেয়েটিকে দেখার জন্য
হাঁটি । ভার্সিটি ডে তে হল
থেকে গেঞ্জি দিলো । সব হল
থেকে র্যালী বের হলো । মেয়েদের
হল থেকে যখন র্যালী এসে আমাদের
সাথে যোগ
দিলো তখন
ছেলেদের উল্লাস ধ্বনি আরও
বেড়ে গেলো । আমি খুঁজছি সেই লাল
ফ্রেমের চশমা পরা কার্ভ চুল
ওয়ালী মেয়েটিকে । কিছুক্ষন খোঁজার
পর না দেখে হতাশ হয়ে পড়লাম ।
বিকেলে কনসার্টে গেলাম
অডিটরিয়ামে ।
হঠাৎ অন্য পাশের
দরজা দিয়ে একসাথে চার
পাঁচটা মেয়ে ঢুকল । ঐ পাঁচ জনের
মধ্যে ঐ মেয়েটিও ছিল ।
। মেয়েটি আকাশী নীল
একটা শাড়ি পড়েছে । আজ আরও
বেশি সুন্দর লাগছে । পুরো কনসার্ট
জুড়ে
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়েই রইলাম
। মেয়েটির একবার আনমনে এপাশ
ওপাশ তাকাতে গিয়ে আমার
সাথে চোখে চোখ পড়লো । এরপর
থেকে মেয়েটিও
মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছে যে আমি
ওকে দেখছি কিনা ।
রাত আটটা বাজলে মেয়েদের হল বন্ধ
হয়ে যায় । তাই মেয়েরা আটটার
দিকে বের হয়ে গেলো কনসার্ট
থেকে । মেয়েটি অডিটরিয়াম
থেকে বের হবার সময় আমার
দিকে একবার আড় চোখে তাকালো ।
কোনো অদৃশ্য টানের বলে আমিও
সাথে সাথে সীট থেকে উঠে ওর পিছু
নেয়া শুরু করলাম । কিছুদিন যাবৎ এক
টানা বৃষ্টি হচ্ছে । আজ সারাদিন
বৃষ্টি হয়নি তবে এখন
অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে ।
মেয়েটির হাতে কোন ছাতা নেই ।
সবচেয়ে অবাক হবার
ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটার সাথে কোন
বান্ধবী নেই । এখন অডিটোরিয়াম এর
সামনে কোন রিকশাও নেই । আমি এই
সুযোগ হাতছাড়া করতে পারলাম না ।
দ্রুত
মেয়েটির সামনে গেলাম
-ক্যামন আছো ?
আমাকে চিনতে পারছো ?
-হম চিনছি ! আপনি সেই হা বাবা !
আজ সারাক্ষন ও হা করে ছিলেন আমার
দিকে তাকিয়ে
আমি না শোনার ভান করলাম
-তোমার বান্ধবীরা কোথায় ?
-ওরা তো আসেনি
-দেখলাম যে একসাথে ঢুকলে চার পাঁচ
জন ?
-আমি ওদের সাথে আসিনি ।
-তুমি কোন ইয়ার ?
-ফার্স্ট ইয়ার ।আপনি?
-ফোর্থ ইয়ার
-অনেক বড় ভাই !
-হুম ! তুমি কোন ডিপার্টমেন্ট ?
-আই পি ই । আপনি ?
-আমি ট্রিপল ই
-ভাইয়া ! একটা রিকশা ঠিক
করে দিতে পারবেন ?
আমার হল বন্ধ হয়ে যাবে এখনি
-ওকে দাঁড়াও
বৃষ্টির
মাঝে আমি রিক্সা খুঁজতে নামলাম ।
জীবনে রিক্সা খোঁজার
মাঝে এতো আনন্দ কোনদিন পাই নি ।
মেয়েটি রিক্সায় চলে যাবার সময়
আমাকে থ্যাঙ্কস জানালো ।
আমি রিপ্লাই দিতে ভুলে গেলাম ।
সত্যিকারের হা বাবার মতো আবার
তাকিয়ে রইলাম । আকাশী নীল
শাড়ী ,নীল টিপ ,লাল ফ্রেমের চশমা ,
কার্ভ চুল সব কিছু
আমার মাথা একেবারে গোব্লেট
করে দিচ্ছিলো ।
মেয়েটি চলে যাবার পর
আমি জিভে কামড় দিলাম । কারন
মেয়েটার নামটাই জানা হয়নি ।
এরপর নিয়মিত ওদের ডিপার্টমেন্ট এর
সামনে দিয়ে আসা যাওয়া করতে
লাগলাম । কোন লাল ফ্রেমের
চশমা পরা মেয়ে দেখলেই
তাকিয়ে থাকি ।
মেয়েটিকে একদিন ডিপার্টমেন্টাল
স্টোরে দেখলাম ।
আমি সাথে সাথে কোন কিছু কেনার
ভাব করে ঢুকলাম ।
-মামা ! এক হাজার টাকার
ভাঙতি হবে ?
-না মামা !
দেখি ও একা দাঁড়িয়ে কিছু চানাচুর ,
বিস্কুট ,চিপস কিনছে । এখন
যদি কথা না বলতে পারি তবে কিছুই
হবে না । ও আমাকে খেয়ালই
করলো না ।
ও টাকা দিয়ে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর
থেকে বের হয়ে গেলো ।
সাথে সাথে আমিও বের হলাম ।
আমাদের ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্ট
ভবনের সামনে চলে আসতেই ওর
পাশে গিয়ে বললাম ,
-তোমার নামটাই তো জানা হল না
ও কিছুটা চমকে গেলো ।পরক্ষনেই
নিজেকে সামলে বলল ,
-জিনিয়া
-খুব সুন্দর নাম তো
ও হাসি দিয়ে বলল , হুম !
-তোমার ফেইসবুক আইডি আছে ?
-নাহ
-ওহ ! এই যুগের একটা মেয়ের ফেইসবুক
আইডি নেই ? খুব অবাক হলাম !
-ভাইয়া ! এসব আমার ভালো লাগে না
-হুম ! ফেইসবুক আসলেই ভালো না ।
আমিও ছাড়তে চাচ্ছি ।
একবারে চীরদিনের জন্য ছাড়বো ।
কিন্তু আমার একজন ভালো বন্ধু দরকার
। মনে করো বাস্তব জগতের বন্ধু ।
তুমি কি আমার বন্ধু হবে ?
-আমার লাভ কি ?
-বন্ধুত্তের মোড়কে বিশ্বাস উপহার
দেবো তোমাকে । আর বিশ্বাস অনেক
গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ।
প্রতিটা মানুষের একজন
বিশ্বাসী বন্ধুর প্রয়োজন হয় ।
আমি সেই মানুষটি হতে চাই
-আপনাকে বিশ্বাস করবো কি করে ?
-নিজেকে বিশ্বাস করো ?
-সব সময় না ।
-তাহলে কি করে বুঝাবো ?
-আপনি যদি অন্য ছেলেদের
চেয়ে ভিন্য না হন
তাহলে ওদেরকে বিশ্বাস
না করে আপনাকে বিশ্বাস
করবো ক্যান ?
এমন কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম ।
আসলেই
কিভাবে বুঝাবো ওকে আমি অন্যদের
থেকে ভিন্য । যে কখনো বিশ্বাস
ভাঙবেনা । যে বুকের তাজা রক্ত
ঢেলে বিশ্বাস এর জন্য পথ
তৈরি করবে । এমন কি করা যায় হঠাৎ
যাতে সে বিশ্বাস
করে আমি সবচেয়ে বিশ্বাসী ।
আমি সবচেয়ে ভিন্য ।
আমি সবচেয়ে যোগ্য তার জন্য ।
-তুমি বলো আমি কি করবো ?
-আমি কেন বলবো ? আপনি এমন কিছু
বলেন যাতে আমি আপনাকে বিশ্বাস
করতে পারি ।তবে প্লীজ ! আমি কোন
ভায়োলেন্স চাই না । সিনেমার
মতো হাত কেটে আমাকে লাভ লেটার
দেয়া কিম্বা ঘুমের ওষুধ খেয়ে
ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করতে যাবেন
না ।আমি এসব প্রচণ্ড অপছন্দ করি ।
-আগে বন্ধু হবার তো সুযোগ দাও ।
তাহলেই বুঝবে আমি ক্যামন !
-আপনাকে আমি বন্ধু করলে তো হলই ।
কিন্তু আপনাকে আমি কেন বন্ধু
করবো সেটা আমাকে বলবেন না ?
-কারন তোমাকে প্রথম দেখার পর
থেকেই সব সময় এখন
তোমাকে নিয়ে চিন্তা করি
-আমি যদি বলি অন্য কেউ ও
আমাকে নিয়ে চিন্তা করে ? এখন সেই
অন্য কেউ কে বাদ দিয়ে ক্যান
আপনাকে বন্ধু বানাবো ?
মেয়ের তো দেখি কার্ভ চুলের
মতো মাথায় ভীষণ প্যাঁচ ।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না ।
সত্যিই নিজেকে খুব অসহায়
মনে হচ্ছিলো । আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়েই
রইলাম । মনে হচ্ছে খুব বড় অপরাধ
করে ওর সামনে
অপরাধ স্বীকার করছি । আমি বললাম ,
আমি কখনো ওভাবে চিন্তা করিনি ।
আমাকে ভাবতে হবে । মেয়েটি ঠোটের
কোনে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল ,
আপনি ভাবতে থাকেন । আর যেদিন
প্রমান করতে পারবেন
আপনি সবার থেকে ভিন্য , সবার
থেকে বিশ্বাসী । সেদিন আমরা বন্ধু
হবো । ক্যামন ? ভালো থাকবেন ।
আমাকে যেতে হবে ।
এই
কথা গুলো বলে মেয়েটি চলে গেলো ।
আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম ।
আমি রুমে এসে বিশাল টেনশনে পড়লাম
। কি করবো কিছুই মাথায় আসছেনা ।
ছোট ক্যাম্পাস । এক মেয়ের
পিছনে কয়েকদিন ঘুরলেই
জানাজানি হতে টাইম লাগবেনা ।
প্রেসটিজ পুরা পান্তা ভাত
হয়ে যাবে ।
পরের দিন ক্লাস করে আনমনেই ওদের
ডিপার্টমেন্ট এর
সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । ওর ক্লাস
কখন শেষ হবে অথবা শেষ
হয়ে গেছে কিছুই জানিনা । ক্লাস
টাইমে ওদের ডিপার্টমেন্ট এর
সামনে আর বিকেলে ওদের হল
থেকে একটু দূরে পদ্ম পুকুরের
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার বদ
অভ্যাসে পরিনত হল ।
তবে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
কিছুদিন এর মধ্যে ওর ক্লাস এর সময়
সূচীর একটা আনুমানিক ধারনা পেলাম
। রবিবার ল্যাব আছে বিকেলে ।
সোমবার আর মঙ্গলবার সকাল
দশটা ত্রিশ এ ক্লাস শেষ হয় ......।
শুধু ক্লাস না ও বিকেলে কবে কখন
হাঁটতে কিম্বা ঘুরতে বের হয় তার ও
একটা আনুমানিক ধারণা পেলাম । দুই
সপ্তাহে অন্তত একবার
খুলনা ঘুরতে যায় বান্ধবীদের নিয়ে ।
তবে অবশ্যই বৃহস্পতি বার । পছন্দের
রেস্তোরাঁ কাউন্ট্রি লাউঞ্জ ।
ক্যাম্পাসে ঘুরলে সন্ধ্যার পর বের হয়
। চালাক মেয়ে ।
সাথে
দুজন বডী গার্ড বান্ধবী থাকে । আর
কিছু কষ্টকর তথ্য পেলাম ।
ডিপার্টমেন্ট এর অনেক ছেলেই ওর
উপর ক্রাশ । স্বস্তির ব্যাপার
হচ্ছে কারো প্রতি ওর কোনো আগ্রহ
নেই ।
আজ আমাদের মাত্র একটি ক্লাস হল ।
আমি ক্লাস শেষে ওদের ডিপার্টমেন্ট
এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি । আকাশ
টা আজও খুব কালো । যেকোনো সময়
বৃষ্টি নামতে পারে । মাঝে মাঝেই
অনেক দূরে বিজলী চমকাচ্ছে ।
ও যখন ক্লাস শেষ করে ডিপার্টমেন্ট
ভবন থেকে বের হল তখন বৃষ্টির
মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে । ও
আমাকে দেখে নিচে তাকিয়ে হালকা
একটা হাসি দিয়ে ওদের হলের
দিকে হাটা শুরু করলো । আমিও
একটা নির্দিষ্ট
দূরত্ব বজায় রেখে ওর পিছে আপন
মনে হাঁটতে লাগলাম । ওর হাতে খুব
সুন্দর একটা রঙিন ছাতা ।
মাঝে মাঝে ছাতাটা একটু নিচু
করে পিছনে ফিরে আমাকে দেখছে ।
বৃষ্টির পানিতে আমার শার্ট প্যান্ট
ভিজে একাকার
অবস্থা । আমার চুল থেকে পানি আমার
গাল বেয়ে বেয়ে নিচে পড়ছে ।
মাঝে মাঝে পানির প্রবল গতিবেগ এর
কারনে সামনের
দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে । ওর হলের
কিছু দূরে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম । ও
হলের গেট দিয়ে ঢোকার
সময় ও একবার আমাকে দেখে নিলো ।
আজ ও অনেক বার তাকিয়েছে ।
এটা কি প্রশ্রয় ?
নাকি পরে তোকে দেখে নেবো টাইপ
লুক ছিল ?
মেয়েটি আজ বাসে তিন নম্বর
সারিতে বসা । বাসে প্রচণ্ড ভীর ।
শ্বাস করার ও জায়গা নেই ।
আর আমি পিছনের গেটে বাঁদরের ন্যায়
ঝুলে আছি । বাস এর গেটে ঝোলার
অভ্যাসটা ঢাকা কলেজ থেকে পাওয়া ।
বাস চলছে আমি গেটে দাঁড়িয়ে বাতাস
খাচ্ছি ।
মেয়েটি খুলনা নিউমার্কেটে নামলো ।
সাথে দুজন বান্ধবী ।
( আর
ঐ ছেলে দুটি । আমি ও নেমে গেলাম ।
ওরা একটা ফাস্ট ফুড এর
দোকানে ঢুকে গেলো ।
আমি বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম একটু
দূরে । হঠাৎ বিদ্যুতের বেগে ফাস্ট
ফুডের দোকান
থেকে মেয়েটি বেরিয়ে এলো ।
পিছনে আরেকটি
মেয়ে ওকে ডাকছে , জিনিয়া ! এই
জিনিয়া ! আমি বোঝার চেষ্টা করলাম
কি হয়েছে । এখন ওরা সবাই বের
হয়ে এসেছে ।আমি ওদের খুব কাছেই
হাঁটতে লাগলাম ।একটা মেয়ে ওদের
মধ্যে একটা ছেলেকে বলছে ,
এতো দ্রুত
প্রপস করতে গেলি ক্যান গাধা ? এই
কথা শুনেই আমার বুকে প্রচণ্ড আঘাত
লাগলো । আমি আর ওদের পিছু
নেয়া ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম ।
এতো খারাপ লাগছে আমার
কি করবো বুঝতে
পারছিনা । আমি হাইওয়ে রোড ধরে
একা একা হাঁটতে লাগলাম ।
খুলনার রাস্তা গুলো এম্নিতেই
ফাকা ফাকা ।আজ যেন আমার কষ্টের
মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে একদম
যানবাহন শুন্য অবস্থা ।
আমি একটা ছোট রাস্তার
মধ্যে সামান্য ভীর দেখে ঢুকলাম ।
দেখলাম
একজন অন্ধ লোক গলা ছেড়ে লালন
গীতি গাইছে
" মিলন হবে কত দিনে ? আমার মনের
মানুষের ও সনে ? "
এতো সুন্দর কণ্ঠ
আমি কখনো টিভি কিম্বা রেডিওতে
শুনিনি । একেই বলে প্রকৃতি প্রদত্ত
কণ্ঠ । সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে ওনার
কাছে গান শিখতে পারতাম ! আর
এভাবে রাস্তায়
গলা ছেড়ে গাইতে পারতাম ! গান
শুনছি
আর আমার মাথায় অনেক ভার অনুভব
করছি ।শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে আর খুব
শীত শীত লাগছে । এখানেই
ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে ।
কিভাবে অতদুর যাবো ? প্রচণ্ড জ্বরের
ঘোরে তবুও কিভাবে কিভাবে
যেন অটো রিক্সায় চলে আসলাম
ক্যাম্পাসে । রাতে ধুম জ্বর উঠলো ।
তবুও মাথার মধ্যে সেই লোকটার গান "
মিলন হবে কত দিনে ? আমার মনের
মানুষের ও সনে ? " বাজছে ।
আমি হারিয়ে গেলাম গভীর অচেতনে ।
রাতে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন
দেখলাম । দেখলাম
জিনিয়াকে নিয়ে আমি নদীর
পাশে হাঁটছি । পাশে বড় বড়
সাদা কাশ ফুলের বাগান ।একটু পর পর
সেই কাশফুল গুলো বাতাসের
তালে তালে মাথা নুয়ে আমাদের
অভিবাদন জানাচ্ছে । জিনিয়া
একটু পর পর রাগ করে আমার
থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ।আমি ওর
পিছে হাঁটছি ওকে ধরার জন্য ।
মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমি ক্যাম্পাসে
হাঁটছি ওর পিছু পিছু । কিন্তু সেই
গানটি এখনো শুনছি
আমি । মনে হচ্ছে বহুদূর
থেকে ভেসে আসছে ।
একসপ্তাহ জ্বরের ঘোরে একদম বেহুশ
ছিলাম । দুইটা ক্লাস টেস্ট ,
তিনটা প্র্যাকটিকাল ক্লাস মিস
করেছি । এতো দুর্বল ছিলাম
যে বন্ধুরা রিক্সায় করে
( আমার হল থেকে মাত্র দুই মিনিটের
রাস্তা ) মেডিকেল
সেন্টারে নিয়ে ডাক্তার
দেখিয়ে আনলো । ডাক্তার
বলেছে ভাইরাস জ্বর । বুঝলাম না !
জিনিয়াকে ঐ ছেলের প্রপস করার
সাথে আমার ভাইরাস জ্বরের
কি সম্পর্ক ।
এক সপ্তাহ পর জ্বর কমে গেলো ।কিন্তু
শরীর প্রচণ্ড দুর্বল ।
জিনিয়াকে দেখা হয়নি কতদিন ! ওহ !
আমি আজ শেষ বার এর
মতো দাঁড়িয়ে আছি ।
আমি জিনিয়াকে বলবো ,"
আমি আসলে নিজেকে তোমার
বিশ্বাসী প্রমান
করতে ব্যর্থ হয়েছি । এতদিন
যা করেছি তার জন্য
আমাকে ক্ষমা করে দিও " ।আজ
এতো রোদ ! মাথার মধ্যে ঝিম ঝিম
ব্যথা শুরু হয়েছে । মাথার দু
সাইডে টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি ।
আমার কি আবার জ্বর
উঠবে নাকি ?
জিনিয়া ওদের ভবন থেকে বের
হয়ে আসার পর আমি ওর পিছু নিলাম ।
জিনিয়া অবশ্য আমাকে দেখেনি ।
কিন্তু হাঁটার সময় অনুভব করলাম আমার
প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে ।পা আর
আগাচ্ছেনা ।আমি মাতালের
মতো এলোমেলো
পা ফেলছি । উফফ ! সব কিছু আঁধার
হয়ে আসছে ক্যান ? জিনিয়াকে এখনই
ডাকতে হবে ।ঐ তো সামান্য
সামনে আছে ।
আমি সর্বশক্তি দিয়ে জিনিয়া বলে
চিৎকার করে ডাকলাম ।
মেয়েটা শুনতে পেলো কিনা জানিনা
এরপর আমার আর কিছু মনে নেই ।
চোখ মেলে দেখি আমি মেডিকেল
সেন্টারে শুয়ে আছি । আমার
হাতে স্যালাইন লাগানো । আমার
আশে পাশে যে অনেক উৎসুক জনতার
ভীর সেটা আমি না দেখেই
বুঝতে পারছি । ডাক্তার জিজ্ঞেস
করলেন
" এখন ক্যামন লাগছে ? "
-এইতো ভালো !
-রোদের মধ্যে সম্পূর্ণ হাটা নিষেধ ।
ছাতা নিয়ে হাঁটবে । মনে থাকবে ?
-হুম ।
ডাক্তার এর রুম থেকে বের
হয়ে হয়ে দেখলাম
জিনিয়া বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ।
-তুমি এখানে ?
-আমাকে ডাক দিয়ে অজ্ঞান
হলে আমি কি করবো ?
জিনিয়ার মুখে লাজুক হাসি ।
এই প্রথম ক্যাম্পাসে জিনিয়ার
পাশাপাশি হাঁটছি । মাঝে মাঝে ওর
ডান হাতের আঙুল ছুঁতে চাচ্ছি কিন্তু ও
আঙুল সরিয়ে নিচ্ছে আর
মুচকি মুচকি হাসছে । পদ্ম
পাড়ে আসার সাথে সাথে আবার
অঝোরে বৃষ্টি শুরু হল ।
জিনিয়া ওর বিশাল হ্যান্ড ব্যাগ
থেকে টিপ ছাতাটা বের করে দুজনের
মাথার উপর ধরলো । কিন্তু আমার
মাথার সাথে একটু পর পর
বাড়ি লাগছে ছাতার সাথে ।
" দাও ! আমি ধরি ছাতাটা "
-নাহ আমি ধরবো
-আমি যে বাড়ি খাচ্ছি একটু পর পর ।
-এতো লম্বা ক্যান তুমি ?
-মানুষ লম্বা বি এফ এর জন্য পাগল ।
আর মেয়ে কি বলে এসব ?
-হুম তোমাকে বলসে ?
আচ্ছা দাও দুজন মিলে ধরি ।
আমি ছাতি ধরার ছলে ওর হাত শক্ত
করে ধরলাম । জানিনা ও কি অনুভব
করছে এখন ! শুধু কি আমার হাতের
উষ্মতা নাকি প্রবল বিশ্বাস ?
©somewhere in net ltd.