নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

[বুক রিভিউ] কাসেম বিন আবুবাকারের ‘ফুটন্ত গোলাপ’

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:০৩

বইয়ের নাম : ফুটন্ত গোলাপ
লেখক : কাসেম বিন আবুবাকার
প্রকাশনী : নুর-কাসেম পাবলিশার্স

আসলে সাহিত্যের কি কোনো মূলধারা আছে? কিংবা আছে নাকি এর কোনো বিবর্তন?
প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে কাসেম বিন আবুবাকারকে পরিচয় করিয়ে দেই। এক সময়কার গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় পাঠকনন্দিত লেখক তিনি। যদ্দুর জানি, তিনি একজন শক্তিমান লেখক। হুমায়ূন আহমেদকে যদি সবচে জনপ্রিয় লেখক মনে করেন, তাহলে এ খবর নিশ্চয় আপনার আঁতে ঘা দিতে পারে। কারণ, কাসেম বিন আবু বাকারের ফুটন্ত গোলাপ বাংলাদেশে সবচে বেশি বিক্রিত উপন্যাস। এখনো কালজয়ী উপন্যাস হিসেবে তার সংস্করণের কোটা ত্রিশের উপরে।

অনেকে বই বিক্রির সাথে সাহিত্যের সম্পর্কটা মানতে চান না। সহজ করে বলতে গেলে, পাঠকের বই কেনার সাথে সাহিত্যের কোনো হিসেব-নিকেশ নেই। সাহিত্যের মূলধারা স্বতন্ত্র। এর বিবর্তনী কায়দায় পাঠকনন্দিত হওয়া কোনো মূল্য রাখে না। পাঠক গাঁটের পয়সা খরচ করে বই কিনতেই পারে কিংবা প্রেমে শারীরিক প্রজ্ঞাদানের জন্য এ ধরনের বই প্রেমিকাকে উপহার দিতেই পারে—তাতে কি?

কিন্তু দিনশেষে কিন্তু বইটা কিনে আস্তাকুড়ে ফেলে রাখা হয় না। পড়া হয়। যত্নসহকারে ওসব চরিত্রকে লালন করা হয়। চরিত্রগুলো কতটুকু বরণীয়, তার বিচার করে খোদ পাঠকই। যার অনিবার্য ফল হিসেবে ‘বেস্টসেলার’ লেখক হিসেবে কাসেম বিন আবুবাকার সমহিমায় উদ্দীপ্ত। উপন্যাসজগতে বেস্টসেল আর সাহিত্য প্রায় কাছাকাছি সমার্থক শব্দ। সেমতে, কাসেম বিন আবুবাকার এক সময়ের ‘পাঠকনন্দিত সাহিত্যিক’ বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না।

তবে এ যুগে কাসেম বিন আবুবাকার কতটুকু পাঠকনন্দিত—সেটার হিসেব কষলেই সাহিত্যের বিবর্তনবাদটা স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। এখানে বলে রাখা ভালো, সাহিত্যের বিবর্তনটা প্রকৃতপ্রস্তাবে পাঠকের অভিরুচিনির্ভর। যার কারণে একটা সময় ‘ফুটন্ত গোলাপ’ দাপিয়ে বেড়ালেও এখন সেটা অচল। অচল এখন বঙ্কিম সাহিত্যও, অচল প্রায় জীবনানন্দ দাশও। এখানেই মূলত সাহিত্যের বিবর্তনধারার মমার্থটা ফুটে ওঠে।

এতক্ষণ সাহিত্য বিচারে কাসেম বিন আবুবাকার ঠিকই ছিল। তার বর্ণনাশৈলী, আর গ্রামীন পটভূমির ওপর নির্মিত গল্পের প্লট—এককথায় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ‘ফুটন্ত গোলাপ’ এমনই একটি উপন্যাস, যেখানে প্রকৃতি আর প্রেম হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়ায়। লিভটুগেদার হয় ইসলামের সাথে প্রকৃতির ও প্রেমের। বিষয়টা বুঝে আসবে লেখকের ভূমিকা পড়লে—“আমার মনে হয়েছে এভাবে যদি দিন দিন আমরা প্রগতি ও নারী স্বাধীনতার নাম নিয়ে চলতে থাকি, তাইলে খবর আছে। বিদেশি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভালো দিকটা বাদ দিয়ে খারাপ দিকটা অনুসরণ করে আমরা যেন ‘কাকের ময়ুর হওয়ার মতো’ মেতে উঠেছি। তাই যদি এই বাস্তবধর্মী উপন্যাস পড়ে বর্তমান যুবক সমাজ সামান্যতম জ্ঞান লাভ করে সেই মতো চলার প্রেরণা পায়, তবে নিজেকে ধন্য মনে করবো।”

ফুটন্ত গোলাপের প্রথম পৃষ্ঠাতেই নায়িকা লাইলীর সাথে পরিচয় হবে আপনার। সিঁড়ি দিয়ে তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে নায়ক সেলিমের সাথে ধাক্কা খাওয়ার সিনেমাটিক দৃশ্যটিও লেখকের নিজস্ব রচনাশৈলীর কারণে অসাধারণ হয়ে উঠবে। অনেকক্ষণ চোখাচোখির মধ্য দিয়ে আপনি কয়েকবার আড়ালে ‍দৃশ্যটি অবচেতনে ভেবেও যেতে পারেন, বলা যায় না। তবে বিপত্তিটা ঘটে অন্য জায়গায়, লাইলী ঠিকই সেলিমের বলিষ্ঠাকায় চেহারা দেখে নেয়, কিন্তু সেলিম সেসব কিছুই দেখতে পায় না। এখানে এসে আপনি সহমর্মিতায় ভুগতে পারেন এই ভেবে যে, এই সুন্দর পৃথিবীর কিছুই লোকটা দেখতে পায় না, আজ অন্ধ বলে। কিন্তু ঘটনা তেমন হয়নি। কারণ, আর কয়েক লাইন পড়েই আপনি জানতে পারবেন—লাইলীকে দেখে সেলিমেরও খুব ভালো লেগেছে। লাইলীর বোরকাপরা সৌন্দর্য্যের যে চিত্রায়ন লেখক এখানে করেছেন, একজন হাইফ্যাশেনাবল আধুনিক মেয়ের আপাদমস্তক এমন সৌন্দর্য কেউ বাস্তব চোখে দেখেনি, মাইরি।

বোরকাপরা মেয়েটির সৌন্দর্য নিয়েই পুরোটা বই আবর্তিত। ফাঁকে ফাঁকে কিছু ঘটমান কাহিনি। যেমন, ধাক্কা খেয়ে চোখাচোখির সৌন্দর্য, মাঝখানে বই পড়ে যাওয়া আর তোলার ফাঁকে আরেকটু তাকাবার কাহিনি। মেয়েটার সৌন্দর্যই মূলত ফুটন্ত গোলাপের উপমা-উৎপ্রেক্ষা। মেয়েরা কোমল, অনেকে তাদের ফুল-ফল ও খাবারের নামে স্মরণ করে। তাই গোলাপ, কলি, ফুটন্ত গোলাপ থেকে শুরু করে লজেন্স চুইংগাম পর্যন্ত নানা বিশেষণে নারীরা বিশেষায়িত হয়। সে ধারাতে ফুটন্ত গোলাপ প্রাসঙ্গিক নামকরণ মনে হয়েছে।

যাই হোক, ফুটন্ত গোলাপের প্রধান চরিত্র লাইলী আর সেলিম। নায়ক আর নায়িকা। সেলিম একজন খুব ভালো ফুটবল খেলোয়াড়, জুডো ও কারাতে পারদর্শী। নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে। তাদের দুটো গাড়ি। অন্যটির জন্য একজন শিক্ষিত ড্রাইভার আছে। বন্ধু-বান্ধবী আত্মীয়, অনাত্মীয় ও ভার্সিটির কত মেয়ে যে তার পেছনে জোঁকের মতো লেগে থাকে। অপরদিকে লাইলীরা বড়ই গরীব। লাইলী আর সেলিমের মিল শুধু এক জায়গায়। তারা দুজনেই নিজ নিজ ক্লাসে ফার্স্ট হয়। সেলিম বিশাল বড়লোকের ছেলে। বিশাল অভিজাত। অন্যদিকে লাইলী গরীব ঘরের, বাবা কেরানি। লাইলী ধর্মপ্রাণ। সেলিম তেমন ধর্মকর্ম করে না। ভয়ের কিছু নেই, সবই কপালের লিখন। কিছু কিছু সেলিমকে ভালো পথে আনার জন্যই হয়ত লাইলীরা জন্ম নেয়, বিষয়টা সিনেমাটিক হলেও ব্যক্তিজীবনে কেউ না কেউ নারী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ই। এখানেও তাই ঘটেছে।

ফুটন্ত গোলাপ পড়ে যেটা বুঝলাম, উপন্যাসটায় গল্পের চেয়ে জীবনবিধানের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যা সাহিত্য বিচারে নির্মেদ না হলেও কারো কারো ব্যক্তিজীবনে শিক্ষার বিষয়। যেমন, লাইলী দুধ খাবে। এখানে গল্পের চেয়ে দুধ খাওয়ার নিয়মকে প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক। শিখেয়েছেন দুধ খাওয়ার তরিকা। প্রথমে লাইলি দুধের গ্লাসটা দুহাতে ধরে মুখের কাছে নিয়ে প্রথমে বিসমিল্লাহ বলে এক ঢোক খেয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে। দ্বিতীয়বারও তাই করে এবং শেষ বারে সবটা খেয়ে আবার আলহামদুলিল্লাহ বলে।

আরেকবারের কাহিনি, সেলিম লাইলীকে মেয়েদের প্রধান ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলে, আমি তো জানি মেয়েদের প্রধান ধর্ম হলো স্বামীকে সব বিষয়ে অনুসরণ করা এবং তার প্রত্যেক কথা ও কাজে সম্মতি দিয়ে সেই মতো করা। লাইলী বলে, আপনি ঠিকই জানেন। তবে অর্ধেকটা। বাকি অর্ধেকটা হলো স্বামী যদি স্ত্রীকে আল্লাহ ও রাসুলের আইনের বাইরে কোন কাজ করতে বলে তাহলে সে স্বামীর আদেশ অমান্য করে আল্লাহ ও রাসুলের আদেশ মানবে।

একইভাবে লাইলীর সাথে তার বান্ধবী সুলতানার আলাপচারিতায় উঠে আসে নারী স্বাধীনতার নামে উলঙ্গপনা করার বিষয়টি। এভাবে বইটির পরতে পরতে প্রেমের আদলে দুটি সিনেমাটিক চরিত্রের মাধ্যমে ইসলামকে সাবলীলভাবে বলে গেছেন লেখক। সাথে বোনাস হিসেবে বলে গেছেন গ্রাম প্রকৃতি ও প্রেমের কিছু চিরিত চিরিত কাহিনি।

বইটির কাহিনি সাধারণ ঘরানার। লোকজীবনে এ ধরনের চরিত্র বাস্তবে থাকলেও এসব চরিত্র বইয়ের পাতায় তেমন উঠে আসে না। যার কারণে পাঠকের পাঠব্যাহত হয় খুব করে। তবে এ ধরনের পাঠে অভ্যস্ত হলে বইটাতে সমালোচনার তেমন কিছু নেই কিছু কিছু নীতিকথা বাদ দিয়ে। নীতিকথা বলতে, লাইলী চমৎকার গান গায়। তবে হিন্দু ইহুদী-নাছারাদের রবীন্দ্রসঙ্গীত না। একেবারে উর্দু গজল—‘নেগাহো কি সাদমে বেখুদ বানাদে, মুঝে সোফিয়া জামে ওহদত পিলাদে’ গেয়ে সে সবাইকে পাগল করে দেয়। এখানে কিছুটা বর্ণবাদি গন্ধ পাবেন সমালোচকরা। এসব বিষয়গুলো বাদ দিলে উপন্যাসটি উপভোগ করার মতোই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: সাহিত্যবোধ ও ভাষাবোধ না থাকলে, সে যে-ই হোক, যত বড় যা-ই হোক, স্রেফ অশিক্ষিত।

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:১০

রঞ্জন রয় বলেছেন:

ঝাঁঝালো মিশ্রণ।

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:১৬

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: আমি বইটা পড়তে গেছিলাম , বাট পড়তে ভাল লাগেনাই

৪| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৫১

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: @রাজীব নুর--আপনার শিক্ষার গুন খুজে পান শুধু আরজ আলী মাতুব্বরে --see this link:http://www.arabnews.com/node/1090456/art-culture

http://www.asianage.com/world/south-asia/260417/islamic-romance-novels-set-hearts-aflutter-in-bangladesh.html

তাঁর প্রকাশিত বই প্রায় ৭২ খানা; আপনার লেখা কয়খানা;
যার জন্য মেয়েরা হয় দিওয়ানা-রক্তে লেখা চিঠি যায় আপনার মতে এই অশিক্ষিত লেখকের কাছে।

৫| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৫১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এই বই না পড়িলে বেচে থাকা ষোল আনা মিছে!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.