নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমুদ্র গাহন

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২


সাগরের সৈকতে কে যেন দূর হতে আমারে ডেকে নিয়ে যায় ...।
হুম,সমুদ্রের মাতাল করা ঢেউ েমনি করেই বুঝি আমাদের হাত ছানিতে ডাকে, তাইতো আমরা পকেট খালি করে হলেও ছুটে চলি নীল আকাশে দু’দন্ড জুড়িয়ে নেবো বলে।কিন্ত বিধাতা সব কিছু সবার জন্যে সব সময় তৈরি করে রাখেন না।তাইতো কলাতলীর ঘাটে স্ক্যানিয়া যখন ঠেকলো , দেখলাম শেষ রাতের আধো আলোয় শত শত মানুষ ল্যাগেজ কাঁধে পীচ ঢালা পথের মাঝ বরাবর হেঁটে বেড়াচ্ছে।তার মানে আমরা পাঁচ বন্ধু আর ফ্যামিলী ছাড়াও আরো পাগল আছে যারা ছুটি কাটাতে এই কক্সবাজারেই এসে পৌঁছেছে।
একটা সময় আমি বীচের কাছে গেলেই ভাবতাম-আহা আমার যদি একদিন অনেক পয়সা হয় তাহলে সমুদ্র পাড়ে একটা ঘর বানিয়ে ওখানেই থেকে যাবো,হাতের কাছে থাকবে ল্যাপটপ আর মগ ভর্তি কফি।লিখতে লিখতে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবো তখন কফিতে চুমুক দিয়ে স্রোতের দিকে তাকিয়ে প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নেবো।এভাবেই চলবে আমার লেখক জীবন।কিন্তু আমাদের অতি প্রিয় লং বীচের অবস্থা দেখেতো আমার চক্ষু ছানা বড়া।প্রায় ৩৬০ টা হোটেল আছে এখানে।কিছু দূর হাঁটলেই বাহারি দোকান।আর মোড়ে মোড়ে খাবারের গন্ধ মৌ মৌ করছে।আস্ত কাকড়া –চিংড়ী সব ভাজা হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে।আন্ডা বাচ্চার হাত ধরে রাস্তা পার হবার কোন উপায় নাই।ঢাকায় বসে ট্র্যাফিক জ্যাম নিয়ে কতো কথা লিখেছি,এবার হাড়ে হাড়ে বুঝেছি জ্যাম কারে বলে তাও আবার ট্র্যাফিক বিহীন।এখানে রাস্তায় স্থানীয় লোকেরায় লাঠি দিয়ে কঠিন কাজটা সম্পন্ন করছে,ডানে বায়ে যাবার জন্যে কোন সিগ্নাল লাগে না।হাত ইশারা করলেও একটা গাড়ীও থামেনা, মোটামোটি গায়ের জোরেই রাস্তা পেরোতে হয়।
এই শহরে যেটা চলে সেটা হচ্ছে বিরাট বানিজ্য।পাঁচ টাকার চা খেতে হয় ত্রিশ তাকায়।অন্য খাবারের প্রসঙ্গে নাই বা গেলাম। হোটেলের মালিকরা বুঝেই গেছেন আমাদের মতোন মুরগীরা বছরে দুই বার কক্সবাজার আসবে,আর তারা ঝাকে ঝাকে পোনা ধরবেন।ধরছেনো তাই,আর সেই সুযোগ তো সরকার করেই দিয়েছেন। যেখানে পর্যটন হোটেলগুলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিশাল পসরা সাজিয়ে রেখেছে সেখানে আমাদের দেশে এতো চমৎকার দর্শনীয় স্থান থাকতে কিছু কতিপয় ভুঁইখোর লোক জম্পেশ কামাই করে নিচ্ছে।এতো যে পয়সার খেলা কিন্তু শ্রিবৃদ্ধি হয়নি কিছুই।সী-গালের হোটেল যে সুইমিং পুল সেটা তেমনি আছে,একটা গাছো বাড়তি যুক্ত হয় নি,এক ফোটা পানিও বদলায়নি।কেবল এখন পুলে নামতে জন প্রতি লাগে ৫০০ টাকা।তবে রাতের আকাশ কাঁপিয়ে যুক্ত হয়েছে বিরাট আয়তনের মনিটর যেখানে উচ্চ স্বরে মধ্যরাত অব্দি হিন্দী আর ইংরেজী গান বাজতে থাকে।পাশেই ছোট মতোন পার্ক যেখানে ফার্মের মুরগী গুলা একটু হৈ চৈ করে নিতে পারছে।এটাই আমাদের ঈদ আনন্দ।
চেয়েছিলাম পুর্নিমার আলোয় একটু গা ভিজিয়ে নেব,তা আর সম্ভব হয় নি।এতো মানুষের ভীড়ে নিজেদের প্রাইভেসী বলে যে একটা শব্দ থাকে সেটা একেবারেই চুলোয় বসলো।ক্লান্ত শরীর আর হাফ ডজন আন্ডা বাচ্চা নিয়ে উঠে পড়লাম গ্রীন লাইনে , ৯ টা ২০ এর গাড়ী ছাড়লো ১০ টায়।সময় নিয়ে এদেশে ভাবাভাবি করার অবশ্য এখন আর একটি মানুষো অবশিষ্ঠ নেই,সবটাই স্বাভাবিক মেনে নিয়ে আমারা চলছি ঢাকার পথে।হালকা বৃষ্টির ঝাপটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে ঘন কাঁচের বেষ্টনী।চোখ গুলো তখন ঘুমে ঠুলু ঠুলু,হঠৎ বিকট শব্দে ঝাঁকি খেলাম।ওহ সামনে বিরাট পিক আপ ,সেটাকেই ওভার টেক করতে চাইছে গাড়ীর পাইলট।এদেরকে ড্রাইভার বলে তাদের মান ইজ্জতে আঘাত করতে চাই না।ঢাকা চট্রগ্রাম হাইওয়ে সম্পর্কে যারা জানেন তারা ইতিমধ্যেই বুঝে ফেলেছেন ওই পথে কোন গাড়ী কেন একটা গরুকেও ওভার টেক করা যায় না।কিন্তু আমাদের পাইলটের কাছে বিষয়টা খুবি অসম্মাঞ্জনক,এক কালে উনি বোধ করি ট্রাক চালাইতেন।বার বার অনুরোধ –চিৎকার তাকে দমাতে পারলো না।প্রতিমূহুর্তে উনি অতি আগ্রহের সাথে সামনে যাই আসছে তাই ওভার টেক করে যাচ্ছেন।আর আমাদের কোল থেকে বাচ্চারা পড়ে যাচ্ছে,আমরা গাড়ির কাঁচে বাড়ি খাচ্ছি-সে এক দেখার মতোন দৃশ্য।আমি যখন তার কাছে গিয়ে বললাম-‘ভাই,আজ রাতটা আপনি একটু সাবধানে চালান,কোলে পুলাপান আছে।এরপর যখন আমরা একা কখোন যাবো তখন গাড়ির তলে পিশ্যা ফেইলেন,কুনো সমস্যা নাই।“আমি যে তাকে অপমান কোরলাম এটা বোঝার মতোন মস্তক তার নাই,সে এই ভেবে ভয়ঙ্কর হাসি দিলো যে একজন মধ্য বয়সী মহিলা তার কাছে নিজের বাচ্চার প্রান ভিক্ষা চাইছে।হয়তো নিজেকে বিধাতার কাছাকাছি ভেবে নিলো ,তার পান খাওয়া মুখ অন্ধকারে আর কুতসিত দেখালো।
কুমিল্লার ভাঙ্গা রাস্তা পাড় হয়ে ঢাকার ভাঙ্গা রাস্তায় ঢোকার সময় হাত বারিয়ে টোল নেওয়া হলো।আমি আজো জানিনা বছরের পর বছর এমন রাস্তা ঘাটের জন্যে গাড়ি গুলো টোল নেয় কেন?মনে হয় এতো ঝক্কির পর আমরা কয়টা মানুষ যে জানে প্রান নিয়ে নিজ শহরে ফিরতে পারলাম এটা তারোই ট্যাক্স।সূর্য তখন আলো ফোটাচ্ছে চারপাশে,শুন্য শহর নিজেকে সাজিয়ে বসে আছে আরো একবা গিলবে বলে।আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো-মরি নাইরে মরি নাই...এখোন বেঁচে আছি।
বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে সুন্দরতম অনুভূতি।আরো সুন্দর এই ইদের নাটক দেখা।বাড়ী ফিরে টিভি ছেড়েই দেখি-নাটকের মধ্যেও কক্সবাজার।দৃশ্যটা এমন-একটা অর্ধ নগ্ন রমনী বুক পর্যন্ত টোয়ালে পেঁচিয়ে হোটেলের বেডে শুয়ে আছে।ভুল বললাম,স্টার বলা উচিত ছিলো।এখন যে কবে কেমনে স্টার হয়ে যায় তাইতো বুঝি না।যাই হোক ;সুন্দর মুন্দর একটা ছেলে ওর পাশে এসে বসে বললো-ওঠো জান,আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।কন্যার জবাব-আমি পাশে থাকতেও তোমার এতো ক্ষিদে পায়?ও মোর খোদা,আমি কি বাংলা নাটক দেখতেছি, এটাই কি তৃষ্ণা নাটকের সংলাপ ,নাকি কোন হিন্দী মুভী ?পোলা কি এখন মাইয়ারে খাইতে বইবো?আমি কি চ্যানেল বদলায় দিমু,কিন্তু কিউরিয়াস মাইন্ড আরো দেখতে চায়।চলুক,রুমে অন্য কেউ নাই।সিনটা মিস করা ঠিক হবে না।এর পর জান সোনারা কিছুক্ষন গলা গলি করলো।একবারতো মনেই হলো মেয়েটার গায়ের তোয়ালে এই এক্ষনি পড়ে গেলো বলে।ইশ,...।।
নাহ উত্তেজিত হবার কিছু নাই,ডিরেক্টর পরের দৃশ্যে নারীর শরীরে কাপড় রেখেছেন।মৌসুমী হামিদ হোলদে শারীতে এক খানা ছোট মোট গাড়িতে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে স্বামীকে ম্যারেজ ডের সারপ্রাইজ দেবে বলে।পথে দেখা পুরোন প্রেমিক হাঙ্কি ফাঙ্কি বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত লেখকের সাথে।লেখা লেখি করে কেউ এত কম বয়সে বড় লোক হয় তা অবশ্য আমার জানা নেই।তাকে লিফট দিয়ে দুজনি একি হোটেলে উঠলো।মনে হলো এ যেন খুব গোঝানো একটা বিষয়-পুরোন প্রেমিক যুগলের জন্যে হোটেল ওয়ালারা রুম রেডি করেই রেখেছিলো।আর ওইযে সারপ্রাইজ খাবে যে জামাই সে তার ব্যবসার নাম করে প্রেমিকা মানে মৌসুমীর বান্ধবীকে হীরার নেক্লেস পড়িয়ে বেড়াচ্ছে।যাই হোক,সিনেমার শেষ দৃশ্যে যা হয় তাই ঘটলো।জামাই খেলো বউয়ের হাতে চড় আর প্রেমিকার চোখে জল।সামনে বিরাট সমুদ্র নাটকের শেষ দৃশ্যের স্বাক্ষী হয়ে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।লাল শারীতে মৌসুমী হামিদ দাঁড়িয়ে আছে,পাশে এসে দাঁড়ালো পুরোন প্রেমিক।তাকে বলা হলো গল্প লিখতে,পুরোন প্রেমিকা হয়ে গেলো গল্পের নায়িকা।পাঁচ মিনিট আগেও যেই মেয়ের জামাই অন্য মেয়েরে নিয়ে হোটেলে রাত কাটালো তাকেই আবার ফিরতে হবে পুরোন প্রেমিকের কাছে ,এটা কোন অঙ্ক?পাতিগনিত নাকি বীজগনিত –এটা নাট্যকার ভালো বলতে পারবেন।
বৃষ্টিটা এখন একটু ধরে এসেছে।চারদিনের ধকল কাটাতে আরো কিছু সময় লাগবে,কিন্তু কাল থেকেতো আবার সেই জীবন।খেটে খাওয়া জীবন,সকালে উঠে বাসে ঝুলতে ঝুলতে অফিস,সন্ধ্যা নামতেই হাঁটু পানিতে পুনরায় ঠেলাঠেলি।আমাদের জন্যে বড়লোক কোন লেখক পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে না-তুমি কি আমার গল্পের নায়িকা হবে?আমাদের গল্পের মোড় গুলো আমাদেরি লিখতে হয়। জীবনতো আর চার বাক্সের রঙ্গীন নাট্যশালা নয়।জীবন এমনি ...।শুধু আর একবার সমুদ্রের নোনা জলে পা ভেজাতে ইচ্ছে করে খুব।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৭:৫৪

মামুন রশিদ বলেছেন: আমি মনে করি অফ টাইমে কক্সবাজার বেড়ানোর জন্য ভালো । সমুদ্রে সিগনাল থাকলে আরো ভালো । নিরিবিলি সৈকতে সমুদ্রের গর্জন আর দাপট খুব উপভোগ করা যায় । আর পিক টাইমে যদি আসতেই হয় তাহলে একটু কষ্ট করে টেকনাফ আর শাহ পরীর দ্বীপের শান্ত নির্জন বিচে যাওয়া যেতে পারে ।

জবের প্রয়োজনে প্রায় প্রতি মাসেই কক্স যেতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা থেকে সাজেস্ট করলাম ।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:২২

রোদেলা বলেছেন: ইশ,আপনার জবটা আমাকে দিয়ে দেন।খুব ভালো হয়,জুলাই মাসের ঘন বর্ষায় সমুদ্র গাহন ঠিকি হয়ে যেতো।
হুম,ওই সময়টা পাহাড়ের পাশেও খুব ভালো লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.