নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবোঘুরে বাউল

উদ্ভট অনুর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত অহেতুক উৎকট কষ্ট কল্পনামাত্র!

ভবোঘুরে বাউল › বিস্তারিত পোস্টঃ

৪০১(ক), আমার গণরুম, মাস্টারদা' সূর্যসেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮

মাস্টারদা’ সূর্যসেন হলের ৪০১(ক) নাম্বার রুম। আজো কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে ঐ স্বপ্নের রুমটায়। প্রথমে রুমটার বর্ণনা দিয়ে শুরু করি। হলের দুইটা লিফট এর মধ্যে দক্ষিন দিকটায় যে লিফট আছে ঐ লিফট দিয়ে চার তলায় উঠলে ঠিক লিফট এর সম্মুখে যে রুমটা, ওটাই ছিল আমার রুম। বাইরের কেউ হঠাৎ রুমের মধ্যে প্রবেশ করলে আতঙ্কিত হবে সেটা কোন সন্দেহ নেই। দরজা খুলেই চোখে পড়বে রুমের সমস্ত দেয়াল জুড়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা অসংখ্য উক্তি। উক্তি গুলো কেউ কেউ নিজেই বানিয়েছে আবার কিছু উক্তি বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের। কয়েকটি উক্তি আপনাদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করলামঃ

“প্রেম করবেন পিওর, ছেঁকা খাবেন সিওর।”- ওমর (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস)

“বোকা থাক, ক্ষুধার্ত থাক।”- স্টিভ জবস

“আসলাম, দেখলাম, জয় করলাম।”- জুলিয়াস সিজার

“ভাল তো অনেক হল মাগার বাসা হলনা।”- মাসুদ (ইতিহাস)

“বিশ্বাস রাখ তুমি, করে দেখাবো আমি।”- আমার লেখা

“জীবন মানে যুদ্ধ, যুদ্ধই যদি না করি বাঁচবো কিভাবে?”- রফিক (ইসলামের ইতিহাস)

“দোকান যখন দিয়েই ফেলেছ, বেঁচতে লজ্জা কি?”- আমার লেখা

রুমের ফ্লোর জুড়ে এলোমেলো খবরের কাগজ আর ছেঁড়া কাগজের টুকরা ছিটানো। ২ কোণে ২ টা পড়ার টেবিল আর ৪ দেয়ালের পাশে ৪ টি বেড। বেডগুলোর নিচে সবার ব্যাবহারের জিনিসপত্র আর ব্যাগ।

রুমে বসবাস ছিল একদল স্বপ্নবাজ বালকের যারা ঐ সময় (২০১২ সাল) সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পদার্পণ করেছে। অধিকাংশ সদস্য গ্রাম থেকে আশা কৃষক-শ্রমিকের সন্তান। গ্রামের দরিদ্র কৃষক-শ্রমিকের সন্তান হলে কি হবে প্রত্যেকের মধ্যে ছিল বিশেষ বিশেষ প্রতিভা। আমার সেইসব রুমমেটদের নিয়ে এবার একটু বর্ণনা দেবো।

১)ওমরঃ-

ঝিনাইদাহ জেলার শৈলকূপা থানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছিল। পড়তো ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে। অদম্য মেধাবী ছাত্র। সারাদিন শুধু পড়াশুনা আর গ্রুপ স্টাডি ছিল তার একমাত্র কাজ।

২) রাসেলঃ-

আমার বেডমেট ছিল। দুজনে একই দিনে হলে উঠেছিলাম। রুমের সবথেকে পড়ুয়া স্টুডেন্ট বলে খ্যাঁত ছিল। মাঝে মাঝে আমরা যখন ট্রাম কার্ড ফেলতাম আর জোরে জোরে চিৎকার করতাম রাসেল তখনো পড়তো। ডিপার্টমেন্টে পজিশনে ছিল।

৩) আতিকঃ-

সিরাজগঞ্জের ছেলে। পড়াশুনা খুব বেশি করত না। বাবা নেই তাই নিজের খরচ নিজে চালানোর তীব্র প্রচেষ্টা তার। ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি সায়েন্স ছিল তাই দুয়েকটা টিউশন জুটিয়েছিল। ডিপার্টমেন্টের বন্ধুদের বেশি সময় দিত।

৫) শুভঃ-

লালমনিরহাট বাসা। পড়তো ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানে। সপ্তাহে ২৭ টি ক্লাস ছিল তাই সারাদিনে তাকে খুঁজে পাওয়া জেত না। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় শুভ হাজিরা দিত। একটা প্রেমও করত। আমাদের সকল রুমমেটদের মধ্যে একমাত্র শুভ প্রেমের বাতি জ্বালিয়ে রেখেছিল।

৬) রফিকঃ-

গাজীপুরে গ্রামের বাড়ি। দুরন্ত একটা ছেলে। ওর কাজ ছিল রোভার স্কাউটিং করা, বি এন সি সি করা ইত্যাদি। একটু আধ্যাত্মিক টাইপের বন্ধুটা আমার শরীরের প্রতি অনেক বেশি কেয়ারফুল। কেউ রুমের মধ্যে কিছু খেতে ইচ্ছা পোষণ করলে রফিকের ব্যাগে হানা দিত। কোন না কোন খাওয়ার জিনিস ব্যাগে থাকবেই।

৭) তানভীরঃ-

ঢাকার বাড্ডাতে বাড়ি। সপ্তাহে ২/৩ দিন থাকত হলে আর বাকি দিনগুলো বাসায়। অনেক বেশি ইন্ট্রোভারট টাইপের। রুমে ওঠার কিছুদিন পর শুনি একটা আবৃত্তি সংগঠনে কাজ শুরু করেছে। সারাক্ষণ শুধু শুদ্ধ বাংলা বলার প্রচেষ্টা কিন্তু হয়ে ওঠেনা। জানিনা আজো একই সমস্যা আছে নাকি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।

৮) সাহারিয়ারঃ-

সাহারিয়ারের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। ইংরেজি বিভাগে পড়ে। ২য় বার রি-এডমিশন দিয়ে ভর্তি হয়েছে। আগে ছিল ভূগোল বিভাগে। কেউ কিছু বললেই ও বলে উঠত “বেটা ক্যাম্পাসে কয়দিন আইছস?” সারাক্ষণ একটু সিনিয়র হওয়ার ভাব নিলেও কেউ তা মানতে নারাজ।

১০) অনিকঃ-

পঞ্চগড় থেকে এসেছে। খুব বেশি কথা বলেনা। দেখতে অনেক সুন্দর। ঐ সময় ইসলামের ইতিহাস বিভাগে থাকলেও এখন শুনেছি সমাজকর্ম বিভাগে চলে গেছে। অনিক আমাদের মধ্যে প্রথম রুমে উঠে।

১১) রেজাঃ-

রেজার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলে। হেলথ ইকোনমিক্স বিভাগে পড়ে। মেধাবী ছাত্র। ফার্মগেটের একটা কোচিং এ ক্লাস নেয়। রুমের মধ্যে সবথেকে হালকা দেহের অধিকারী। তার আর একটা গুন হল সে আমাদের রুমে সবচেয়ে বেশি ঘুমাত।

১২) ইউনুসঃ-

যশোর জেলার কোন এক গ্রাম থেকে অদম্য মেধাবী কিন্তু হালকা বোকা সভাবের এই ছেলেটি আমার রুমমেট ছিল। দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছিল তাই সারাক্ষণ কিছু একটা করার উপায় খুঁজত। টিউশন পাওয়া যায়না তাই কিছুদিন একটা বইয়ের দোকানেও কাজ করেছে। কারো সাথে খুব একটা মিশত না। পড়াশুনাতে সময় দিত বেশ।

১৩) আকাশঃ-

ইতিহাস বিভাগের এই মেধাবী ছাত্রের বাসা কক্সবাজার শহরে। কথা বলে স্থানীয় ভাষায়। প্রথমে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হলেও পরে অভ্যস্থ হয়ে যাই। রুমে খুব কম থাকত। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে এসেই একটা করে সিগারেট ধরাত। রুমের অন্য কেউ তখন সিগারেট খায়না। অবশেষে আকাশের কল্যাণে আমরা বেশ কয়েকজন সিগারেটের সংস্পর্শে আসি। আকাশ সম্পর্কে যদি কিছু বলতে হয় তাহলে ওর ঐ সিগারেট খাওয়ার কথাই চলে আসবে।

১৪) তুহিনঃ-

সমাজকর্ম বিভাগের এই বন্ধুটি যশোর জেলার বাঘারপাড়া থেকে এসেছে। আমরা মজা করে তুহিনকে মুসা ভাই বলে ডাকতাম। তুহিনকে কিছু বললেই ওর একটাই কথা ছিল, “ওরে ও কথা কৈসনে”। মজার মজার কৌতুক বলে আমাদের খুব হাসাতে বাধ্য করত। পড়াশুনাতে বেশ সময় দিত।

১৫) জাকিরঃ-

আরবি বিভাগের ছাত্র। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার কোন এক গ্রামে। সহজ সরল একটা ছেলে। পড়াশুনায় খুব আগ্রহী। কথা বলে কুমিল্লার স্থানীয় ভাষায়। কাউকে ডাকতে গেলে তার নামের শেষের অক্ষর দ্বিত্ব করে উচ্চারণ করত। যেমন, এই রাসেইল্লা, আতিক্কা। তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।



আমাদের ঐ রুমটায় প্রতিটা রাত কেটেছে তাসের আড্ডায়, ফাজলামি করে, সবাই একসাথে মুভি দেখে। সবাই মিলে ক্যাম্পাসের গাছের আম পেড়ে রুমে নিয়ে খাওয়া, বিজনেস ফ্যাকাল্টি আর মহসিন হলের নারকেল গাছ থেকে ডাব পেড়ে খাওয়া সবই এখন স্মৃতি। বৃষ্টির দিনে জানলার উপর বসে বৃষ্টি দেখার সেই অপূর্ব অনুভূতিগুলো আজো আমায় ডাকে। অনেকদিন হল বন্ধুদের সাথে দেখা হয়না। অনেকের সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয় আবার অনেকের সাথে একেবারেই দেখা হয়না। তবে সবাইকে খুব মিস করি। আর মিস করি আমার গণরুমটা।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: হল লাইফের কথা মনে করিয়ে দিলেন । সূর্য সেন হল বলতে গেলে আমার ২য় হল । আমি থাকতাম শহীদুল্লাহ হলে । হল লাইফ সেরা লাইফ সন্দেহাতিত ভাবে ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০২

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: নিজে স্মৃতিচারণ করতে আপনার স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিতে পেরেছি এটা আমার সার্থকতা। সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: :)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৪

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: হা হা হা হা হা হা। মনিরা আপা।

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাই ১৯৯৩-১৯৯৯ এর নিজের অনেক স্মৃতি মনে পরে গেছিল।
বেচে থাক ঢা.বি র হল গুলি বেচে থাকা এই নির্মলতা, হাসি কান্না :)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:০৬

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: ধন্যবাদ আপু

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫১

বিদগ্ধ বলেছেন: “বোকা থাক, ক্ষুধার্ত থাক।” - স্টিভ জবস

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

বিদগ্ধ বলেছেন: “আসলাম, দেখলাম, জয় করলাম।”- জুলিয়াস সিজার

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:১০

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

৬| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

বিদগ্ধ বলেছেন:
‍‍**“দোকান যখন দিয়েই ফেলেছ, বেঁচতে লজ্জা কি?”- আমার লেখা**

-আপনিও তো সুন্দর উক্তি করেছেন। ভালো লাগলো।




**প্রেম করবেন পিওর, ছ্যাক খাইবেন শিওর**

-কথাটি শুনতে মজার। হয়তো কিছু সত্যতাও আছে। তবে সততা নেই।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:০৯

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: ধন্যবাদ। কততুকু সত্যতা আছে জানিনা তবে ওমর যে মজা করে লিখেছিল সেটা কোন সন্দেহ নেই।

৭| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৫

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আকাশঃ-
ইতিহাস বিভাগের এই মেধাবী ছাত্রের বাসা কক্সবাজার শহরে। কথা বলে স্থানীয় ভাষায়।
আঁর দেশী ফুয়া.......
সবার জন্য শুভ কামনা
“ভাল তো অনেক হল মাগার বাসা হলনা।”- মাসুদ (ইতিহাস)
“বিশ্বাস রাখ তুমি, করে দেখাবো আমি।”- আমার লেখা
“দোকান যখন দিয়েই ফেলেছ, বেঁচতে লজ্জা কি?”- আমার লেখা
তোমার দু'খানাও জবর ভায়া
পিওর ঢাবি বিচ্ছু দেখছি.......এই না হলে ঢাবির প্রডাক্ট?
যেখানেই থাকো,বিচ্ছুই থেকো ;)

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪৩

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: হুহাহাহাহা। ভায়া আপনাগো মতন বড় ভায়ারা যা কইরা গেছে তার কিছুটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাইয়ালচি আর কি।

"পিওর ঢাবি বিচ্ছু দেখছি.......এই না হলে ঢাবির প্রডাক্ট?
যেখানেই থাকো,বিচ্ছুই থেকো"----- সে আর বলতে ভায়া? অল টাইম!!!!!! :) :) :)

আপনের দেশি পোলায় আমারে কিন্তু ফুকু টান শেখাইছে। সেই থাইকা প্রতি মাসে বড় অংক পকেট থাইকা বাইর হইয়া যায়। আর সব ঢুকে ক্যাম্পাসের হলের দোকানগুলাতে।

৮| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১০

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: “দোকান যখন দিয়েই ফেলেছ, বেঁচতে লজ্জা কি?”- আমার লেখা
- এটা ভালো ছিলো.......... :) :)

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২২

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.