নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমাজবৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক তত্ত্বের নিরিখে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ এবং বাস্তবতার মধ্যে বৈপরীত্য

১৯ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৫:১৫

১. প্রবৃত্তি, নৈতিকতা ও প্রাতিষ্ঠানিকতা
ইসলাম “প্রবৃত্তি”/nafs-এর সমস্যাকে স্বীকার করে, সেটিই অস্বীকার করে না বরং নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি নির্দেশ করে। এখানে Durkheim বা Parsons-এর সমাজতাত্ত্বিক ধারণাও প্রাসঙ্গিক: প্রতিষ্ঠানসমূহ (Institution) মানুষের স্বভাবগত দুর্বলতা ধরে নিয়ে নিয়ম-কানুন ও সামাজিকীকরণের মাধ্যমে নৈতিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চায়। ইসলামও সমাজ-প্রতিষ্ঠান (শুরা, আদালত, হিসবা) এবং সংস্কারমুখী শরীয়াহর দোহাই দেয়।
তবে বাস্তবতা:
• মুসলিম সমাজে, “নিকাহ”-র মত ইনস্টিটিউশন সমাজে ব্যভিচারের প্রবণতা কমিয়ে আনে, কিন্তু শিক্ষা, অর্থনৈতিক সুযোগ, নেতৃত্বের দুর্বলতা থাকলে কাঠামোটি অকেজো হয়ে যায়।
• সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখায় ইসলাম তাত্ত্বিকভাবে শক্তিশালী হলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা সংগঠনের, আদর্শের নয়—–এটি আপনার বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। 

২. Weber ও রাজনৈতিক অর্গানিকতা
আপনার ওয়েবের প্রসঙ্গ স্পষ্ট: নৈতিক কর্তৃত্ব ঢুকে পড়ে আমলাতন্ত্রে (বাইরোক্রেসি), যেখানে নৈতিকতা ঝরে যায়। এখানে ইসলামী জবাবদিহিতার কাঠামো (শুরা, বিচারবিভাগ)–ব্যবহারিকভাবে ঠিক কতটা কার্যকর, সেটাই প্রকৃত পরীক্ষা।
• আপনাকে উদ্ধৃত করে—নেতৃত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিকতার দূর্বলতা (rather than simply the ideals)–বলি, আধুনিককালের ইসলামি দলগুলোর organisational culture কতটা "ethical renewal" করতে পারে, সেটাই মূলত Weber-এর Amorphous Bureaucracy-এর হাত থেকে বাঁচার পথ।
• দুর্বল জবাবদিহিতাই দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দ্বার খুলে দেয়। 

৩. Gramsci, Mouffe ও আদর্শ-হেজিমনির দ্বন্দ্ব
• ইসলামী বয়ানের “hegemony” নির্মাণ নিয়ে Gramsci-এর ধারণা যথাযথভাবে যুক্ত হয়েছে। সমাজকাঠামো পরিবর্তনের দাবিতে ন্যায়বিচার/নৈতিকতা-ভিত্তিক হেজিমনি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়ে দলগুলো নিজেরাই অনেক সময় ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা মেরুকরণ নির্ভর হয়ে পরে (Mouffe-এর agonistic politics)।
• বৈপরীত্য: আদর্শ–ন্যায়ের নামে সুবিধাবাদ, যার ফলে ইসলামি দলগুলো যখন গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসায় তখন জনগণের ঐক্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়, ইসলামী যুক্তি বরং প্রকৃত pluralism-এর পক্ষে–যা মতবিরোধ এবং প্রতিযোগিতার মধ্যে ন্যায়িক পরিবেশ চায় (বাকারা ২৫১)।
• মৌলিক প্রশ্ন: আদর্শ, বাস্তবতা ও কৌশলের ভারসাম্য কিভাবে রক্ষিত হবে? এখানেই ইসলামী আদর্শের সাফল্য ব্যর্থতার পার্থক্য। 

৪. বাস্তবতাবাদ vs. ইউটোপিয়ানিজম
আপনি যথার্থ বলেছেন–ইসলাম সর্বোচ্চ ন্যায্যতা দাবি করলেও সম্পূর্ণ নির্ভুলতা বা “পবিত্র” রাষ্ট্র কল্পনা করে না; বরং জবাবদিহিতার বাস্তব প্রক্রিয়া অনুমান করে। এখানে ইবনে খালদুনের মত সমাজতাত্ত্বিকদের রেফারেন্সও প্রাসঙ্গিক ছিল—তিনি বলেছেন, শক্তিশালী সমাজ ও নেতৃত্বই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সফল করে (asabiyyah)।
• তাই ইসলামী আদর্শের সামগ্রিক মূল্যায়নে “মানবীয় ভুল-ত্রুটি” ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব অনিবার্য—এটিই আসল বাস্তবতা।
পরিশেষে: পাঠপ্রাসঙ্গিক কিছু বিশ্লেষণাত্মক সংযোজন
• Ideals vs. Implementation: আদর্শ আর বাস্তবায়নের ফাঁক সব সমাজ-ব্যবস্থাতেই দেখা যায় (উদাহরণ: গণতন্ত্র–নৈতিক দাবির সত্ত্বেও বাস্তবে বিভক্তি, হিংসা, দুর্নীতি)। ইসলামী আদর্শও তার ব্যতিক্রম নয়, এখানে সাফল্যের চাবি—“আত্মসংযম, ন্যায়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি”।
• ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা: ইসলামী শাসনের স্বর্ণযুগেও মানবিক দুর্বলতা, ক্ষমতা-দ্বন্দ্ব, ও আদর্শচ্যুতি ছিল—কিন্তু প্রতিস্পর্ধার ভেতরেও জবাবদিহি ও নৈতিক পুনর্গঠনের ধারাটি চলমান ছিল।
• সমাজবিজ্ঞান ও দর্শন প্রসঙ্গে: ইসলামি রাজনৈতিক দর্শনকে সমালোচনা করা মানে একটি যৌগিক, অভ্যন্তরীণ আত্মসমালোচনার ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করা; এতে সমাধান বিশ্লেষণাত্মক–তাত্ত্বিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার মিলিয়ে। 

সংক্ষিপ্ত-উপসংহার
ইসলামী রাজনীতির তাত্ত্বিক জটিলতা “আদর্শ বনাম বাস্তবতা”র সমস্যাটিকে এড়ায় না, বরং সেখানে সমাধান খোঁজে। প্রতিটি সমাজে আদর্শের সাথে বাস্তবায়নের ফাঁক অনিবার্য; ইসলাম এই ফাঁককে স্বীকার করে এবং সুসংগঠিত, নৈতিক কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা চালায়।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.