![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অর্ণব। রম্য গল্প লিখতে ভালোবাসি। নিজে সবসময় হাঁসি খুশি থাকি এবং অন্যদের রাখার চেষ্টা করি।
প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় মেয়েটা আমার দিকে
কেমন যেন আড় চোঁখে তাঁকিয়ে থাকে। ব্যাপারটা বেশ
কয়েকদিন ধরেই লক্ষ করছি। মেয়েটা যে খুব একটা সুন্দর
তা বলা যাবেনা। আবার অসুন্দর বলারও কোন কারন নেই।
মেয়েটির গায়ের রঙ শ্যামলা। গোলগাল মুখের কাটিং।
মোটামুটি ভালোই বলা চলে। কিন্তু কেন এভাবে
তাঁঁকিয়ে থাকে সে ব্যাপারটা কিছুটা আমায় ভাবান্তর
করে তুলেছে। মেয়েটি কি কিছু আমায় বলতে চায়? কিন্তু
কি বলতে চায়? প্রেম সমাক্রান্ত কোন ব্যাপার ঠ্যাপার
নয়তো? যদি হয় তবে তো কেল্লাফতে। মেয়টাকেও যে
আমার পছন্দ হয়নি তা না। খুব পছন্দ হয়েছে। নাদুসনুদুস
চেহারা। ইস এসব ভাবতেই মনের ভিতর কেমন বাকবাকম
বাকবাকম ডাক দিয়ে উঠলো। অবশেষে তাহলে সিঙ্গেল
সার্টিফিকেট-টা মিঙ্গেলে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। ইস
প্রেমের কথা ভাবতেই মাথায় কবিতার লাইন হামাগুড়ি
দিতে লাগলো,
.
কোথায় ছিলা সুন্দরি আমায়,
একলা ফেলা্ইয়া,
তোমায় ভেবে হেঁসেছি কত,
দাঁত কেলা্ইয়া।
.
এতদিনে তুমি দিয়াছো দেখা,
কোমড় হেলাইয়া,
মুচকি হাঁসিতে করেছো ছারখার,
দিল জ্বালাইয়া।
.
আমার কেন যেমন তর সইছে না। ভাবলাম, কাল কলেজে
যাওয়ার সময় তার কথা বলবোই বলবো।
যথারীতি যে ভাবনা সেই কাজ। সকালে ঘুম থেকে উঠে
ফ্রেশ ঠ্রেশ হয়ে কলেজের ব্যাগটা ঘাড়ে তুলে হাঁটা
দিলাম। বাসস্টান্ডে যেতেই মন কারা সেই শ্যামলা
রূপসীর সাথে দেখা। মেয়েটি আজো সেখানটায় দাঁড়িয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে। আমিও
ভদ্রতার খাতিরে তার সাথে তাল মিলিয়ে আবুল টাইপ
ফকলা হাঁসি উপহার দিলাম। মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে
অন্যদিকে দিকে তাকিয়ে পরলো। বুঝলাম, নতুন নতুন
চক্ষুদ্বয় তাই লজ্জা পেয়েছে হয়তো। মেয়েটি কিছুক্ষণ
পর আবার আমার দিকে আড় চোঁখে তাকালো। আমি
তখনো দাঁত বত্রিশ পাটি বের করে আবুলের মত তাঁকিয়ে
আছি। মেয়েটি এবার কোন ভ্রুক্ষেপ দেখালো না।
তাকিয়েই রইলো। এই সুযোগে আমিও পা টিপে টিপে
তার কাছাকাছি গিয়ে লজ্জামূখর ভাঙ্গিতে বললাম- এই
যে শুনছেন?
.
মেয়েটি জমদূত দেখা মত চমকে উঠে দু হাত দূরে সরে
গিয়ে ডানে বায়ে দুইটা চক্কর কাটলো। আমি বললাম, এই
যে আমি আপনার পাশেই এদিক ঐদিক কি দেখছেন?।
মেয়েটি যেন এবার একটু স্বস্থি ফিরে পেলো। কিন্তু
তবুও আমার দিকে চোঁখের পলক ফেললোনা। অপর দিকে
তাকিয়েই বললো, কিছু বলবেন মামা?
.
মেয়েটির মুখে মামা ডাক শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে
পড়লো। সাঁজানো গোছানো সংসার আমার ক্ষণিকেই
তছনছ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। চোখ দুটো টলমল করে
উঠলো। তবে কি এই মেয়ের মামার মতই আমি দেখতে?
মামা ভেবেই কি তাহলে প্রতিদিন আমার দিকে
ফ্যালফ্যাল করে ওভাবে তাকিয়ে থাকতো?
.
- এই যে মামা কিছু বলবেন আমায়?
.
হাতের উল্টো পিট দিয়ে চোখ দুটো মুছে মিনমিন করে
বললাম, কি আর বলবো ভাগনী? বলার কি কিছু আছে?
.
- ডাকলেন যে তাহলে?
- ডাকলাম তো কিন্তুুু আমার দিকে আর তাকালেন কই?
- কি বলেন? চোঁখে সমস্যা নাকি? আমি তো আপনার
দিকেই তাকিয়ে আছি।
- কই আমার দিকে তাকাইছেন? আপনি তো রাস্তার দিকে
তাকিয়ে আছেন।
- আমি আপনার দিকেই তাকিয়ে আছি।বলুন কি বলবেন।
.
এতক্ষণে ভালোভাবে লক্ষ করলাম,আসলেই মেয়েটি
আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু চোঁখের মনি ঐ
রাস্তার দিকে। তাহলে কি এতদিন এভাবে রাস্তার
দিকেই তাকিয়ে ছিলো? আমি মনে করেছি আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। তারমানে ট্যারা?
.
হায় খোদা.............
এ কি তোমার প্যারা?
প্রেম করতে আইসা ওরে
মাইয়া দেখি ট্যারা।
উত্তর দিকে চাইয়া দেখে
পশ্চিমে কে খারা,
ভুল বুঝিয়া পড়ছি প্রেমে
খাচ্ছি এখন মারা....
.
পদে পদে আমায় ছ্যাকা খাওয়াইয়া কি মজা পাও তুমি
মওলা? রহম করো আমায়। রহম করো বলে মনে মনে দূয়া
দূরুত পড়লাম। চোঁখ দুইটা আবারো টলমল করছে। এই
অবস্থায় আবার মনের দুঃখে কবিতার লাইন চান্দি ছিড়ে
বেড়িয়ে আসতে চাইছে।
.
কি খোমা বানাইছো দয়লা?
ললনা ডাকে মামা,
প্রেমে পড়েনা কোন মতে
পড়লেও ফিটফাট জামা।
.
আর কতকাল রাখবা একা,
নাই কি তোমার মায়া?
কোনো মাইয়াতো পিছু ডাইকা কয়,
কেমন আছেন ভায়া?
.
মনের দুঃখ বুঝলো বনে,
বুঝলোনা কোন মাইয়া,
কচু গাছে এইবার ফাস দিয়া মরুম,
বনবাসে যাইয়া।
.
ঐতিহ্যবাহী কবিতার মাঝে বাম হাত ঢুকিয়ে মেয়েটি
বলে উঠলো,কই তুমি বাবু? একটু তারাতারি আসোনা। লেট
হয়ে যাচ্ছে তো। আমি আবুল হয়ে হাঁ করে বললাম, এ্যা
আপনার বাচ্চাও আছে? মেয়েটি রেগে গিয়ে কান থেকে
খটাশ করে হেটফোন খুলে বললো, ঐ ছিঃ, স্টুপিট,
রাসকেল। আমার বাচ্চা থাকবে কেন? বয়ফ্রেন্ডের সাথে
ফোনে কথা বলছি দেখছেন না ? যত্তসব.....
.
মেয়েটি হুরহুর করে সাপের মত মুচড়াতে মুচড়াতে চলে
গেলো। আমি দ্বীতৃয় বারের মত মদন হয়ে চেয়ে রইলাম।
তাহলে কি এ মেয়ে কানে হেটফোন লাগিয়ে হেঁসে
হেঁসে এতদিন পরপুরুষের সাথে লটরপটর করছিলো? আর
আমি কিনা ধরে নিছি অামার দিকে তাকিয়ে হাঁসছে? এ
কি কপাল মাইরি। মনের দুঃখে সালিরে দুইটা গালি
দিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিলাম- ট্যারার ঘরের ট্যারা।
এই অবলা মানুষটারে এত্তবড় একটা ছ্যাকা দিতে পারলি?
যাহ তোর কপালে উষ্ঠা মারি ...
.
সামনে বড় একটা সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে “অপূর্ব বিউটি
পার্লার”। তার নিচে ছোট আকারে সুন্দর করে লেখা
“আপনি কি দিন দিন বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন? মেয়েরা পাত্তা
দিচ্ছেনা? কোন ব্যাপার না। চলে আসুন আমাদের নিকট,
আর দশ মিনিটে বদলে ফেলুন নিজের সৌন্দর্য”। মোড়
ঘুরিয়ে পথ ধরলাম সেই সাইনবোর্ডের দিকে। সালির
মেয়েরা কেমনে ভাইয়া, মামা ডাকে তাই না দেইখা
কোন কথা নাই................
©somewhere in net ltd.