নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল নাম বাদ দিলে পুরো বাংলা সাহিত্য অপূর্ণতায় ভরে যাবে। একই সময়ের ফ্রেমে কিছু সময় কাটিয়েছেন দুইজন। যখন রবি ঠাকুর ফুলেল সৌরভে গুণমুগ্ধ করেছিলেন বিশ্ব ,ঠিক তখনই নজরুলের অমরত্ব লাভের আগমন ।রবীন্দ্রনাথ যখন বিশ্ব মঞ্চে বাংলা ভাষাকে তুলে ধরলেন ,তখন নজরুল ত্রিশালের দরিরামপুরে । এই দুই জন নক্ষত্র নিয়ে আজকের লেখা । না,কোন প্রবন্ধ,গল্প,সমালোচনা নয় । শুধুমাত্র পাঠক জেনে উপভোগ করবে সেরকম মজার মজার ঘটনার প্রবাহ নিয়েই লিখবো।
আমরা রবীন্দ্র-নজরুল কে দা’কুমড়ো সম্পর্ক নিয়ে গুজব ছড়াতে অভ্যস্ত । এই লেখা পড়লে গুরু -শিষ্যের ব্যাপারে আপনার ইতিবাচক ধারণা হবে।
নজরুল-রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল প্রীতির ,অনুরাগ,গুণাগ্রাহিতার এবং সেই সাথে অভিমান ও অভিযোগের ।রবীন্দ্রনাথের কাছে নজরুল ছিলেন বাধ্যগত কিশোর । আর নজরুলের কাছে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন গুরু । এক কথায় সম্পর্কটা গুরু শিষ্যের । রবীন্দ্র চোখে নজরুল বিস্ময় বালক ।
১। রবীন্দ্র সংগীত ও নজরুল
নজরুলের রবীন্দ্র প্রেম প্রথম প্রকাশ পায় ,এক স্কুল শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে। সে দিন তিনি গেয়েছিলেন হে ক্ষণিকের অথিতি গান ( কথা ও সুর রবীন্দ্রনাথ ,কণ্ঠ ইন্দ্রালী সেন ) নজরুলের সহকর্মী(হাবিলদার) একবার বলেছিলেন ‘নজরুলের কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রায় সকল বই ছিল’ । কলকতার ৩২ নং কলেজ স্ট্রিট, করাচির সেনানিবাস কিংবা কুমিল্লা, সব সময় নিত্যসঙ্গী ছিল রবীন্দ্রনাথের বই । বাংলাপিডিয়াতে এখানে উল্লেখ আছে
‘‘করাচি সেনানিবাসে থেকেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকা, যেমন: প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী, মর্ম্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত ও বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। তাছাড়া তাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, এমনকি ফারসি কবি হাফিজেরও কিছু গ্রন্থ ছিল। প্রকৃতপক্ষে নজরুলের আনুষ্ঠানিক সাহিত্যচর্চার শুরু করাচির সেনানিবাসে থাকাবস্থায়ই।’’
নজরুল সবেচেয়ে বেশি বই রাখতেন রবীন্দ্রনাথের । রবীন্দ্রনাথের বইয়ের মধ্যে গানের বই ছিল তুমুল প্রিয় ।গানের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ,নজরুলের প্রতি চমৎকার মন্তব্য রেখেছিলেন । সেটিও বলবো ক্রমে ক্রমে। অবশ্যই সাথে থাকবেন।
রবীন্দ্র প্রেমী নজরুলের পরিচয় পাওয়া যায় নজরুল বন্ধু মুজাফর আহম্মেদের লেখায় । তিনি লিখেছেন -
‘‘সে মূলত গান গাইতো রবীন্দ্রনাথের । এত বেশি রবীন্দ্র সংগীত কিভাবে নজরুল মুখস্ত করেছিলেন তা ভেবে আশ্চর্য হয়ে যেতাম।সমস্ত কোরআন মুখস্ত করলে হাফিজ বলা হয় । আর আমরা বলতাম কাজী নজরুল ইসলাম রবীন্দ্র সংগীতের হাফিজ।’’
নজরুল হল যুগশ্রেষ্ঠ সুরকার । তৎকালীন সময়ে এমন সুরকার দ্বিতীয় আরেক জন ছিলেন না । সুনাম আছে গান শেখানোর ক্ষেত্রেও নজরুল সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
‘কে আমারে যেন এনেছে ডাকিয়া, এসেছি ভুলে।
তবু একবার চাও মুখপানে নয়ন তুলে।’’- তথ্যসূত্র গানটিকে কবিতা হিসাবেও আবৃতি করা হয়েছে। শুনতে ক্লিক করুন। উল্লেখ্য গানটি উমা সেন কে শিখিয়েছিলেন । উমা সেন কে আরেকটি গান শিখিয়েছিলেন আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি।
এছাড়াও প্রতিভা সোম কে ‘পথ দিয়ে কে যায়কণ্ঠ সংযুক্তা তালুকদার বাগচী; ফজিলাতুন্নেসার সহোদরা কে হে ক্ষণিকের অথিতি গানটি শিখিয়েছিলেন । বিশেষ করে প্রথম জীবনে নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথের গান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব ও উর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন।
রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া নিয়ে ,রবীন্দ্রনাথ যে মন্তব্য করেছিলেন জানাবো । মনে আছে তো ? আসুন জেনে নিই।
‘‘রবীন্দ্রনাথের গান সঠিক সুরে গাওয়া হয়নি এই মর্মে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুমোদন বোর্ড গোরা (১৯৩৮) ছবিটি সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছিল। ফলে ছবি মুক্তির ব্যপারে সৃষ্টি হয়েছিল জটিলতা।… নজরুল কিছুমাত্র চিন্তা না করে ছবির ফিল্ম এবং প্রজেক্টর নিয়ে সোজা বিশ্বভারতীতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেন। সব শুনে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কী-কাণ্ড বল তো? তুমি শিখিয়েছ আমার গান আর ওরা কোন্ আক্কেলে তার দোষ ধরে। তোমার চেয়েও আমার গান কি তারা বেশি বুঝবে? আমার গানে মর্যাদা কি ওরা বেশি দিতে পারবে?’
নজরুল তখন রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে একটি খসড়া অনুমোদনপত্রে সই করিয়ে নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের এই মন্তব্যে প্রমাণ হয় রবীন্দ্র সংগীত লালন করেছিলেন নজরুল। এটা একটা বৃহৎ স্বীকৃতিও । এই গানটির সংগীত পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম । শুধু এই গানই নয় ,গোরা মুভিতে সংগীত পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন নজরুল। মুভি ও গান এক সাথে। পার্ট-১পার্ট-২ । এখানেও একটি গান পাবেন। যা নজরুল নিজে পরিচালনা করেছে।
একেই বলে রতনে রতন চেনে।
২। নজরুল প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য
রবীন্দ্রনাথ নজরুল এতটাই খুশি করেছিলেন যে ,খুশি নজরুল আহত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আস্তে আস্তে সেটাও জানবো।
একদিন সতেন্দ্রনাথ বলেন:
''ভাবের সংস্কৃতি সমন্বয়ের সাধনায় ,এক নতুন অবদান সৃষ্টির জন্য ,তাঁর কবিতা রবীন্দ্রনাথ কে রীতিমত বিস্মিত করেছে ''
''তুমি যে বিখ্যাত হবে ,তাতে কোন সন্দেহ নেই''--রবীন্দ্রনাথ ( মাসিক বসুমতি,কার্তিক ১৩৫২)
নজরুলের ধূমকেতুর শুভকামনায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন -
'' আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু,
আঁধারে বাঁধ্ অগ্নিসেতু,
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয়-কেতন।
অলক্ষণের তিলক-রেখা
রাতের ভালে হোক-না লেখা--
জাগিয়ে দে রে চমক মেরে
আছে যারা অর্ধচেতন
।
নজরুল লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ কে উদ্দেশ্য করে -
‘রবি শিখা ছড়িয়ে পড়ে দিক হতে আজ দিগন্তরে
সে কর শুধু পশলো না মা অন্ধ কারার বন্দ ঘরে।
‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশ পাওয়ার পর ,নজরুলের ব্যাপারে ব্রিটিশরা নড়েচড়ে বসে। কবিতার কিছু অংশ পড়া যাক।
আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
দেব–শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?
--আনন্দময়ীর আগমনে কবিতাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আবৃতি শুনতে চাইলে এখানে ।আবৃত্তি -ফয়সাল।
পাঠক আপনি জানেন ,‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি অন্যতম জনপ্রিয় । আমার মতে ‘বিদ্রোহ’ কবিতাটির পর এটিই সবচেয় উত্তেজক কবিতা । এই কবিতা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যেন ঘি ঢেলে দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে ব্রিটিশ সরকার সহজভাবে নেয় নি।
এই কবিতা প্রকাশের পর সাম্যের কবির ৫ বছরের কারাদণ্ড হয় । কারাগারে চলে পাশবিক নির্যাতন । কিন্তু বাঙালির প্রাণের কবি দমে যায়নি। প্রতিবাদ করেছেন না খেয়ে । ৩৮ দিন অনশন করেছিলেন । চিত্তরঞ্জন দাসের মত মানুষ বারবার চেষ্টা করেন অনশন ভাঙ্গতে। কিন্তু পারেন নি । শুধু তিনিই নয় তৎকালীন লেখক,পাঠক সমাজ,বৃদ্ধিজীবিসহ সবাই । নজরুলের এই পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণ করছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তখন নজরুল প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন । সেখানে নজরুলের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেন ।
'Give up Sticke,Our literature claims you'
বাংলা যদি বলি “অনশন ধর্মঘট পরিত্যাগ করো, আমাদের সাহিত্য তোমাকে দাবি করে।”
অনুধাবন করা যায় রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্ককেমন ছিল?
কিন্তু সে চিঠি প্রেসিডেন্সি কারা কর্তৃপক্ষ নজরুল ইসলাম কে দেয় নি ইচ্ছাকৃত ভাবে। কারা কর্তৃপক্ষ লিখে পাঠান ‘এড্রেস নট ফাউন্ড’
অবশেষে বিরজা সুন্দীর (কবির শ্বাশুড়ি) লেবুজল পান করিয়ে অনশন ভাঙ্গেন। বিরজা সুন্দরী কবিকে মানসিকভাবে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। বিরজা সুন্দরী কে নিয়ে অন্য দিন লিখবো । পড়ার আমন্ত্রণ রাখবেন তো ?
‘বসন্ত’ ঋতুনাট্য টি রবীন্দ্রনাথ ,নজরুল কে উৎসর্গ করেছিলেন । এই বইয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেন প্রথম পালাগান। যাক মূল প্রসঙ্গে থাকি। উৎসর্গের সময়টায় কাজী নজরুল ইসলাম জেলে ছিলেন । প্রকৃতির কবি রবীন্দ্রনাথ খুব দুঃখ প্রকাশ করেন যে তিনি যদি নিজ হাতে কাজী নজরুল ইসলামকে দিতে পারতেন তাহলে খুশি হতেন। যখন নজরুল ইসলাম শুনলেন রবি ঠাকুর তাঁকে বই উৎসর্গ করেছে। সেটি শুনে তিনি আনন্দে আত্মহারা। সে কি আনন্দ । যার বই সাথে নিয়ে ঘুরছেন নগরে নগরে । যার গান গাওয়াকে গর্বের মনে করেন সেই মানুষ তাঁকে বই উৎসর্গ করেছে? লাফ দিয়ে কারাগারের লোহার গারদের উপর পড়লেন ।এটিই ছিল নজরুল জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মূহুর্ত (ব্যক্তিগত মতামত) ।বই বাহক ছিলেন পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ।নজরুল তাঁকে(পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়) জড়িয়ে নাচতে শুরু করলেন । তিনি থাম ছিলেন না। এক পর্যায়ে বইটি ছিঁটকে পড়ে গেল। বইটি তুলে নিয়ে চুমো খেতে লাগলেন কখনও কপালে,বুকে চেপে আর্শীবাদ করতে থাকেন। নজরুল এ বিষয়ে বলেছিলেন -
তাঁর এই আর্শীবাদ মালা পেয়ে আমি সর্বজ্বালা -যন্ত্রণা,অনশন-ক্লেশ ভুলে যায়। উক্ত প্রসঙ্গে কবিতার লাইন স্বরণ করা যাক।
‘‘ সে সুন্দর বহ্ণিদগ্ধ মোর বুকে তাই দিয়েছিলে বসন্তের পুষ্ঠিত মালিকা’’
রবীন্দ্রনাথ নজরুল প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন -
‘‘ আমি যদি আজ তরুণ হতাম , তাহলে আমার কলমেও ঐ সুর বাঁজত’’
তবে কি রবীন্দ্রনাথ নজরুল চেতনাকে মিস করেছিলেন সাহিত্য সাধনায় কোন এক সময় ? তিনিও কি চেয়েছিলেন বাঁশের বাশি বাঁজাতে? তাহলে কি বার্ধক্যের কাছে তিনি হার মেনে ছিলেন ? তিনি তো নিজের গণ্ডির বাইরে গিয়েও শেষ সময়ে ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন । যেখানে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্ধি উপমহাদেশ সেখানে তিনি শুধু প্রকৃতি,জীবনবোধ,সমাজ সংস্কার এসব বিষয় নিয়ে লিখে গেলেন ?
আমার মূল্যায়ন হলো --দুইজন দুই মেরুর কবি। তবে তাঁরা দুইজনই সেরাদের সেরা । একজন বাংলা সাহিত্যের দেহ(রবীন্দ্রনাথ) ,আরেকজন বাংলা সাহিত্যের মন (নজরুল) মূলত দুই কবির পারিপারিক ও সামাজিক জীবনই তাদের সাহিত্য সাধনার গতিপথ ঠিক করে দেয় । এই জন্যই রবীন্দ্রনাথ হয়তো ব্রিট্রিশদের বিরোদ্ধে খুব বেশি উচ্চ বাচ্য করেন নি। তবে তিনি যে একদম করেন নি সেটা ভুল। তবে এটা সত্য এবং মানতে হবে যে নজরুলের মত কেউ করেন নি । এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে। তবে সেটার মানে এই নয় যে নজরুল ভাল,রবীন্দ্রনাথ খারাপ। প্রত্যেকের নিজস্ব সত্তা আছে। এঁদো মাটির মানুষ থেকে শুরু করে রাজাদেরও । কবি-সাহিত্যিকদেরও তাই। সেই সত্তাকে লালন করেই তাঁরা সমৃদ্ধ করেন সাহিত্য। রেখে যান অমরত্বের অমোচনীয় ছাপ। সেটা নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। আর অবশ্যই তাঁরা সম্মানের পাত্র।
আমরা যারা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল কে বিতর্ক চর্চা করতে পছন্দ করি তাঁরা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন । রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্কটা ঠিক কেমন
ছিল। আমরা কেন এই পবিত্র সম্পর্কটাকে দূষিত করবো ? আসুন এসব থেকে বিরত থেকে বরং নিবিড়ভাবে রবীন্দ্র-নজরুল চর্চা করি।
১৯২৫ সালে নজরুল ‘লাঙ্গল’ পত্রিকা প্রকাশ করেন । নজরুল সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ বন্ধ হবার পরে নজরুল সম্পাদনা করেন ‘লাঙ্গল’। এবারও রবীন্দ্রনাথ শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন নজরুলকে। প্রথম প্রকাশ পায় ২৫ ডিসেম্বর, ১৯২৫।
“জাগো জাগো বলরাম
ধর তব মরুভাঙ্গা হল
বল দাও, ফল দাও
স্তব্ধ করো ব্যর্থ কোলাহল”।
রবীন্দ্র-নজরুলের প্রথম কখন দেখা হয়েছিল ?
রবীন্দ্রনাথ একদিন খুব আগ্রহভরে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় কে নজরুল ইসলাম কে শান্তি নিকেতনে নিয়ে আসতে বললেন।
যথারীতি তিনি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আসতে গেলেন। প্রথম দেখায় রবীন্দ্রনাথ নজরুলের দিকে এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকলেন । কিছুক্ষণ পর রবীন্দ্রনাথ শুধু একটি কথা বললেন 'বসো' ,তারপর বসার পরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন।(সূত্র -আবদুল আজিজ আমান ১৩৮৭) উল্লেখ প্রথম দর্শন নিয়ে মতবেদ রয়েছে।তবে তিনি খুব জোর দিয়ে বলেন এটাই ছিল রবীন্দ্র-নজরুলের প্রথম সাক্ষাত।
অপর একটি সূত্র অনুসারে ,তাঁদের প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসের কোন এক তারিখে(দুঃখিত নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায় নি ) সাক্ষাতের স্থান ছিল শান্তিনিকেতন । তখন গজল সম্রাটের সাথে ছিলেন ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুলল্লাহ্(সূত্র- রবীন্দ্র জীবনী-প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়) এই মন্তব্যের রেফারেন্স হিসাবে লেখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সচিব সুধাকান্ত রায় চৌধুরির অনুজ নিশিকান্ত রায় চৌধুরির । তিনি একাধিক বার এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
দার্জিলিংয়ে সাক্ষাৎ:
১৯৩১ সালের জুন মাসে দার্জিলিংয়ে ভ্রমণকালে কাজী নজরুল ইসলাম শুনলেন সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ঘুরতে এসেছেন। শোনামাত্রই নিজে মুখপাত্র হয়ে লেখিকা জাহানারা চৌধুরী, নাট্যকার মন্ময় নাথ, ও শিল্পী অখিল নিয়োগীকে (স্বপনবুড়ো) নিয়ে কবিগুরুর সাথে দেখা করতে আসেন। নজরুল তার এই সাক্ষাতের কথা ১৩৩৮ সালের ‘স্বদেশ’ পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যায় প্রবন্ধাকারে প্রকাশ করেন। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে পেয়ে খুবই খুশী—বহুক্ষণ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়”। আড্ডার এক পর্যায়ে কবিগুরু-পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসে দরজার পাশে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, “বাবা-মশায়ের খাবার দেরি হয়ে যাচ্ছে”। সবাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন তখন ১২টা গড়িয়ে দুপুর। কবিগুরু তখনো অভুক্ত। তাদের দুজনের মধ্যে হৃদ্যতা কতটুকু গভীর ছিল তা সহজেই বোঝা যায়।(এই অংশের তথ্যসূত্র ক্লিক করুন ।
আরও একটি ঘটনা বলি। সেটা ১৯২১ সালের ৮ মে ,বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছিল। ধারণা করা হয় সেখানে প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল। বলা হয় এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল পাশাপাশি কেদারায় বসে ছিলেন।রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন নজরুল কে ,তাঁর পাশে বসার জন্য। যেহেতু তিনি পাশে বসার জন্য বলেন ,সেহেতু এই কথার মাধ্যমে আমরা অনুধাবন করতে পারি,তারও আগে দুই মহারথির সাক্ষাত হয় । অথ্যার্ৎ ৮ মে ,১৯২১ সালেরও আগে।
কাজী নজরুল ইসলামের দুর্লভ ভিডিওটি দেখতে ও ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন দয়া করে।
তথ্যসূত্র: অজ্ঞাত নজরুলের সন্ধানে,প্রথম আলো,২৪বিডিনিউজ২৪.কম,আটর্সবিডিনিউজ২৪.কম,বিবিসি বাংলা , উইকিপিডিয়া,বাংলাপিডিয়া, বাকি তথ্যসূত্র লেখায় উল্লেখ করেছি।
২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:১৮
রাকু হাসান বলেছেন:
ঈদের শুভেচ্ছা । অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ২:৩৫
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আমাদের দেশে যারা রবীন্দ্র গবেষক তারা নাকি নজরুলকে অবহেলার চোখে দেখে । সত্য কিনা মতামত জানাবেন।
২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:২২
রাকু হাসান বলেছেন:
আমার মতে যারা প্রকৃত রবীন্দ সত্তাকে ধারণ করে তারা কখনই নজরুল কে অবহেলার চোখে দেখবে না । কিছু আছে আমারও মনে হয় তবে সেটা সংখ্যায় কম । ভালো মন্দ থাকবে। যারা এমনটা করে তাঁদের রবীন্দ্র গবেষক হওয়ার আগে নজরুল বিদ্বেষ দূর করতে হবে । কেননা রবীন্দ্র সাহিত্যে বিদ্বেষের স্থান নেই। ধন্যবাদ পড়ে ,মন্তব্য জানানোর জন্য। আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম ।
৩| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৩:৩৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
পড়ে আনন্দ পেলাম, উনাদের এই জগৎ সম্পর্কে আমার ধারণা ছিলো না, ধন্যবাদ।
২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:২৫
রাকু হাসান বলেছেন:
স্যার ধন্যবাদ । একজন ব্লগারের সাথে প্রায় কথা হয় আমার, সেখানে প্রায় আপনার সম্পর্কে ইচিবাচক প্রসঙ্গ চলে আসে। থাকুন আমাদের সাথে। আপনি একজন প্রকৃত ব্লগার । আমি মনে হয় ব্লগার হওয়ার পথে আছি। আমি মনে করি আরও অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার বাকি।
৪| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৩:৫২
শের শায়রী বলেছেন: দারুন একটা পোষ্ট দিয়েছেন কিছু জানা ছিল, কিছু অজানা। অসাধারন। অভিনন্দন জানুন।
২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:২৯
রাকু হাসান বলেছেন:
শের শায়রী ভাইয়া আপনার বেশ কিছু লেখা পড়েছি আমি । আপনি যখন ছিলেন না ,এখনও পড়ি । আপনি সামুকে অবশ্যই সমৃদ্ধ করে চলেছেন। এই পোস্টের বিষয়বস্তুর অংশ অনেকের জানা থাকার কথা ছিল । তাঁদের মধ্যে আপনার নামও কল্পনাও নিয়েছিলাম । বলেছেন কিছু অজানা ছিল --সেটাই বড় । আপনার অভিনন্দন গ্রহণ করলাম। মনে হচ্ছে আমার ব্লগে মন্তব্যে প্রথম আসলেন, স্বাগতম আপনাকে ভা্ই। পরিবার নিয়ে ভাল থাকুন আপনি।
৫| ২৬ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৩৭
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: পড়েও যেন অতৃপ্তি কিছুটা রয়েই গেল! মনে হয় আরো কিছু ---আরও কিছু,ধন্যবাদ সুন্দর উপস্থাপনার জন্য।
২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৩১
রাকু হাসান বলেছেন:
আছে ভেতরে আরও অনেক কিছু । সেগুলো যেন জানাতে পারি সেই দোয়ার আবেদন করি । কাজী আবু ইউসূফ(রিফাত) ভাই আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম । কথা হবে ... একটু বেশিই ভাল থাকুন । আর অবশ্যই নিরাপদে থাকবেন সেই প্রত্যাশা । ইদের শুভেচ্ছা থাকলো ।
৬| ২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:১৪
ইসিয়াক বলেছেন: দারুণ একটা পোষ্ট । খুব ভালো লাগলো। প্রিয়তে রাখলাম।
২৬ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:১৬
রাকু হাসান বলেছেন:
বাহ প্রিয়তে স্থান দিয়ে সম্মান দিলেন । প্রিয় হয়ে থাক রবীন্দ্র-নজরুল চেতনা ।
৭| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৪৯
আহমেদ জী এস বলেছেন: রাকু হাসান ,
নজরুলকে নিয়ে অন্যধাঁচের লেখা। গতানুগতিক নয়।
ভালো লাগলো।
২৬ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৩৭
রাকু হাসান বলেছেন:
আসসালামু ওয়ালাইকুম । আপনার মন্তব্যে প্রেরণা্ পেলাম। লাইকড ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভাল থাকবেন স্যার।
৮| ২৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলমের ১২১ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে মুল্যবান কথা সমৃদ্ধ পোষ্টটি আমি দেখেছি সামুতে প্রকাশের পরপরই। করোনায় আক্রন্ত হওয়ার পরে সুস্থ হলেও শারিরিক দুর্বলতর কারণে এটার পাঠ সম্পন্ন করতে বেশ বিলম্ব হয়ে যায় । পোষ্টের সাথে থাকা প্রায় প্রতিটি লিংকেই আমি গিয়েছি । অভিভুত হয়েছি আপনার লেখার গভীরতা দেখে।
লিংকে থাকা কন্ঠ শিল্পী ইন্দ্রানী সেনের কন্ঠে গাওয়া ‘হে ক্ষণিকের অতিথি’ গানটি শুনা সহ আপনার পোষ্টের বাংলাপিডিয়ার লিংকে গিয়ে অনেক গুরুত্বপুর্ণ লেখা পাঠেও অনেকটা সময় পার হয়ে যায়।
করাচী সেনানিবাসে থেকেও নজরুল কিভাবে সুদুর বাংলা মূলুক থেকে 'প্রবাসী', 'ভারতবর্ষ', 'ভারতী' , 'মানুষী', 'মর্মবাণী', 'সবুজপত্র', ও 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য' সাময়িকি ও পত্রিকার গ্রাহক হিসাবে সংগ্রহ করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন মহা দুর্যোগের সময়ে নজরুলের মত একজন অল্প শিক্ষিত ও বৃটিশ সেনানিবাসে থেকে বলতে গেলে বৃটিশ বিরোধি সাময়িকিগুলি কিভাবে সংগ্রহ করতেন তা ভবতেও অবাক লাগে । তিনি যে শুধু সাহিত্য প্রেমিই ছিলেন তা নয়, বুকে কতটুকু সাহস থাকলে যুদ্ধকালীন সে সময়ে বৃটিশ বিরোধি লেখা সমৃদ্ধ (সেগুলির সব লেখাই যে প্রকাশ্য বৃটিশ বিরোধি ছিল তা কিন্তু নয়, তবে লেখাগুলির কতকে প্রকাশ্য বৃটিশ বিরোধী কথা থাকলেও অন্য গুলিতে থাকত আভসে ঈঙ্গিতে ) পত্রিকা এবং সাময়িকী গুলি সংগ্রহ ও সেগুলি নীজ সংগ্রহে রেখেছিলেন তা সত্যিই ছিল একটি দুঃসাহসী কাজ ।
আপনার পোষ্টে থাকা ‘কে আমারে যেন এনেছে ডাকিয়া, এসেছি ভুলে। একবার চাও মুখপানে নয়ন তুলে' । লিংকে ক্লিক করে কবিতাটির আবৃতি শুনে মুগ্ধ হলাম ।উমা সেনকে শেখানো গান ‘আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি শেখাতে,সেসাথে প্রতিভা সোমকে শেখানো গান ‘পথ দিয়ে কে যায়’ গান দুটিও লিংক ফলো করে শুনলাম। সত্যিই ভাবতে অবাক লাগে নজরুল যে শুধু বড় মাপের সুরশ্রস্টা ছিলেন তাই নয়, তিনি তার সৃষ্টিকে অপরের কাছে অবারিতভাবে বিতরণ করে আমাদের সংগীতের ভুবননে করেছেন সমৃদ্ধ ।
কাজী নজরুল ইসলামের রবীন্দ্র সংগীত চর্চা সম্পর্কে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রসঙ্গীত বোর্ডের আপত্তির মুখে সেই গানটি রবীন্দ্রনাথ নীজকানে শুনে নজরুলকে যে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং বলেছেন ‘তোমার চেয়েও আমার গান কি তারা বেশি বুঝবে, আমার গানের মর্যাদা কি ওরা বেশি দিতে পারবে’ তাও ছিল কবি গুরুর পক্ষ থেকে নজরুলের জন্য একটি অসাধারণ অনুপ্রেরনার বিষয়। নজরুলের রবিন্দ্র সংগীত চর্চা ও প্রীতির প্রতি রবীন্দ্রনাথের নীজমুখের স্বীকৃতি যে কত মূল্যবান ছিল তা বুঝতে আমাদের হয়তো আরো অনেক দীর্ঘ সময় লেগে যাবে । বিষয়টি আপনার লেখায় সুন্দরভাবে উঠে না আসলে এটা হয়তো আমাদের অনেকের নিকট অজান্তেই থেকে যেতো।
এ পোষ্টে থাকা নজরুল প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য ‘তুমি যে বিখ্যাত হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই’, লেখাটির এ জায়গাটিতে এসে প্রসঙ্গক্রমে আমার মনে পড়ে যায় আরো কিছু কথা; যথা কবি খান মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন তার কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী মূলক গ্রন্থ ‘যুগশ্রষ্টা নজরুল’এ উল্লেখ করেছেন যে নজরুল ইসলাম তার বিখ্যাত বিদ্রোহী কবিতা হাতে নিয়ে জোড়াসাঁকোতে রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে গিয়েছিলেন ।বাড়ীর ফটকে গিয়ে কানফাটনো স্বরে চিৎকার করে বলেছিলেন ‘গুরু আমি আসতে চাই তোমার কাছে’, কবি গুরু জানতে চাইলেন ‘কি করতে এসেছিস’, নজরুল জবাব দিলেন ‘তোমাকে খুন করতে’ , কবি বললেন ‘তাহলে আর দেরী কেন এক্ষনি চলে আয়’। নজরুল গিয়ে কবি গুরুকে তার বিদ্রোহী কবিতাটি পাঠ করে শুনালেন, কবিগুরুও মন্ত্রনমুগ্ধের মত তা শুনলেন , শুনে বললেন ‘ঠিকই তুই আমাকে একদিন খুন করবে’। নজরুলের কাব্য প্রতিভার অসাধারণ পরিচিতি পেয়ে তিনি নজরুলকে বলেছিলেন ‘কোদাল দিয়ে মুছ চেছোনা, অসাধারণ কাব্য প্রতিভাটি সৃজনশীল কালজয়ী সাহিত্য কর্মে বেশী খাটাও’ । কবি গুরুর সে কথা মনে হয় নজরুলকে অনুপ্রনীত করেছিল সৃজনশীল কবিতা, গান, গজল ও সাহিত্যের অন্যন্য শাখায় সমভাবে বিচরণ করতে । ফলশ্রতিতে আমরাও পেয়েছি বৈচিত্রময় কালজয়ী এক যুগশ্রষ্টা নজরুলকে ।
রবিন্দ্রসাহিত্য প্রভাব নজরুলের উপর না পড়লেও নজরুলের প্রতি কবি গুরুর স্নেহ ভাআলবাসা ও পথ নির্দেশিকার যে যথেষ্ট প্রভাব ছিল তা অস্বিকার করার উপায় নাই । বিষযটি আপনার পোষ্টেও উঠে এসেছে সুন্দরভাবে । নজরুলের কারাগারে থাকাকালীন সময়ে রবিন্দ্রনাথের ‘বসন্ত গীতি নাট্য’টি নজরুলকে উৎসর্গ করার বিবরণীতে ।
মুল্যবান এ লেখাটি প্রিয়তে গেল ।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল
৩১ শে মে, ২০২০ রাত ১২:১৫
রাকু হাসান বলেছেন:
আসসালামু আলাইকুম ।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলমের ১২১ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে মুল্যবান কথা সমৃদ্ধ পোষ্টটি আমি দেখেছি সামুতে প্রকাশের পরপরই
জেনে আপ্লুত হলাম যে আপনি শুরুতেই দেখেছেন।
করোনায় আক্রন্ত হওয়ার পরে সুস্থ হলেও শারিরিক দুর্বলতর কারণে এটার পাঠ সম্পন্ন করতে বেশ বিলম্ব হয়ে যায় । পোষ্টের সাথে থাকা প্রায় প্রতিটি লিংকেই আমি গিয়েছি । ---আমি ধরে নিয়েছিলাম যে এহেন অসুস্থতার জন্য আপনার মত জ্ঞানী ব্লগাররের পদরেণু পাব না হয়তো। একটি মন্তব্য একটি পোস্টের সমান । আমি খুব অবাক হয়েছি আপনার পরিশ্রমী মনোভাব দেখে। আমি জানি না ,এমন কয়জন পাব েএই পোস্টে যে প্রত্যেকটা লিংকে গিয়েছি। তবে নিশ্চিত করে বলা যায় সেটা খুব কমই হবে। এখানেও শিক্ষণীয় কিছু পেলাম । এই দুর্বল শরীর নিয়ে আপনি পূর্ণাঙ্গ পোস্টের শিরা-উপশিরায় ভ্রমণের জন্য আমি শুধু কৃতজ্ঞতাটাই প্রকাশ করতে পারবো স্যার।
করাচী সেনানিবাসে থেকেও নজরুল কিভাবে সুদুর বাংলা মূলুক থেকে 'প্রবাসী', 'ভারতবর্ষ', 'ভারতী' , 'মানুষী', 'মর্মবাণী', 'সবুজপত্র', ও 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য' সাময়িকি ও পত্রিকার গ্রাহক হিসাবে সংগ্রহ করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন মহা দুর্যোগের সময়ে নজরুলের মত একজন অল্প শিক্ষিত ও বৃটিশ সেনানিবাসে থেকে বলতে গেলে বৃটিশ বিরোধি সাময়িকিগুলি কিভাবে সংগ্রহ করতেন তা ভবতেও অবাক লাগে ।--এই অংশে আপনি বিস্ময়ের উষ্মা প্রকাশ করছেন ,আমি করেছি। আপনার মনের প্রশ্নগুলো আমার মনেও উদয় হচ্ছে অবিরত । এ বিষয়ে জানতে চেষ্টা করছি। প্রবাসী পত্রিকাটি নারীবাদী পত্রিকা ছিল । । তখন এ পত্রিকাটির নাম ডাক ছিল প্রচুর । নজরুল নিয়মিতই পড়েতেন । সাম্যবাদী নজরুলের বেলায় তো অবশ্য পাঠ্য একটি পত্রিকা। যে পত্রিকাগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন সেগুলো অব্যশই গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রেখেছে ইংরেজি বিরোদ্ধে । সেগুলো সংগ্রহ করে সহজ কথা নয়। আর সেটা যদি সেনানিবাসে থেকে হয় তাহলে তো কথাই নাই ।
সত্যিই ভাবতে অবাক লাগে নজরুল যে শুধু বড় মাপের সুরশ্রস্টা ছিলেন তাই নয়, তিনি তার সৃষ্টিকে অপরের কাছে অবারিতভাবে বিতরণ করে আমাদের সংগীতের ভুবননে করেছেন সমৃদ্ধ ।--- বাংলা সাহিত্যের দুজন মানুষ একজন রবীন্দ্রনাথ আরেকজন নজরুল ।তাঁদের যে পাত্রেই রাখি না কেন ,তাঁরা নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিবেনই । এটাই আমার বিশ্বাস । আমি নজরুলের মৃত্যুক্ষধা উপন্যাস পড়ে ঢুকরে কেঁদেছিলাম । এতই শক্তিশালী একটি উপন্যাস । কিন্তু আমরা
উপন্যাসিক নজরুল কে ভালোভাবে পাইনি । মৃত্যুক্ষধা উপন্যাস সেটার উৎকৃষ্ট উদাহারণ। প্রসঙ্গক্রমে কথাগুলো চলে আসলো। নজরুল একজন যুগদ্রষ্টা, যুগস্রষ্টা কবি,সুরকার,গায়ক,লেখক,উপন্যাসিক । আমি অনেক মিস উপন্যাসিক নজরুল কে । তিনি দিতে পারতেন অনেক কিছুই । যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই মুক্ত পেয়েছেন তিনি।
রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া প্রসঙ্গে একটি বলি।
নজরুল তখন সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করছেন । এমন না তিনি নতুন রবীন্দ্র সংগীত সুর করছেন বা গায়ছেন । সুর সম্রাট হিসাবে তখন তিনি প্রতিষ্ঠিত । সেই সময়ে নজরুলের সুর করা নেহাতই এটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পড়ে। আমি বলবো নজরুলের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা একটি কারণ এমনটা হওয়ার জন্য। আমার নজরুল অনেক তিরস্কিত হয়েছেন ।
আমি আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লাম । সামনে যায়.।
রবিন্দ্রসাহিত্য প্রভাব নজরুলের উপর না পড়লেও নজরুলের প্রতি কবি গুরুর স্নেহ ভাআলবাসা ও পথ নির্দেশিকার যে যথেষ্ট প্রভাব ছিল তা অস্বিকার করার উপায় নাই ।---- নজরুল যখন সবে কিশোর থেকে যৌবনে পর্দাপণ তখন রবীন্দ্র সাহিত্যের তো জয়জয়কার । সে সময়টাতে রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে গিয়েই লিখে গেছেন । পেয়েছেন সমীহ । সেটা কতটুকু সৃজনশীলতার কল্পনা করা যায় না । আমি করতে পারি না । সেই কাজটিই নজরুল দক্ষ হাতে সফল ভাবে করছেন। নজরুল যদি কোনো ভাবে রবীন্দ্রনাথের সমর্থন না পেতেন তাহলে তো সেই সময়টাতে কেউ গুণতোই না নজরুল কে । রবীন্দ্রনাথের সমর্থনটা খুব কাজে দিয়েছে তখন। তবে এটা নজরুল নিজ গুণে আদায় করে নিয়েছেন।
আমার একটি খারাপ অভ্যাস আছে । যখন বিশেষ কিছু পড়বো, করবো বা কারও মন্তব্যের উত্তর দিতে চেষ্টা করবো তখন কেন জানি একটি উপযুক্ত সময় খুঁজি । রয়ে সয়ে দেওয়ার চেষ্টা থাকে । তাই আপনার মন্তব্যের উত্তর দিতে খানিকটা দেরি হয়েছে। সে জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি । আপনি আমাকে যে সম্মান করেছেন পাঠে ও মন্তব্যে সেটার উত্তর দিতে যদি একটু চেষ্টা না করি .পাঠক কষ্ট পাবে। সেই কষ্ট আমি অনুভব করি । সেটা কষ্টের ।
এবার বলবো আপনার নগরবধু আম্রপালী মহাকাব্য এর মন্তব্য ও উত্তরের প্রসঙ্গে ।আপনার মন্তব্য আমি পেলাম । আপনি ছোট করে মন্তব্য করতে পারতেন । মন্তব্য করতে গিয়ে নতুন কিছু বিষয় সামনে আসছে আপনার সেগুলোও সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন । যা একটি পোস্টের সমান । নিজেই আবার সমৃদ্ধ করেছেন পোস্টটি।
প্রসঙ্গটি ভাবতে গিয়ে খ্রীষ্টের জন্মেরও প্রায় ছয়শ বছর আগের ভারতবর্ষ কেমন ছিল ? কেমন ছিল সেখানকার অধিবাসীরা ? তাদের চিন্তাধারা-জীবনযাপন পদ্ধতি কেমন ছিল ? রাজারা কেমন ছিলেন ?সাধরণ প্রজারাইবা কেমন ছিলেন এসব প্রশ্ন মনে জাগতে ছিল । মনে জাগা প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আম্রপালী উপাখ্যানের কিছু ঐতিহাসিক কাহিনী জানতে পারি ।-- আপনার মন্তব্য পড়ার সময়ই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাথায় । সেটার উত্তর আপনি নিজে দিলেন মন্তব্যে ,সেটার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। খ্রীষ্টের জন্মের আগের ইতিহাসে কেমন ছিল বাংলা ,সে বিষয়ে আমার ধারণা কম । আপনার পোস্ট,ও মন্তব্য পড়ে নতুন একটি দরজা উন্মুক্ত হলো যেন আামার জন্য। পড়ার আশা রাখি । অনেক বেশি পড়তে হবে । বই পাঠের বিষয়ে আপনি খুব খুব চমৎকার বলেছেন । একমত পোষণ করছি ।
আমরা জানি ইতিহাস আমাদেরকে বিবিধভাবে ছলনা করতে পছন্দ করে । ঐতিহাসিকগণ একে অপরের যুক্তি মানতে চান না,
অনেক সময়্মই বিভ্রান্ত করে আমাদের মত সাধারন কৌতুহলী পাঠকদের । অনেকেই এ ক্ষেত্রে কল্পনা করে নিতে পছন্দ করে । আমিও আম্রপালীকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে কিছুটা কল্পনার মিশেল দিয়েছি ।--- হ্যাঁ মাঝে থেকে আমরা সাধারণ পাঠকরা অতল সাগরে সাঁতার কাটতে থাকি । আপনি বলেছেন ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে কল্পনার মিশেল দিয়েছেন । বিষয়টা আমি ধরতে পারি নি । তবে অনুমেয় ছিল যে এ ধরনের রচনায় কবিরা একটু কল্পনার মিশেল দেন । না জানার কারণ হলো পুরো বিষয়টা আমার কাছে নতুন ছিল । আপনার সরল স্বীকারোক্তি প্রমাণ করলো আপনার স্বকীয়তা ।
ডঃ এম এ আলী স্যার ,অগোছালে ভাবে বেফাঁস অনেক কথাই বলে ফেললাম , তবে মন্তব্যের উত্তরের মাধ্যমে যে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা সেটা চিরন্তন ।
৯| ০১ লা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৫৫
ঢুকিচেপা বলেছেন: চমৎকার লেখা।
অনেক কিছু জানা হলো। এ বিষয়ে পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
“কাজী নজরুল ইসলামের দুর্লভ ভিডিওটি দেখতে ও ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন দয়া করে।” লিঙ্কটা একটু দেখবেন।
শুভেচ্ছা রইল।
০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০০
রাকু হাসান বলেছেন:
আপনি তো দেখি ,আমার এই পোস্টেও অল্প সময়ে ভালো পড়লেন । কৃতজ্ঞতা ভাই। লিংকটা দেখছি কাজ করছে ,আমার কাছে ।চেষ্টা থাকবে ,েইউটিউভে আপলোড করে ,এমবেড করে দেওয়ার ।আপনার সাথে দ্রুত আবার কথা হচ্ছে। অনেক কৃতজ্ঞতা আপনার প্রৃতি । শুভরাত্রি । শুভেচ্ছা সারাজীবন।
১০| ০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১:১৩
ঢুকিচেপা বলেছেন: আমি যখন ক্লিক করলাম তখন gmail Account চায়। আপনার কাছে ঠিক আছে মানে হতে পারে আপনার পিসি Account Login করা আছে।
কষ্ট দেয়ার জন্য দঃখিত।
শুভেচ্ছা রইল।
০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১:৩৪
রাকু হাসান বলেছেন:
আরেহ ভাই..এটা কষ্টের কি হল। আপনার মন্তব্য পড়লাম। এবার তাহলে লেখা শুরু করে দিন নাকি। আপনাকে ভালো পাঠক মনে হচ্ছে। ভালো পাঠক মাত্রই ভালো লেখক হতে পারে। শুভকামনা করি। শুভারাত্রি।
১১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:০৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: বাংলার দুই বরেণ্য কবিকে নিয়ে চমৎকার আলোচনা করেছেন। এঁদের মধ্যে একজনকে ভালবাসতে হলে অপরজনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী হতে হবে, এমন কোন কথা নেই, বিশেষ করে যখন জানা যায় যে ওনাদের নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩১
রাকু হাসান বলেছেন:
স্যার উত্তর দিতে দেরি হবার জন্য দয়া করে ক্ষমা করার অনুরোধ রাখছি। পাঠ ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ । শ্রদ্ধা ও শুভরাত্রি।
১২| ০৬ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২৮
মিরোরডডল বলেছেন:
আসলেই তাই, রবী ও নজরুল দুই মেরুর কবি । দুজনেই বিশাল প্রতিভার অধিকারী ।
একজন গুণী আরেকজন গুণীকে কদর করবে এটাই হওয়া উচিৎ ।
পোষ্টের মধ্যে দিয়ে অনেক অজানাকে জানলাম । থ্যাংকস রাকু ।
তোমার সুরের নেশায় যখন
ঝিমাবে আকাশ কাদিবে পবন ,
রোদন হইয়া আসিব তখন তোমার বক্ষে ধূলিতে
আমি চিরতরে দূরে চলে যাব ,
তবু আমারে দেব না ভুলিতে
আমি যতো বলি তবে
এবার যে যেতে হবে,
দুয়ারে দাঁড়ায়ে বলে না না না
ও যে মানে না মানা,
০৩ রা এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:২৩
রাকু হাসান বলেছেন:
আশা করছি ভাল আছেন।পোস্টটি পড়ে, আন্তরিক মন্তব্য রাখায় অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।দারুণ পছন্দের
গান শেয়ার করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন।শ্রদ্ধা রইল।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ১২:২০
রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার একটা পোষ্ট দিয়েছেন। আজকের দিনের সেরা পোষ্ট।