![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[হুমায়ুন আহমেদ মারা গেছেন, হিমু তো মরে নি! কেমন আছে হিমু, কি করছে? হিমু কি এখনো সেই হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে খালি পায়ে নিশুতি রাতে হেটে বেড়ায়?]
১
পাখির কিচির মিচির শব্দ হচ্ছে অনেক্ষন যাবত। কিছুক্ষন থামছে আবার শুরু হচ্ছে। শুনতে খারাপ লাগছেনা মোটেও। শুনতে শুনতে হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমি ঘুমিয়ে আছি। ঠিক ঘুমিয়ে আছি বলা যাবেনা, ঘুম ভাঙি ভাঙি করেও ভাঙছে না এমন একটা অবস্থায় আছি। এই অবস্থায়ই থাকতে ভাল লাগছে। মাথার ভেতর বেশ কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। আমি এখন কোথায়? গতরাতে কি কোথাও গিয়েছিলাম? না হলে ঢাকা শহরে পাখির ডাক আসবে কোথা থেকে? ভাবতে ভাল লাগছে, আমি কোন এক শান্ত সবুজ গ্রামের গোলপাতার ঘরে ঘুমিয়ে আছি। বাইরে পাখি ডাকছে।
সুখ স্বপ্ন বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। ঘুম ভেঙে গেল। এবং আমি বুঝতে পারলাম, আমি নিজের ঘরেই আছি। সেই পুরান মেছ। না লাগানো দরজা। আর পাশে পড়ে থাকা ক্ষুদ্র যন্ত্রটা থেকে পাখির ডাক ভেসে আসছে। এই এক নতুন যন্ত্রনা হয়েছে। সময় নেই অসময় নেই যখন তখন বেজে ওঠে।
এই যন্ত্র অথবা আরো ভালভাবে বললে যন্ত্রনাটা মাজেদা খালার দেয়া।
ঠিক তিন দিন আগে সকাল বেলা দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙে। সেখানে এক ঘাঘু টাইপের ভদ্রলোক চোখে ১০০ পাওয়ারের সন্দেহ বাল্ব জ্বালিয়ে দাড়িয়ে আছেন।
আমাকে চোখ খুলতে দেখে জিজ্ঞাস করলেন, ‘আপনি হিমু?’
‘ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ছিলাম। এখন ঠিক বলতে পারছি না’।
‘আসতে পারি’
‘দরজা যেহেতু খোলা, আসতে পারেন। আবার চাইলে নাও আসতে পারেন। আবার চাইলে এসে ফেরত যেতে পারেন, আপনার যেমন ইচ্ছা। শুধু আমি ঘুমাচ্ছি আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।’
ঘুম জড়ানো গলায় উত্তর দিয়ে পাশ ফিরে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
‘এখন ঘুমালে হবে না। আপনার আমার সঙ্গে যেতে হবে’।
‘কেন আপনি কি ডিবির লোক? নাকি ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে গায়েব করে ফেলবেন? আচ্ছা আমাকে কি করবেন? স্রেফ গায়েব করে ফেলবেন নাকি গোপন কোথাও নিয়ে গিয়ে কষে ছ্যাচা দিয়ে দুই-চারটা মামলার আসামী বানিয়ে দিবেন? যা খুশি করেন, এখন ঘুমাবো। ঘুম থেকে ওঠার পর যেখানে খুশি নিয়ে যাবেন। তবে যদি একেবারে হাপিশ করে দিতে চান লাশটা কোন একটা নদীতে ফেলবেন। নদী জিনিসটা আমার বেশ পছন্দ’।
নদীর কথা বলতে বলতেই ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আস লো। লোকটা কিছু একটা বলছিল। কিন্তু শোনার আগেই ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্ন দেখলাম আমি ময়ুরাক্ষীর তীরে পা ডুবিয়ে বসে আছি। কুলকুল শব্দে জল ছুটে যাচ্ছে। পেছন থেকে মিষ্টি গলায় একটি নারী কন্ঠস্বর আমাকে ডাকছে। স্বপ্নের ভেতরেই নিজেকে বোঝালাম, আমি একজন হিমু। একজন হিমুর স্বপ্নে কখনো কোন নারী আসতে পারে না। তার গলার স্বরও না।
লোকটার ধৈর্য্য খুব বেশি না। ঘন্টা খানেকের ভেতরেই তিনি আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। ‘উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হোন, আমি আর বসতে পারছি না। আমি ডিবির লোক না। আমাকে আপনার মাজেদা খালা পাঠিয়েছেন। আমি উনার ম্যানেজার, বিশ্বাস না হলে আমি ফোন দিচ্ছি কথা বলেন।’।
আমি উঠে বসলাম। মাজেদা খালার সাথে যোগাযোগ নেই প্রায় দু’বছর।
‘আমি ফোনে কথা বলিনা। ভদ্র মহিলা কেমন আছেন’?
‘কোন ভদ্র মহিলা’?
‘যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন। মাজেদা খালা।’
‘ও, আমি ভাবলাম আর কারো কথা জানতে চাইছেন? ভদ্র মহিলা বললেন তো তাই।’
‘কেন উনি কি ভদ্র মহিলা নন? খালাকে বলতে হবেতো!’
ম্যানেজার সাহেব ঘাবড়ে গেলেন। ‘না না, কি বলেন, উনি অবশ্যই ভদ্র মহিলা। খালা না বলে ভদ্র মহিলা বললেন তাই বুঝতে পারছিলাম না। কিছু মনে করবেন না। এটা ওনাকে জানানোর দরকার নেই। আপনার ঘুমাতে ইচ্ছা করলে আরো কিছুক্ষন ঘুমান। আমি বসছি।’
‘না, ঠিক আছে। চলুন উঠি। আর ভয় পাওয়ার কিছুনেই। এখনি খালা কে বলবো না আপনি তাকে অভদ্র বলেছেন। আপনাকে যখন ফাদে ফেলার দরকার হবে তখন বলবো।’
ম্যানেজার সাহেব ফেসে গেছেন। তিনি ঘামতে ঘামতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন।
[নাও চলতে পারে]
©somewhere in net ltd.