নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেড এন্‌ভ্যলোপ ( টিভি নাটক )

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৩২

পরিচালনা : সকাল আহমেদ



( নিপা ও কামাল কাঠমান্ডুর ফাইফ-স্টার হোটেল কাউন্টারে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাগেজ নিয়ে লিফটের দিকে পা বাড়ায়। নিপা ও কামাল দু’মাস হয় ঢাকার একটা প্রাইভেট কোম্পানী ‘চারবিন্দু লিমিটেডে’ জয়েন করেছে। এখন পর্যন্ত চারবিন্দুর সবার সাথে ঠিকমত পরিচয়ও হয়নি, এর মাঝেই তাদেরকে একটা গুরুত্বপূর্ণ এসাইনমেন্ট দিয়ে নেপাল পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের চারবিন্দু লিমিটেড নেপালের হিমা রিসোর্ট নামে একটা প্রতিষ্ঠানের সাথে জয়েন্টভেঞ্চারে হিমালয়ের পদদেশে ভূপৃষ্ঠ হতে তিন হাজার ফুট উপরে একটা হোটেল বানাবে, মিলিয়ন ডলারের প্রযেক্ট। আগামী সাপ্তাহে চারবিন্দু লিমিটেডের এমডি মিস্টার সাজ্জাদ করিম ও হিমা রিসোর্টের সিইও মিস্টার গনেস কৌরালার মাঝে এ বিষয়ে একটা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এ চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানের এ্যাডভান্স টিম হিসাবে নিপা ও কামালকে নেপাল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো নিপা ও কামাল এখনো চারবিন্দুর এমডি মিস্টার সাজ্জাদ করিমকে দেখেনি, তবে শুনেছে তিনি নাকি অত্যন্ত কড়া ধাঁচের মানুষ, পান থেকে চুন খসার জো নাই। তাই নিপা ও কামাল কিছুটা চিন্তিত ও শঙ্কিত। তাই ঢাকা ধানমন্ডির তরুণ ব্যবসায়ী তাপস লিফ্ট থেকে বেরিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে যখন নিপার পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। তখন নিপা তাপসকে কেউ কাউকে খেয়াল করে না, অন্যদিকে তাপস মোবাইলে কথা বলায় এতোই মগ্ন ছিল যে, সেও নিপাকে খেয়াল করে না। চারতলায় পাশাপাশি নিপা ও কামালের রুম দু’টা। হোটেল বয় তাদের লাগেজ নিয়ে যার যার রুমে পৌঁছে দেয়। রুমে ঢোকার মুহূর্তে নিপা কামালকে ডাকে )

নিপা ঃ কামাল সাহেব, ফ্রেস হয়ে আমার রুমেএকবার আসুন প্লিজ।

কামাল ঃ জ্বী মেডাম, আসছি। ( দু’জন যে যার রুমে ঢোকে যায়। )





( তাপস কাঠমান্ডুর অফিস পাড়ার কোন এক অফিস থেকে বেরিয়ে ব্যস্ত রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলে। তারপর একদিকে দৃঢ় পা বাড়ায়। তার মাঝে ব্যস্ততার ছাপ। )





( নিপা ফ্রেস হয়ে তার হোটেল রুম থেকে স্মার্ট ফোনে ঢাকায় তার বস তরফদার স্যারকে ফোন দিয়ে তাদের পৌঁছার খবর জানায়। )

নিপা ঃ জ্বী স্যার, মাত্র পৌঁছালাম স্যার, না স্যার ( এমন সময় নিপার দরজায় টোকা পড়ে। নিপা মোবাইলে কথা বলতে বলতে দরজা খুলে। কামাল রুমে ঢোকে। নিপা ইশারায় কামালকে বসতে বলে কথা বলতে থাকে। কামাল বসে) হ্যাঁ স্যার, ওকে স্যার, সিওর স্যার, সালামুলাইকুম স্যার। ( নিপা মোবাইলের লাইন কাটে, তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ভেসে ওঠে। )

কামাল ঃ কে মেডাম, তরফদার স্যার ?

নিপা ঃ হ্যাঁ।

কামাল ঃ কী বললেন ?

নিপা ঃ কেয়ারফুল থাকতে বললেন, সব কিছু যেন সুন্দর হয়, না হলে ...

কামাল ঃ না হলে ?

নিপা ঃ আপনি কি আমাদের চারবিন্দুর এমডি সাজ্জাদ করিম স্যারকে দেখেছেন ?

কামাল ঃ দেখব কিভাবে, এমডি স্যারতো হাতির পাঁচ পা। ( নিপা ভ্রু কুঁচকে তাকায় ) সরি মেডাম, আসলে আমি বলতে চেয়েছি উনাকেতো কখনো দেখাই যায় না, মাসের আটাস দিন থাকেন বিদেশে, যে দু’দিন দেশে থাকেন, সে দু’দিন ভিভিআইপিদের সাথে মিটিং করেই বেড়ান। আফিসে আসেন দু’তিস মাসে এক আধবার, যে দিন আসেন সে দিন অফিসের চেহারাই পাল্টে যায়। শুনেছি তিন মাস আগে শেষ যে দিন এসেছিলেন, সে দিন তিনজনকে সাস্‌পেন করেছেন।

নিপা ঃ হ্যাঁ এবং তাদের সাস্‌পেনশন লেটারটা দেয়া হয়েছিল লালখামে, রেড এনভ্যলোপে ( কামাল মাথা চুলকায়, তার চোখে মুখে উৎকণ্ঠা ফুটে উঠে। )

কামাল ঃ তাই নাকি ! আচ্ছা আমাদেরও লালখাম দেয়া হবে বলেছে ?

নিপা ঃ না, তবে ভুল হলে ভিন্ন কথা। তাই, এমডি স্যার নেপাল আসার আগেই আমাদের মিটিংয়ের সব ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে, কোথায়ও যেন কোন মিস্‌টেক না হয়।

কামাল ঃ মিস্‌টেক! মিস্‌টেকের বাপও হবে না।

নিপা ঃ ঠিক আছে চলেন এবার হিমা রিসোর্টের অফিস থেকে ঘুরে আসি।

কামাল ঃ জি, চলেন মেডাম। ( নিপা ও কামাল পা বাড়ায়, হঠাৎ কামাল থমকে দাঁড়ায়। ) কিন্তু আমার মনে হয় কী মেডাম, তরফদার স্যার এ্যাডভান্স টিম হিসাবে ইচ্ছে করে আমাদেরকে নেপাল পাঠিয়েছে ?

নিপা ঃ কেন ?

কামাল ঃ কেন পরে বলছি, আগে আমার কথাটা খেয়াল করুন, আমরা দু’জন মাত্র চারবিন্দুতে জয়েন করেছি, আমার কেউ এখন পর্যন্ত এমডি সাজ্জাদ করিম স্যারকে দেখিনি, এমডি স্যার দূরে থাক অফিসের সবার সাথে এখনও ঠিক মত পরিচয়ও হয় নি, এমন অবস্থায় আমাদেরকে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিংয়ের এ্যাডভান্স টিম হিসাবে পাঠাবে ? হিমা রিসোর্টের সাথে চারবিন্দু এতো বড় একটা এগ্রিমেন্ট হবে, এমন কাউকে কি পাঠানো উচিত ছিল না, যে সাজ্জাদ করিম স্যারকে ভালভাবে জানে, বুঝে ?

নিপা ঃ এমডি স্যারকে সবচেয়ে ভাল জানতেন ও বুঝতেন রাসেল মাহমুদ, তাকেও তিন মাস আগে সাস্‌পেন করা হয়েছে।

কামাল ঃ সেটাইতো বলছি মেডাম, এতো অভিজ্ঞ রাসেল মাহমুদকে লালখাম ধরিয়ে দিয়েছে, আমাদেরকে শ্রেফ ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিবে, ফুঁ, ফুঁ, ফুঁ (কামাল ফুঁ দিয়ে দেখায়।) মেডাম আমি নিশ্চিৎ, তরফদার স্যার ইচ্ছে করে আমাদের পাঠিয়েছে, আমাদের লালখাম ধরিয়ে দিয়ে তার লোক ঢুকাবে। সরাসরি ঢোকালে কথা হবে, তাই ঘুরিয়ে ঢোকাবে।

নিপা ঃ যদি তাই হয়, তাহলে তরফদার স্যারকে আমরা সেই সুযোগ দিব না।

কামাল ঃ সুযোগতো দিবই না কিন্তু মেডাম, আমি যদি কোন দিন অন্ধকার রাস্তায় তরফদার স্যারকে একা পাই - শোয়ায়ে ফেলাবো।

নিপা ঃ কি ?

কামাল ঃ স-স-সরি মেডাম।

নিপা ঃ আপনি বেশি কথা বলেন বুঝেছেন, একটু কম বলবেন ( কামালের কণ্ঠ নকল করে ) শোয়ায়ে ফেলবো ! ( নিপা কামাল সাহেবকে বকতে বকতে বেরিয়ে যায়। কামাল পেছন পেছন যায়। )





( নিপা ও কামাল হোটেলের করিডোর ধরে হাঁটছে। কামাল এখনও বিষয়টা নিপাকে বোঝাতে চেষ্টা করছে। নিপার হাতে তার স্মার্ট ফোন, যেটায় সে নেট ইউজ করে। তাপস নিপার পাশ দিয়ে হেঁটে আসছে।)

কামাল ঃ না মেডাম আপনি ব্যাপারটা বুঝছেন না।

নিপা ঃ আপনাকে বলেছি না, কথা কম বলতে ? ( নিপা কামালের দিকে তাকিয়ে পা বাড়ায়, সাথে সাথে সে তাপসের উপর পড়ে। তাপস নিপাকে ধরে। কিন্তু নিপার হাত থেকে স্মার্ট ফোনটা পড়ে যায় )

কামাল ঃ সরি, সরি, আ’ম এক্সট্রিমলী সরি । ( তাপস ফোনটা তুলে নিপার হাতে দেয়। )

নিপা ঃ ইটস ওকে ( নিপা হাতে নিয়ে দেখে ফোনটা অফ হয়ে গেছে, সে ওপেন করতে চায়, ওপেন হয় না।)

কামাল ঃ কি-রে ভাই ট্রাকটারের মত চলেন, ঘটনা কী ?

তাপস ঃ আপনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ?

কামাল ঃ হ্যাঁ, তো ?

নিপা ঃ না, কাঠমান্ডু আসার পর দু’দিনে এ প্রথম বাংলা বললামতো। ( সাথে সাথে কামাল লজ্জিত হয়, সে বুঝতে পারে তার ইংলিস বলা উচিৎ ছিল, কারণ সে ঢাকা না নেপাল আছে। কিন্তু ফোন ওপেন হচ্ছে না দেখে ততক্ষণে নিপা তাপসের উপর রেগে যায়, সে ধমকে উঠে । )

নিপা ঃ আপনি এটা কী করলেন ? আমার ফোন ওপেন হচ্ছে না ! আপনি দেখে চলতে পারেন না ? আশ্চর্য ! এটা কী করলেন ? এটা দিয়ে আমি সর্বক্ষণ ঢাকার সাথে যোগাযোগ করি আর আপনি এটাই নষ্ট করে দিলেন ? এখন কী হবে ? কী করলেন এটা ?

তাপস ঃ দেখি, প্লিজ .. ( তাপস হাত বাড়ায়, নিপা ফোনটা তাপসের হাতে দেয়। )

নিপা ঃ দেথুন, আপনার কৃর্তী দেখুন। ( তাপস ফোনটা একটু দেখে পেছনের ঢাকনা খুলে ব্যাটারী খুলে আবার লাগিয়ে ওপেন করে, সাথে সাথে ওপেন হয়ে যায়। তাপস ফোনটা নিপাকে ফিরিয়ে দেয়। )

তাপস ঃ নিন, ব্যাটারী ল্যুজ হয়ে গিয়েছিল। ( নিপা ফোন হাতে নিয়ে অবাক হয়ে যায়। তাপস মুঁচকি হেসে বলে। ) আরেকটি কথা, আমি না, আপনিই কিন্তু আমার উপর পড়েছিলেন। ( এবার নিপা থমকে তাপসের দিকে তাকায়। তাপস হেসে চলে যায়। এতক্ষণে নিপা তাপসকে ভাল ভাবে খেয়াল করে, তাপসের স্মার্টনেস, কথা বলা, পোশাক, হাঁটাচলা সবই নিপার কাছে অন্য রকম লাগে। সে অবাক হয়ে তাপসের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তুতাপসকে কামালের ভাল লাগে না, তার কেন যেন সন্দেহ হয়। )

কামাল ঃ মেডাম আমার মনে হয় বেটা মোবাইলের দোকানে কাজ করে, কিভাবে ফট্টর করে ঠিক করে ফেললো !

নিপা ঃ মোবাইলে দোকানে কাজ করে নেপাল বেড়াতে এসেছে, আবার এই হোটেলে উঠেছে ?

কামাল ঃ তা হলে বেটা নিশ্চয় মোবাইল চোরের সর্দার।

নিপা ঃ কী ?

কামাল ঃ মেডাম আপনি জানেন না, প্রতিদিন বাংলাদেশে কমবেশি দশ হাজার মোবাইল চুরি হয়। দুই হাজার করে দাম হলেও ( একটু হিসাবে করে ) দুই কোটি টাকার মামলা।

নিপা ঃ আপনাকে না কথা কম বলতে বলেছি ? আজব ! ( নিপা বিরক্ত মুখে হেঁটে চলে যায়। কামাল কথা বলতেই থাকে )

কামাল ঃ না মেডাম, এক মাসের কামাই দিয়েই এমন হোটেল .... ( হঠাৎ কামাল দেখে নিপা চলে যাচ্ছে। ) মেডাম, মেডাম ( কামাল নিপার পিছু নেয়। )





( নিপা ও কামাল হোটেল থেকে বেরিয়ে আসে। হেমা রিসোর্টে যাওয়ার জন্য একটা টেক্সি ঠিক করে কামাল পেছনের দরজা মেলে ধরে, নিপা উঠে বসে। কামাল দরজা লাগিয়ে ঘুরে অন্যপাশ দিয়ে টেক্সিতে উঠে। টেক্সি ছেড়ে দেয়।

এদিকে তাপস হোটেলের লবিতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। এমন সময় তার মোবাইল বেজে ওঠে। সে মোবাইলে ধরে কথা বলে দ্রুত ল্যাপটপ অফ করে তার রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসে।

ততক্ষণে নিপা ও কামাল হিমা রিসোর্ট থেকে মিটিং সেরে চলে আসে। তার ট্যাক্সিটা হোটেলের কার পার্কিংয়ে এসে থামে। ঠিক তখন তাপস মোবাইলে কথা বলতে বলতে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। নিপা ও কামাল টেক্সি থেকে নামে। কামাল টেক্সি ভাড়া দেয়। )

নিপা ঃ কামাল সাহেব আপনি রুমে যান, আমি আসছি।

কামাল ঃ মেডাম আপনি কোথায়ও যাচ্ছেন ? আমি আসব ?

নিপা ঃ থ্যাঙ্কিউ, না, আসতে হবে না।

কামাল ঃ মেডাম লাঞ্চ করবেন না ?

নিপা ঃ আহ-হ ! আপনি বেশি কথা বলেন।

কামাল ঃ সরি মেডাম। ( নিপা দ্রুত রাস্তায় এসে এপাশ ওপাশ তাপসকে খুঁজে। দেখে তাপস এখনো মোবাইলে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। নিপা ভাবে তাপস যেহেতু ট্যাক্সি নেয় নি, হাঁটছে, তাহলে কাছেই কোথায়ও যাবে, সে তাপসের পিছু নেয়। )





( তাপস কাঠমান্ডুর রাস্তায় হাঁটছে। নিপা তাপসের পিছু পিছু হাঁটছে। মাঝে মাঝে নিপা তাপসকে হারিয়ে ফেলে। কিন্তু পরক্ষণেই সে দেখে তাপস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দোকানের ডিসপ্লে দেখছে অথবা কিছুর দরদাম করছে। আবার যখনই সে তাপসের কাছাকাছি চলে আসে অমনি তাপস হাঁটতে শুরু করে, আর ধরতে পারে না। নিপার জেদ চেপে যায়, আজ সে তাপসকে ধারবেই, সে দ্রুত পা চালায়। আর তখনই সে তাপসকে হারিয়ে ফেলে। সে দ্রুত এগিয়ে যায়, না তাপস নেই। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । হঠাৎ তার চোখ যায় পাশের একটা চার দোকানে, দেখে সেখানে তাপস চায়ের কাপ হাতে বসে নিপাকে দেখছে। দু’জন দু’জনের দিকে কিছুক্ষণ নীরবে তাকিয়ে থাকে। এক সময় তাপস নীরবতা ভাঙে।)

তাপস ঃ আপনার ফোন ঠিক আছে ?

নিপা ঃ হ্যাঁ। ( বলে নিপা এগিয়ে এসে তাপসের কাছে দাঁড়ায় ) সরি, তখন আমার মিস্‌টেক হয়ে গিয়েছিল।

তাপস ঃ সরি বলতে হবে না, আপনার মিস্‌টেকের দায় শোধ হয়ে গেছে।

নিপা ঃ মিস্‌টেকের দায় ? ভালই বললেন দায়, শাস্তি না। তা কিভাবে শোধ হলো ?

তাপস ঃ আমার পেছন পেছন এতোটা পথ হেঁটে।

নিপা ঃ সরি ?

তাপস ঃ আপনি যে আমার পিছু নিয়েছে সেটা আমি প্রথম থেকে জানতাম, আর পিছু নিয়েছেন বলেই অযথা এতোটা পথ হেঁটেছি। ( নিপা হাঁ হয়ে তাপসকে দেখে আর ভাবে লোকটা কি পাগল ? )

নিপা ঃ আমার মিস্‌টেকের দায় শোধ করাতে গিয়ে আপনাকেও কষ্ট করে হাঁটতে হলো।

তাপস ঃ দৌড় প্রতিযোগীতায় অন্যকে হারাতে হলে আপনাকেও দৌড়াতে হবে।

নিপা ঃ বুঝলাম, কিন্তু আমার মিস্‌টেকটা কি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতেতো দেখা যেত না ?

তাপস ঃ হয়তো যেত, হয়তো না। তবে জগতে কোন কিছুই কিন্তু এমনি এমনি যায় না, নাথিং গোজ আনপেইড। ( নিপা কিছুক্ষণ তাপসকে দেখে। তার মনে হয় এ মানুষটা আর দশটা মানুষের মত না অন্যরকম, সমপূর্ণ অন্য রকম। সে হেসে হাত বাড়ায়। )

নিপা ঃ আমি নিপা, নিপা নাসরিন। ( তাপসও হেসে হাত মিলায় )

তাপস ঃ আমি তাপস, তাপস ফ্রম ঢাকা ধানমন্ডি। ( তারপর দু’জন চা খেতে খেতে গল্প করে। গল্পের ফাঁকে তাপস প্রশ্ন করে) আপনরা কি কাপল ? ( নিপা হাসে। )

নিপা ঃ আরে না, কামাল সাহেব আমার কলিগ, জুনিয়র কলিগ। আমরা ঢাকার চারবিন্দু লিমিটেডে একসাথে কাজ করি, আমাদের কোম্পানী নেপালের হিমা রিসোর্টের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে হিমালয়ের পাদদেশে একটা হোটেল করতে যাচ্ছে। সেই উদ্দেশ্যে চারবিন্দু ও হেমা রিসোর্টের মাঝে আগামী সাপ্তাহে একটা এগ্রিমেন্ট হবে। আমরা চারবিন্দুর এ্যাডভান্স টিম হিসাবে এসেছি ।

তাপস ঃ হিমালয়ের পাদদেশ হোটেল ! অনেক বড় প্রজেক্ট ?

নিপা ঃ হ্যাঁ, মিলিয়ন ডলার। আমাদের এমডি সাজ্জাদ করিম স্যার আসবেন মিটিংয়ে। তাই কিছুটা এক্সাইটেড, কারণ এবারই প্রথম এমডি স্যারকে দেখব।

তাপস ঃ তাই নাকি ?

নিপা ঃ হ্যাঁ । শুনেছি তিনি নাকি অন্য রকম মানুষ।

তাপস ঃ কী রকম ?

নিপা ঃ রোবটের মত, কাজ ছাড়া আর কিছু বোঝেন না। জানেন, মানুষটার জন্য আমার মায়াই হয়।

তাপস ঃ কেন ?

নিপা ঃ কারণ, জীবনের মানেটাই উনি বুঝলেন না। জীবন মানে শুধু কাজ, কাজ আর কাজ না, জীবন মানে শুধুই সাকসেস্, সাকসেস্ আর সাকসেস্ই না। জীবনে আরো অনেক কিছু আছে।

তাপস ঃ যেমন ?

নিপা ঃ যেমন, যেমন - না পাওয়ার বেদনা আছে, না পাওয়ার মাঝে পাওয়ার অসীম আনন্দও আছে। সফলতার কামনায় মার দোয়া আছে, ছোট ভাইবোনদের বায়না আছে অথবা কোন একজনের জন্য অপেক্ষা আছে। ( তাপস মাথা ঝাঁকিয়ে নিপার কথা সমর্থন করে )

তাপস ঃ হু। এবার নিশ্চয় দেখা হবে, তখন সুযোগ বুঝে এসব বলবেন ।

নিপা ঃ মাথা খারাপ !

তাপস ঃ কেন ?

নিপা ঃ তাহলে সাথে, সাথে লালখাম।

তাপস ঃ মানে ?

নিপা ঃ মানে আপনার বুঝতে হবে না। চলেন উঠি, হোটেলে যেতে হবে। ( নিপা উঠে দাঁড়ায়। তাপস কিছুক্ষণ নিপাকে দেখে উঠে চায়ের বিল দেয়)





( রাতে তাপস হোটেল লবিতে বসে কফি খেতে খেতে ল্যাপটপে কাজ করছে। কামাল একটা ফাইল হাতে তার রুমে যাচ্ছিল, তাপসকে দেখে এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়িয়ে ভ্রূ কুঁচকে তাপসের কাজ দেখছে। তাপস চোখ তোলে তাকায়। )

তাপস ঃ এক্সিউজ মি।

কামাল ঃ না, কিছু না। ( কামাল মাথা এপাশ ওপাশ করে ঘুরে তাপসের অন্য পাশে এসে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে। )

তাপস ঃ প্লিজ, বসুন।

কামাল ঃ না। ( কামাল এবার দ্রুত মাথা এপাশ ওপাশ করে ঘুরে আগের জায়গায় এসে দাঁড়ায়। এবার তাপস ল্যাপটপের মনিটর নামিয়ে কামালের দিকে তাকায় )

তাপস ঃ কামাল সাহেব, ঘটনাটা কী বলবেন ? ( কামাল চমকে উঠে। সে বুঝতে পারে না তাপস তার নাম জানল কিভাবে ? সে চারদিকে তাকিয়ে চট করে তাপসের সামনের চেয়ারে বসে ফিস ফিস করে বলে )

কামাল ঃ কবে থেকে শুরু করছেন ?

তাপস ঃ কী ?

কামাল ঃ এই যে মোবাইলের কারবার ? ( তাপস ভ্রু কুঁচকে তাকায় ) আচ্ছা আপনি আমার নাম কি আগে থেকেই জানতেন ? ( এবার তাপস মিটি মিটি হাসে ) আচ্ছা আপনি কি মোবাইলের চার্যারও ঠিক করতে পারেন ? ( তাপস হেসে ল্যাপটপ নিয়ে উঠে চলে আসে। কামাল কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। ) শালার বেটা বহুৎ টেন্ডন ! দাঁড়াও হাতেনাতে ধরে নেই, তখন বুঝবা - ফট্টর করে মোবাইল ঠিক করা, টের পাবা। ( তাপস তার রুমে ফিরে আসার পথে করিডোরে নিপার সাথে দেখা। )

তাপস ঃ গুড ইভিনিং।

নিপা ঃ গুড ইভিনিং।

তাপস ঃ মিটিংয়ের প্রস্তুকি কত দূর ?

নিপা ঃ মোটামুটি, কামাল সাহেব সব করেছেন, উনি বিবলিওগ্রাফি এক্সপার্ট ।

তাপস ঃ তাই নাকি ?

নিপা ঃ হ্যাঁ, ভদ্রলোক কথা একটু বেশি বলেন, বাট হি ইজ এ জিনিয়াস।

তাপস ঃ আই সি, আচ্ছা আপনাদের এমডি কি গলফ লাইক করেন ?

নিপা ঃ ঠিক জানি না, আসলে উনার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না, কেন বলুনতো ?

তাপস ঃ না, গলফ লাইক করলে গলফ কোর্স আছে এমন হোটেলে উনার রুম বুকিং দেয়া উচিত।

নিপা ঃ তাইতো ! ( নিপা চমৎকৃত হয় ) ভাল বলেছেন, দাঁড়ান বিষয়টা দেখছি। ( নিপা দু’পা হেঁটে ফিরে তাকায় ) থ্যাঙ্কস্, মেনি মেনি থ্যাঙ্কস্ ।

তাপস ঃ ওয়েলকাম মেম, এনি টাইম, এনি প্লেস ইউ আর ওয়েলকাম। ( এ কথা বলে তাপস মাথা নোয়ায়ে নিপাকে বাউ করে ঘুরে হাঁটতে থাকে। নিপা সম্মোহিতর মত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে তাপসের চলে যাওয়া দেখে। করিডোরের মাথায় গিয়ে তাপস ফিরে তকিয়ে মিষ্টি করে হাসে। দু’জনের হাসি মুখ এক হয়। )





( সে ডিনারের টেবিলে বসে নিপা কামালকে প্রশ্ন করে )

নিপা ঃ কামাল সাহেব এমডি স্যারের রুম বুকিং দিয়েছেন ?

কামাল ঃ ( কামাল সাহেব মুখে খাবার নিয়ে উত্তর দেয় ) জ্বী মেডাম, এই হোটেলের স্যুইট বুকিং দিয়েছি।

নিপা ঃ ক্যানসেল করুন।

কামাল ঃ ক্যনসেল ! কেন, এমডি স্যার আসবেন না ?

নিসপা ঃ আসবেন, তবে রুম গলফ কোর্স আছে এমন হোটেলে উনার রুম বুকিং দিন।

কামাল ঃ গলফ কোর্স ! ভাল আইডিয়া মেডাম।

নিপা ঃ হ্যাঁ, আইডিয়াটা তাপসের।

কামাল ঃ তাপস, ঐ মোবাইল মিস্ত্রি ? মেডাম, মিস্ত্রিকে আমার সন্দেহ হয়। ( নিপা কামালের কথায় উৎসাহ না দেখিয়ে কাজের কথা বলে )

নিপা ঃ বাকি কাজের কী অবস্থা ?

কামাল ঃ মোটামুটি গুছিয়ে এনেছি মেডাম। ভেন্যু সিলেকশন হিমা রিসোর্ট আমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। ভেন্যুটা এমডি স্যারের হোটেলেই ঠিক করি, কী বলেন ?

নিপা ঃ করেন, আচ্ছা ভেন্যু আমরা সিলেক্ট করলে, খাবার মেন্যুওতো আমাদের সিলেক্ট করতে হবে।

কামাল ঃ জ্বী মেডাম।

নিপা ঃ সে ক্ষেত্রে চারবিন্দু ও হিমা রিসোর্টের কেউ ভেজিটেরিয়ান আছেন কী না জেনে নিবেন।

কামাল ঃ হিমা রিসোর্টেরটা জেনেছি, মিটিংয়ে তাদের সিইও গনেশ কৈরালার সাথে আরো দু’জন থাকবেন এবং তারা তিনজনই ভেজিটেরিয়ান।

নিপা ঃ ভেরী গুড, চারবিন্দুর ক’জন ভেজিটেরিয়ান আছেন তা কাল সকালে জানতে পারব, আপনি সে মত মেন্যু ঠিক করে ফেলবেন।

কামাল ঃ ঠিক আছে মেডাম। ও, আরেকটা বিষয় মেডাম ?

নিপা ঃ কী ?

কামাল ঃ চারবিন্দুর আর যারা আসবেন, তাদের সাথে ফ্যামিলী আসবে কী না তা জানলে রুম বুকিং দিতে সুবিধা হতো।

নিপা ঃ ঠিক আছে কাল জেনে জানাব। আর শোনেন আপনি খাবার মুখে নিয়ে কথা বলবেন না।

কামাল ঃ ( খাবার মুখেই বলে ) সরি মেডাম।





( পরদিন সকালে হোটেল গার্ডেনে কাঁচা রোদে দাঁড়িয়ে নিপা মোবাইলে কামলের সাথে কথা বলে। )

নিপা ঃ কামাল সাহেব আপনি কোথায় ? জ্বী আসুন প্লিজ, আমি হোটেলের গার্ডেনে আসি, জি আসুন, আছি, চলে আসুন। ( নিপা মোবাইলের লাইন কাটে সাথে সাথে তার মোবাইল বেজে উঠে। নিপা মোবাইল মনিটরে দেখে ঢাকা অফিস থেকে তরফদার স্যাার কল কেেছ। নিপা কল ধরে কথা বলে। ) গুড মর্নিং স্যার। জি স্যার আমি রিং দিয়েছিলাম, আমার কিছু কোয়ারি ছিল স্যার, আমি মেইল করে দিয়েছি, জি স্যার ? ( এমন সময় কামাল এসে নিপার পাশে দাঁড়ায়। নিপার কণ্ঠে উত্তেজনার ছোঁয়া লাগে) কী বলছেন স্যার ? সিওর স্যার, অবশ্যই স্যার, সতর্ক থাকব স্যার। জি স্যার, কোন চিন্তা করবেন না স্যার, ওকে স্যার, বাই স্যার। ( নিপা লাইন কেটে চিন্তিত মুখে কামালের দিকে তাকায় )

কামাল ঃ কোন ব্যাড নিউজ মেডাম ?

নিপা ঃ আরো দু’টা কোম্পানী, একটা বাংলাদেশের আরেকটা ইন্ডিয়ান কোম্পানী হিমা রিসোর্টের সাথে এই এগ্রিমেন্ট করতে চাচ্ছে। তারা উঠে পড়ে লেগেছে আমাদের চারবিন্দু যেন কোন ভাবে হিমা রিসোর্টে সাথে এগ্রিমেন্টটা করতে না পারে।

কামাল ঃ করতে পারব না মানে, আসুক না একবারে তলা-মলা .... ( কামাল দা কোপ দেয়ার ভঙ্গী করে। নিপা বিরক্ত চোখে তাকায় ) সরি মেডাম।

নিপা ঃ আমাদেরকে সতর্ক থাকতে বলেছে। সতর্ক থাকব, যাতেকোন মতে কোন তথ্য যেন লিক না হয়।

কামাল ঃ নিশ্চিৎ থাকুন মেডাম কিছুই লিক হবে না, সব ছিঁদ্র ছিপি দিয়ে বন্ধ করে দিব। ( কামাল ছিপি লাগাবার ভঙ্গী করে দেখায় )

নিপা ঃ আপনি গলফ কোর্সের হোটেল পেয়েছেন ?

কামাল ঃ জি মেডাম, বুকিংও দিয়ে এসে... ( কামাল হঠাৎ থমকে যায়। ) মেডাম মোবাইল মিস্ত্রি !

নিপা ঃ সরি ?

কামাল ঃ মোবাইল মিস্ত্রি আমাদের এগেনেস্ট পার্টির লোক, আমি সিওর ।

নিপা ঃ কী বলছেন ?

কামাল ঃ মেডাম প্রথম থেকে তাকে আমার সন্দেহ ছিল, এখন আমি সিওর। এমডি স্যারের গলফ খেলার কথাটা সেই আমাদের মাথায় ঢুকিয়েছে, কেন ? কারণ সে চাচ্ছে এমন কোন হোটেলে এমডি স্যার থাকুক, যেখানে গলফ কোর্স আছে। এতে তার কোন উদ্দেশ্য আছে মেডাম, অবশ্যই আছে।

নিপা ঃ সে সৎ উদ্দেশ্যেওতো পরামর্শ দিতে পারে ?

কামাল ঃ পারে কিন্তু যদি অসৎ উদ্দেশ্যে হয়, তখন ? ( নিপা ভাবনায় পড়ে যায়। ) মেডাম এমডি স্যারের হোটেল বুকিং ক্যানসেল করে দেই ? ( নিপা চিন্তিত মুখে দূরে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে ) মেডাম ?

নিপা ঃ ক্যানসেল করুন।

কামাল ঃ থ্যাঙ্কিউ মেডাম। ( কামাল খুশী মনে তাপসকে বকতে বকতে চলে যায়। ) মোবাইল মিস্ত্রি এবার তোমাকে ধরেছি, ফট্টর করে মোবাইল ঠিক করো ? দাঁড়াও... ( নিপা বিষণ্ন চোখে দূরে তাকিয়ে থাকে। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল খেয়াল নেই একসময় পায়ের শব্দে ফিরে তাকায়, দেখে তাপস পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নিপার বিষণ্ন মুখ দেখে তাপস প্রশ্ন করে।)

তাপস ঃ কী চাঁদের হাটে মেঘের ছায়া ? ( নিপা নীরবে তাপসকে দেখে, তাপসের মুখে কিছু,খোঁজে। ) বিষয় কী মিটিং ক্যানসেল না কি ? ( নিপা বিষণ্ন হাসি দিয়ে দূরে সরে তাপসের প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে। )

নিপা ঃ তাপস, আপনি কী করেন ?

তাপস ঃ মোবাইল ঠিক করি।

নিপা ঃ প্লিজ... ?

তাপস ঃ চীন থেকে মোবাইল, মোবাইল এক্সেসসরিজ ইমপোর্ট করি।

নিপা ঃ কাঠমান্ডু আসার কারণ কী, বেড়ানো ?

তাপস ঃ ( হেসে ) না, প্রেম করতে এসেছি।

নিপা ঃ প্রেম ?

তাপস ঃ হু, এক নেপালী কন্যার সাথে। আমি আবার কন্যা না দেখে প্রেমে করি না, তাই কন্যা দেখতে এলাম।

নিপা ঃ দেখেছেন ?

তাপস ঃ না, আপনাকে নিয়ে দেখতে যাব। ( নিপা আবার কিছুক্ষণ তাপসকে দেখে হেসে হোটেলের দিকে পা বাড়ায়, যেতে যেতে বলে )

নিপা ঃ আসি। ( তাপস নিপার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আপন মনে কথা বলে।)

তাপস ঃ তাপস, এ জীবনে কি কোন মেয়ে তোমাকে এভাবে একা ফেলে চলে গেছে ? যায় নি। কিন্তু আজ যে গেলো ? তবে কি এ নেপালী কন্যার কথায় সে জেলাস হয় নি ? যদি জেলাস না হয় তাহলে সে ফিরে তাকাবে, আর যদি হয় তাকাবে না, একবারের জন্যও না। ( আর ঠিক তখন নিপা ফিরে তাকায়। তাপস হাসে। নিপা হাসি উত্তরে না হেসে ঘুরে হোটেলে চলে যায় ) না, সেতো জেলাস না ! তাহলে ? তাহলে সে আমাকে এড়িয়ে গেল কেন ? ( তাপস চিন্তিত মনে বাইরে পা বাড়ায়।)



১০

( ঘন্টাখানেক পর তাপসকে দেখা যায় কাঠমান্ডুর বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে। একজন নেপালী দূর থেকে তার উপর নজর রাখে, একই সাথে চারপাশেও নজর রাখে, দেখে আর কেউ তাপসের উপর নজর রাখছে কি না ? তাপস মাঝে মাঝে কোথাও দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলে, আবার হাঁটে। )



১১

( পরদিন হোটেল লবিতে বসে নিপা ও কামাল তাদের কাজের পর্যালোচনা ও পরবর্তী ওয়ার্কপ্লান করছে )

নিপা ঃ কামাল সাহেব, এমডি স্যার মিটিংয়ের আগের দিন মানে, পরশু আসছেন।

কামাল ঃ আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ মেডাম, কাল আসলেও সমস্যা নেই।

নিপা ঃ ভেরী গুড।

কামাল ঃ মেডাম একটা কথা বলি ?

নিপা ঃ বলেন ।

কামাল ঃ মিটিংয়ের পরে কী হয় না হয় আবার কাল তেমন কাজও নেই, তাই বলছিলাম, কাল চলেন হিমালয়টা দেখে আসি।

নিপা ঃ ( একটু ভেবে ) চলেন ।

কামাল ঃ থ্যাঙ্কিউ মেডাম, সকাল সকাল রওয়ানা দিব। ( এমন সময় কামাল দেখে তাপস আসছে। তাপসকে দেখে কামাল দাঁত কিড়মিড় দেয় ) মেডাম শোয়ায়ে ফেলি ?

নিপা ঃ সরি ?

কামাল ঃ মোবাইল মিস্ত্রি মেডাম, শোয়ায়ে ফেলি ? ( নিপা এক নজর তাপসকে দেখে )

নিপা ঃ আপনি বেশি কথা বলেন।

কামাল ঃ সরি মেডাম।

নিপা ঃ শোয়ায়ে ফেলি ! আজব, আপনি যানতো, এখন যান।

কামাল ঃ যাচ্ছি মেডাম, তবে কোন সমস্যা হলে বলবেন, এসেই... ( নিপা বিরক্ত মুখে তাকায় ) সরি মেডাম। ( কামাল ফাইল নিয়ে চলে যায়। তাপস এসে হাসি মুখে সামনে দাঁড়ায়। )

তাপস ঃ বসা যাবে ?

নিপা ঃ সিওর, বসুন।

তাপস ঃ আপনাদের এমডি কবে আসছেন ?

নিপা ঃ এইতো.. ( হঠাৎ নিপা থেমে একটু ভাবে, তারপর হেসে মিথ্যা বলে ) আগামী সাপ্তাহে।

তাপস ঃ আপনাদের এমডি অনেক রাশভারি না কি ?

নিপা ঃ ঠিক জানি না, আসলে উনার সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি, যিনি জানতেন তিনমাস আগে তাকেই লালখাম দেয়া হয়েছে।

তাপস ঃ লালখাম মানে ? ( নিপা হাসে ) বলতে অসুবিধা থাকলে থাক, সেদিনও বললেন আজও বললেন কাকে যেন লালখাম দেয়া হয়েছে, তাই আর কী....

নিপা ঃ লালখাম মানে সাস্‌পেনশন লেটার।

তাপস ঃ বলেন কী ! কেন ?

নিপা ঃ কারণটা একদমই সিম্পল, বলার মত কিছু না, কিন্তু এই সিম্পল কারণের জন্য তিনজনকে সাস্‌পেন্শন করা হয়েছে। ( নিপা আপন মনে হাসে। ) আমাদের এমডি সাজ্জাদ করিম স্যার নিজেকে এমন ভাবে নিয়মের জালে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলেছেন যেন উনি রবিন্দ্রনাথের রক্তকরবির সেই রাজা। যে জানেনই না নিয়ম ভাঙার আনন্দটা কী ? তিনি বুঝেনই না যে নিয়ম ভাঙলে জাগতিক কোন ক্ষতি হয় না সে নিয়ম ভাঙা যায়।

তাপস ঃ কিন্তু এতে যে জীবনের ছন্দপতন হয়।

নিপা ঃ ছন্দপতনের মাঝেইই তো নতুন ছন্দের সৃষ্টি। (তাপস মাথা ঝাঁকিয়ে নিপার কথা সমর্থন করে)

তাপস ঃ ঠিক বলেছেন, বিটোফেন সুর ভেঙেছেন বলেই নতুন সুর সৃষ্টি করেছিলেন, হয়েছেন সুরস্রষ্টা।



১২

( সে রাতে কামাল তার বিছানায় শুয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। তার বিছানার পাশের টেবিলে দুটো ফাইল। অন্যদিকে তাপস রাতের পোশাক পরে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর ধরে হেঁটে কামালের রুমের দরজায় এসে টোকা দেয়। তাপসের পেছনে পেছন রাস্তার সেই নেপালী লোকটা এসে করিডোরের মাথায় থমকে দাঁড়ায়। দরজায় টোকার শব্দে কামাল চমকে ওঠে। )

কামাল ঃ কে ? কে ? আশ্চর্য কে ? ( কামাল বিরক্ত হয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে। তাপস রুমে ঢোকে। কামাল অবাক ) আ-আ-আপনি ?

তাপস ঃ আপনার চার্যার ঠিক করতে এলাম। ( কামাল হাঁ হয়ে থাকে। সে দ্রুত দরজায় উঁকি দিয়ে করিডোরে দু’পাশ দেখে। নেপালী লোকটা দ্রুত আড়ালে লুকায়। কামাল তাকে দেখতে পায় না, সে দ্রুত দরজা লাগিয়ে ঘুরে দেখে তাপস বিছানায় আসন ধরে বসে আছে। তাপস আবার প্রশ্ন করে ) কোথায় চার্যার দেন । ( কামাল ঘাবড়ে যায় )

কামাল ঃ ভাই, স-স-স-সত্য করে বলেনতো আপনি কি মোবাইল টানা পার্টির সর্দার ?

তাপস ঃ সর্দার না, তবে টানি ।

কামাল ঃ টা-টা-টানেন মানে ?

তাপস ঃ চীন থেকে টেনে বাংলাদেশে নেই, তবে পুরনো না নতুন মোবাইল টানি।

কামাল ঃ স-স-সর্বনাশ ! আপনি আমার রু-রু-রুমে আসছেন কেন ?

তাপস ঃ চার্যার ঠিক করতে, সে দিন না জিজ্ঞেস করলেন আমি চার্যার ঠিক করি কি না ?

কামাল ঃ ভাই আমার কাছে চার্যার নাই। ( তাপস বালিশে হেলান দিয়ে শোয়। )

তাপস ঃ চার্যার নেই ? অসুবিধা নেই, আসুন গল্প করি। ( বিষয়টা কামালের বিশ্বাস হয় না, সে মাথার চুল এলোমেলো করে। ) আপনার দেশের বাড়ি কোথায় ?

কামাল ঃ কোথায় ? ( কামাল একটু ভাবে ) ভা-ভা-ভাই ভুলে গেছি।

তাপস ঃ কি বলেন ভুলে গেছেন ?

কামাল ঃ জি ভাই, চোর ছিন্তাইকারীর সামনে পড়লে আমি স-স-সব ভুলে যাই। ( হঠাৎ কামাল টেবিলের উপর থেকে ফাইল নিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। )



১৩

( নিপা তার রুমে শুয়ে আছে। এমন সময় দরজায় কামাল দ্রুত টোকা দিতে থাকে। )

নিপা ঃ জাষ্ট এ মিনিট। ( নিপা উঠে দরজা খুলে। কামাল ফাইল হাতে চট করে রুমে ঢোকে। ) কী ব্যাপার কামাল সাহেব ?

কামাল ঃ সর্বনাশ মেডাম ।

নিপা ঃ কী ?

কামাল ঃ মোবাইল মিস্ত্রি আমার রুমে।

নিপা ঃ কি !

কামাল ঃ জি মেডাম, আমার রুমে শুয়ে আছে।

নিপা ঃ কেন, কী চায় ?

কামাল ঃ বলল চার্যার ঠিক করতে এসেছে কিন্তু আমার মনে হয় সে আসছে আমাদের মিটিংয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে, আমি ঘুমালেই ফাইলপত্র সব ঘাটবে।

নিপা ঃ কী বলেন ?

কামাল ঃ জি মেডাম, এ সব আপনার কাছে থাক, ( কামাল হাতের ফাইল রাখে ) আমি যাই। ( কামাল দরজার কাছে গিয়ে ফিরে দাঁড়ায়। ) মোডাম বেটাকে শোয়ায়ে ফেলি ?

নিপা ঃ শোয়াবেন মানে ! সে তো আপনার বিছায়ই শুয়ে আছে ?

কামাল ঃ না মেডাম, সেতো শুয়ে আছে, আমি শোয়ায়ে ফেলার কথা বলছি, শোয়ায়ে ( কামাল গলা চেঁপে ধরার ভঙ্গী করে দেখায়। )

নিপা ঃ খবরদার উল্টাপাল্টা কিছু করবেন না, যান, দেখেন সে কী করে ? যান।

কামাল ঃ জি মেডাম । ( কামাল দ্রুত বেরিয়ে যায়। )

নিপা ঃ আশ্চর্য উনি কেন কামাল সাহেবের রুমে আসবেন ?



১৪

( নিপার রুমে ফাইল রেখে এসে কামাল আস্তে আস্তে তার রুমে ঢোকে। তাপস তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। কামাল তাপসকে আস্তে করে ধাক্কা দেয়, তাপসের নাকের কাছে হাত নিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ বুঝতে চেষ্টা করে। তারপর চেয়ারে দু’পা তোলে বসে ভ্রূ কুঁচকে আপন মনে কথা বলে। )

কামাল ঃ ভান ধরে পড়ে আছো ? থাকো, আমিও সারা রাত ঘুমাবো না, দেখি তুমি কী করো ? ( অল্পক্ষণ পড়েই তাপসের ঘুম পায়, সে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে। এক সময় ঘুমে তার মাথা ঘুমে নুয়ে পড়ে। সে ধরফরিয়ে উঠে বসে আবার বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে। আবার তার মাথা নুয়ে পড়ে। সারা রাত সে এ-ই করে যায়। অন্যদিকে তাপস নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে সকালে ওঠে নিজের রুমে চলে যায়। )



১৫

( সকালের নাস্তা খেয়ে নিপা হোটেল গার্ডেনে বেড়াচ্ছে, তাপস বাইরে যাবার পথে দেখে এগিয়ে এসে শুভেচ্ছা জানায়।)

তাপস ঃ গুড মর্নিং।

নিপা ঃ গুড মর্নিং, কামাল সাহেব কোথায় ?

তাপস ঃ ঘুমাচ্ছেন, রাতে তার রুমে গল্প করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর উনি আমাকে ঘুমাতে দিয়ে সারারাত ঠায় বসে ছিলেন, এখন ঘুমাচ্ছেন। নাইস ম্যান।

নিপা ঃ ও।

তাপস ঃ যাবেন ?

নিপা ঃ কোথায় ?

তাপস ঃ আমার সেই নেপালী মেয়ে দেখতে ? ( নিপা একটু ভাবে মাথা ঝাঁকায় । দু’জনে পোখরা যায়, যেখান থেকে হিমালয় দেখা যায়। নিপা হিমালয়ের দিকে বিস্মতি চোখে তাকিয়ে থাকে। তার বিশ্বকাস হয় না এতো সুন্দর কিছু এ জগতে আছে ? তাপস মিটি মিটি হেসে প্রশ্ন করে। ) কেমন দেখলেন ?

নিপা ঃ ( চোখ না ফিরিয়েই বলে ) কী ?

তাপস ঃ আমার নেপালী কন্যা।

নিপা ঃ নেপালী কন্যা ! ( নিপা এবার ফিরে তাকায় ) ও, কোথায় ? ( নিপা চার দিকে খোঁজে )

তাপস ঃ ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে ( তাপস হিমালয় পর্বত দেখায় ) শুভ্র বসনা। ( নিপা আবার হিমালয়ের দিকে তাকায়, তারপর হাসে। ) কেমন লাগছে ?

নিপা ঃ উ-উ ( নিপা একটু ভাবে ) ভালই, শুধু কপালে একটা টিপ দিয়ে দিতে হবে। ( নিপা ও তাপস পরষ্পরের দিকে তাকায়, দু’জন দুজনের চোখে কিছু খোঁজে। এক সময় নিপা লাজুক চোখ নামিয়ে নেয়। তারপর দু’জনের সময় এতো দ্রুত কাটে, কখন যে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে টেরই পায় না। )



১৬

( এদিকে কামাল তার রুমে ঘুমিয়ে আছে । হঠাৎ রুমের ফানটা বেজে ওঠে। কামাল ধরফরিয়ে ওঠে হাই দিতে দিতে ফোন রিসিভ করে। কিন্তু অন্যপাশের কথা শোনে তার ঘুম পালায়, সে তোত্‌লাতে তোত্‌লাতে কথা বলে। )

কামাল ঃ জি স্যার, স-স-স্যার, না স্যার, ব-ব-ববলতে পারিছি না স্যার, দেখছি স্যার, ও-ও-ওকে স্যার, স্যার।



১৭

( বিকেলে তাপস ও নিপা হোটেলে ফিরে আসে। হোটেলের প্রবেশ পথে তাপস নিপাকে দাঁড় করিয়ে পকেট থেকে নিপার মোবাইল ফোন বের করে নিপাকে দেয়। )

তাপস ঃ আপনার মোবাইলটা প্লিজ।

নিপা ঃ আমার মোবাইল আপনার কাছে ! ( নিপা অবাক ) কিভাবে ?

তাপস ঃ ঘুরতে বের হবার সময়ই মোবাইলটা আমি নিয়ে অফ করে রেখে দিয়েছিলাম, যাতে কেউ আমার মেয়ে দেখায় ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে। ( নিপা হেসে মোবাইলটা নেয়। )

নিপা ঃ যদি আবারও মোবাইলটা অফ রেখে মেয়ে দেখতে যেতে চাই ?

তাপস ঃ ইউ আর মোষ্ট ওয়েলকাম। ( বলে তাপস হেঁটে মুঁচকি চলে যায়। নিপা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। তাপস একটু দূরে গিয়ে হাসি মুখে ফিরে তাকায়। দু’জনের চোখ কিছুক্ষণের জন্য এক হয়ে থাকে।)



১৮

( নিপা প্রফুল্ল মনে হেঁটে তার রুমে যাচ্ছে। কামাল হন্তদন্ত হয়ে এসে নিপার সামনে দাঁড়ায়। )

কামাল ঃ মেডাম , মেডাম আপনার মোবাইল অফ না কি ?

নিপা ঃ হ্যাঁ ছিল, কেন ?

কামাল ঃ ঢাকা থেকে ফোন করতে করতে পাগল হয়ে গেছে। মিটিং এগিয়ে এনে আগামীকাল সকাল এগারোটায় ফিক্সড করেছে, এমডি স্যার দশটার ফ্লাইটে কাঠমান্ডু আসছেন, উনি প্লেন থেকে নেমে সরাসরি মিটিংয়ে এটেন্ড করবেন, এখন সেই মত সব ব্যবস্থা করতে বলছে।

নিপা ঃ কী বলেন ?

কামাল ঃ জি মেডাম।

নিপা ঃ আচ্ছা দাঁড়ান, আমি কথা বলছি। ( নিপা মোবাইল বের করে বাটন টিপে। )

কামাল ঃ মেডাম, সবাই খুব রেগে আছে, কী হয় জানি না। ( নিপা হাত তুলে কামালকে চুপ থাকতে বলে মোবাইলে কথা বলে। )

নিপা ঃ হ্যালো স্যার, সরি স্যার, সরি, জ্বী আচ্ছা স্যার, সরি স্যার, ওকে স্যার। ( কথা বলতে বলতে নিপার চোখ মুখলাল হয়ে যায়। তরফদার স্যারের অপমানজনক কথায় তার চোখে পানি চলে আসে। সে মোবাইল কানে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার খেয়াল নেই ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিয়েছে। কামালের কথা নিপা চমকে তাকায় )

কামাল ঃ সরি মেডাম, ( নিপা চোখ আড়াল করে হাত তুলে ইশারায় বলে ইটস্ ওকে ) কিন্তু মেডাম মোবাইলটা অফ ছিল কেন ? আপনিতো কখনো অফ রাখেন না ? ( কামালের প্রশ্নে নিপা আবার চমকে ওঠে। তবে কি তাপস ইচ্ছে করে মোবাইলটা অফ করেছিলো ? সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে কামালকে নির্দেশ দেয়।)

নিপা ঃ আপনি কাল সকাল এগারোটায় মিটিংয়ের সব ব্যবস্থা করুন, এই হোটেলেই করুন। অন্য সব বুকিং ক্যানসেল করুন।

কামাল ঃ মেডাম আপনি কোন চিন্তা করবেন না, আমি সব ব্যবস্থা করছি। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। কিন্তু মেডাম মোবাইলটা কি অন্য কেউ অফ করেছিল ? ( কামাল কিছু একটা সন্দেহ করছে। নিপা কিছু না বলে নীরবে তার রুমে চলে যায়। যেতে যেতে তার চোখ থেকে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। )



১৯

( এদিকে রাক নয়টায় তাপস হোটেল থেকে চেক-আউট করে। তাকে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে কামাল ছুটে যায় নিপার রুমে। নিপার কাছে পুরো বিষয়টা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে দেখছে। সে তাপসকে একটা ফোন দিতে চায়, আর তখনই সে খেয়ল করে তাপস তাকে কোন কণ্টাক্ট নাম্বর দেয় নি এবং নিপারটাও নেয় নি। আর তখন কামল নিপার রুমের দরজায় টোকা দেয়।)

নিপা ঃ কাম-ইন। ( কামাল ঢোকে উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলে। )

কামাল ঃ মেডাম, মোবাইল মিস্ত্রি হোটেল ছেড়ে চলে গেছে। ( নিপা এ শোনর জন্য প্রস্তুত ছিল না, সে চোখ বড় করে হাঁ হয়ে থাকে। ) মেডাম কোন চিন্তা করবেন না, আমি সব দেখতেছি, আপনি রেষ্ট নিন। ( কামাল আবার বেরিয়ে যায়। নিপা কতক্ষণ এভাবে ছিল বলতে পারে না, সে কেবলই ভাবে, মানুষ এতো স্বার্থপর হয় কিভাবে ? এক সময় সে দেখে তার গাল চোখের পানিতে নদী হয়ে গেছে। সে এক পাশে কাঁত হয়ে শোয়, তার যে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। )



২০

( পরদিন সকাল সারে দশটায় নিপা ও কামাল উৎকণ্ঠিত মুখে হোটেল লবিতে হিমা রিসোর্টে সিইও গনেশ কৈরালা ও চারবিন্দুর এমডি সাজ্জাদ করিমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। নিপার হাতে এগ্রিমেন্ট পেপারের ফাইল )

নিপা ঃ কামাল সাহেব মেন্যু কী ঠিক করেছেন ?

কামাল ঃ মেডাম ভেজিটারীয়া নন ভেজিটারীয়ান দুই রকম মেন্যুই রেখেছি।

নিপা ঃ গুড।

কামাল ঃ কিন্তু মেডাম আমার বুকটা কেন যেন ধুপ ধুপ করছে। আচ্ছা মেডাম মিটিং চলার সময় যদি এ্যটাক করে ? যদি সব ভন্ডুল করে দেয়।

নিপা ঃ থামেনতো। ( নিপা কামালের কাছ থেকে সরে যায়। এমন সময় হিমা রিসোর্টের সিইও গনেশ কৈরালা ও তার সহযোগী হোটেলে ঢোকে। নিপা এগিয়ে গিয়ে তাদের অভর্থনা জানিয়ে এগিয়ে এনে কনফারেন্স টেবিলে বসায়। নিপা হাত ঘড়ি দেখে। কামাল পাশে এসে দাঁড়ায়। )

কামাল ঃ মেডাম এই যাত্রা বুঝি লালখামই কপালে আছে।

নিপা ঃ চুপ থাকুনতো। ( নিপা ধমকে ওঠে। )

কামাল ঃ না মেডাম, এমডি স্যারকে রিসিভ করার জন্য আমাদের এয়ারপোর্টে যাওয়ার উচিত ছিল, এখন পথে যদি কেউ স্যারকে কিডন্যাপ করে ? মোবাইল মিস্ত্রি কোন বিশ্বাস আছে ? ( আর সাথে সাথে নিপাও বুঝতে পারে ভুলটা, রাগে সে কাঁপতে থাকে। কাঁপতে কাঁপতে চাপা কণ্ঠে বলে )

নিপা ঃ আপনি এখন এ কথা বলছেন কেন ? আগে মনে ছিল না ? ( সে রাগে দাঁত কিড়মিড় দিতে থাকে। আর ঠিক তখন তাদের হোটেলের সামনে একটা প্রাইভেট কার এসে থামে। কার থেকে কোট-টাই, পায়ে চকচকে সু পরনে তাপস নেমে দৃঢ় পায়ে হেঁটে হোটেলে ঢোকে কনফারেন্স টেবিলের দিকে যায়। নিপা ও কামাল হাঁ হয়ে থাকে। তাপস কনফারেন্স টেবিলে এসে গনেশ কৈরালার দিকে হাত বাড়ায়। )

তাপস ঃ মিস্টার গনেশ কৈরালা, আ’ম সাজ্জাদ করিম, এমডি চারবিন্দু বাংলাদেশ। ( গনেশ কৈরালা দাঁড়িয়ে হাসি মুখে হাত মিলায়। দূর থেকে এ দৃশ্য দেখে নিপার চোখ বড় হয়ে যায় আর কামাল জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। তাপস ও কৈরালার মিটিং এগিয়ে যায়। নিপা নিপা ফাইল এগিয়ে দেয়। নিপার চোখে মুখে বিস্ময় ও উৎকণ্ঠার ছাপ একই সাথে ভেসে থাকে। তাপস ও কৈরালা যার যার এগ্রিমেন্ট পেপারে সিগ্নেচার করে, ফাইল বদল করে হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করে। )



২১

( মিটিং শেষে নিপা ও কামাল হোটেল গার্ডেনে দাঁড়িয়ে কথা বলে। )

কামাল ঃ মেডাম এটা কী হলো, এতো কাছে থেকেও এমডি স্যারকে চিনতে পারলাম না ? উনি যখন মোবাইল ফোনের ব্যবসার কথা বললেন, তখনও মাথায় ঢোকে নাই চারবিন্দুরওতো মোবাইল সেটের ব্যবসা আছে। ( এমন সময় তাপস এসে কামালের পেছনে দাঁড়ায়। নিপা একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নেয়। কামাল ঘুরে তাকিয়েই অনুনয় বিনয় শুরু করে।) সরি স্যার, সরি। স্যার আসলে, আমি স্যার, কী বলব স্যার, নেপাল আসার দিন আমার ওয়াইফ হলুদ জামা পরেছিল স্যার, তখনই আমার মনে বারি দিয়েছিল এমন একটা কিছু ঘটবে। ( তাপস মিটিমিটি হাসে) হলুদ রং আমার সয় না স্যার, কত করে বলেছি। বোকা মেয়েছেলে কোন কথা শুনে না।

তাপস ঃ ইটস্ ওকে, প্লিজ স্টপ, প্লিজ।

কামাল ঃ জি স্যার, ইয়েস স্যার। ( নিপা চোখ তোলে আবার নামিয়ে নেয় )

নিপা ঃ স্যার, আমাদের যা হবার তাতো হবেই। কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

তাপস ঃ কী জানতে চান, বলুন ?

নিপা ঃ এ সব কিছুরই ব্যাখ্যা আছে, তাই না ? ( তাপস হেসে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। )

তাপস ঃ হ্যাঁ, আছে। আসলে তাপস আমার নিক নেম। আর কণ্টাক্ট করার আগে আমি নিজে হিমা রিসোর্ট সম্পর্কে তথ্য জানতে আপনাদের আগে চলে এসেছি। সেই সাথে অন্য পর্টিদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এক সময় তারা আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করে, তখন রাতে কামাল সাহেবের রুমে ঘুমিয়েছি, কোন প্রতিষ্ঠানের এমডি তার স্টাফের রুমে বিছানা শেয়ার করে ঘুমায় না। বলতে পারেন এসবই করেছি অন্য পার্টিকে বিভ্রান্ত করতে।

নিপা ঃ আমার সাথে কাটানো সময়গুলোও কি স্যার অন্য পার্টিকে বিভ্রান্ত করার জন্য ?

তাপস ঃ কিছুটা।

নিপা ঃ কিছুটা, বাকিটা ? ( তাপস পকেট থেকে একটা লালখাম ও একটা সাদাখাম বের করে নিপার সামনে ধরে। )

তাপস ঃ সাদাখামে আপনার প্রমোশন লেটার আছে, যেটায় আমি সিগ্নেচার করে দিয়েছি। আর লালখামে আপনার রিজাইন লেটার আছে, যেটায় আপনি সিগ্নেচার করবেন। তবে সাদা খামটা চয়েজ করলে আপনি ও কামাল সাহেব কাল সকালের ফ্লাইটে ঢাকা ফিরে তরফদার সাহেবের কাছে রিপোর্ট করবেন। আর যদি লালখামটা চয়েজ করেন, তাহলে কাল সকালে কামাল সাহেব একা ঢাকা ফিরে যাবেন। আর আপনি চারদিন পর আমার সাথে ঢাকা ফিরবেন। এ চারদিন আমি আপনার কাছ থেকে নিয়ম ভাঙার নিয়ম শিখব। নাউ টেক ইউর ডিসিশন, চয়েজ ওয়ান এন্‌ভ্যলোপ। ( কামাল পাশ থেকে ফিস্ ফিস্ করে। )

কামাল ঃ মেডাম, লালখাম, লালখাম। ( নিপা হেসে কামালের দিকে তাকায়, তারপর তাপসের দিকে তাকিয়ে লালখামটা তুলে নেয়। )

তাপস ঃ থ্যাঙ্কিউ ( তারপর তাপস সাদাখামটা কামালকে দেয়। ) এটা নিয়ে কাল আপনি ঢাকা ফিরে তরফদার সাহেবের কাছে রিপোর্ট করবেন ।

কামাল ঃ ( হেসে ) থ্যাঙ্কিউ স্যার, থ্যাঙ্কিউ, থ্যাঙ্কিউ। ( হঠাৎ কামাল থমকে যায় ) কিন্তু স্যার, এটাতো মেডামের প্রমোশন লেটার?

তাপস ঃ জি না, এটা আপনার প্রমোশন লেটার, খুলে দেখুন তাতে আপনারই নাম লিখা আছে। ( কামাল দ্রুত খাম খুলে দেখে, এক নজর চোখ বুলায়, তারপর তাপসের দিকে তাকায়। ততক্ষণে তাপস নিপা তাপসের গাড়িতে গিয়ে বসে, গাড়ি হোটেল ছেরে বেরিয়ে যায়। )



ফ্রিজ





রাজু সিদ্দিক

৪ অগ্রহায়ণ ২০

e-mail : [email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.