নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।
করোনার এই দুর্যোগে দেশ এখন দরিদ্রসীমার নিচে নামতে শুরু করেছে। খেটে খাওয়া মানুষ এখন বিপাকে। শুধু খেটে খাওয়া মানুষই নয়, এমন অনেক সংসার আছে, যারা এক সপ্তাহ বসে থাকলে পরের সপ্তাহ না খেয়ে থাকতে হবে। এরা সমাজে যদিও মধ্যবিত্ত পরিবার হিসেবে গণ্য। তবে এখন করোনার প্রাদুর্ভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে। এরা না পারছে কারো কাছে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরতে, না পারছে অনাহারে দিন কাটাতে!
এমন সময় অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং এনজিওকর্মী নিজেদের মতো বিভিন্ন অনুদানের মাধ্যমে অসহায় দুস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিষয়টি প্রশংসার্হ। এটি ইতিবাচক এবং মানবতাজাগানিয়া। মানুষের দুর্ভিক্ষে মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে তো পরিপূর্ণ মুমিন (পড়ুন মানুষ) নয় যে ব্যক্তি নিজে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করছে, অথচ তার প্রতিবেশী অনাহারে কাটাচ্ছে।
তবে মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা এনজিওকর্মীরা অনুদান বা ত্রাণ সহায়তা করছেন নিজেদের সাধ্যমতো। এবং এই দান অনুদান অনেকে করছেন আত্মপ্রচারের জন্য, লোক দেখানোর জন্য বা মানুষের ভালোবাসা নেয়ার জন্য কিংবা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য। অনেকে দুনিয়াবি স্বার্থসিদ্ধির জন্যও দান করে থাকে। যেমন, চেয়ারম্যান বা এমপি নির্বাচনে জেতার উদ্দেশ্য দান করে। কিন্তু দান যদি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়, তা দ্বারা হয়ত দুনিয়াবি স্বার্থ অর্জন হতে পারে কিন্তু আখেরাতে এর কোনো প্রতিদান আশা করা বোকামি। হাদিসে কুদসীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি শিরককারীদের শিরক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোনো আমল করে তাতে আমার সাথে অন্যকে শরিক করবে, তাকে এবং তার শিরকির আমলকে আমি পরিত্যাগ করব।
যদিও প্রকাশ্যে বা গোপনে যে কোনোভাবে দান করা যায়। সকল দানেই সওয়াব রয়েছে। আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি তোমাদের দানের কথা প্রকাশ করে দাও, তাহলে তাতেও কল্যাণ আছে। আর যদি তা গোপন রাখো এবং তা অভাবীদের দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরও বেশি ভালো হবে। তোমাদের গুনাহগুলোর কিছু মাফ করার উপায় হয়ে যাবে। আর তোমাদের সব কাজের ব্যাপারে আল্লাহ খবর রাখেন।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের দান প্রকাশ্যে করতে যেমন বলেছেন, তেমনি গোপনে দান করাকেও অতিউত্তম বলেছেন এবং এমন দানের ফলে মানুষের গোনাহ মাফের ঘোষণাও দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, গোপনে দানকারী কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন সাত ধরনের লোক আরশের নিচে ছায়া পাবে। তাদের মধ্যে এক ধরনের লোক হলেন, যারা এমনভাবে গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে বাম হাত জানতেই পারে না।
যারা মানুষের প্রশংসা নেয়ার উদ্দেশ্যে দান করবে, তাদের দ্বারাই জাহান্নামের আগুনকে সর্বপ্রথম প্রজ্বলিত করা হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সর্বপ্রথম তিন ধরনের ব্যক্তিদের দিয়ে জাহান্নামের আগুনকে জ্বালানো হবে। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম বিচার করা হবে সেই ব্যক্তির, যাকে সহায় সম্পদে প্রশস্ততা দিয়েছিলেন। তাকে সকলের সামনে এনে তার ধন-সম্পদ তাকে দেখাবেন। সে তা চিনতে পারবে। তখন আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, কি কাজ করেছ এই ধন-সম্পদ দ্বারা? সে জবাব দিবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হবেন, সে পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি এমনটি করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে ‘দানবীর’ বলা হবে। আর তা তো বলাই হয়েছে। এরপর আল্লাহর নির্দেশে তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
যারা আসলে এ ধরনের আত্মপ্রচারের জন্য অনুদান বা ত্রাণ সহায়তা করে, তাদের কাছে একটি ব্যাখ্যা থাকে। তা হলো এতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়, অনুপ্রেরণা পায়। আসলেই কি তাই! দান-অনুদান তো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এটি শেখার বিষয় নয়। মানুষকে অনুপ্রেরণার জন্য আপনি কী দিচ্ছেন, সেটা প্রচার করতে পারেন। কারণ, দান করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করলে মানুষ যতটা না আগ্রহ পায়, তার থেকে বেশি আগ্রহ পায় যখন মানুষ দেখে অনেকেই সেখানে দান করছে। তখন গ্রুপ ডাইনামিকস কাজ করে। একারণে মসজিদের কাতারে চলমান দানবাক্সে যখন একজন দান করে, তখন পাশেরজনের কিছুটা হলেও খারাপ লাগে। এই খারাপ লাগা থেকেই সে অনেক সময় দান করে। কিন্তু বাক্স যখন খালি ঘুরতে থাকে তখন মানুষ বাক্সটাকে খালি ঠেলে দিতে খুব একটা খারাপ বোধ করে না। অন্য কেউ যখন দিচ্ছে না, আমি না দিলেও চলে—এরকম চিন্তা চলে আসে। কিন্তু যখনি একজন একটা চকচকে পাঁচশ টাকার নোট বের করে সুন্দর করে ভাঁজ করে বাক্সে ভরে দেয়, তখন কোনো কারণে তার পাশের জনের পাঁচ টাকার ছেড়া নোটটা দেওয়ার পরিকল্পনা মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে একটা বড় নোট বের হয়ে যায়। মূলত অনুপ্রেরণা হলো পরিমাণের ক্ষেত্রে।
তাই অসহায়-অভাবীদের ছোট না করেও প্রকাশ্যে বিভিন্নভাবে আমরা দান করতে পারি, যার ফলে সমাজে অনেক কল্যাণ আসতে পারে। অথচ আমরা বিভিন্ন অনুদান বা ত্রাণ সহায়তার নামে অসহায় মানুষগুলোকে কেন সমাজের চোখে অসহায় বলে বলে প্রচার করছি, এটি সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং মানবতারহিত কাজ।
হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু তার খেলাফতকালে রাতের বেলা জনবিরল মুহূর্তে বেরিয়ে পড়তেন অসহায় মানুষের খোঁজখবর নিতে। দিনে তো দিনের বেলা প্রকাশ্যে বের হতেন না। যদিও একজন নীতিবান শাসক হিসেবে দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে বের হওয়াটা তার কর্তব্য ছিল। তবুও তিনি রাতের আঁধারে বের হতেন। যাতে তিনি গোপনে দান করতে পারেন এবং দানগ্রহীতাকে মানুষের সামনে লজ্জা পেতে না হয়।
দেখুন, মুরগি ডিম দেয়। একটি ডিমের মূল্য আট থেকে দশ টাকা। কিন্ত ডিম দিয়েই সে কক কক আওয়াজ করে গোটা বাড়ির মাতিয়ে তোলে। লোকদের জানিয়ে দেয় সে ডিম দিয়েছে। অথচ ঝিনুককে দেখুন, লক্ষ টাকার মুক্তা নিজের পেটের ভেতরে রেখেও কত নিরব-নিভৃতে থাকে! আপনি মুরগি হবেন নাকি ঝিনুক- সেটা আপনার বিবেচনা। যদিও দেয়াটাই মূলকথা, হোক তা ডিম কিংবা মুক্তা। এসবের মূল্য অনুপাতে আল্লাহ প্রতিদান দেন না, আল্লাহ প্রতিদান দিয়ে থাকেন আপনার বিশুদ্ধ নিয়ত এবং তাকওয়া অনুপাতে।
সবশেষে একটি কোরআনের একটি আয়াত মনে রাখুন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে এবং তা গোপন রাখে এবং গ্রহীতাকে এজন্য কোনো ধরনের খোঁটা বা কষ্ট দেয় না, তারা পুরস্কৃত হবে। তাদের কোনো ভয় ও দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। (পক্ষান্তরে বিপরীতে কী হতে পারে, একবার ভেবে দেখুন!)
২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
পড়ে শান্ত পাইনা, সেই পুরানো কথা, কথার কথা; মনে হয়, গরুর রচনা
৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন আল্লাহ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৪৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: