নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাসপোর্ট রঙ্গ //

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৫১

ছোট বেলা থেকেই আমরা কোন না কোন তামাশার সাথে সম্পৃক্ত।একটা সময় যাত্রা পালা চলতো ,বায়োস্কোপ ছিলো ; বিনোদনের জন্যে দলে দলে মানুষ হাজির হতো বায়োস্কোপে তামাশা দেখার জন্য।রঙ্গীন আলোয় মোড়ানো সিনেমা সেইসময় ছিলো না।বায়োস্কোপের চোখে মুখ রেখে দেখে নিতাম রঙ্গীন এক অন্য দুনিয়া।সেই দুনিয়া দেখতে দূর দুরান্ত থেকে লোক চলে আসত।কিন্তু আজকের এই দিনে আপনাকে বায়োস্কোপের এই তামাশা দেখার জন্যে একটুও দূরে যেতে হবে না।স্বয়ং রাজধানী শহরেই সাজানো আছে নিদারুন এক বায়োস্কোপ,আর তা হলো বাংলাদেশ পা্সস্পোর্ট অফিস কর্মশালা।যে একবার এইখানকার রঙ তামাশা গায়ে মেখেছে সে দ্বীতিয়বার ও পথে পা বাড়িয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
আপনি মূলত তিন টি ধাপে এই বায়োস্কোপ দেখতে পারেন।প্রথমত , খেলা শুরুর প্রারম্ভেই সোনালি ব্যাংকের শাখায় তিন হাজার টাকা জমা দিয়ে নিন।এতে এদের কান্ড কারখানা আপনি এক মাসের বেশি সময় ধরে আরাম করে দেখতে পারবেন।আর আপনার হাতে যদি এত সময় না থাকে তবে সাত হাজারেই হয়ে যাবে।তাও যদি না পারেন তাহলে পাসপোর্ট অফিসের চারপাশে- উপরে নীচে ঘুরতে থাকা কিছু গিরগিটির সহায়তায় ঘরে বসে এই তামাশার ছিটে ফোটা পেলেও পেতে পারেন।এতে আপনার পকেট থেকে কতো টাকা খোয়া যাবে তার হিসেব করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে লজ্জায় ফেলবেন না আশা করি।
পুরো পাসপোর্ট অফিস সেনা দিয়ে ঘেরা বলেই হয়তো ওখানে পিটি প্যারেডের মতন লাইন দেবার বিষয়টি খুব বেশি মাত্রায় চোখে পড়ে।য়ার হবেই না কেন,হাজার হাজার মানুষের লাইন ,সেতো চাট্টিখানি কথা না।ফরম তুলতে লাইন, ডিরেকর কে দিয়ে সাইন করাতে লাইন এবং জমা দিতেও বিশাল লাইন।কিন্তু ভেতরটা একটু উঁকি মেড়ে দেখলেই আপনার চোখ পরিষ্কার হয়ে যাবে।ভে্তর ঘরে বসে থাকে বড় বড় কর্মকর্তাদের শালা শুমন্ধিরা ।ওদের জন্য সব সময়ি এক্সট্রা কেয়ার।হাসছেন তো,এ আর নতুন কি-এ দেশে সব জায়গাতেই এমন এক্সট্রা কেয়ারতো আছেই।তবে ডিসিপ্লিন রক্ষার সব চেয়ে পারদর্শি টিমের ছাতির নীচেই যদি এমন অডিসিপ্লিন চলতে থাকে তবে কেমন লাগে আপনিই বলুন।
হঠাত জেগে ওঠা ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে নিজেই ডিসিশনটা নিয়ে ফেললাম-পাসপোর্ট ডিজিটাল করতেই হবে ।তাই পুরোনটা নিয়ে হাজির হলাম আগারগয়াঁও অফিসে।আগে থেকেই অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করে এসেছিলাম তাই হয়তো তেমন একটা সময় লাগলো না জমা দিতে।ছবি তোলার কাজটাও খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো,অবশ্য আমিও আগে থেকেই এক সাংবাদিক বন্ধুর রেফারেন্স নিয়েই গিয়েছিলাম।তা না হলে সকালের কাজ শেষ হতো বিকেল নাগাদ।ওখানকার অবস্থা দেখলে স্বভাবতই মনে হবে দেশের সব মানুষ এক কাতারে বিদেশ পালাচ্ছে।লুঙ্গি ওয়ালা,স্যুট পড়ুয়া ,বোরখা ওয়ালী কোন ধরনের মানুষের অভাব নাই।
কোরবানী ঈদের আগেই ফরম জমা দেওয়া শেষ,তাই মাংস খাওয়ার উতসবের কিছু বিরতী দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম –এই বুঝি মোবাইলে মেসেজ চলেই আসবে।তাই কিছুদিন অপেক্ষা করে হতাশ হৃদয়ে হাজির হলাম পাসপোর্ট অফিসের তথ্য কেন্দ্রে।তথ্যকেন্দ্র আমাকে বললো ৩০৫ নম্বর রুমে যান।৩০৫ নম্বর রুমে ঢুকে উঁকি দিয়ে দেখলাম সাত সাত টা টেবিল ,কোন টাতে যাবো।আমি একা কনফিউজড না,তারাও কনফিউজড ।এ বলে ওর কাছে যান,ও বলে তার কাছে যান।শেষটায় একটা ডেক্সটোপ ওয়ালা লোক পাওয়া গেলো যাকে ডিজিটাল মানব বলা যেতে পারে।উনি আমার নম্বরটি ভালো করে পরখ করে বললেন-আপনার টাকা পয়সা কি ক্লীয়ার ছিলো?
আমার বিনীত উত্তর-জ্বী ভাই,আমি ঈদের আগেই তিন হাজার টাকা দিয়ে এসেছি ব্যাংকে।রিসিট জমা দিয়েছি।
উনি আরো মনোযোগী হলেন-হুম,টাকা পয়সাতো ক্লীয়ার আছে।তাহলে আর একটু অপেক্ষা করেন , হয়ে গেলে মেসেজ পাবেন।আমি অনুনয় করলাম-আমার ফাইলটা একটু দেখেন ভাই,যদি কোন ঝামেলা থাকে তবে মিটিয়ে ফেলতে চাই।উনি এদিক ওদিক ঘেটে বললেন-না,ফাইলতো এখানে থাকে না,আপনি ৭০১ নম্বর রুমে যান।
সাত তলা শুনেই আমি লিফটের সামনে গিয়ে হাজির হলাম।কেউ একজন ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বললো-বড় বাঁচা বাঁচলাম ,এইটার গেট তো একবার বন্ধ হইলে খোলে না।আবার খুললে সহজে বন্ধ হয় না।আমার মাথা গেলো নষ্ট হয়ে ;দরজার সামনে লেখা-লিফটে কোন জেনারেটর নেই।প্রচন্ড ভয়ে দৌঁড়ে সাত তলায় উঠে গেলাম,কিসের লিফট ; আগে জান তো বাঁচুক,ইলেক্ট্রিসিটি গেলে পাক্কা এক ঘন্টা।
সাত তলায়তো এলাহী কারবার।মাটিতে ফাইল,আকাশে ফাইল,টেবিলে ফাইল,আলমারীতে ফাইল।ফাইলি ফাইল।এতো ফাইল থেকে আমার ডিজিটাল ফাইল কি করে ডিজিটালি বের হয়ে আসবে কে জানে।আমি ডেলিভারী স্লিপ হাতে বোকার মতো টেবিলে টেবিলে ঘুরছি।এখানেও একটা ডিজিটাল মানব পাওয়া গেলো।তার হাতে নম্র খানা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাক লাম প্রত্তুরের আশায়।পাশে আরো পাঁচ জন পুরুষ ও মহিলা উতসুক হয়ে পি স্যার দিকে তাকিয়ে আছে ।লোক টি ডিটেইল দেখার জন্যে আর এক জনের কাছে ফাইল চাইলো।সে বেচারা ফাইলের স্তূপের মধ্যে কিছু সময়ের মধ্যে ডুবে গেলেন।ঈদের আগের ফাইল পড়ে আছে সপূর্ন আন্টাচ অবস্থায়।কোথায় যে কার ফাইল আছে তা এক মাত্র হিন্দী মছবির রবকপ বলতে পারবে।আমি তার অস্থির অবস্থা ন্দেখে নিজেই ঘেমে গেলাম।এতো বড় ঘরে মাত্র দুইটা ফ্যান আর একটা কম্পিউটার.২০১৪ সালে এসে পাস্পোর্র অফিসের এহেন এনালক সিস্টেম আমাকে মর্মাহত করলো।ামি ফিরে এলাম।
তিন দিন হলো মোবাইলে মেসেজ পেয়েছি,আবার ই-মেইল ও পেলাম-আপনার পাসপোর্ট রেডি,অতি সত্তর পাস পোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।আমি সেদিন অফিসের কাজ গুছিয়ে চার টার মধ্যেই ওখানে হাজির হলাম।কারন তিন টার পর থেকে পাসপোর্ট দেওয়া শুরু করে।কিন্তু আমার হৃদয় ভেঙ্গে চূড়ে খান খান হয়ে গেলো যখন দেখলাম সমগ্র ফটক বন্ধ,কোন কাউন্টারে লোক নাই।স্লীপ নেবার জন্যে কেউ নাই,একটা মাত্র কাউন্টারে একটা মাত্র সৈনিক চিৎকার করে রোল কল করার মতোন নাম ডাকছে আর একজন একজন করে এগিয়ে যাচ্ছে।আমার চারপাশে কম করেও শখানেক মানুষ।আমি এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন কোরলাম-ভাই,এখানে কি হচ্ছে?
লোকটার ভ্রুঁ কুঁচকে গেলো-দেখতে পাচ্ছেন না,পাসপোর্ট দিচ্ছে।
স্কুলের বাচ্চাদের মতোন সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে,আর একটা করে নাম পড়া হচ্ছে। লোকজন সুবোধ বালকের মতোন হাত তুলে এগিয়ে যাচ্ছে।কি বিচিত্র ব্যবস্থা ।যারা উন্নত দেশ থেকে এসে পাসপোর্ট রি-নিউ করছে তাদের চেহারা দেখার মতোন ছিলো।আমি দু’হাত দিয়ে সামনের মানুষদের একরকম ধাক্কা দিয়ে কাউন্টারে গেলাম-স্লীপ দিবো কোথায়?
ওপাশ থেকে বিরক্তিকর সুর শোনা গেল-আজ আর হবে না।কাল আসেন।
–কাল আসলে কি কালকেই পাসপোর্ট পাওয়া যাবে?
-ওহ,আপনি কালকে সকালে এসে লাইনে দাঁড়ানতো।
লাইনে দাঁড়ানোর জন্যে আমি বেছে বেছে হরতালের দিন টাই বেছে নিলাম।কিন্তু সকাল দশটার মধ্যে পাসপোর্ট অফিস প্রাঙ্গনে গিয়ে আমার চক্ষুইতো ছানা বড়া।আমার সামনে কম করে হলেও এক হাজার লাইন,আর পেছনে যে লাইন তা বাড়তে বাড়তে চোখের নিমিষে দুই হাজার ছাড়িয়ে গেলো।আমি দাঁড়িয়েছিও মহিলা লাইনের মাঝ খানে।বেশির ভাগেরি কোলে বাচ্চা আর বোরখা পরা।কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় বয়স খুব কম।একজনকে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-আপনি কোথায় যাবার জন্যে পাসপোর্ট করছেন?
নম্র সুরে মেয়েটা উত্তর করলো-কুয়েত।
-ওখানে কি আপনার হাজবেন্ড থাকে?
-হুম।উনি বলছেন কুয়েত থেকে অন্য দেশে চলে যাবে।তাই আমারে তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট করতে বলসেন।আমি আর বাবু গেলেই সাথে নিয়া যাবে।
-আপনার বিয়ে হয়েছে কতো দিন?
-গেলো বছর।
–ওখানে গিয়ে আপনি কি করবেন?
উত্তরটা আর শুনতে পারিনি,পাশ থেকে মোটামতো এক মহিলা ধাক্কা দিয়ে লাইনে ঢুকে গেলো।তাকে কিছু বলার আগেই পাশে ছেলেদের লাইনে বিরাট হট্টগোল আরম্ভ হয়ে গেলো,কার আগে কে দাঁড়াবে তা নিয়ে মারমুখী অবস্থা।আমি একজন সৈনিক কে ডেকে বললাম-ভাই ১১ টা বাজে।গেট খুলবেন কখন।রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো কতোক্ষন?
-খুলবে খুলবে।তিনি আশ্বস্ত করে চলে গেলেন।আমি পেছনে তাকালাম,লাইনটা এখন এল জি ডি অফিসের গেইট অব্দি চলে গেছে।
আমাদের অবাক করে দিয়ে সদর দরজা খুলে গেলো,আমরা রাজ প্রাসাদের প্রথম ফটকে প্রবেশ করলাম।এরি মধ্যে একটা মেয়ে তার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছে না,তার হাতে মোবাইল নেই।সে পেছন দিকে গিয়ে গার্ডকে বললো-আমার ভাইকে পাচ্ছিনা।ও তো অন্য লাইনে আছে।
স্বাভাবিক ভাবেই গার্ড মহা বিরক্ত-এখন গেইট খোলা যাইবো না,বাইরের পাবলিক ঢুইক্যা যাইবো।আপনে এইখানেই অপেক্ষা করেন।
রেলগাড়ি ঝম ঝম পাঁ পিছলে আলুর দম-খেলার মতোন উপরে উঠে গেলাম।কিন্তু রেলগাড়ি আর রেল গাড়ি থাকলো না।পুরো লাইন আঁকা বাঁকা হয়ে গেলো।কারন তিনটা কাউন্টারে তিনজন থাকার কথা।একটা –পুরুষ ,একটা-মহিলা আর একটা-রেফারেন্স বা অফিসারদের জন্যে।এমন টাই লেখা আছে।কিন্তু দেখা গেলো একজন ইঞ্জিনিয়ার্সের সৈনিক একাই সবার স্লীপ চেক করছে আর জমা নিচ্ছে।বাকী গুলা যে কই তা আমাদের জানার কথা না।আমার সামনে খুব বেশি মহিলা ছিলো না তাই তেমন তাড়া দিলাম না,আমার স্লীপ খানা তার হাতে দিয়ে রোল কল ; মানে নাম কলের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
অন্যান্য রুমের মতো এই ২০১ নম্বর রুমটা এতো বড় না।তাই স্লীপ জমা পড়তে পড়তে পুরো ঘর মানুষে মানুষে ভরে গেলো।কিছুক্ষনের মধ্যে আমি তাল হারিয়ে ফেললাম। কারন আমার চারপাশে এতো মানুষ যে সামনে পিছে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।ওদিকে মাইকিং চলছে অবিরত।সেই আওয়াজকে টার্গেট করে আমি কাউন্টারের দিকে এগোলাম।এক কোনায় মেয়েরা জটলা করে বসে আছে ,কিছু মেয়ে দাঁড়ানো।সোজা হয়ে শির দাড়া হয়ে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় ।এখানে ফ্যামিলি প্ল্যানিঙ্গের লোক জন এলে বেশ কিছু বানী দিতে পারতেন জন সংখ্যার আধিক্য সম্পর্কে তা বেশ বোঝা গেলো।
ঘড়ির কাটা ১২ টা পেরিয়ে যাচ্ছে।নাম ডাকার কোন আভাস পাচ্ছিনা।এগিয়ে গেলাম-ভাই,আপনাদের সব কাউন্টারে কি একজন করেই লোক থাকে?
-কি বলেন?বড় বড় দুটো চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
-না মানে,জমা নিলো একজন, আবার কল করছেন আপনি একাই, ফাইল চেক করছেন আপনি আবার পাস পোর্ট দিচ্ছেনো আপনি।
-আরো লোক আছে,তারা ভেতোরে কাজ করছে।আপনি জানেন এখানে কতো কাজ?
-কিযে বলেন ভাই।আমরা জানবো কেন?আমরা তিন হাজার লোক অফিসের কাজ ফেলে আসছি কেবল আপনাদের কাজ দেখবো বলেইতো।কি মোটা একটা ড্রেস পড়ে আপনি কাজ করছেন,আমার ভীষন খারাপ লাগছে।
লোকটা আরো একটু রেগে যাবে তখনি একজন মহিলা দৌঁড়ে এলো-ভাই,আমার পাসপোর্টে আমার নাম তো ভুল লিখসেন?
-এটা কি আমি লিখসি নাকি?আপনে যে নাম দিসেন তাইতো উঠবে নাকি?
-নারে ভাই, স্লীপের সাথে নামতো মিলেনা।
বোঝ ঠেলা , এমনিতেই এরা কাজ করতে করতে অস্থির। এখন এই নাম নিয়াতো আরো ঘন্টা খানেক।
বাঞ্জালী স্বভাবতই অতি উতসাহী জাতি।পেছনের লোকজন একবারে ঝাঁপিয়ে পড়লো কি হয়েছে বিষয়টা দেখার জন্যে। ভেতরে ছোট্ট সাইজের একটা মিটিং শুরু হয়ে গেলো,তার সাথে যুক্ত হলেন বড় অফিসাররা।
কাউন্টারের জটলা ঢেকাতে ভলান্টিয়ার এসে বাঁশিতে ফু দিয়ে বললেন-লাইনে দাঁড়ান।
বেশ কয়েকজন উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠলো-সকাল থেকেতো লাইনেই আছি,শিশু মেলা পর্যন্ত লাইন চলে গেছে।আর কতো।
আমি ঘাড়ের উপর র‍্যাংক দেখে একজন অফিসারকে ডাকলাম-ভাই শুনেন।আপনারা এত গুলা মানুষ ভেতোরে কি করেন?
-ভেতরে অনেক কাজ আপা ,আপনে বুঝবেন না।
-তিন হাজার লোকের পাসপোর্ট যদি একটা মানুষ দেয় তাহলেতো সারা রাতেও দেওয়া শেষ হবে না।সেতো রোবট না।
-আপনাকে কি বলনবো আপা,এখানে লোক বলের অনেক অভাব।
–তাহলে একটা কাজ করেন আমাদের সবার সি ভি নেন।দেখবেন কাজ করার মতোন অনেক লোক পাবেন।আপনার কি মনে হয় , এই যে ইয়াং ইয়াং ছেলে মেয়েরা বিদেশ যাচ্ছে এরা কি বেরাতে যাচ্ছে ?না,সবাই যাচ্ছে কাজ করতে।কাজ না পেতে পেতে এমন অবস্থা যে বিদেশে বসে জুতা শেলাই করতেও তারা রাজি।
এবার অবাক হয়ে অফিসার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-আপনি কি করেন আপা?
-আমি কিছুই করিনা ভাই।আমি বেকার।আমারে একটা চাকরী দেন।আপনাদের ইঞ্জিনিয়ার্স ডিপার্টমেন্ট পুরো শহরের চেহারা বদলায় দিলো কয়েকটা প্রজেক্টে সফল করে আর আপনারা একটা পাসপোর্ট অফিস সামলাতে পারেন না।তাওহলে চাকরীটা আমারেই দেন।
পেছনে সবাই হাত তালি দিয়ে দিলো,বেচারা মুখটা পাংশু করে ফিরে গেলো ভেতরে।
কিছুক্ষনের মধ্যে তিন জন সৈনিক বসলো।একজন নাম ডাকে ,একজন সাইন করায় আর একজন পাসপোর্ট এগিয়ে দেয়।এভাবেই ভালো চলছিলো।হঠাত দেখা গেলো একি নাম বার বার উচ্চারন করছে সামনে বসা মাইক ওয়ালা। আমরা একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি-ব্যাপারটা হচ্ছে যারা অনুপস্থিত ছিলো তাদের ফাইলটা বার বার তার মুখের সামনে এসে পড়ছে।আর উনি আন্ধার মতো সেই নামি আউড়াচ্ছেন।লে হালুয়া,এবার তিন জনের ঠেলা সামলা ।এক জনিতো ভালো ছিল।আবার চিৎকার করে একজন বললেন-ভাই,আপনেগো কাছেতো বিরানী চাই নাই।পাসপোর্ট চাইসি।এম্বা করেন ক্যা।?
দুপুর দুটো। বিরানীর কথা শুনে পেতে ক্ষুদা টং করে ঊঠলো,ওদিকে শৌচাগারের গন্ধে বমি চলে আসছে।এতোক্ষন কারো পক্ষে বাথরুম আটকিয়ে রাখা অসম্ভব। তার উপরে অনেক লোক ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে।আমার মেজাজ গেলো চড়ে।আবার চড়াও হলাম কাউন্টারে-কি আপনেরা কি তামাশা লাগাইসেন?এতো গুলা মানুষ তিন হাজার টাকা দিয়া কি এখানে আপনেদের তামাশা দেখতে আরসে?
আমার কন্ঠের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে অনেকেই চিৎকার করে বলতে লাগলো -ভাঙ,কাউন্টারের গ্লাস ভাইঙ্গা দে।
আমি খুব বিরক্ত হলাম-গ্লাস ভাংলে কি আপনেদের কোন লাভ হবে?বরং যা পাইতেন তাও ইহজীবনে পাবেন না।
আবার ওই অফিসারকে ডেকে পাঠালাম।তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম-আমরা সকাল দশটা থেকে লাইনে দাঁড়ানো। আমার সামনের -পিছের সমস্ত পাসপোর্ট দেওয়া হয়ে গেছে।কেবল আমি বাকী।আর আপনেরা এক নাম চৌদ্দবার ডাকছেন।
-হয়েছে কি আপা,যারা আসেনি তাদের ফাইলটা আমরা বার বার পড়ি ,যদি নিতে আসে তাহলে যেনো বাদ না পড়ে যায়।
-যারা আসে নাই তাদের ফাইল আপনে আলাদা কইরা শিকায় তুইল্যা রাখেন। যখন আসবে তখন নামায় দিয়েন। এখন যারা আছে তাদের ফাইল বাইর করেন। এক্ষনী।
লোকটা কি বুঝলো কে জানে আবার ভেতরে চলে গেলো।মাইকওয়ালার সামনে কোন ফাইল নেই।লোকজন অনবরত চিৎকার করছে,তারে যে জুতা পেটা করে নাই তাই বেশি।সে নিরুপায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের জনতার দিকে।এত্তো মানুষে্র ফাইল?কই গেলো এত্তো ফাইল?
দুপুর তিনটা ,আর পারছিনা।আমি সহ আরো কয়েকজন স্যান্ডেল বিছিয়ে মাটিতে বসে পড়লাম।যাদের বাচ্চা আছে সাথে তাদের অবস্থাতো কাহিল,কতোক্ষন বসে আবার উঠে দাঁড়ায়।সেই বাচ্চা মেয়েটা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো-আমি কি আমার সয়ামীর কাছে যাইবার পারুম না?
হায়রে মেয়ে ,যে বয়সে তোর মাঠে ময়দানে দৌঁড় ঝাপ করার কথা সেই বয়সে তুই চিন্তা করিস-স্বামীর কতা।ওরে,আমারে কেউ মাইরা ফেলা।কিন্তু কেও আমাকে মাড়ে না।আমি তাকিয়ে তাকিয়ে মানুষ দেখি।এতোক্ষন গলা বাজি করাতে কেউ কেউ ধরেই নিয়েছে আমি নেত্রী টাইপের কিছু একটা।কেউ কেউ ধন্যবাদ দিতেও ভুললো না।আবার কিছু বখাটে টাইপ ছেলে আগ বাড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করলো।আমি মনে মনে হাসলাম-বাছা ধন,আমার লগে ফিল্ডিং মাড়তে আইসা কুন লাভ নাই,তুমি ডিফল্ডিং হইয়া যাইবা।সৃষ্টিকর্তার এক দুনিয়ায় কতোনা বিচিত্র মানুষ।
বেলা ৩টা ৪৫ মিনিট,আবার শুরু হলো নাম ডাকার পালা,এবার আমি দেখতে পেলাম আমার পরিচিত মুখ গুলো এবার একদমই নাই।তার মানে বিরাট একটা ভুল হয়েছে।মাঝের কিছু ফাইল মিসিং হয়ে গেছে।এবার আর যায় কোথায়?আমি ওই অফিসারকে টার্গেট করে বললাম-আমি আপনার নামে অবশ্যই রিপোর্ট করবো।আপ্নি কোন সিরিয়াল মেইন্টেইন করছেন না।মাঝের নামগুলো বাদ দিয়ে নতুন দের নাম ডাকা হচ্ছে?এটা কি ফাজলামো নাকি?
এবার উনি একটা কাগজ আর কলম দিলেন-আপা,আপ্নারর নাম আর আই ডি নম্বর এখানে লিখে দেন।
পাশ থেকে একজন ফিস্ফিসিয়ে বললো-লিখেন আপা,দেখবেন কাজ হবে।
লিখে দিলাম।সে আরো জানালো-এখানে একশ্রেনীর দালাল আছে যারা নির্দিষ্ট কিছু অঙ্কের বিনিময়ে পাসপোর্ট তুলতে সাহায্য করে।কাউন্টারে স্লীপ জমা দিলে সেই সাইন দেখে তারা তড়িত গতিতে কাজ করে।
এর মধ্যেই নীচ থেকে খবর এলো এক মহিলা কোন এক দালালের হাতে তিন হাজার টাকা তুলে দিয়েছে,কিন্তু সেই লোকের আর কোন পাত্তা নেই।এই সব অরাজকতা নিয়ে সময় টি ভি কিছুদিন আগেও নিউজ করেছে।নিজের চোখে বাংলাভিশনের ক্যামেরাতো দেখেই এলাম।কিন্তু কোন টাতে কি কিছু হয়েছে?
এই যে আমি এত সময় ধরে লিখলাম,আর আপনারা পড়লেন এতে কি কোন লাভ হলো? না,কিছুই হয় নাই।আমাদের আসলে কোন কিছুতেই কিছু আসে যায় না।।দূর্নীতি হবেই-এই সত্য মেনে আমাদের প্রতিদিন পথ চলতে হয়।আর অনিয়মগুলো নিয়োমের হাতেই বন্দী হতে থাকে।
পরিশেষে সেই অফিসার নিজ হাতে আমার পাসপোর্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।তবে আমার পুরোন পাসপোর্টে ইন্ডিয়ার যে ভিসা ছিলো তা নতুনটাতে সংযুক্ত নাই।সেই কথাটা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি।আমরাও যেমন না খেয়ে আছি,তারাও তো না খেয়ে সারাদিন কাজ করছে।শুধু দুঃখ একটাই - কাজটা গুছিয়ে করতে পারছেনা।

যারা নতুন পাসপোর্ট করতে আগ্রহী তাদের জন্যে কিছু টিপস।

১।সাথে টুল রাখুন,দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হয়রান হয়ে গেলে বসে নিতে পারবেন।
২।ডল নিয়ে যেতে পারেন।অপেক্ষমান অবস্থায় প্রকৃতির ডাক এলে ডামিকে আপনার জায়গায় দাঁড় করিয়ে প্রয়জোনীয় কাজ সারুন।
৩।সাথে শুখনো খাবার বা পানি রাখবেন।না হলে ক্ষুধার তাড়নায় গ্যাস্ট্রিক বাঁধাতে পারেন।
৪।গলা ব্যাথার ট্যাবলেট রাখুন সাথে,কারন অনবরত চিৎকার করে আপনার গলায় পেইন হবে নিশ্চিত।
৫।সবশেষে ধৈর্য ধারন করুন।কারন ওটাই স্বাভাবিক নিয়মে পাসপোর্ট পাওয়ার মূলমন্ত্র।
----------------------------------------------------

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৫৩

মিজভী বাপ্পা বলেছেন: ++++++++++++++++++++++++্

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:১৯

রোদেলা বলেছেন: :) :) :) :) :) :) :) :) :) :) :) :) :) :)

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:২৬

মামুন রশিদ বলেছেন: পাসপোর্ট বিড়ম্বনার ইতিহাস পড়তে পড়তেই টায়ার্ড হয়ে গেছি । বাস্তবে কি প্যাড়া নিতে হয়, কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারছি ।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০২

রোদেলা বলেছেন: হা হা হা.।।।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৪৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: মামুন রশিদ বলেছেন: পাসপোর্ট বিড়ম্বনার ইতিহাস পড়তে পড়তেই টায়ার্ড হয়ে গেছি । বাস্তবে কি প্যাড়া নিতে হয়, কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারছি ।

হাহাহাহাহাহা

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮

রোদেলা বলেছেন: সবার এত সময় নেবার জন্যে কষ্টই হচ্ছে।

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:১৮

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সেইম টু মি.... মেসেজ,মেইল দিয়ে কনফার্ম করার পর সকালে গিয়ে লাইন দিয়ে বিকেলে শুনি পাসপোর্ট ডেলিভারী ডিপার্টমেন্টে পৌঁছয় নাই। এরা যে কেন কুরিয়ারে পাঠায় না... তিন হাজার টাকায় পাসপোর্ট করতে পারলে তিন চার শত টাকা কুরিয়ার ফিও দেয়া যাবে। এইসব অফিসে গেলে মনে হয় দেশটা আসলেই মেধাশূন্য হয়ে গেছে, নইলে এতো গুরুত্বপূর্ণ অফিসের এই হাল হবে কেন?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

রোদেলা বলেছেন: আজ জানলাম ৫০ জন ধরা পড়েছে।ঘটনা সত্য কিনা কে জানে।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:১০

তুষার কাব্য বলেছেন: দারুন..অভিজ্ঞতা :D (আমারও আছে ;) )

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০

রোদেলা বলেছেন: আসলেও দারুন অভিঙ্গতা ;)

৬| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: হুম কবে যে এই সমস্যাগুলো দূর হবে । |-) |-) |-)

৭| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৪২

রোদেলা বলেছেন: :(

৮| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:১৮

জামান শেখ বলেছেন: পাসপোর্ট রিনিউ করার পদ্ধতি বলবেন কি? আমারটা করতে হবে।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৮

রোদেলা বলেছেন: ছবি,ভোটার আই ডি কার্ড বা জন্ম সনদ ,তিন হাজার টাকা সোনালী ব্যআঙ্কে জমা দিয়া তার কপি লইয়া ফরম পূরন কইরা লাইনে খাড়ায় যান টুল সমেত।আগের পাসপোর্ট নিতেও ভুল কইরেন না। B-)

৯| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২১

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: কঠিন অবস্থা ! আমি উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে করেছিলাম ২০১২ তে, তখন এত কষ্ট হয় নাই অবশ্য... সব কাজ মোটামুটি ঝটপট শেষ হয়েছিল...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.