![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রান্ত রুখে দাঁড়ান
সূচনা
একবিংশ শতাব্দীতে ঐতিহ্যবাহী ঔপনিবেশিকতার যুগ শেষ হলেও নব্যঔপনিবেশিকতার অত্যাধুনিক কৌশল আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই নতুন ধরনের আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাব ও হস্তক্ষেপের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং এর নীতিমালা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও ভূ-রাজনৈতিক নির্ভরতার নতুন ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে
১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নব্যঔপনিবেশিক শক্তির প্রতিনিধি
ইউনুসের নেতৃত্ব ও পশ্চিমা সংযোগ
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস ২০২ৄ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে এই নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে এবং গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে একসাথে কাজ করার আশা প্রকাশ করেছে।
প্রকাশ্য কর্মসূচি:
• ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে "মুক্ত ও নিরপেক্ষ" জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি
• ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং সরকারি প্রশাসনে সংস্কারের উদ্যোগ
• অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নীতি
গোপনীয় ও সন্দেহজনক কার্যক্রম:
• ২০২৫ সালের মার্চে ইউনুস ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশ তিন মাসের মধ্যে SpaceX-এর স্টারলিংকের সাথে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করবে
• ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে ইউনুসের "উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক" টেলিফোন আলোচনা, যেখানে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরকরণ এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা
• ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ইউনুসের "বাস্তববাদী" কূটনৈতিক পদক্ষেপ
সামরিক বাহিনীর সাথে উত্তেজনা
২০২৫ সালের মে মাসে ইউনুস প্রশাসনের সাথে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার লড়াই দেখা দেয়। গণমাধ্যমে এটি সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের মধ্যে "শীতল যুদ্ধ" হিসেবে চিত্রিত হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রকাশ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেন।
২. সেন্ট মার্টিন দ্বীপ: মার্কিন সামরিক ঘাঁটির হুমকি
ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব
সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ। তিন বর্গকিলোমিটারের এই প্রবাল দ্বীপটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের খুব কাছে অবস্থিত। এই দ্বীপে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে মালাক্কা প্রণালীর কৌশলগত নিরীক্ষণ।
শেখ হাসিনার অভিযোগ ও মার্কিন অস্বীকার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন যে তিনি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিলে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। ২০২৪ সালের মে মাসে হাসিনা দাবি করেছিলেন যে একজন "সাদা মানুষ" তাকে জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা ঝামেলায় পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে একটি এয়ারবেস স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দখলের বিষয়ে কোনো আলোচনায় জড়িত হয়নি এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে।
ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ভারতের পারমাণবিক সাবমেরিন সুবিধার খুব কাছে হবে। ভারতের অপেক্ষাকৃত ছোট পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাছাকাছি মার্কিন সামরিক উপস্থিতি থাকলে তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।
নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সার্বভৌমত্বের হুমকি
কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানো:
• বঙ্গোপসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং মার্কিন স্বার্থের বিপরীতে যাওয়ার কারণে এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা
• দেশের সবচেয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপের উপর জাতীয় নিয়ন্ত্রণ হারানো
• বড় শক্তিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি
সামরিক নির্ভরতা সৃষ্টি:
• ২০২৫ সালের জুন মাসে "এক্সারসাইজ টাইগার লাইটনিং" নামে মার্কিন-বাংলাদেশ যৌথ সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি অনুষ্ঠিত হবে
• দীর্ঘমেয়াদী সামরিক চুক্তির মাধ্যমে নির্ভরতা তৈরি
৩. অর্থনৈতিক অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণের হুমকি
চট্টগ্রাম বন্দরের বিদেশী হস্তান্তর
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক প্রবেশপথ এবং জাতীয় নিরাপত্তার সাথে জড়িত একটি কৌশলগত স্থাপনা। এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বিদেশী কোম্পানির হাতে গেলে যে ঝুঁকিগুলো দেখা দেবে:
কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি:
• বিদেশী কোম্পানি পরিচালনায় কৌশল, নিরাপত্তা ও বিনিয়োগ অগ্রাধিকারে ব্যাপক কর্তৃত্ব পাবে
• জাতীয় স্বার্থ ও স্থানীয় চাহিদার চেয়ে বিদেশী স্বার্থ প্রাধান্য পেতে পারে
• সংকটকালে দেশের নিয়ন্ত্রণ কমে যেতে পারে[১][২][৩][৪][৫][৬]
আন্তর্জাতিক নজির: শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর চীনের কাছে দীর্ঘমেয়াদী লিজ দেওয়ার ফলে দেশটি অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে চরম চীনা নির্ভরতায় পড়েছে। এরূপ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যও অনুরূপ ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে[৫]।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ট্যারিফ বাধ্যবাধকতা
রপ্তানি খাত ধ্বংসের আশঙ্কা: ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের উপর ৩৭% "পারস্পরিক" ট্যারিফ আরোপ করে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কার (৪৪%) পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই উচ্চ ট্যারিফ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য (তৈরি পোশাক) খাতে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করেছে[১০][১১]।
নীতিনির্ধারণী স্বাধীনতার ক্ষয়: এ ধরনের অসম চুক্তি দেশের নীতিনির্ধারণী ক্ষমতায় বিদেশী হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়[১০][১১]।
৪. ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের হুমকি
স্টারলিংক ও ডিজিটাল ঔপনিবেশিকতা
ডেটা নিয়ন্ত্রণের হারানো: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০২৫ সালের মার্চে ইউনুস ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশ তিন মাসের মধ্যে SpaceX-এর স্টারলিংকের সাথে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করবে।
স্টারলিংকের মতো মার্কিন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিচালনা শুরু হলে ব্যক্তিগত ও সরকারি সব ধরনের ডেটা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সার্ভারে জমা হবে। CLOUD Act ও অন্যান্য মার্কিন আইন অনুযায়ী এসব ডেটা মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অধীন চলে যেতে পারে[১২][১৩]।
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ দুর্বলীকরণ: জাতীয় সংকটে সরকার চাইলেও ইন্টারনেট শাটডাউন বা ফিল্টার করা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ অবকাঠামো রাষ্ট্রের হাতের বাইরে চলে যায়[১২][১৩]।
৫. আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ
জাতিসংঘের মানবাধিকার আঞ্চলিক দপ্তর: হস্তক্ষেপের বৈধতা
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্ল্যাটফর্ম: জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর স্থাপন হলে, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে পারে। এই ধরনের দপ্তর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের নাম করে দেশের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
নিষেধাজ্ঞার হাতিয়ার: রোহিঙ্গা ইস্যু বা রাজনৈতিক দমন-পীড়নের নামে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি করে না, বরং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে।
সার্বভৌমত্বের হুমকি: আন্তর্জাতিক আদালত বা ICC-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পথ সুগম হবে। এর ফলে দেশের নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে জাতীয় স্বার্থের চেয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাহিদা পূরণে বাধ্য হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব: এই ধরনের প্রতিষ্ঠান একবার স্থাপিত হলে তা দেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতায় স্থায়ী হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি করে। মানবাধিকারের নামে পশ্চিমা মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হতে পারে।
৬. ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা ও সামরিক নির্ভরতা
আরাকানে যুক্তরাষ্ট্রের করিডোর
বড় শক্তির প্রভাব বিস্তার: যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য মানবিক করিডোর বা সামরিক সুবিধা বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আরাকানে গেলে দেশটি ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়বে। এতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সেনা-লজিস্টিক ব্যবস্থা এবং কৌশলগত চাপ বাড়বে[৭][৮][৯]।
ভবিষ্যত সংঘাতের ঝুঁকি: বড় শক্তিদের সংঘাতে দেশের সম্পৃক্ততা বেড়ে যেতে পারে এবং দেশ নিজের ভূখণ্ডের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারাতে পারে।
মার্কিন অস্ত্র ক্রয় ও সামরিক নির্ভরতা
দীর্ঘমেয়াদী নির্ভরতা সৃষ্টি: যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক সহযোগিতা ও অস্ত্র কেনার চুক্তি হলে F-16 বিমান, হেলিকপ্টার, মিসাইল ইত্যাদি কিনতে গিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও অপারেশন সবক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন নির্ভরতা তৈরি হবে[১৭][১৮]।
গোপন শর্তের ঝুঁকি: অস্ত্র চুক্তির আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূমি, ঘাঁটি বা সামরিক স্থাপনা ব্যবহারের অধিকারও চুক্তিভিত্তিক অর্জন করতে পারে[১৭][১৮]।
৭. আন্তর্জাতিক নব্যঔপনিবেশিক মডেলের উদাহরণ
যুক্তরাষ্ট্রের আরব মডেল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সামরিক সহযোগিতার নাম করে নিজের অস্ত্র সরবরাহের উপর চিরস্থায়ী নির্ভরতায় রাখতে বাধ্য করেছে। এর ফলে এসব দেশ কখনোই পুরোপুরি স্বাধীন সামরিক নীতি নির্ধারণ করতে পারে না[১৪]।
ফ্রান্সের আফ্রিকা মডেল
ফ্রান্স সাবেক উপনিবেশগুলোর উপর বৈদেশিক মুদ্রা (CFA ফ্রাঙ্ক), সামরিক ঘাঁটি ও উন্নয়ন সাহায্যকে লিভারেজ হিসেবে ব্যবহার করে তাদের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এভাবে স্বাধীনতার নামে কার্যত এক ধরনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বন্দিত্ব তৈরি থাকে[১৫][১৬]।
৮. পর্যায়ক্রমিক সার্বভৌমত্ব হরণের রূপরেখা
নব্যঔপনিবেশিক শক্তিগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপে সার্বভৌমত্ব ক্ষয় করে থাকে:
প্রথম ধাপ: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও সরকার পরিবর্তন
• লক্ষ্যবস্তু সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন
• ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা
• সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে উৎসাহ প্রদান
• নিজেদের অনুগত ব্যক্তিত্বকে ক্ষমতায় বসানো
দ্বিতীয় ধাপ: অর্থনৈতিক ও নীতিনির্ধারণে হস্তক্ষেপ
• বৈদেশিক ঋণ/বিনিয়োগের শর্ত হিসেবে নীতিমালা পরিবর্তন (VAT, জ্বালানি মূল্য)
• IMF/বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থার প্রভাব বিস্তার
• বাণিজ্যিক চুক্তিতে অসম শর্তারোপ
তৃতীয় ধাপ: সামরিক ও রপ্তানি নির্ভরতা
• অস্ত্র কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে স্বকীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করা
• রপ্তানি বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা
• যৌথ সামরিক মহড়ার নামে স্থায়ী উপস্থিতি
চতুর্থ ধাপ: ডিজিটাল উপনিবেশবাদ
• বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার মাধ্যমে ডেটার উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো
• তথ্য সার্বভৌমত্বের ক্ষয়
• জাতীয় নিরাপত্তায় বিদেশী নির্ভরতা
পঞ্চম ধাপ: আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ
• জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার স্থানীয় উপস্থিতি
• মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ
• ICC বা আন্তর্জাতিক আদালতে নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি
ষষ্ঠ ধাপ: ভূ-রাজনৈতিক জালে আটকানো
• বড় শক্তিদের (চীন-যুক্তরাষ্ট্র) সংঘর্ষের ফাঁদে আটকে গিয়ে স্বাধীন নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা নষ্ট করা
• কৌশলগত স্থাপনার উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো
• আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে স্বাধীন অবস্থান নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস
৯. বর্তমান পরিস্থিতি: একটি বিশ্লেষণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:
উদ্বেগজনক সংকেতসমূহ:
• পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাথে দ্রুত সম্পর্ক উন্নয়ন
• স্টারলিংক চুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল নির্ভরতা সৃষ্টি
• সেন্ট মার্টিন দ্বীপে মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের সম্ভাবনা
• জাতিসংঘের মানবাধিকার আঞ্চলিক দপ্তর স্থাপনের সম্ভাব্য প্রস্তাব
• জাতীয় সামরিক বাহিনীর সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা
সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি:
• কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিদেশী প্রভাব
• অর্থনৈতিক নীতিমালায় পশ্চিমা শর্তের প্রভাব
• তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা
• আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ
উপসংহার
উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিমালা ও কার্যক্রম নব্যঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সম্ভাব্য মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, স্টারলিংক চুক্তি, এবং চট্টগ্রাম বন্দরের বিদেশী নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এই কৌশল ও চুক্তিগুলোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা বজায় থাকলেও বাস্তবে সিদ্ধান্তের ক্ষমতা ও স্বার্থ বাস্তবায়নে দেশটি নব্যঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় দুর্বল ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে। ইতিহাস সাক্ষী যে, একবার এই ধরনের নির্ভরতা তৈরি হলে তা থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
জরুরি প্রয়োজনীয়তা
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজন:
তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ:
• সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো বিদেশী সামরিক উপস্থিতি প্রতিরোধ
• স্টারলিংক চুক্তি পুনর্বিবেচনা ও জাতীয় বিকল্প উন্নয়ন
• চট্টগ্রাম বন্দরের জাতীয় নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখা
• জাতিসংঘের মানবাধিকার আঞ্চলিক দপ্তর স্থাপনের যেকোনো প্রস্তাব প্রতিরোধ
দীর্ঘমেয়াদী কৌশল:
• কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখা
• বহুমুখী কূটনীতি অনুসরণ করা
• অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা
• জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া
• একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
বাংলাদেশের জনগণ ও সচেতন মহলের দায়িত্ব হলো এই বিষয়গুলো নিয়ে জাগ্রত থাকা এবং জাতীয় স্বার্থের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। কারণ একবার হারিয়ে গেলে সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা অসম্ভবের সামিল।
________________________________________
তথ্যসূত্র
[১] Click This Link
[২] Click This Link
[৩] Click This Link
[৪] Click This Link
[৫] Click This Link
[৬] Click This Link
[৭] Click This Link
[৮] Click This Link
[৯] Click This Link
[১০] Click This Link
[১১] Click This Link
[১২] Click This Link
[১৩] Click This Link
[১৪] Click This Link
[১৫] Click This Link
[১৬] Click This Link
[১৭] Click This Link
[১৮] https://en.prothomalo.com/bangladesh/kb9qtt0twp
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:২৭
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
কতগুলো বাজে লোকের সমাবেশ।