নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা থিয়েটারের পঞ্চনারী আখ্যান ও রোদেলা নীলার ব্যক্তিগত কিছু অনুভুতি//

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৭

একজন অভিনেত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে একাই একসাথে অনেকগুলো চরিত্র উপস্থাপন করে দর্শকদের মুগ্ধতা ধরে রাখতে পারেন তা শেষ বার বুঝেছিলাম ফেরদৌসী মজুমদারকে দেখে।সে অনেক বছর আগের কথা।আজ এতো দিন পর অবাক বিস্বয়ে তাকিয়ে রইলাম রোজী সিদ্দিকীর দিকে । অল্প সময়ের বিরতীর মধ্যে একটা মানুষ এমনভাবে পাঁচটি নারী চরিত্রে বিভিন্ন পোশাকে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন তা চোখের সামনে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।



পঞ্চনারী আখ্যান-জোলেখা, অন্তরা ,মনোরমা, মরিয়ম ,মমতাজ –তাদের জীবন চলার পথ নানান রকম হলেও একটা জায়গায় তাদের পরিচয় এক।তারা নারী,তারা সবাই এই পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার শিকার।কোন না কোন ভাবে তারা নিষ্পেশিত হন নীপিড়নের যাঁতাকলে, কেবল নির্যাতনের ধরনটাই আলাদা যা আজো ঘটে চলেছে এই সমাজে।এখান থেকে মুক্তির উপায় আদৌ কারো জানা আছে বলে আমার অন্তত মনে হয় না।



এবার একটু পেছনে ফিরে যাই-গত ২০১৩ সালে প্রথমা প্রকাশিত “আলোর মিছিল” সংকলনে আমার নগ্ন মৃত্তিকা প্রথম আলোর মুখ দেখলো। এই উপন্যাসটা নিয়ে আমাকে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছিলো,এমন কি কোথাও প্রকাশ করা যাবে না বলেও বেশ একটা অনিশ্চয়তার মুখোমুখি ছিলাম। এখানে মিতা চরিত্রকে আমি পাঁচ ভাবে উপস্থাপন করেছি। কিশোর বেলায় সে তার শিক্ষক দ্বারা ধর্ষিতা হয়,পরবর্তীতে পরিবারের কাছে চরিত্রহীন উপাধিতে আখ্যায়িত হয়,তারপর প্রেমিক রুপী স্বামীর কাছে হয় অবহেলার শিকার,তারপর নিজের পায়ে দাঁড়াতে গিয়ে সম্মুখিন হয় পুরুষ নামক দানবের লোলুপ দৃষ্টির ।অবশেষে স্বামীর বন্ধু যখন প্রেমিক হিসেবে আত্বপকাশ করতে আসে তখন সে বুঝতে পারে যাকে ঘিরে সে মুক্তির সাধ নিচ্ছে সে আসলে তাকে ব্যবহার করছে।পরিশেষে কেবলী একাকীত্ব তার সঙ্গী হয়, আর কেউ না।

এতো কথা বলার একটাই কারন –আমার ভীষন জানতে ইচ্ছে করছে পঞ্চনারী আখ্যান লেখার পর লেখক হারুন রশীদ কে কেউ কি প্রশ্ন করেছেন-এটা তার জীবন থেকে লেখা কোন গল্প কিনা।আমি জানি,তা কেউ করেন নি।কারন হারুন রশীদ একজন পুরুষ লেখক। এমন প্রশ্ন আসাটা অবান্তর। আমাকে এখোন অনেকেই প্রশ্ন করেন-নগ্ন মৃত্তিকার চরিত্রায়ন আমার জীবন থেকে কিনা? প্রশ্নটা করেন ,কারন আমি নারী বলেই।হয়তো পাঠকরা লেখিকার জীবনের বর্ননা উপন্যাসের পাতায় দেখতে চান। এটা আর মন্দ কি,কিছুতো ছায়া থাকবেই। বাস্তবতার ছায়া না থাকলে লেখালেখি করাটা প্রায় অসম্ভব।আমিতো আর কবিগুরু নই যে অন্যের অনুভুতি নিজের মধ্যে ধারন করতে পারবো।

তবে একটা কথা সবাইকেই পরীষ্কার বলতে চাই।সমাজের চেহারাটা অনেক খানি চাকচিক্য হয়েছে ঠিকই,মেয়েরা বসে আছে অনেক ক্ষমতাময় আসনে। কিন্তু নারী সেই নারী রুপেই পরে আছে, কেবল বদলে গেছে নির্যাতনের ধরন।

আজ আমি একা আছি।যতটা না উত্তর করতে হয় লেখার মান নিয়ে , তার চেয়েও বেশি উত্তর দিতে হয়-কেমন করে একলা থাকি,কিভাবে কাটে আমার সময়,বাসায় কে কে আছে,ইত্যাদি ইত্যাদি।

হারুন রশিদকে অনেক অনেক ধন্যবাদ যে পুরুষ হয়েও নারীর আত্মগ্লানির ইতিহাস এমন ভাবে তুলে ধরেছেন। মমতাজ মহলের আত্বকথনের যে বর্ননা এখানে উপস্থাপিত হয়েছে তা এক কথায় দুঃসাহসিক।যুগের পর যুগ ভালোবাসা নামক এক মিথ্যে চাদরে ঢাকা পরে আছেন মমতাজ, এই ভ্রান্তি থেকে মুক্তির যে আর্তনাদ তা অসম্ভব দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছে ঢাকা থিয়েটার। আমি সত্যি তাদেরকে এই কাজটির জন্য স্যালুট জানাই।আমি দিল্লী ঘুরে এসেছি, কিন্তু আগ্রা যাওয়ার ইচ্ছে আমার কোন দিনও হয় নি।তাজমহল আমার কাছে সব সময়ি একটি ভিতীকর জায়গা ছাড়া আর কিছু নয়।যিনি শ্রমিকদের কাজ শেষ হবার পর হাতের আঙ্গুল কেটে দেন তার কাছে ভালোবাসার নিদর্শন আসলে যে কেবলি নিজের মনের আনন্দের খোড়াক ছাড়া আর কিছু হতে পারে না,তা একটু ভাবলেই বোঝা যায়।



বৈষম্যের হাহাকার পেরিয়ে কবে আমরা মানুষ হতে পারবো সে চাওয়া আমাদের চির দিনের, এ যেন আজন্ম লালিত এক স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।



নিঃশ্বাসে বিষের সুপোক্ত প্রলেপ ;

নিস্তেজ শরীরের মৃত চাহনী ;

কংক্রীটে বেড়ে ওঠা অভুক্ত যৌবন ।

কেবল আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধে সমাজের অযৌক্তিক যুক্তি --

নিয়মের শৃংখলে দগ্ধ উর্বশী আত্মা ।

"মুক্তি চাই "--"মুক্তি চাই"-বিভৎস আর্তনাদ ;

কোথায় সে মুক্তির স্বাদ ?

অক্টোপাস হয়ে জড়িয়ে থাকে কঠিন আলিঙ্গনে ।

পরাজিত -পরাভূত বর্তমান শুধু হাতরে বেড়ায় স্বস্তির বাহুডোর ;

ন'টা -পাঁচটার দপ্তর যদিওবা ছুটির ঘন্টা শোনায় ,

বিসর্জিত অন্য সময় রক্ষিত -কর্তব্যের বেড়াজালে ।

সমর্পিত এক একটি মৃত্তিকা বিবর্তিত হয়

চাবি দেওয়া এক একটি গৌঢ়ী প্রতিমায়।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬

মামুন রশিদ বলেছেন: বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পোস্ট পড়েছি ।

প্রথমত সেলিম-আল-দীন উত্তর ঢাকা থিয়েটার কার নাটক নিয়ে কাজ করবে- সেটা নিয়ে কৌতুহল ছিল । হারুন রশিদ স্যার নাট্যাচার্য্যের সরাসরি ছাত্র, দীর্ঘদিনের সহকর্মী ছিলেন । তাছাড়া তিনি 'কেরামতমওলা' থেকেই ঢাকা থিয়েটারের নিয়মিত পারফরমার ছিলেন । তার নাট্যবোধ যে দর্শককে আলোড়িত করেছে, তা আপনার আলোচনা থেকেই বুঝতে পেরেছি । আর শিমুল ইউসুফ থাকার পরেও রোজী সিদ্দিকীর পঞ্চনারীতে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া- তার সত্যিকারের মেধা আর ডেডিকেশনের স্বীকৃতিস্বরুপ । সেলিম ভাইয়ের সাথে বিয়ের আগে থেকেই রোজীকে চিনতাম, থিয়েটারের এক নিবেদিত কর্মী হিসেবে । তাদের বিয়ের পর অবশ্য সে হয়ে উঠে আমাদের প্রিয় রোজী ভাবী, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ ।

এবার আসি আপনার অনুভূতি প্রসঙ্গে । 'আলোর মিছিল' আমার পড়া হয়নি । আমাদের সমাজে বিভিন্ন স্টেজে নারী কিভাবে পুরুষ কর্তৃক হেনস্তা হয়, আপনার উপন্যাসের উপজীব্য । জীবন ঘনিষ্ট একজন লেখক তার জীবনের অভিজ্ঞতাকে লেখায় নিয়ে আসবেন- এটাই স্বাভাবিক । তবে অভিজ্ঞতা মানেই যে ব্যাপারটা তার জীবনেই ঘটবে, তা নয় । পরিবেশ এবং প্রতিবেশের প্রতি পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং বোধ উপলব্ধীর জোড়েই সে লেখক হয়ে উঠে ।

তবু আপনার সুরের সাথে একাত্ম হয়ে বলতেই হয়, হারুন রশীদ স্যারকে এই প্রশ্ন শুনতে হয়নি । আপনাকে এটা ফেস করতে হয়েছে । কারণ আপনি নারী । আর আমাদের দেশে নারীরা রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে উপগত হওয়ার পরেও সমাজে নারীর অবস্থানে কোন পরিবর্তন হয়নি- এটা সত্য ।

তবু আমরা আশাবাদি হতে চাই । একদিন এই সমাজ নারীকে মানুষ হিসাবে মুল্যায়ন করবে, মেধা দিয়ে মুল্যায়ন করবে ।


ভালো থেকো রোদেলা । শুভকামনা নিরন্তর ।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১

রোদেলা বলেছেন: মামুন ভাই,খুব যত্ন করে লেখাটা পড়েছে।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসলে ,আমরা প্রতিনিয়ত এ বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি।সমধিকার বলতে যে পুরুষ যা করে নারীকে তাই করতে হবে,ব্যাপারটা ঠিক তা না।এই বিষয় টিকে অনেকে ভুল ব্যাখ্যা করে।নারী যে জায়গাতেই থাকুক না কেন।সে তার প্রাপ্য সন্মান টুকু পাক –এটাই চাওয়া।আর তো কিছু না।
ভালো থাকুন।

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ফেরদৌসী মজুমদার অনেক বড় মাপের অভিনেত্র‌ী ...তাকে সবার সেরা বলবো আমি । আপনার অনুভুতির দারুন প্রকাশ করেছেন শক্তিশালী লেখনীতে।
অন্যের অনুভূতি নিয়ে লেখার ক্ষমতা কবিগুরুর ছিল। আমিও কিন্তু এমন কিছু প্রচেষ্টা নিয়েছি কবিতা লিখার ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪২

রোদেলা বলেছেন: আসলে মঞ্চে একক অভিনয়ের ক্ষেত্রে ফেরদৌসী মজুমদারকেই অনেক সাবলীল লাগতো আমার কাছে।এমন্ টা আর কাউকেই এখোন লাগেনি।অনেক দক্ষতা প্রয়োজন এমন অভিনয়ের।
আপনার প্রচেষ্টা সফল হোক।

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

মামুন রশিদ বলেছেন: 'কেরামতমঙ্গল' হবে, মন্তব্যে নাটকের নাম ভুল লিখেছি ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯

রোদেলা বলেছেন: জোরিমানা হবে ..

৫| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: তাদের জীবন চলার পথ নানান রকম হলেও একটা জায়গায় তাদের পরিচয় এক।তারা নারী,তারা সবাই এই পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার শিকার।কোন না কোন ভাবে তারা নিষ্পেশিত হন নীপিড়নের যাঁতাকলে, কেবল নির্যাতনের ধরনটাই আলাদা যা আজো ঘটে চলেছে এই সমাজে।এখান থেকে মুক্তির উপায় আদৌ কারো জানা আছে বলে আমার অন্তত মনে হয় না।’’---এই কথাগুলো মনের ভেতর গেথে গেল --- সত্যি তাই ---

অনেক দিন ধরে স্টেজ নাটক দেখা হয় না ---
আপনি খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৮

রোদেলা বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো লায়লা।মেয়েদের কেবল ক্ষমতায়ন নয়,প্রয়োজন সচেতনতার।

৬| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২২

অ িনর্বাি চত বলেছেন: েলখািট ভাল লাগল

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯

রোদেলা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.