নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক অবহেলিত বালক

রাকিব হাসান তৌফিক

আমি লিখার চেয়ে পড়তে বেশি ভালোবাসি কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু লিখতে ইচ্ছে করে তখন কি বোর্ডের সামনে বসে পড়ি, মনোভার প্রাকাশ করে যত্ন করে এম.এস. ওয়ার্ডে সেভ করে রাখি। সেই সেভকৃত ফাইল এই ব্লগের মাধ্যমে ধীরেধীরে প্রাকাশ পাবে

রাকিব হাসান তৌফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি একজন ছাত্র ছিলাম

২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:০৪

এখন রাত ১০.৩১ মিনিট। ঠিক কয়েক মিনিট আগে আমি ঘর থেকে বের হয়ে আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশের লেবু গাছটির পাশে দাড়িয়ে ছিলাম। আকাশের দিকে তাকালাম কিন্তু একটি তারাও গুনতে পারলাম না। পান্ডুর মেঘের কোনে চন্দ্রকে কয়েকবার উকি মারতে দেখলাম। বাইরের বাতিটির আলোয় লেবু গাছটির সামান্য অংশ আলোকিত এবং সামান্য অংশ ছিলো অন্ধকার আর এই অন্ধকারের কারণ ঘরের বেড়ার ছায়া। আলোকিত অংশে আমার ছায়া পরে দেহ অবয়ব ফুটে উঠে ছিলো।
ছায়াটির দিকে তাকালাম। যেন আমাকেই আমি চিনতে চাচ্ছি। এই কি সেই আমি যে নাকি স্যার ব্যডম্যান এর মত খেলার মাঠকে বিদ্যালয় কল্পনা করে তার আচরণে আচরিত হয়েছি। এইকি সেই আমি সে নাকি তারমত বুলি আউরে কালকেও কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু কোথায় এত আবেগ যাকে আমি আজ খুজে পাই নি বরং হাসিমুখে দিন পার করেছি। ক্লাস এইটে থাকতে স্কুলের দেয়াল পত্রিকার জন্য একটি কবিতা লিখেছিলাম। অষ্টম শ্রেণীকে বিদায় জানাতে যার শেষ লাইন ছিলো

“তাই বিদায়ের বেলা বক্ষ আমার নয়ন জলে ভাসে”

কিন্তু স্বয়ং বিদ্যালয়কে বিদায় জানাতে আমার চোখের পাতাও ভিজলো না কেন? একবার আমার লিখা কবিতা দেখে এক ফ্রেন্ড কটাক্ষ করেছিলো তাই রেগেমেগে একটি সনেট লিখেছিলাম যার মূল বিষয় ছিলো বিদ্যালয় এবং তাতেও কান্নার রেশ ছিলো। কিন্তু কেন আজ নিরলিপ্ত ছিলাম? ছায়াটির দিকে ভালোভাবে তাকালাম। ছায়াটার মধ্যে কেমন যেন একটি কষ্ট খুজে পেলাম। ঠিক এমন সময় (10.27 pm) একটি বিমানকে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উড়ে যেতে দেখলাম। বিমানের যাত্রীদের কথা ভাবলাম। তারাকি আমার কষ্ট বুঝতে পারছে? তাদের মনেকি এমন কোন কষ্ট রয়েছে?
আমার কষ্টটা অবশ্য আমি বুঝতে পারছি। আমার কষ্টটা হচ্ছে কাদতে না পাড়ার কষ্ট। বিদ্যালয় ত্যাগের কষ্ট নয়, বিদ্যালয় ত্যাগ করে কাঁদতে না পাড়ার কষ্ট। আমার কষ্টকে আর একজনের কষ্টের সাথে তুলনা করা চলে। সে হল বিভূতিভূষণ এর ছোট গল্পের নায়ক। তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাকে চিতায় পুরিয়ে এসে তিনি সারা রাত কেদেছিলেন।
তিনি তার স্ত্রীর কানের দুলজোড়া খুলে রাখতে ভুলে গিয়েছেলেন আর সেই দুল জোড়া তার স্ত্রীর সাথে চিতায় পুরে ছাই হয়ে যায়। স্ত্রীর মৃত্যুতে ভদ্রলোক তেমন কাদেনি কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারলেন দুলজোড়া স্ত্রীর সাথে চিতায় পুরে গেছে তখন তিনি এই শোকে সারা রাত কেদেছিলেন। আমার অবস্থা অনেকটা এই রকম কিন্তু মনে হয় আমি এই অবস্থায় পরলে স্ত্রীর জন্য বা দুলের জন্য কাদতাম না।
যাইহক, লেবু গাছের নিকট ফিরে আসি। একটি গান গাইতে লাগলাম। তাহসানের প্রেমাতাল। ঘরে ফিরে এলাম। তিন জন ফ্রেন্ড এর কথা মনে পড়লো (T,S,R)। মনের মধ্যে আরো একটন চাপ অনুভব করলাম। মোবাইলটা তুলে নিয়ে অতীতের ডে-নোটগুলো পড়তে লাগলাম। পুরনো দিনের প্রতিদিনের কার্যক্রম এর সামারী ডে-নোট আকারে মোবাইলের ক্যালেন্ডারে লিখে রাখতাম। এবার কাজ হলো। লোচন টটনি বেয়ে জোয়ার এলো। দুকুল ছাপিয়ে তা উপচে পড়লো এবং বন্যা দেখা দিলো। কেন এমন করছি। স্ত্রীর কষ্টে নাকি দুলের। কোন একটা হবে। বুঝতে পালাম ঐ তিন ফ্রেন্ডের সাথে ক্লোজ হওয়া উচিত হয়নি আর উচিত হলেও আরো পূর্বে হওয়ার দরকার ছিলো। পূর্বেই বুঝতে পেরেছিলাম আমি যুগের উপযুক্ত নই আর আজ বুঝতে পারলাম আমি আমাকেই চিনতে পারছিনা। কিন্তু কেন?

(দুটি কাশির ইমো হবে)
উপরের লিখাটি 2007 সালের ফেব্রুয়ারী মাসে লিখা। বিদায় দিবসের রাতের অনুভূতি ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলাম। ডায়েরী বাদে আর কারো নিকট প্রকাশ করিনি। আজ প্রকাশ করলাম। উপরের লিখাটি এক পনের বছরের কিশোরের লিখা আর এখন যা লিখছি তা এক ম্যাচিউড ব্যক্তির লিখা। আমরা এখন অনেক ম্যাচিউড কিন্তু আমরা আবেগ অনুভূতির উদ্ধে নই। এখন আমার ছাত্র জিবন প্রায় শেষ। প্রকাশ্যে হয়তোবা অনূভুতি প্রকাশ করবো না কিন্তু আড়ালে আবডালে ঠিকই ছাত্র জিবন শেষ হবার বেদনায় জর্জরিত হবে।

বিঃদ্রঃ (T,S,R) তিনজনই বর্তমানে বিবাহিত এবং হাউসওয়াইফ আর আমি এখনো পিতার অন্ন ধ্বংষকারী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.