নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা থাকেন নীরবে -সবসময়

১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫৬

বাবা দিবসে আমি ইচ্ছে করেই কখোন লিখিনা। কারন বাবা শব্দটি আমার কাছে যতোনা আনন্দের তার চেয়েও অনেক বেশি কষ্টের।সে গল্প অন্য একদিন করবো।

বাবা-যাকে ঘিরে একটা সময় যেমন ভয় কাজ করতো ,তাকে ঘিরেই আবার জন্মেছিল নানান রঙের মায়া। সে মায়া বর্ননাতীত। আমাদের সময় ছিল-বাবা মানেই শাসক। ভাইদের কাছে কথাটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ,কিন্তু আমার কাছে একদমই না। বাবাকে ভয় পেতাম জমের মত, কিন্তু তার কাছেই ছিল দুনিয়ার সব আবদার।

মা আমার বরাবরই অনেকটা এক কেন্দ্রীক ছিলেন, যার কারনে চকলেট খাওয়া আর বন্ধুদের সাথে খেলতে যাওয়ার আবদারটা ছিল বাবার কাছেই। বাবার একটাই শর্ত ছিল-লেখা পড়ায় ক্লাশে ফার্ষ্ট হতে হবে। সেকেন্ড হওয়া যাবে না কিছুতেই।(বড় অদ্ভুত একটা চাওয়া।) সেই চাওয়া পূরন করতে হত আমার প্রতি বছর। বাবা অন্য বন্ধুদের সাথে রীতিমতো ক্যাল্কুলেটর দিয়ে মাপতেন কত নম্বরের ব্যবধানে প্রথম হলাম। ব্যবধান যত কম,বাবার মুখের হাসি তত কম।

একবারতো ঘটলো চরম ভয়ঙ্কর একটা ঘটনা। আমি ক্লাশ এইট থেকে নাইনে উঠবো, ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। আমার সব চেয়ে ক্লোজ বান্ধবী সুরভী কেমন করে যেন অঙ্কে বেশী নম্বর পেয়ে ফার্ষ্ট হয়ে গেল। বাসায় ফিরেতো ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। কারন বাবা সবসময় অঙ্কের প্রতি বেশী মাত্রায় দূর্বল। অফিসে যাবার আগে আমাদের তিন ভাই-বোন কে অংক করিয়ে তবেই অফিসে যেতেন। এতো কষ্টের অঙ্ক –আমারে দিল ডুবায়ে।

যথারীতি বাবা আমার এবং সুরভীর রেজাল্ট শীট নিয়ে বসলেন। দেখা গেল আমি সব বিষয়ে ওর সমান পেয়েছি, কেবল অঙ্কে গিয়ে কোথায় যেন এক নম্বর গেছে ছুটে।

আর যাবে কোথায়। মনে আছে আমি ৮৪ পেয়েছিলাম। আব্বা কোন ভাবেই ভাবতে পারতেন না-তার মেয়ে অঙ্কে ৯০ এর নীচে পেতে পারে। বলাই বাহুল্য আমাকে বাধ্য হয়েই পরবর্তীতে অংক নিয়ে অনার্স –মাষ্টার্স করতে হয়েছিল।

ও ভয়ঙ্কর গল্পটাতো শেষ করলাম না। বাবা করলেন কি-আমার বান্ধবী চলে যাবার পর আমাকে জানালার সাথে বাঁধলেন। কাজ টি উনি খুব আরাম করেই করতে পেরেছিলেন। কারন-আমার ওজন বরাবরই কম ছিল। বাবা যখন রাগ করতেন তখন আমার মা কিছুই বলতেন না, উদাসীন চেহারা করে রান্না ঘরে ঢুকে যেতেন। আর বড় ভাই কিছু বলার তো প্রশ্নই ছিল না। অতএব কাজ টি যতোই অমানবিক হোক না কেন-সেটা আমরা খুব সাধারন ভাবেই হজম করতাম।

সেদিন ওভাবে প্রায় সারাদিনি ঝুলে ছিলাম,আমার সামনেই সবাই খাওয়া –দাওয়া সারলেন। আমি ঝুলে থেকেই কাঁদতে লাগলাম,অনেকটা অবাকো হলাম। কিন্তু কি অদ্ভূত বাবার উপর কিছুতেই রাগ হলো না। কারন বাবার হাতে মার খাওয়া, বেতের বারি-এগুলো আমাদের গা শোয়া হয়ে গিয়েছিল।

আমি জানি,রাত নামলেই বাবার অন্য চেহারা হয়ে যাবে। মাগরীবের নামাজ পড়েই বাবা আমাকে কোলে নিয়ে বসলেন(কলেজ পাড় করেও আমি বাবার কোলে বোস তাম)। খুব আদর –যত্ন করে ভাত খাইয়ে দিলেন। আমাকে মজার মজার জামা কিনে দিবেন-প্রলোভন দেখানো শুরু করলেন। আমার ভাব গেলো বেড়ে,কিছুতেই আমার অভিমান কাটছে না। তখোন বাবার অসহায় মুখটা দেখার মতো ছিল।

হঠাত বাবার কি মনে হলো কে জানে-আমাকে আগ্রাবাদ স্কুল থেকে নিয়ে সিডিএ গার্লস স্কুলে ভর্তি করালেন। তখন আমরা চট্রগ্রাম হোষ্টেল কলোনীতে থাকতাম ।আমার মন এতো খারাপ হল, জানালায় ঝুলে থাকা এর চেয়ে ঢের ভালো ছিলো। এতো দিনের বন্ধু আর শিক্ষকদের ছেড়ে থাকতে হবে-কিছুতেই মন মান ছিল না। আমার বান্ধবিও ভর্তি হয়ে গেল অন্য স্কুলে। আমি খুব একা হয়ে গেলাম।

টানা একটা বছর নতুন একটা স্কুলে নতুন পরিবেশে মাত্র ১৩টা মেয়ের সাথে ক্লাশ করতে আমার যে কি খারাপ লাগছিল, লিখে বোঝাতে পারবো না। বাবা আমার এতোটাই ইমোশনাল ছিলেন যে –এই বিষয়টা বুঝতে তার এক বছর লেগে গেল।

অবশেষে ক্লাশ টেনে ওঠার পর আমাকে ডেকে বললেনন-আচ্ছা,তোদের ক্লাশে কেমন পড়ায় রে? আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

কারন বাবা এ ব্যাপারটি আমার চেয়ে ভালোই জানেন। সি ডি এ গার্লস স্কুল কেবল নতুন হয়েছে সেই বছর, ওখানে কম্পিটিশনে যাবার মতো কোন ভালো ছাত্রীই তখন গড়ে ওঠেনি। কিন্তু বাবা ওখানে আমাকে আর রাখতে চাইছেন না, এই কথাটি আমার মুখ দিয়ে বলাতে চাচ্ছেন। আমি কিছুই বললাম না।

অবশেষে বাবাই মুক খুললেন-তুই যদি এক টানা এই ভাবে ফার্ষ্ট হতে থাকিস ,তাহলেতো ফাইনাল পরীক্ষায় কম্পিটিশন করতে পারবিনা। তুই বুঝতেই পারবিনা তোর চেয়ে আরো কত ভালো ভালো ছাত্র- ছাত্রী আছে।

আমার বুদ্ধিমান বাবা আমাকে সেখান থেকে ততক্ষনাৎ টি সি নিয়ে আবার আগ্রাবাদ স্কুলে নিয়ে এলেন। আমিও মহা আনন্দে আমার প্রিয় স্কুল থকে এস এস সি পাশ করলাম।

এই ছিলেন আমার আবেগী বাবা। যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও ইন্ডীয়াতে যাননি কেবল মাত্র ওরা হিন্দু বলে। কোন বিধর্মীর হাতে তিনি চিকিতসা নিতে নারাজ। আমার মনের মধ্যে এখনো একটা ইচ্ছেরা কেবলি উঁকি দেয়-বাবাকে বেহুশ করে ঐ মালাউনের (তার ভাষায়)দেশে নিয়ে গিয়ে চিকিতসা করালে ঠিকি বাবা বেঁচে থাকতেন।

কিন্তু আজ সবি কল্পনার পায়ড়া হয়ে শুন্য আকাশে অযথাই ঘুরে বেড়ায়।

সত্যিকার অর্থে তা আর বাস্তবতায় ফিরে আসে না।



মাথার উপর বিশালাকার ছায়া হয়ে

নিবিড় কঠিন বাহুডোরে ,

স্বর্নলতার কোমল স্নেহে জড়িয়ে ছিলে ;



অভিমানে চোখ সরালে ,

চেপে রাখা কষ্টগুলো সঙ্গী করে

অজানা এক পথের মাঝে হারিয়ে গেলে ।

------------বুকের জমানো পাথর -৩০ অক্টোবর ,১৯৯৭ )

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৬

বাউন্ডুলে রুবেল বলেছেন: অদ্ভুত শূন্যতা ভীড় করলো মনে আপনার লেখাটি পড়ে।
অদ্ভুত।

ভালো থাকুক পৃথিবীর সব বাবারা।

১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৮

রোদেলা বলেছেন: আপ্নিও খুব ভালো থাকুন।

২| ১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২১

হামিদ আহসান বলেছেন: বাবাকে নিয়ে এমন আবেগি লেখা আমার মন উদাস করে দেয়। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য.....................

১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪

রোদেলা বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আমার খেরোখাতায় ঘুরে গেলেন বলে।

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: বাবা যখন ছিলেন তখনই বুঝতাম, বাবার বিকল্প হয় না। নিজে বাবা হয়ে এটা আরো বেশি অনুভব করি।

১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:২৫

রোদেলা বলেছেন: ঠিক বলেছেন জুলিয়ান ভাই।

৪| ১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


সকল বাবার জন্য শ্রদ্ধা

১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭

রোদেলা বলেছেন: শুভেচ্ছা আপনাকে।

৫| ১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আপনার বাবার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী ।

১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭

রোদেলা বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন।ধন্যবাদ।

৬| ১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: সকল বাবার জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা। লেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫

রোদেলা বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ লায়লা।

৭| ১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৩

মামুন রশিদ বলেছেন: আপনার বাবা শান্তিতে থাকুন । সকল বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ।

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬

রোদেলা বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন।

৮| ১৫ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৬

জাফরুল মবীন বলেছেন: হৃদয়স্পর্শী!আপনার বাবার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৪৭

রোদেলা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মবীন

৯| ১৫ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫০

হাসান মাহবুব বলেছেন: অন্যদের কাছে তার হয়তো হাজার দোষ চোখে পড়বে এই লেখা পড়ে, তিনি নিষ্ঠুর, সাম্প্রদায়িক, গোঁয়ার, কিন্তু সব ছাপিয়ে তিনি একজন বাবা। এটাই তাকে শ্রদ্ধা করার জন্যে যথেষ্ট।

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

রোদেলা বলেছেন: ঠিক বলেছেন হাসান মাহবুব।সব কিছু ছাপিয়ে তিনিই আমার বাবা।

১০| ১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:১৪

সুমন কর বলেছেন: শিক্ষিত হওয়া মানে নিজেকে জানা। যারা শিক্ষিত হয়েও ধর্ম বা দল নিয়ে গোঁড়ামি করে, তাদের আমি শিক্ষিত বা প্রকৃত মানুষ বলতে নারাজ। শেষে এসে আপনার লেখাটি ভাল লাগল না।

আমি ও আপনি একই বিষয়ে অনার্স –মাষ্টার্স করা।

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৫০

রোদেলা বলেছেন: ভালো থাকুন সুমন কর।

১১| ১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখা।

হাসান মাহবুব বলেছেন: অন্যদের কাছে তার হয়তো হাজার দোষ চোখে পড়বে এই লেখা পড়ে, তিনি নিষ্ঠুর, সাম্প্রদায়িক, গোঁয়ার, কিন্তু সব ছাপিয়ে তিনি একজন বাবা। এটাই তাকে শ্রদ্ধা করার জন্যে যথেষ্ট।

সহমত।সেজন্যেই লেখা শেষ করার পরও মারধোরের ইতিহাস, দোষত্রুটি সব মন থকে মুছে গিয়ে স্রেফ বাবার প্রতি ভালোবাসাটাই মনে থাকে, তাকে না পাওয়ার হাহাকারটাই বুকে বাজে।

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৫১

রোদেলা বলেছেন: আপনার মন্তব্যের শেষ কথা গুলো মন ছুঁয়ে গেলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.