বাংলাদেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: একটি জাতীয় সংকট

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: দ্বৈত নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অবস্থান
বিশ্বের অনেক উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। Congo, Djibouti, Cuba, Ethiopia, Haiti, India, Indonesia, Iran, Japan, Kuwait, Kazakhstan, Monaco, Singapore, Oman, Qatar, Saudi Arabia, Nepal, Mozambique এবং Zimbabwe-সহ বিভিন্ন দেশ দ্বৈত নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয় না।
এই নীতির মূল কারণ: এসব দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, দ্বৈত নাগরিকত্বসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রায়শই তাদের অভিবাসী দেশের স্বার্থে কাজ করে এবং মূল দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই আশঙ্কা থেকেই তারা একক নাগরিকত্বের নীতি অনুসরণ করে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি
সরকারি কাঠামোয় বিদেশি প্রভাব
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অধিকাংশ সদস্য এবং পরিচালনা পর্ষদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশি নাগরিক অথবা দ্বৈত নাগরিকত্বসম্পন্ন। এই তালিকায় রয়েছে:
• ড. মুহাম্মদ ইউনুস (নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ)
• আলী রিয়াজ (রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদ)
• ফরিদ উদ্দিন এবং খলিলসহ আরও অনেকেই

পূর্ববর্তী সরকারের অবস্থা
শুধু বর্তমান সরকার নয়, আওয়ামী লীগ সরকারও বিদেশি ও দ্বৈত নাগরিকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে পরিচালিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
• সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন (যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক)
• সজীব ওয়াজেদ জয় (প্রধানমন্ত্রীর পুত্র, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক)
• আরও অনেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টা যারা দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী

সম্পদ পাচার ও দুর্নীতির সম্পর্ক
জরিপ ও গবেষণায় একটি উদ্বেগজনক প্যাটার্ন পরিলক্ষিত হয়েছে:
দুর্নীতির প্রধান হোতারা:
• যারা নিজেদের শেষ বয়সে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিদেশে করেছেন
• যাদের পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে বিদেশি নাগরিক
• যারা দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা ভোগ করেন
এদের কার্যকলাপ:
• দেশের সম্পদ লুটপাট
• অর্থ পাচার ও বিদেশে সম্পদ স্থানান্তর
• জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার প্রদান

দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা
রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার বিপদ
বর্তমান রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে দেশের নিয়ন্ত্রণ এমন শক্তির হাতে চলে যাবে যারা:
• বাহ্যিকভাবে দেশীয় কিন্তু মানসিকতায় বিদেশি
• আইনগতভাবে বিদেশি বা দ্বৈত নাগরিকত্বসম্পন্ন
• দেশবিরোধী স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

জাতীয় সার্বভৌমত্বের ক্ষয়
এই প্রক্রিয়ার ফলে:
• দেশের নীতিনির্ধারণে বিদেশি প্রভাব বৃদ্ধি
• জাতীয় স্বার্থের চেয়ে আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি
• স্থানীয় জনগণের মতামত ও প্রয়োজনের উপেক্ষা
• অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে বিদেশি স্বার্থের প্রাধান্য

গণসচেতনতার প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ
আশঙ্কার বিষয় হলো, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে:
• দেশের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে বিদেশি নাগরিকদের হাতে চলে যাবে
• জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেশীয় জনগণের কোনো ভূমিকা থাকবে না
• অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা বিপন্ন হবে

সময়ের গুরুত্ব
যদিও এক সময় এই বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি হতে পারে, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তখন:
• প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে বিদেশি নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে
• পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে
• দেশের মানুষ ভাগ্যবিড়ম্বিত হতে থাকবে

সুপারিশ ও করণীয়
তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ
১. সংবিধানিক সংস্কার: দ্বৈত নাগরিকত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে নিয়োগ নিষিদ্ধকরণ
২. স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ: সকল মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তার নাগরিকত্বের তথ্য প্রকাশ
৩. আইনি কাঠামো: অন্যান্য দেশের মতো একক নাগরিকত্বের নীতি গ্রহণ

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
১. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: এই বিষয়ে জাতীয় আলোচনা ও সচেতনতা কর্মসূচি
২. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: দেশীয় নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা
৩. আর্থিক নিয়ন্ত্রণ: দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ

উপসংহার
বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে কঠোর নীতি প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক সফল রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে এবং দেশের সাধারণ মানুষ চিরকালের জন্য পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়বে।
এই সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য ও তাৎক্ষণিক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।

০ টি +০/-০