ঘাস নুপূর

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১২

প্রিয় তিতলী,
অনেকদিন ধরে ভাবছি তোকে নিয়ে কিছু লিখব।কোনদিনই হয়ে ওঠে না। তোকে নিয়ে লিখে কী পুরোটা শেষ করা যাবে, তুইই বল?একবার লিখেছিলাম ও কিছুদূর। প্রথম প্যারা শেষ হতেই দেখি কী কাগজ ভিজে যাচ্ছে অনর্থক চোখের পানিতে।সেদিন আর লেখা হল না। আজ কী তবে শেষ করতে পারব?
তোর সাথে আমার সম্পকটা আজ বড় অদ্ভুত। খুব বেশিই যেন অদ্ভুত। তুই নিজেকে এখনো যেন ঠিক চিনতেই পারলি না আর আমিও যেন চিনাতেই পারলাম না।এই যেমন আজ আমার প্রতিটি কথা তুই শুনেছিস। একসাথে কফি খেলাম, রিক্সাতে ঘুরলাম। আমি শুধু এটুকুই তো চেয়েছিলাম তোর কাছে, তাই নয় কি !
মাঝে মাঝে কি ভাবি জানিস, যদি আদৌ সময়েকে বাঁধা যেত কি ভালটাই না হতো। তবে প্রিয় মুহুর্তগুলো ঘড়ির কাটায় থামিয়ে দিতাম। জানিস,এখন আমার সময়গুলো আগের চেয়ে হয়তো ভাল কাটে। তোর কথা ভেবেই তো আমার ২৪ ঘন্টা কেটে যায়। তবুও কিছু কাজ জোড় করে করতে হয় তাই করি। তুই তো সব হিসেবনিকেশ বদলে দিয়েছিস হঠাৎ ই। আমিও একদিন সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে পালাবো। তোর হয়তো এখন আর কিছুই মনে পড়ে না, মনে পড়ানোর দরকার নেই বোধহয়।মনে পড়ে তোর,কি করিনি একসাথে আমরা। কত যে সব পাগলামী করেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।
কনকনে ঠান্ডার মধ্যে প্রতিদিন ভোরে বের হতাম। যেদিকে দুচোখ যায় হাটতে থাকতাম। মাথার উপর বিন্দু বিন্দু ফোটাগুলো কতো একসাথে গননা করতাম। সবাই যখন কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতো তখন আমরা প্রকৃতির স্পর্শ খুজে বেড়াতাম। বছরের প্রথম সূর্যটা আমরা একসাথেই দেখেছিলাম। তুই তোর হলের ছাদ থেকে আর আমি আমার হলের ছাদ থেকে। আমার খুব ইচ্ছা ছিলো বছরের প্রথম দিন তোকে নুপূর পড়াবো। তুই বাড়ি থেকে না পড়ে আমার জন্য নিয়ে এসেছিলি।পহেলা বৈশাখের ভোরে তোর পায়ে নুপূরটা আমিই বেধে দিয়েছিলাম। তোর হয়তো কিছুই মনে নেই,সব ভুলে গেছিস।
এই নুপূরটা পড়ানোর আগে প্রতিদিন গোধুলিতে নুপূর পড়াতাম। নাম ও দিয়েছিলাম একটা,ঘাস নুপূর। তোকে প্রতিদিন ঘাস লতা দিয়ে নুপূর বানিয়ে নিজ হাতে পড়িয়ে দিতাম আর তাতেই তোর প্রশান্তি ছিল। আমি তোকে তিনটি বার কাঁদতে দেখেছি, প্রথম যেদিন তুই আমাকে বলেছিলি, আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবি না। তোর চোখের জল যেদিন যেদিন আমি দেখেছি, হলে ফিরেই আমিও কাঁদতাম। হঠাৎ করেই কি যেন একটা হয়ে গেলো তোর, কেমন জানি বড় হয়ে গেলি।
যাক ভালই হয়েছে, তুই তো ভাল থাকবি। এটাই আমার বা কোন দিক থেকে কম পাওয়া তুই ই বল। জীবনের সমীকরণ ! আহ,সত্যিই যদি কোন সাধারণ সমীকরণ থাকতো কতোই না ভাল হতো। এ প্লাস বি হোল স্কয়ারেরর মত। ভুলগুলো হতো মাপা,ভুলের প্রতিকার হতো এক ফোটা লাল কালি কিংবা সমাধান হতো মুখস্হ। এ হবার নয়। তুই জীবনে ছোট্টছোট্ট তিনটি ভুল করেছিলি। আর এই তিনটি ভুলে আমার জীবনের অংকের সমীকরণ তুই নিজ মুখে করে দিয়েছিলি। জানিস,অনেক ভাল করেছিস,আমি না অংকে বরববরই অনেক কাঁচা। মেলাতেই পারতাম না,অসংখ্য কাটাকাটিতে জীবনের ধূসর কাগজ ক্ষতবিক্ষত করে ফেলতাম।শুধু এইটুকু বুঝি আজ, আমিতো হারিনি,
হারাতে চেয়েছিলে ছলেবলে
হেরেছিস নিজ ভুলে-কৌশলে।।
ভাল থাকিস উইথ স্মাইল ফ্রম হার্ট .......

১ টি +১/-০