নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাঁসি খুশি বিনোদন, এটাই আমার জীবন।

Raz Arnob

আমি অর্ণব। রম্য গল্প লিখতে ভালোবাসি। নিজে সবসময় হাঁসি খুশি থাকি এবং অন্যদের রাখার চেষ্টা করি।

Raz Arnob › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরিচিতা.....

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৭

একটি মেয়ের দিকে আমি দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে আছি । মেয়েটি সুন্দর বা অন্য কোন কারণ নয় । আমার মনে হচ্ছে মেয়েটিকে আমি চিনি সে আমার পূর্ব পরিচিত কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না মেয়েটি আসলে কে ? সাহস করে যে মেয়েটি কে জিজ্ঞেস করবো সেই উপায় নেই ।
.
হঠাৎ করে মেয়েটি আমার দিকে এগিয়ে আসছে মনে হচ্ছে সে আমাকে চিনতে পেরেছে । নিশ্চয়ই কথা বলবে ।
.
-- এই যে মিস্টার আমি অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি আপনি আমার দিকে ভ্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছেন, কারণটা জানতে পারি ?
.
মেয়েটির কথা শুনে আমি আসলেই ভ্যাবলা কান্ত হয়ে গেছি । তার এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলা যায় ভেবে পাচ্ছি না ।
.
-- না মানে আপনাকে আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছিলো, তাই তাকিয়ে ছিলাম।
.
-- সব মেয়েদের বুঝি আপনাদের পরিচিত মনে হয় ? কেন ? এমনটা না করলে হয় না ! কই আপনাকে তো পূর্বে আমি কখনও দেখেছি বলে মনে হয় না ।
.
-- কিন্তু আমি আপনাকে অবশ্যই দেখেছি । দেখেছি বললে ভুল হবে আপনি আমার বেশ পরিচিত ।
.
-- আজকে গাঁজা মনে হয় একটু বেশি খেয়েছেন তা না হলে একটি অপরিচিত মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে গুল মারতে পারতেন না । যান এখান থেকে আর কখনও মেয়েদের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না আর যদি এমনটা করেন তবে ইভটিজিং এর মামলা করে দিব।
.
কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা ! শুনেছি সুন্দরী মেয়েরা অহংকারী হয় কিন্তু রগচটা বা অভদ্র হয় না। কিন্তু এ দেখি সব গুণে গুণান্বিত ।
.
আমি এখন রাস্তা দিয়ে বাড়ির পথে হাঁটছি আর বারবার মনে করার চেষ্টা করছি মেয়েটি আসলে কে ? আদৌ কি মেয়েটাকে আমি চিনি নাকি সবটাই আমার অবচেতন মনের ভূল?
........
.
গভীর রাত। সময়টা যেন ঘড়ির কাটায় থমকে গেছে। বালিশের এপাশ ওপাশ করেও ঘুম রাজ্যে পৌছতে পারছিনা। অচেতন মনে বার বার প্রশ্ন জেগে উঠছে- কে ঐ মেয়ে? এত চেনা চেনা কেন মনে হচ্ছে মেয়েটিকে? আগে কোথাও কি দেখেছি তাকে? প্রকৃতির একটা নিয়ম আছে। অচেনা অজানা অনেক মানুষকেই চট করে খুব কাছের মনে হয়। অনেক আপন মনে হয়। ঈশ্বর এই মায়া মায়া ভাবটা কিছু কিছু মানুষের চেহারা সাথে মিলিয়ে দেয়। এই মেয়েটাও তেমন নয়তো? ঘোড় কাটলো মায়ের ডাকে- অর্ণব, এই অর্ণব! কিরে এত রাতে লাইট জ্বালিয়ে কি করছিস বাবা?
.
"না মা, কিছুনা। এমনিই ঘুম আসছেনা।
"শরীর খারাপ ঠারাপ করেনি তো?
"না মা তেমন কিছু না।
"তাহলে ঘুমিয়ে পড়। রাত অনেক হলো। কাল আবার অফিস আছে তো।
"আচ্ছা মা ঠিক আছে তুমিও ঘুমিয়ে পরো।
....
.
দরজা খোলাই ছিলো। দু বার ঠক ঠক আওয়াজ দিয়ে বললাম- স্যার আসবো?
.
"আসো ভিতরে আসো।
.
বসের ভারী কণ্ঠ শুনে বুকের ভিতর কেমন ধুকপুক করে উঠলো। করারই কথা। গতকাল যে ফাইলটা দিয়েছিলো সেটা করা হয়নি। মেয়েটার কথা মাথায় ঘুরঘুর করার কারনেই এমনটা হয়েছে। এমনিতেই বসের খিটমিটে মেজাজ। তার উপরে আবার কাজে ফাকি। না জানি কপালে আজ কি আছে। বসের সামনের চেয়ারটায় কাঁচুমাচু হয়ে বসে বললাম- স্যার আমায় ডেকেছিলেন আপনি।
.
"হুম বসো বলছি।
.
আমি চুপ করে বসে থাকলাম। বস কাকে যেন ফোনে ধমকের সুরে কথা বলছে- আর কত? আর কত জ্বালাবে আমায় তুমি? কেন তুমি আমার সংসার নষ্ট করতে চাইছো? যত চেয়েছো দিয়েছি তো। আবার কেন?
.
বস আরো অনেক কথা বলে "ধপ" করে ফোন রেখে দিলো। শেষ কথা ছিলো- পাঠাচ্ছি আমি। তিনি এবার আমার দিকে ঝুকে এসে বললো- অর্ণব খুব ঝামেলার মধ্যে আছি। তোমায় ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। তুমি আমার একটা উপকার করবে?
.
"জ্বী স্যার আমি সর্বত্র চেষ্টা করবো।
.
বস উঠে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। মনে হচ্ছে খুব গোপন কথা। কাকপক্ষীকেও জানানো যাবেনা। সর্বনাশ হয়ে যাবে। বস বললো- আমার বিয়ের আগে এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো। অনেক ছবি আছে সে মেয়ের সাথে। একটু খারাপ ভাবেই। বুঝতেই তো পারছো?
.
"জ্বী স্যার পাচ্ছি।
"ঐ মেয়েটা এখন আমায় নানা ভাবে ব্লাকমেল করছে। এখন বলছে এই মুহূর্তে দু লাখ টাকা দিতে হবে। না দিলে সব ছবি তোমার ম্যাডামের কাছে পৌছে দিবে। এর আগেও অনেক টাকা দিয়েছি। এখন আবার চাচ্ছে। এদিকে তোমার ম্যাডামকে আমি খুব ভালোবাসি। তোমার ম্যাডামও আমায় খুব ভালোবাসে। আমাদের একটা বাচ্চা আছে। এখন ঐ ছবি তার কাছে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে।
আমি এখন কি করবো অর্ণব?
.
আমি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললাম- স্যার দেখুন। বিয়ের আগে মানুষ অনেক ভুলই করে। আপনিও করেছেন। তাতে আপনি অনুতপ্তবোধও করছেন। আর এটাও বুঝতে পারছি আপনি অনেক ভয় পাচ্ছেন। তবে জানেন কি স্যার? মানুষ দূর্বলকেই কিন্তু বেশি আঘাত করে। শবলকে পারেনা। তেমনি যে ভয় পায়, তাকেই কিন্তু মানুষ বেশি ভয় দেখায়।
.
"তা ঠিক বলছো। কিন্তু কি করতে বলছো?
"স্যার আপনি ঐ মেয়ের নামে ব্লাকমেলের মামলা ঠুকে দিন। যা করার পুলিশ করবে।
"কি বলছো এসব? জানাজানি হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
আমার সংসার ভেঙে যাবে।
"তা হয়তো একটু সমস্যা হবে। আবার নাও হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি এটা না করেন তবে ঐ মেয়ে টাকা শেষ হলেই বার বার আপনাকে ভয় দেখিয়ে টাকা চাইবে। কতদিন এরূপ দিবেন?
"তা ঠিক। কিন্তু....
"কোন কিন্ত না স্যার। আপনি সাহস একবার করে দেখুন। আমি বলছি, সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
বসের ফোন বেজে উঠলো। বস বললো- আচ্ছা যাও তোমার সাথে এ বিষয়ে পরে কথা বলবো। জরুরী ফোন এসেছে।
.......
.
রাত নয়টার মত বাজে। আকাশে আজ লক্ষ তাঁরার মেলা বসেছে। দু একটা খসে পরে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। ওদের মনে আজ খুব আনন্দ। আমি অপলক তাকিয়ে দেখছি। আচ্ছা, আজ কি তাঁরাদের কোন বিশেষ রাত? মানুষের যেমন বিশেষ বিশেষ দিন আছে, তেমনি তাঁরাদেরও বিশেষ রাত থাকা অস্বাভাবিক কিছুনা। এদিকে অপরিচিতা সেই মেয়েটির চেহারা এখনো চোঁখের সামনে থেকে সরেনি। বার বার ভেঁসে উঠছে। ভুত হয়ে দরুন ভাবে চেপে বসেছে মস্তিষ্কে। কে ঐ অপরিচিতা? প্রথম দেখায় কেন এত পরিচিত লাগছে মেয়েটিকে? কোথায় দেখেছি ওকে?
.
রূপ কথার গল্পেরা খেলছে তোমার চোঁখে,
তুমি আড়াল রাখছো কেন মন?
পথ ভুলো মেঘেরা কি যেন কি ভেবে,
থেমে গেছে দেখো অকারণ।
যায়না ফেরানো নিজেকে,
মন বলে থেকে যাওনা আরো,
তোমারো কি বলো হচ্ছে এমন?
চোঁখের ভাষায় অভিমান হাজারো।
মনে পরে যায় মন রেখেছি কোথায়,
কে তুমি এলে কল্পনায়?
.
ফোনে অল্প সাউন্ডে গান চলছিলো। মা কখন এসে পিছনে দাড়িয়েছে খেয়াল করিনি। মাকে দেখে হেডফোন খুলে বললাম- কিছু বলবে মা?
মা পাশে এসে দাড়িয়ে বললো- কি করছিলি বাবা?
.
"এইতো মা গান শুনছিলাম।
"তুই তো আর কিছু বললি না।
"কি বলবো মা?
"ঐ যে বিয়ের ব্যাপারে বললাম যে।
তোর বাবা বেঁচে থাকলে...
.
মাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম- মা প্লিজ। বলছিতো এসব কখনো আর বলবেনা। তুমিই আমার বাবা, তুমিই আমার মা। তুমি যেটা বলবে সেটাই করবো। তোমার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।
.
"আচ্ছা বলবো না। কিন্তু তোরও তো পছন্দ অপছন্দের একটা ব্যাপার আছে।
"না নেই। তোমার যাকে পছন্দ হবে তাকে অপছন্দ হওয়ার কোন কারন নেই।
"আচ্ছা নেই বুঝলাম। কিন্তু ছবি দিয়েছিলাম যে কেমন দেখলি?
"খুব ভালো। তোমার পছন্দ কি খারাপ হতে পারে বলো?
"তাহলে সব ফাইনাল করলাম কিন্তু? তুই অফিস থেকে এক সপ্তাহর ছুটি নিয়ে ফেল। এ সপ্তাহেই তোর বিয়ে দিবো।
"তা না হয় নিলাম। কিন্তু এত তারাহুড়া করা কি ঠিক হবে মা?
"শুভ কাজে দেড়ি করলেই অশুভ হয়। তুই ছুটি নিয়ে ফেল কালই।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
........
.
বসের সামনে ঝিম ধরে বসে আছি। ছুটির কথা বলতে সাহস পাচ্ছিনা। ভয় এবং লজ্জা দুটোই লাগছে। বস ফোনে কার সাথে যেন হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। মনটা আজ বোঁধ হয় খুবই সতেজ। নয়তো এত নরম ভাবে তাকে কখনো কথা বলতে দেখিনি। কথার ধরণ শুনে বুঝা যাচ্ছে ম্যাডামের সাথে হবে হয়তো। তার কথাগুলো কিছুটা এমন-
.
"যাক বাবা তুমি যে আমায় ভুল বুঝোনি এতেই অনেক।
"......
"আরে না বাবা। মাত্র ৭-৮ দিনের প্রেম ছিলো। বুঝোই তো বাল্যকালের প্রেম। বিয়ের আগে তো অনেকেই একটু একটু করে হাহাহাহা।
".........
"আরে না তুমি কেন করবে? ওটা তো এমনি এমনি বললাম।
".......
"আচ্ছা শুনো। আমার এক কলিগ সামনে বসে আছে। ওর সাথে আলাপ সেরে ফোন দিচ্ছি.....
.
বস ফোন রেখে দিয়ে বললো- বসিয়ে রাখলাম তার জন্য সরি। বলো অর্ণব কি খাবে? যা খেতে চাও আজ তাই খাওয়াবো পাক্কা।
"না স্যার কিছু খাবোনা।
"আরে কি খাবেনা? অবশ্যই খাবে।
.
রফিক এই রফিক...স্যার উচ্চ গলায় ডাক দিলো। চাইলে বেল টিপতে পারতেন। সে ব্যবস্থা আছে কিন্তু তিনি তা করলেন না। খুব বেশি খুশি মনে হচ্ছে আজ তাকে। তাই হয়তো বেলের কথা ভুলে গেছেন। মানুষ অতি দুঃখে যেমন পাথর হয়ে যায়, তেমনি অতি সুখে কাতর হয়ে অনেক কিছু ভুলে যায়। রফিক দরজার ওপাশ থেকে ছুটে এলো- জে স্যার, জে স্যার।
.
"যাও দু কাপ কফি নিয়ে এসো। আর গরম গরম সিঙ্গারা। সিঙ্গারার সাথে যেন অবশ্যই সস থাকে।
"জে স্যার।
"আর শুনো তোমার জন্যও আনবে।
.
রফিকের চোঁখে পানি চলে এলো। অফিসের বড় বস তার সাথে নিজের জন্যও খাবার আনতে বলেছে এটা তিনি ভাবতেই পারছেন না। মুখ লুকিয়ে বৃথা চেষ্টা করে বললো- জে স্যার।
.
রফিক চলে গেলো। বস বললো- বুচ্ছো অর্ণব তোমার কথা মত কাল বাড়ি যাওয়ার সময় বেটির নামে দিয়েছি মামলা কসে। কাল রাত তিনটাই পুলিশে ওটাকে ধরেছে। ওর ল্যাপটপে অনেকের সাথেই ব্লাকমেলের তথ্য পুলিশ পেয়েছে। আর আমার কোন অশ্লীল ছবি ওর কাছে ছিলোনা। যদিও ভুল করে অশ্লীলতায় জরিয়েছিলাম। তাই ভেবেই নিয়ে ছিলাম ও ছবি তুলে রেখেছে। আসলে ব্লাকমেলের জন্য অন্য পুরুষের সাথে করা সব কিছু মাথা কেটে বসিয়ে এসব করেছে।
আর তোমার ম্যাডামকেও সব খুলে বলেছি। সেও খুব সহজ ভাইবেই নিয়েছে।
এখন আমি একদম ফ্রেশ।
.
রফিক খাবার হাতে রুমে দরজা দিয়ে উকি দিলো- আসবো স্যার?
.
"আরে আসো আসো।
.
রফিক খাবার রেখে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো। বস বললো- আরে রফিক কই যাও? বসো। সবাই এক সাথে খাই ভালো লাগবে। রফিক দ্বিতীয়বারের মত ভরকে গিয়ে চুপিসারে চেয়ারে বসলো। হয়তো আমার মত রফিকও মনে মনে ভাবছে, নিকৃষ্ট এই মানুষটার ভিতরে এত ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে ছিলো তা তো বুঝতে পারিনি......
.......
.
বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। মোমবাতির নীলচে আঁলোয় রুমটাকে কেমন মহনীয় করে তুলেছে। মাঝে মাঝে মেঘের গর্জনে বিদ্যুৎ ঝলকানিতে সারা ঘর আলোকিত হয়ে আবার "ধপ" করে নিভে নীল বর্ণ ধারন করছে। এ যেন প্রকৃতির এক নিদারুণ খেলা। আমার খাটের উপর যে মানুষটি চুপটি করে বসে আছে সে আমার নব্য বিবাহিত স্ত্রী। যাকে আমি আগে কখনো দেখিনি। দেখিনি বললে ভুল হবে। এক ঝলক ছবিতে দেখেছি। কিন্তু চেহারাটা স্পষ্ট মনে নেই।
.
বাসর ঘরে ঢুকানোর আগে দাদিজান এদিকে মুচকি হেঁসে বলে দিয়েছে- শোন ছোট জামাই। এই রাইতে এক মিনিট সময়ও নষ্ট করবিনা। এই রাইত বিশেষ সুখের রাইত। সবাইর জীবনে একবারই আসে বুঝলি? জীবনে মিলা রাইত পাবি কিন্তু এই রাইতের মত পাবিনা।
.
কিন্তু আমার কাছে মোটেও সুখের রাত মনে হচ্ছেনা। বরং কষ্টের রাত মনে হচ্ছে। এ পর্যন্ত চারবার পানি খেয়েও লাভ হয়নি। গলা যেন ভিজবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে।
.
"এই যে শুনছেন? আমার খুব ভয় করছে।
.
পিছন ফিরে দেখি সায়মা থরথর করে কাপছে। ড্রিম লাইটের আবছা আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছিনা। আনইজি লাগছে। তবুও সাহস করে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। সায়মার শরীর থেকে মিষ্টি মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে। দামি পারফিউমের মাতাল করা ঘ্রাণ। এই মুহূর্তে ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সাহস পাচ্ছিনা। যদি চিৎকার দিয়ে উঠে তখন তো আবার মহাবিপদ।
.
মাথা ঘুলিয়ে গেছে। কি করবো বুঝতে পারছিনা। হাত পা থরথর করে কাপছে। এক পর্যায়ে সাহস করে সায়মার ঘোমটায় হাত দিলাম। অমনি যেন ও কেপে কেপে উঠলো। ঘোমটা-টা আরো একটু খানি উপরে তুলে ধরলাম। ঠিক সে মুহূর্তে মেঘের গর্জনে ও শরীরের সাথে জাপটে ধরলো। প্রকৃতি যেন আমাদের দুজনকে কাছে আসতে সহায়তা করছে। সায়মার মুখটা উপর দিকে তুলে ধরতেই বুক ধুরপুর করে উঠলো- আরে এ তো সেই মেয়ে। এই মেয়ে এখানে কি করে?
.
ভালো করে আবারো মেয়েটির মুখের দিকে তাঁকালাম। অচেতন মনের ভুল নয়তো? না একটুও ভুল দেখছিনা। মানুষ তিনবার কখনো ভুল দেখে না। সেই মেয়েই এটি। মা কি তবে এই মেয়ের ছবিই আমায় দিয়েছিলো? যেটা আমি এক নজর দেখে ডয়ারে রেখে দিয়েছিলাম? এটা কিভাবে সম্ভব? আমার মনের অবস্থা ওকে বুঝতে না দিয়ে উঠে গিয়ে ডয়ার থেকে ছবি বের করলাম। আরে হ্যা,এই মেয়ের ছবিই তো। মেয়েটি ছবির চেয়ে বাস্তবে একটু বেশিই সুন্দর। তারমানে এ কারনেই এই মেয়েকে ঐদিন এতটা চেনা চেনা লেগেছিলো? মনে হচ্ছিলো কোথায় যেন দেখেছি। কিন্তু মায়ের দেয়া ছবিতেই দেখেছিলাম তা মনে করতে পারছিলাম না।আচ্ছা,এটাও কি মানুষের প্রতি প্রকৃতির মন ভুলানো খেলা?
.
সায়মা হিহি করে হাঁসছে। মিষ্টি হাঁসির শব্দে সম্পূর্ণ ঘরে যেন মৌনতা ছড়িয়ে পরেছে। তবে কি ও আমার মনের অবস্থা বুুঝতে পেরেছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম- কি ব্যাপার আপনি হাঁসছেন কেন?
.
সায়মা বললো- হাঁসছি আপনার অবস্থা দেখে। অবশ্য আপনাকে বলে লাভ নেই, আমিও আপনার মতই বিয়ের আগের দিন আপনার ছবি দেখে অনেক অবাক হয়েছিলাম।
.
"আপনি বুঝেছেন তাহলে কেন ওভাবে ঐদিন তাকিয়ে ছিলাম?
"হ্যাঁ এখন বুঝলাম।
আপনি আপনার হবু বউকে ভালোভাবে দেখেননি ছবিতে। চোঁখ বুলিয়ে রেখে দিয়েছিলেন, তাই ঐদিন আমাকে দেখে আপনার মনে হয়েছিলো, কই যেন দেখেছি, কই যেন দেখেছি এটাইতো?
.
ইতিমধ্যে মোবাইল ভাইব্রেশন করে উঠলো। টি-টেবিল থেকে মোবাইল হাতে নিতেই সায়মা বললো- দেখি মোবাইলটা আমার কাছে দিন।
.
"কেন?
"আমি আপনার স্ত্রী। আপনার সব কিছুর উপর আমার পূর্ণ অধিকার আছে। আপনি কোন মেয়ের সাথে লটরপটর করেন সেটা একটু দেখবো।
.
আমি রোবটের মত সায়মার দিকে মোবাইল এগিয়ে দিলাম। যেন মালিক আমায় আদেশ করেছে। তার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। সায়মা দেখে বললো- নিন কপাল ভালো আপনার আর কেউনা। বসের এমএমএস।
.
বসের এমএমএস অপেন করে দেখি ইয়া বড় একটা উপন্যাস লিখে পাঠিয়েছেন-
.
প্রিয় অর্ণব,
আমি প্রথমেই দুঃখিত যে তোমার বিয়েতে আমি আসতে পারিনি। জরুরী কাজে দেশের বাইরে আসতে হয়ে। আর এই মুহূর্তে ফোন দিয়ে বিশেষ রাতে ডিস্টার্ব করলাম না। তবে বিয়ের উপহার হিসাবে তোমায় আমার কম্পানির কো হেড করে নিলাম এবং নবদম্পতি সূচনায় দুজনের হানিমুনের সম্পূর্ণ খরচ আমার পক্ষ থেকে কম্পানি গ্রহন করবে। কোথায় যাবে সে সিদ্ধান্ত তোমাদের। অনেক শুভ কামনা রইলো তোমাদের নতুন জীবনের।
.
"এই যে?
"হুম?
"পড়া হলো?
"হুম শেষ।
"চলুন ছাদে যাই।
"বৃষ্টি হচ্ছে তো।
ঠান্ডা লাগবে।
"কই বৃষ্টি? আমি তো দেখছিনা।
.
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। আসলেই বৃষ্টি নেই। ঘোরের মধ্যে ছিলাম তাই কখন থেমে গেছে খেয়াল করিনি। হয়তো অনেক্ষণ হবে। কয়েকটি তাঁরা দেখা যাচ্ছে।তাঁরাগুলো নিয়মানুসারে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে আর নিভছে। বাকা চাঁদটাও কালো মেঘের পাশ কাটিয়ে উকি দিয়ে বেড়িয়ে পরেছে। আমি বললাম- যাবেন?
.
"হু তাই তো বললাম।
"চলুন যাই।
......
.
দক্ষিণা মৃদু বাতাস বইছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনেই হচ্ছে না কিছুক্ষণ আগে তুমুল বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাকা চাঁদের স্নিগ্ধ আলো আঁচড়ে পরেছে সমস্ত শরীরে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নক্ষত্রগুলো সম্পূর্ণ আকাশটাকে যেন সাজিয়ে তুলেছে নিজস্ব সৌন্দর্যে। আমি সায়মার দিকে অপলক তাকিয়ে আছি। চাঁদের আঁলোয় মেয়েটিকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। ঠিক যেন ডানা কাটা পরী সামনে দারিয়ে আছে। সায়মা ব্যাপারটি লক্ষ করে বললো- এই যে মিস্টার কি দেখছেন ওমন করে?
.
"আপনাকে...
"আমাকে দেখার কি আছে?
"জানি না।
"এত দূরে দাড়িয়ে আছেন কেন? কাছে এসে দাড়ান। আমার ভয় লাগে।
.
আমি সায়মার কাছে এসে দাড়ালাম।খোলা চুলের মাদকতার গন্ধ পাচ্ছি। এ গন্ধ পুরুষকে টানে। খুব কাছে টানে।
.
"আরো কাছে এসে দাড়ান। এবার শরীর ঘেসে দাড়িয়ে বললাম- আরো কাছে আসবো? সায়মা খুব লজ্জা পেয়ে বললো- আসতে পারেন। মাঝে কোন বাঁধার দেয়াল নেই তো।
.
আমি সায়মাকে আলতো করে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম। ও কিছু বললো না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। দুজনেরই হার্টবিট উঠানামা করছে। ধপ ধপ শব্দ শুনতে পাচ্ছি। অজানা কোন এক শিহরণে দুজনই কেপে কেপে উঠছি বার বার। বেশ কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভাঙলো সায়মার ডাকে- এই যে।
.
"হুম।
"গান জানেন?
"একটু একটু।
"শুনাবেন? খুব ইচ্ছে করছে।
"শুনবেন?
"হুম।
.
"তোমারেই করিয়াছি
জীবনের ধ্রুবতারা,
এ সমুদ্রে আর কভু
হব নাকো পথহারা।
যেথা আমি যাই নাকো
তুমি প্রকাশিত থাকো,
আকুল নয়নজলে
ঢালো গো কিরণধারা"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯

আজগুবী বলেছেন: আমি তো ভয়ে ছিলাম, অপরিচিতা ঐ মেয়েটি ই বসের গার্ল ফ্রেন্ড হয়ে যায়। যাক গল্প টা ভালো লাগলো।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০৯

Raz Arnob বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.