নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট: পিছনের গল্প

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৪



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট (আভাই) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৭৩ সালে জারীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে। এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পেছনের ইতিহাস অন্য দশটা ইনস্টিটিউটের মতো নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ও পরে অনেকগুলো ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট— এ দু’টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিদেশী প্রকল্পের অধীনে। আবার আভাই-এর অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন ইনস্টিটিউটের মধ্যে রয়েছে- সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট ও চারুকলা ইনস্টিটিউট (অধুনা চারুকলা অনুষদ)। এ ইনস্টিটিউটগুলো প্রতিষ্ঠাকালে ভিন্ন শ্রেণীর প্রতিষ্ঠান ছিলো। পরবর্তীকালে এ দু’টি প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট হিসাবে অঙ্গীভূত করা হয়। কিন্তু আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত পূর্বতন বিদেশি ভাষা বিভাগের ভিত্তির উপর। অর্থ্যাৎ ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিলো— বিদেশি ভাষা বিভাগ, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাথে একান্নবর্তী বিভাগ হিসাবে সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের অঙ্গীভূত ছিলো। বর্তমান স্থানে নতুন শিক্ষাভবন স্থাপন করা হলে, বিদেশী ভাষা বিভাগকে ১৯৭৪ সালে আভাই নামে এই শিক্ষাভবনে স্থানান্তর করা হয়।

এই আভাই প্রতিষ্ঠায় একটি পিছনের গল্প রয়েছে। এই গল্পটি হলো এই যে, এটি প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নিজেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি এটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে খোঁজখবর নিতেন। তিনি বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদা-এর পরামর্শে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা শিক্ষাকে অন্তুর্ভুক্তকরণের ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই শিক্ষানীতি অনুযায়ী তিনি শিক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় শ্রেণী থেকে বিভিন্ন বিদেশি পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা রেখেছিলেনে এবং বিদ্যালয় পর্যায় থেকে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা থেকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে ইংরেজি পঠন-পাঠনের সুযোগ ছিলো। অর্থ্যাৎ একমাত্র ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার সুযোগ ছিলো না। তিনি বিদেশি ভাষা সম্পর্কে এই চিন্তাধারাকে সম্বল করে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিদেশি ভাষায় শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ঠিক সে সময়, সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির আওতায় জাপান সরকার কর্তৃক জাপানি ভাষা শিক্ষক হিসাবে বিদেশি ভাষা বিভাগে নিয়োজিত ছিলেন জনাব ৎসুয়োশি নারা নামক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন বাংলা ভাষা (অবহটঠ বুলি) বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করা তরুণ শিক্ষক। বঙ্গবন্ধু আভাই প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরামর্শ করতে ঢেকে নিয়েছিলেন এই ৎসুয়োশি নারাকে। ৎসুয়োশি নারা আভাই প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা থেকে প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাক্রম চালু হয়। আমি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে এই বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলাম। তিনি সে বৎসরই ইহলোক ত্যাগ করেন। আমি তাঁর স্মৃতির স্মরণে আয়োজিত ধর্মীয় স্মরণ সভায় উপস্থিত থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলাম। তিনি গত হয়েছেন ছয় বছর আগে। কিন্তু তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে স্মৃতি চিহ্ন রেখে গেছেন, তা পল্লবিত হয়ে জ্ঞানের আলো উদ্ভাসিত করছে। কিন্তু এর আগেই ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫সালে গত হয়েছেন আভাই প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।


বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশের সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়। সাথে সাথে মাটি চাপা পড়ে যায় বিদ্যালয় পর্যায়ে বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা। দেশজুড়ে শুরু একক বিদেশি ভাষা অর্থ্যাৎ ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থার আস্ফালন। আর ধাপাচাপা পড়ে যায় আভাই-এর উন্নয়ন ও বিকাশের পথ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভুলে যায় আভাই-এর মূল পরিকল্পনার কথা। আর এই পরিস্থিতিতে আভাই পরিচালানায় যারা আসেন, তাঁরা হলেন এ দেশে প্রতিষ্ঠিত ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আমাদের আশেপাশের লোকজন। আর তাঁরা হলেন আরবি, বাংলা, ইংরেজি ও ফার্সি ভাষায় ডিগ্রীপ্রাপ্ত স্বদেশী বিদেশি ভাষার শিক্ষক। তাঁরা আভাইকে আরবি, বাংলা ইংরেজি ও ফার্সি ভাষা শিক্ষার পশ্চাৎপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। ধামাচাপা পড়ে যায় বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা। যে কারণে আভাই তার মূল পরিকল্পনা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।তাই এখন আভাই-তে বিদেশি ভাষা সম্পর্কিত গবেষণা কার্যক্রম তেমন একটা পরিচালিত হয় না। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর নিজ উদ্যোগে জারীকৃত ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-এ আভাই-তে যে সব বিদেশি ভাষা বিভাগ খোলার প্রতিশ্রুতি ছিলো, সেগুলোর অর্ধেক ভাষায়ও পঠন-পাঠন এখনও শুরুই হয়নি। কাজেই বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর তিরোধানে বিদেশি ভাষানীতি ভেস্তে গেছে, আর আভাই প্রবেশ করেছে অন্ধকার যুগে।

অধ্যাপক ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির
পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভূতপূর্ব অতিথি শিক্ষক, টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়
ভূতপূর্ব গবেষণা ফেলো, জাপান রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউট

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আপনি একটি লাইন লিখেছেন- বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশের সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়।

একদম সঠিক কথা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশকে বঙ্গবন্ধু যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঘাতকেরা সব শেষ করে দিল। বাংলাদেসকে পিছিয়ে দিলো।

২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫৭

ডাব্বা বলেছেন: আরবি, ইংরেজি, ফার্সি ভাষা শিখলে মানুষ পশচাৎপদ হবে কেন? আমি তো মনে করি ইংরেজি, হিন্দি, ম্যান্ডারিন, আর আরবি হচ্ছে ভবিষ্যতের ভাষা। আজ থেকে ১৫ বছর পর এই ভাষাগুলোই ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান ভাষা হবে।

৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২১

পদ্মপুকুর বলেছেন: দীর্ঘ দশ বছরের মত ক্যাম্পাসে সক্রিয় থেকেও জানতে পারিনি যে এটাকে "আভাই" বলা হয়, কি দূর্ভাগ্য আমার!!
দ্রুত বলতে হলে আমরা এটাকে ভাষা ইনস্টিটিউট বা কখনও সখনও আইএমএল বলতাম বলেই মনে পড়ছে।

বঙ্গবন্ধুর মহৎ উদ্দেশ্যে গড়ে উঠলেও এখন এটার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ বলেই আমার মনে হয়।

৪| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৮

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: আভাই সম্পর্কে জানতে পারলাম, ধন্যবাদ স্যার।

৫| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:০৬

স্থিতধী বলেছেন: আরবী, বাংলা, ইংরেজী, ফারসী ভাষা শিক্ষার পশ্ছাতপদতা বলার একটি কারন আছে। লেখার দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফের শুরুতেই বলা আছে যে ডঃ কুদরাত ই খুদার শিক্ষা কমিশন আন্তর্জাতিক অনেকগুলো ভাষার উপর শিক্ষা ও গবেষণার উপর গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলো। শুধুমাত্র ইংরেজীকেই বাধ্যতামূলক বিদেশী ভাষা করে বিদ্যালয় পর্যায়ে রাখতে চায়নি । ফলে একটা আন্তর্জাতিক মূল্যবোধ ও শিক্ষার চেতনা আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে অনেক আগেই রোপণ হতো । কেবলমাত্র আরবী – ফারসী, হিন্দি-উরদু, ইংরেজী -বাংলা জানার অহং তথা একটা সঙ্কীর্ণ গন্ডীতেই ভাষা ও চিন্তা কে আটকে রাখার মতো যে প্রবণতা ঐতিহাসিকভাবেই আমাদের এ দেশে আছে তার প্রভাব আর দীর্ঘস্থায়ী হতে পারতোনা । তাই, এটা দেখে অবাক হতে হয়না যে দূরদর্শী এসব চিন্তা ভাবনা দেখে সাইদীর মতো জামায়াতী ওয়াজকারী তাঁর ওয়াজে এই শিক্ষা কমিশনের প্রধান ডঃ কুদরাত ই খুদা কে প্রায় ই “গজব ই খুদা” বলে আখ্যা দিতো !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.