নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাবিস্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসাবে আমার ব্যক্তিগত ভাবনা

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৭

১. পূর্বকথা
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট (আভাই)-এর যাত্রা শুরু হয় ১লা জুলাই ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে। এটি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে জারীকৃত অধ্যাদেশের সংবিধি (6th Statutes of the Dhaka University, Click This Link) অনুসরণে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু এর আগে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানের কাঠামো তৈরী হয়। সে সময় এর নাম ছিলো— বিদেশী ভাষা বিভাগ, যা তখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাথে একান্নবর্তী বিভাগ হিসাবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অঙ্গীভূত ছিলো। এই বিদেশী ভাষা বিভাগকে ১৯৭৪ সালে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট (আভাই) নামে বর্তমান শিক্ষাভবনে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বতন বিদেশী ভাষা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো যুক্ত-পাকিস্তানের ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা কায়েমের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসাবে। আভাই-এর সংবিধি অনুযায়ী এখানে আরবি, বাংলা (বিদেশীদের জন্য), বর্মী, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, হিন্দি, ইন্দোনেশিয়ান, ইতালীয়, জাপানি, মালয়, নেপালি, ফার্সি, রুশ, সিংহলি, স্পেনীয়, সোয়াহিলি, তামিল, থাই, তুর্কি এবং উর্দু ভাষার পঠন-পাঠন ও গবেষণা হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে আভাইতে ১৫টি ভাষার পঠন-পাঠন হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে আভাইতে চীনা, ফরাসি ও জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার ফলে বিদেশী ভাষার সাথে ভাষা বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু আভাই-তে এসব ভাষার উপর তেমন কোনো গবেষণা কর্ম পরিচালনা করা হয় না।

২. আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থার চালচিত্র
আভাই-এর সংবিধি অনুযায়ী এখানে আরবি, বাংলা (বিদেশীদের জন্য), বর্মী, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, হিন্দি, ইন্দোনেশীয়, ইতালীয়, জাপানি, মালয়, নেপালি, ফার্সি, রুশ, সিংহলি, স্পেনীয়, সোয়াহিলি, তামিল, থাই, তুর্কী এবং উর্দু ইত্যাদি ভাষার পঠন-পাঠন ও গবেষণা পরিচালনার বিধান রয়েছে এবং এর পঠন-পাঠনে ও গবেষণায় নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট (Certificate of Proficiency), ডিপ্লোমা (Diploma of Arts in Modern Languages) এবং স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এম.ফিল ও পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী প্রদানের বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আভাই-এর বিধান অনুসারে প্রাপ্ত ক্ষমতা অনুযায়ী পূর্ণ আধুনিক ভাষা বা বিদেশি ভাষা ও ভাষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা কায়েম করতে সমর্থ হয়নি। বর্তমানে আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থা সারণীতে উপস্থাপন করা হলে, নিম্নরূপে প্রতিভাত হয়্:


৩. আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার স্বরূপ

আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থায় নানা অসঙ্গতি রয়েছে, তার কতকগুলো নিম্নরূপ:
ক) বিভিন্ন বিভাগে আনুপাতিক হারে শিক্ষকের সংখ্যার অসাম্য, যেখানে মোট শিক্ষক সংখ্যার __শতাংশ ইংরেজি ভাষা বিভাগভুক্ত শিক্ষক রয়েছে।
খ) জুনিয়র থেকে ডিপ্লোমা প্রোগ্রামগুলো শুন্য থেকে ভাষা শিক্ষা শুরু করে এমন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবর্তন করা হলেও, ১২ বছর বিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি শেখা ইংরেজি শিক্ষার্থীদের জন্য একই জুনিয়র থেকে ডিপ্লোমা কোর্স প্রদান করা হয়ে থাকে।
গ) বিশ্বব্যাপী সর্বজন স্বীকৃত দক্ষতা ভিত্তিক সিলেবাস অনুযায়ী বিদেশি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও, আভাই-তে অবোধগম্য জুনিয়র-ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম চালু রয়েছে।
ঘ) বিদেশি ভাষায় যোগ্যতার স্বীকৃত সার্টিফিকেট থাকার শর্তে নিয়োগ দেয়া উচিৎ হলেও, বিদেশে অবস্থানের অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতা বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে।

৪. আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার হেতু
আভাই-এর প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এর উন্নয়নে কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছিলো না। এখানে ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দুই ধরণের উদ্যোগের কারণে। প্রথম ধরণের উদ্যোগটি গৃহীত হয়েছে দেশে প্রতিষ্ঠিত ভাষা শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিতদের দ্বারা। এই ধরণের উদ্যোগীরা হলেন বাংলা, ইংরেজি, আরবি ও ফার্সি ভাষায় শিক্ষিত, যারা কলাভবনস্থ ভাষাগুলোর অনুকরণে আভাই-তে একটি পশ্চাৎপদ শিক্ষাব্যবস্থা কায়েমের প্রতি উদ্যোগী ছিলো। দ্বিতীয় ধরণের উদ্যোগটি গৃহীত হয়েছে বিদেশি দূতাবাস ও সংস্থার কর্তৃক তাদের দেশের বিদেশি ভাষা শিক্ষানীতির অনুষঙ্গ হিসাবে। বিদেশিদের উদ্যোগে যে সব ভাষা প্রোগ্রাম চালু হয়েছে সেগুলো হলো— চীনা, ফরাসি, জার্মান, ইতালীয়, জাপানি, রুশ, স্পেনীয় এবং তুর্কী।
কিন্তু এসব ভাষার শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও, সর্বদাই এর প্রশাসনিক কর্তৃত্ব ছিলো- বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষার শিক্ষকদের হাতে। তাঁদের অধিকাংশই আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে তেমন কোনো পরিকল্পনা হাতে নেয়নি। যে কারণে, দক্ষতা ভিত্তিক সিলেবাস প্রণয়ন ও উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা চালুকরণে প্রয়োজনীয় শিক্ষিত ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি কার্যক্রমগুলো ঠিকমতো হাতে নেয় যায় নি। ফলশ্রুতিতে আভাইতে প্রয়োজনীয় ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা যায় নি।

৫. আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা
চলছে বিশ্ব জুড়ে পরিব্যপ্ত বিশ্বায়ন, যার কবলে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি আবর্তিত হচ্ছে। এই বিশ্বায়ন বিশ্বের দেশসমূহের জন্য সুযোগ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্বায়ন থেকে পূর্ণ কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা আহরণ করতে হলে বিদেশি ভাষায় পারদর্শী অঞ্চল ভিত্তিক চিন্তকবর্গ (Think Tank) গড়ে তোলা প্রয়োজন। সেজন্য বিদেশবিদ্যা ও বিদেশি ভাষায় পারদর্শী অঞ্চল ভিত্তিক চিন্তকবর্গ গড়ে তুলতে আভাই-এর শিক্ষাপ্রশাসন ও শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার ও উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

৬. আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা
যে কোনো শিক্ষাব্যবস্থার অনুষঙ্গ হলো শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাঠ্যক্রম। কাজেই আভাই-এর শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হলে, উক্ত অনুষঙ্গগুলোর উন্নয়ন সাধন করতে হবে, যা নিম্নে যথাক্রমে বিবৃত করা হলো:

৬.১. শিক্ষক ও গবেষক বিষয়ক পরিকল্পনা
বাংলাদেশের শিক্ষা ও গবেষণা জগতে বিদ্যমান বর্তমান কর্মশক্তি দিয়ে দেশে একটি আভাই-এর উন্নয়ন সম্ভব নয়। কোনো ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষক ব্যতীত অনুষ্ঠিত হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশী ভাষার শিক্ষক নেই বললেই চলে। যে সব শিক্ষক আভাই-তে আছেন তারা বিদেশি দূতাবাস ও সংস্থার পৃষ্টপোষকতায় আভাই-তে শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষক হয়েছেন। সেজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিদেশি মাতৃভাষী (native speaker) কর্মশক্তির উপর নির্ভর করতে হবে। সেজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত সকল পদে বিদেশি শিক্ষকদের নিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। দেশি ও বিদেশি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের আভাই-এর শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করতে নিম্নের পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা প্রয়োজন:
ক) প্রতিষ্ঠিতব্য নতুন ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষক নিয়োগের বিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
খ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান বিধি পরিবর্তন করে আভাই-তে বিদেশি ভাষা শিক্ষকদের এক-চতুর্থাংশ বিদেশি শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
গ) বিদেশি শিক্ষক ও গবেষকদের আভাই-এর আকর্ষণের জন্য ৬মাস/১২মাস মেয়াদী কয়েকটি ফেলো (Fellow)-এর পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
ঘ) বাংলাদেশী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তযুক্ত করা প্রয়োজন।
ঙ) অনলাইনে পাঠদানের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

৬.২. পাঠ্যক্রম উন্নয়ন পরিকল্পনা
আভাই ভাষা পঠন-পাঠন ও গবেষণার পীঠস্থান হলেও, ভাষা সম্পর্কিত যে কোনো উচ্চশিক্ষা পাঠ্যক্রমে ভাষা বিজ্ঞান ও সাহিত্য ইত্যাদি জ্ঞানীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ ভাষা হলো জ্ঞানের বাহন। জ্ঞানীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভাষা আয়ত্বকরণ প্রক্রিয়া ঘটে থাকে। আভাই ভাষা পাঠ্যক্রমের দু’টি বিষয়কে বিবেচনায় নিতে হবে―১) ভাষাগত দক্ষতা বিষয়ক শিক্ষা কার্যক্রম এবং ২) জ্ঞানীয়/শাস্ত্রীয় শিক্ষা কার্যক্রম:

৬.২.১. ভাষাগত দক্ষতা বিষয়ক শিক্ষা কার্যক্রম
ভাষাগত দক্ষতা কয়েকটি ক্রমোচ্চ ধাপে বিভক্ত। আভাই শিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত অনেকগুলো ভাষা- ইংরেজি, জার্মান ও জাপানি ইত্যাদি ভাষার দক্ষতার মান নির্ধারণে প্রমিত মানদণ্ড রয়েছে। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা নিরূপণে সহায়ক প্রমিত মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছে — IELTS ও ToEFL। কিন্তু আমাদের জাতীয় ভাষা বাংলা ভাষার দক্ষতার মান নিরূপক কোন মানদণ্ড নেই। কিন্তু উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমটি অনুষ্ঠিত হতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েরই যথেষ্ট ভাষাগত দক্ষতা প্রয়োজন। কাজেই শিক্ষার্থী ভর্তিতে এবং পরীক্ষা পদ্ধতিতে ভাষাগত দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। ভাষাগত দক্ষতা পরিমাপক সবচেয়ে বেশী অনুসৃত মানদণ্ড হলো— Common European Framework for Reference (CEFR) করা হলো। শিক্ষার্থীদের স্নাতক ও ডিপ্লোমা প্রাপ্তির পর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করা বাঞ্ছনীয়।
ক) সে জন্য ৪ বছরের ডিপ্লোমা বা স্নাতক ডিগ্রীর জন্য নতুন পাঠ্যক্রম বা সিলেবাস প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
খ) স্নাতক ডিগ্রী প্রদানের জন্য স্বীকৃত ভাষাগত দক্ষতা অর্জন শর্তযুক্ত করা প্রয়োজন।
গ) শিক্ষার্থী ভর্তিতে এবং স্নাতক ও ডিপ্লোমা পর্যায়ের পরীক্ষা পরিচালনায় দক্ষতা ভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করা প্রয়োজন।
ঘ) জুনিয়র- ডিপ্লোমা কোর্সের পরিবর্তে ৬মাস মেয়াদী দক্ষতা ভিত্তিক A1, A2, B1 শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।

৬.২.২. জ্ঞানীয়/শাস্ত্রীয় শিক্ষা কার্যক্রম
ভাষাগত দক্ষতা অর্জনে জ্ঞানীয়/শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। অর্থ্যাৎ জ্ঞানীয়/শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু অধ্যয়নের মাধ্যমে ইপ্সিত ভাষায় ভাষাগত দক্ষতা আয়ত্বকরণ কার্যক্রম সংঘটিত হয়। আভাই-এর স্নাতক পর্বের পাঠ্যসূচীতে যে জ্ঞানীয়/শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু রয়েছে তা হলো—ক) মূখ্য পাঠ্যক্রম, খ) ভাষা বিজ্ঞান, গ) ইতিহাস, ঘ) সাহিত্য ও ঙ) সভ্যতা ও সংস্কৃতি।
স্নাতক পর্বের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে প্রণীত পাঠ্যক্রমে উপরের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর মধ্যে মূখ্য বিষয়বস্তুর পাঠ্যসূচীতে যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তা হলো— বাংলা ভাষা, বঙ্গবিদ্যা ও ইংরেজি স্বাক্ষরতা কোর্স। কিন্তু বিদেশী ভাষার পাঠ্যক্রমের মূখ্য বিষবস্তু হিসাবে এগুলো সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কাজেই মূখ্য পাঠ্যক্রমের বাংলা ভাষা, বঙ্গবিদ্যা ও ইংরেজি স্বাক্ষরতা কোর্সের পরিবর্তে নিচের কোর্সগুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন:
ক) বিশ্বায়ন ও বিদেশী ভাষা
খ) চীন/ফ্রান্স/জাপান ইত্যাদি দেশ পরিচিতি, যেমন- ভূগোল ও সমাজ
গ) সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন
ঘ) বিদেশী ভাষা (ভিন্ন ভাষা-পরিবারভুক্ত)

৬.৩. শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা
আভাই-এর শিক্ষা কার্যক্রমের পরিসর বৃদ্ধিকরণে নিম্নের পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে:
ক) বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার শিক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে আভাই-তে বিদেশিদের জন্য বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ নামক একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
খ) বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শীত ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির সাথে মিল রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তিন সপ্তাহব্যাপী Summer/Winter Institute of Bangla as Foreign Language চালু করা প্রয়োজন।
গ) বাংলা/রুশ/তুর্কী/জার্মান/স্পেনীয় ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ নামে আরও কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
ঙ) অন্যান্য বিভাগের সিলেবাসের অনুকরণে ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতি নামক একটি বিভাগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
চ) আভাই-এর সংবিধিতে উল্লেখিত যে ভাষাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি, সেগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন।
ছ) যে সব ভাষায় পূর্ণাঙ্গ বিভাগ রয়েছে, সেগুলোর জুনিয়র- ডিপ্লোমা শিক্ষা কার্যক্রম রহিত করা প্রয়োজন।
জ) দ্বৈত ডিগ্রী প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। দ্বৈত ডিগ্রী প্রোগ্রামের রূপরেখা নিম্নে বিবৃত করা হলো:
i) দ্বৈত ডিগ্রী প্রোগ্রামের রূপরেখা
দ্বৈত-ডিগ্রী প্রোগ্রাম প্রবর্তন করে তার আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি, বাংলা, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু, পালি ও সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের সাথে যৌথ শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করা, যেনো বিভিন্ন অনুষদভুক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা আভাই-তে যৌথ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভের বিধান চালু করা যেতে পারে।
একটি দ্বৈত ডিগ্রী প্রোগ্রাম হলো একই সাথে দু’টি ডিগ্রী অর্জনে সহায়ক শিক্ষা ব্যবস্থা। এই ডিগ্রী প্রোগ্রামে সম্মিলিত ডিগ্রী, কনজয়েন্ট ডিগ্রী, যৌথ ডিগ্রী বা দ্বৈত স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম নামেও পরিচিত। এই ডিগ্রী প্রোগ্রামে একজন শিক্ষার্থী একই সাথে বা একই প্রতিষ্ঠানে অথবা (কখনও কখনও বিভিন্ন দেশে) সমান্তরালে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’টি প্রোগ্রামে যুক্ত থেকে একই সাথে দু’টি ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ পায়। ফলশ্রুতিতে একজন শিক্ষার্থীর এগুলোকে আলাদাভাবে উপার্জন করতে যে পরিমাণ সময় লাগতো, তার চেয়ে কম সময়ে এগুলো অর্জন করতে পারে।
উল্লেখ্য যে, ডিপ্লোমা/উচ্চতর ডিপ্লোমা অর্জনের পরও, চাকরির বাজারে এই ডিপ্লোমার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই ব্যবস্থায় ডিপ্লোমাটি ডিগ্রীতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে বলে আভাই-এর প্রোগ্রামগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
ii) দ্বৈত ডিগ্রীর সম্ভাব্য শিক্ষার্থী
— বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশী ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষা অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী
— আভাই-এর সাথে যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের MOU স্বাক্ষরিত হয়েছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ফরাসি/চীনা/জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী
— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি, বাংলা, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু, পালি ও সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের অধ্যয়রত স্নাতক পর্বের শিক্ষার্থী।


৬.৪. শিক্ষার্থী বিষয়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা
প্রস্তাবিত আভাই শিক্ষা কার্যক্রম সব ধরণের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন, যেন বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে মিথোষ্ক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমটি পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের আবহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেজন্য নিম্নের আভাই-তে ৩ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিদেশী ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক শিক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখতে হবে:-
ক) বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, খ) বিদেশী শিক্ষার্থী, গ) শাস্ত্রীয় বিনিময় চুক্তির আওতায় বিপ্রতীপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষার্থী

৬.৫. শিক্ষা প্রশাসন বিষয়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা
আভাই-এর শিক্ষা কার্যক্রম সচারুরূপে অনুষ্ঠিত হতে হলে শিক্ষা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সংস্কার ও উন্নয়ন করা প্রয়োজন। নিম্নের বিধানগুলো সংযুক্ত করে আভাই-এর শিক্ষা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সংস্কার ও উন্নয়ন করা যেতে পারে:
ক) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের-এর ‘আধুনিক ভাষা’ অভিধাটির পুনর্মূল্যায়ন ও সে অনুযায়ী আভাই-এর শিক্ষা কার্যক্রম ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। আভাই-এর শিক্ষা বিশ্বের মহাদেশ ও উপমহাদেশের বিভক্তি অনুসরণে বিভাগ গুচ্ছ ও বিভাগ গঠন করে তার অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম ন্যস্ত করা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী- ৬টি জন অধ্যুষিত মহাদেশের নাম অনুসরণে ৬টি বিভাগ গুচ্ছ- এশীয় ভাষা বিভাগ গুচ্ছ, আফ্রিকা ভাষা বিভাগ গুচ্ছ, উত্তর আমেরিকা ভাষা বিভাগ গুচ্ছ, দক্ষিণ আমেরিকা ভাষা বিভাগ গুচ্ছ, ইউরোপীয় ভাষা বিভাগ গুচ্ছ ও ওসেনিয়া ভাষা বিভাগ গুচ্ছ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
খ) প্রত্যেক পূর্ণাঙ্গ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের জন্য বেতন, ভাতা ও সুবিধার সুযোগ চালু করা প্রয়োজন।
গ) বিভিন্ন বিভাগে বিছিন্নভাবে বিদেশি ভাষার যে সব কোর্স প্রদান করা হয়, তা আভাই-র নিয়ন্ত্রণাধীনে একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আওতায় পরিচালনা করা প্রয়োজন।
ঘ) বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
ঙ) শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং দেশি ও বিদেশি শুভানুধ্যায়ীদের আর্থিক সহযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বৃত্তি তহবিল গঠন করা প্রয়োজন।
চ) আভাই-তে সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, সমাজকল্যাণ ও দাতব্য কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ৬টি পর্ষদ গঠন (ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে) করা প্রয়োজন।
ছ) আভাই-তে বিভাগ বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে অফিস সহকারী, মুদ্রাক্ষরিক ও পিয়নের পদসংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

৬.৬. ভৌত অবকাঠামো বিষয়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা
আভাই-তে যেনো বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম যথাযথভাবে সংঘটিত হয়, সেজন্য শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সহায়ক শিক্ষা ও গবেষণা ভবন, মিলনায়তন, গ্রন্থাগার, সম্মেলন কক্ষ ও বৈদ্যুত্যিন সুবিধা সম্পর্কিত ভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলো প্রয়োজন। এই অবকাঠামো গড়ে তুলতে নিচের ব্যবস্থাগুলো সৃষ্টি করা প্রয়োজন:
ক) বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ যেনো সরাসরি ক্লাস নিতে পারে, এমন নেটওয়ার্ক ও অভ্যন্তরীণ ভৌত ব্যবস্থা রেখে শ্রেণিকক্ষগুলো সাজানো প্রয়োজন।
খ) আভাই-এর শিক্ষা ভবনটির অসমাপ্ত অংশের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
গ) আভাই-এর জন্য একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভিন্ন ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন

৭. উপসংহার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আভাই-এর সংস্কার ও উন্নয়ন সম্পর্কে আমার সংস্কার প্রস্তাব অনুসারে আভাই-এর সংস্কার সাধন করা হলে এবং উন্নয়ন প্রস্তাব অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলে, আভাই-তে বিদেশি ভাষার শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে গতি ফিরবে। ফলশ্রুতিতে দেশে বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জ্ঞানদীপ্ত বিদেশবিদ্যা বিষয়ক চিন্তকবর্গ গড়ে উঠবে। এই চিন্তকবর্গ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে সুবিধা আহরণে বৌদ্ধিক শক্তি যোগাবে এবং দেশ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুবিধা আহরণ করতে পারবে।

পরিচালক
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমার কমেন্ট টাকে খেয়ে ফেলেছেন? আপনি ছাত্রদের কি করে পড়াবেন, আপনার মাঝে শিক্ষকতার পেশার কিছু দেখছি না আমি।

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার পরিকল্পনা জেনে স্যার। কিন্তু গেলবছরের আইএমএল রেজিওনাল কনফারেন্স পরবর্তী জার্নালের জন্যে যে পেপার আমরা পাঠিয়েছি, তার কোন আপডেট নেই আজ প্রায় একবছর। আশা করি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে পেপার যারা জমা দিয়েছে তাদের দ্রুত একটা পজিটিভ/ নেগেটিভ আপডেট জানিয়ে বাধিত করতে বলবেন।

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৩৫

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: জনগনের অর্থ শ্রাদ্ধের আরক নজির এই আভাই।
এই বিভাগের স্বরূপ তুলে ধরবার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.