![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়
১) ভূমিকা
আমরা ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত—কোনও সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারণে বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দেওয়া বিশেষজ্ঞ টিম। এর সমান্তরালে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আলোচনায় আরেকটি ধারণা ব্যাপকভাবে আলোচিত—‘ডিপ স্টেট’: এমন এক আড়াল-নির্ভর নেটওয়ার্ক, যা গোপনে ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে চায় এবং কখনও কখনও তা আন্দোলন, অস্থিরতা বা সহিংসতার মাধ্যমে সম্ভব করে।
২) থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক: সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা
থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক হলো গবেষণা-নির্ভর নীতিপরামর্শক দল; প্রকাশ্য গবেষণা, পলিসি ব্রিফ, সেমিনার ও আলোচনার মাধ্যমে তারা নীতি-প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়। তাদের কাজ স্বচ্ছ, উন্মুক্ত এবং প্রমাণভিত্তিক হওয়াই কাম্য।
৩) ডিপ স্টেট: ধারণা ও বিতর্ক
‘ডিপ স্টেট’ বলতে বোঝানো হয় রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় কিছু গোপন সমন্বয়—ক্ষমতার আনুষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে থেকে পর্দার আড়ালে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। এটি কোনও নির্দিষ্ট সংগঠন নয়; বরং বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর ঢিলেঢালা সমন্বয় হতে পারে। ধারণাটি বিতর্কিত, কারণ এটিকে প্রমাণ করা কঠিন, কিন্তু অস্বীকারও করা সহজ নয়।
৪) ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের সহিংসতা: প্রেক্ষাপট
উক্ত সময়ে সরকারি অফিস-আদালতে অগ্নিসংযোগ, থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ, এমনকি অস্ত্রশস্ত্র লুটের মতো ঘটনাও ঘটে। জনতার একটি অংশ আন্দোলনে অংশ নিলেও, অনেকে সন্দেহ করেন—এই সহিংস অভিযানে কোনও ‘ডিপ স্টেট’-ধারার গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে যুক্ত ছিল কি না। প্রশ্নটি এখনও অনুসন্ধানসাপেক্ষ।
৫) ডিপ স্টেট—দেশি, বিদেশি, নাকি আন্ডারগ্রাউন্ড?
এই কথিত নেটওয়ার্ক কি
• কোনও বিদেশি শক্তির ছায়া-অভিযান,
• দেশীয় কোনও রাজনৈতিক দলের ভেতরের বা পাশের গোপন ইউনিট,
• নাকি স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনও আন্ডারগ্রাউন্ড গ্রুপ?
নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছাড়া নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না; তবু সম্ভাব্য সব উৎসই তদন্তের আওতায় আনা প্রয়োজন।
৬) রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার ওপর অভিঘাত
যে শক্তিই হোক, এমন গোপন নেটওয়ার্কের উপস্থিতি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য অশনিসংকেত। এটি জনআস্থা ক্ষয় করে, নিরাপত্তা-ব্যবস্থা দুর্বল করে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করে। ফলে স্বচ্ছ তদন্ত, তথ্যপ্রকাশ ও দায়বদ্ধতা অপরিহার্য।
৭) রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: সম্ভাব্য দৃশ্যপট
যদি কোনও ক্ষমতাসীন দল—উদাহরণস্বরূপ আওয়ামী লীগ—ডিপ স্টেট-সম্পৃক্ততার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পায়, অনেকেই মনে করেন তারা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। গণতান্ত্রিক ও আইনানুগ কাঠামো বজায় রেখে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত; শক্তি-প্রয়োগের সিদ্ধান্তও যেন আইনের শাসন, প্রমাণ এবং প্রোপোরশনালিটির নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে—এটাই জাতীয় স্বার্থ ও স্থিতিশীলতার পক্ষে সর্বোত্তম।
৮) করণীয়: স্বচ্ছতা, আইন, ও দায়বদ্ধতা
• স্বাধীন তদন্ত: সহিংসতার প্রতিটি ঘটনায় ফোরেনসিক-সহ প্রমাণভিত্তিক অনুসন্ধান।
• তথ্যপ্রকাশ: জনগণের কাছে নিয়মিত ব্রিফিং, গুজব-নিরসনে প্রমাণসহ ব্যাখ্যা।
• রাজনৈতিক সংযম: প্রতিশোধের ভাষার বদলে আইনের ভাষা।
• প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়: নিরাপত্তা, বিচার, ও মানবাধিকার সংস্থার ভূমিকা স্পষ্ট করা।
• জনসম্পৃক্ততা: সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার সঙ্গে দায়িত্বশীল সংলাপ।
৯) উপসংহার
থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ও ডিপ স্টেট—দুটি ধারণাই নীতি ও ক্ষমতার গতিবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু প্রকৃতি ও পদ্ধতিতে একেবারেই ভিন্ন। জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ডিপ স্টেট’ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার উত্তর শুধু কঠোর ভাষায় নয়, স্বচ্ছ তদন্ত, আইনানুগ প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা দিয়েই খুঁজতে হবে। তবেই রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, নাগরিক নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক আস্থা একসাথে রক্ষা পাবে।
©somewhere in net ltd.