নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি রোদের জন্মানোর কথা ছিলো ।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫০



প্র্যাকটিকাল যেদিন থাকে সেদিন টাই এমন দেরি হয়ে যায়।তাই গতকাল রাতেই নিজের ল্যাগেজ গুছিয়ে রেখেছিলো মেঘলা।প্রতি সপ্তাহেতো আর বাড়ীতে যাওয়া হয় না,ইউনিভার্সিটি ছুটি দিলেই তবেই না।সামনে পর পর দুদিন হরতাল যেন ছুটির আমেজ নিয়ে এলো।এই সময়টা এমনিতেই ক্লাশের চাপ কম থাকে,তাই বাড়ীতে কাউকে কিছু না জানিয়েই এক প্রকার সারপ্রাইজের প্ল্যান করে ফেললো মেঘলা।মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছুতেই প্রায় চারটা বেজে গেলো, এই সময় বাস থাকবে কিনা সন্দেহ।হরতালেতো দূর পাল্লার বাস ছয়টার আগে ছাড়ে না।এমন একটা আশঙ্কা ছিল বলেই শ্রাবন কে একটা ফোন করে নিলো-কোথায় তুমি?
ওপাশ থেকে বেশ হট্টোগোলের শব্দ,এর মাঝেই শ্রাবন চিৎকার করে বললো-বন্ধুর বাসায়।কিন্তু কেন?
-তুমি আমার সাথে একটু যেতে পারবা?
-কোথায়?
-ময়মনসিংহ।
-এখন?তোমার কি মাথা নষ্ট নাকি?দেখছোনা হরতাল।
-জানি,তবুও।আমি বাড়ী যাবো।মহাখালী চলে এসেছি।তুমি একটু আসো।আমাকে বাসে তুলে দিয়ে যাও।
শ্রাবন কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো-আচ্ছা ,ঠিক আছে । থাকো,আমি আসছি।
শ্রাবনের সাথে মেঘলার পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়।একি ফেকাল্টির হলেও দুজনের ডিপার্ট্মেন্ট আলাদা।টি এস সি তে এক অনুষ্ঠানেই শ্রাবনের কন্ঠে আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হয়েছিলো মেঘলা।কিন্তু ওকে সেভাবে বলা হয়নি।কেবল নম্বরটা সেইভ করে রেখেছিল মোবাইলে।
বিকেলের আলো তখন সন্ধ্যা আকাশে বিলীন হতে আরম্ভ করছে।মেঘলা হাতের ট্রলি ব্যাগ নিয়ে পায়চারী করতে লাগলো,স্টেশনটা মুহূর্তের মধ্যেই যাত্রী দিয়ে ভরে যাচ্ছে।মেঘলার উতকন্ঠা যখন তুমুল মাত্রায় বেড়ে গেল তখনি সামনে এসে উপস্থিত হলো শ্রাবন,মাথার চুল গুলো ভীষন এলো মেলো।গায়ে হালকা হলুদ রঙের টি-শার্ট, ঘাড়ে ছোট্ট একটা ব্যাগ।বেশ হাপাতে হাপাতে বললো-উফ,কতোটা রাস্তা যে হাঁটতে হল।
এবার নিজেকে বেশ অপরাধী ঠেকলো মেঘলার-ইশ,তোমাকে খুব ঝামেলায় ফেলে দিলাম।
-কিযে বলো,কিন্তু তোমার এই হরতালের মধ্যে বাড়ি যেতে ইচ্ছে হলো কেন?
-অনেক দিন যাইনা,চলো না দেখি টিকেট পাওয়া যায় কিনা।
কাউন্টারে তখন উপচে পড়া ভীড়।রীতিমতোন যুদ্ধ করে দুটো টিকেট মিললো তাও আবার শেষ দিকের সীটে।শ্রাবন হেসে প্রশ্ন করলো-ম্যাডাম,এই ঝাঁকিতে বসতে পারবেন তো ?
-টিকেট পাওয়া গেছে তাইতো বেশী, কিন্তু পৌঁছাবো ক’টায়?
-সব ঠিক থাকলে দশটার মধ্যে ঠিক পৌঁছে যাবো।কিন্তু তুমি বাড়ী যাবা কিভাবে?
-শহর থেকে আমার বাড়ী যেতে এক ঘন্টার পথ।সি এন জি পেয়ে যাবো নিশ্চই।
-হুম,রিস্কি হয়ে গেলো।আমি তোমাকে বাড়ী দিয়েই আমার বন্ধুর বাসায় রাত কাটিয়ে নেবো। কাল ভোরেই আমার ফিরতে হবে।
পাশাপাশি সীটে বসেও একটা প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো মেঘলার। ছেলেটাকে এই অসময়ে নিজের জন্যে খাটাচ্ছে , কিন্তু বাড়ীতে নিতে পারছেনা। সেটাতো সম্ভবই নয়, বাড়ির লোক যদি দেখে ছেলে বন্ধু সাথে ; তাহলে চোখ কপালে তুলবে। যতোই সে ইউনিভার্সিটিতে পড়ুক,প্রথা বলেতো একটা কথা আছে।
মহাখালী থেকে টঙ্গী এই টুকু পথ পাড় হতেই এক ঘন্টা লেগে যাচ্ছে।সব গাড়ি এখন রাস্তায়।মেঘলার হাতে বই ছিলো ,কিন্তু অন্ধকার নেমে যাওয়াতে তা আর পড়া যাচ্ছে না,ওদিকে শ্রাবন চোখ বন্ধ করে আছে।সেকি ঘুমাচ্ছে নাকি গভীর কিছু ভাবছে কে জানে।মেঘলা কানের হেড ফোন দিয়ে গান শুনতে শুরু করলো।জার্নিতে শোনার জন্যে তার আলাদা কালেকশন আছে, সব ইন্ডিয়ান বাংলা। বেশ মেলোডি,ভালোই লাগছে শুনতে।শ্রাবনের সাথে নিজের ভালো লাগাটা একটু শেয়ার করতে চাইলো। মেঘলার ডান হাতের সাথেই লাগোয়া শ্রাবনের বাঁ হাত।আলতো ধাক্কা দিতেই সে চোখ মেললো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। নেঘলা হেড ফোনের একটা তার শ্রাবনের বাঁ কানে দিয়ে হাসলো । শ্রাবন আবার চোখ বুজলো। কিছুক্ষন পর মেঘলা আবার ওর হাতে ধাক্কা দিলো-কি গান গুলো সুন্দর না?
-হুম,খুব সুন্দর।
বার বার চোখ বোজাটা এবার মেঘলার বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ালো।
-কি, তুমি রাতে ঘুমাওনি?
শ্রাবন নড়ে চড়ে সোজা হয়ে বসলো,ওমনি বাসটা হঠাত করে নিলো ব্রেক।নিজেকে সামলাতে বেসামাল মেঘলা শক্ত করে শ্রাবনের বারানো হাত জড়িয়ে ধরলো।এই প্রথম কোন অল্প পরিচিত যুবকের হাত ধরা।নিজের ভেতরটা কেমন ওলোট পালোট হয়ে গেলো নিমিষেই।বাস চলছে,কিন্তু হাতটা ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা কিছুতেই। মেঘলা গানের ভেতর দিয়েই অনুভব করতে পারছে নিজের অনুভূতি--হাওয়া লেগে ভেঙ্গে গেলো ভোর ,ফিকে হলো কুয়াসা চাদর।
ততোক্ষনে শ্রাবনের আঙ্গুল গুলো অতি ব্যস্ততায় ঘুড়ে বেড়াতে লাগলো মেঘলার চুলে –চোখে –চিবুকে।এ যেন এক না বলা কথার অবিরত হেঁটে চলা। সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসছে চারদিকে,আরো বেশি ঘন হচ্ছে ক্রমশ দুটি হৃদপিন্ড।
বড় রাস্তা পেরিয়ে বাস যখন শহরের মুখে প্রবেশ করলো তখন দশটা বেজে গেছে।কিছুক্ষনের মধ্যেই ড্রাইভার বাস খালি করতে বললো।কারন রাতে আর বাস চলবে না,আগামী কাল আবার হরতাল।শহরে মারামারি শুরু হয়ে গেছে,এমন বিপদে কেউ গাড়ি বের করতে চাইছেনা।মেঘলার মুখ শুকিয়ে গেলো।ও ভয়ে ভয়ে শ্রাবনের মুখের দিকে তাকালো।শ্রাবন ওকে আশ্বস্ত করলো-একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হবে।
শহরের অবস্থা সম্পর্কে কারো তখন কোন ধারনা ছিলো না।ল্যাগেজ নামিয়ে যখন বড় রাস্তায় নামলো বুঝতে পারল কিছু সময় আগেই এখানে ব্যপক মারামারি হয়ে গেছে।পড়ে আছে ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো ,রক্তের ছোপ লেগে আছে এখানে সেখানে।এবার মেঘলা আরো ভয়ে শ্রাবনের হাত যতোটা সম্ভব জাপটে ধরলো।শ্রাবন ওকে নিয়ে একটা ট্যাম্পু স্ট্যান্ডে গেলো।কিন্তু ওই জায়গাটা বেশ অন্ধকার,মনে হচ্ছে শহরের সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
একটা মাঝ বয়সী লোক সিগারেটে ধোঁয়া ছারছিলো,ওরা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো-এটা কি তারা কান্দা যাবে ?টেম্পোর ড্রাইভারের নির্লিপ্ত জবাব-গাড়ি ভরলে যাইবো।
কিন্তু রাত বাজে প্রায় এগারোটা।গাড়ি ভরার কোন নমুনা দেখা যচ্ছে না।শ্রাবন আর মেঘলা হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে থাকলো অনেক ক্ষন,যেসব যাত্রী গাড়িতে উঠছে তাদের চেহারা খুবি আশঙ্কা মূলক।কেউ কেউতো ঢলেই পড়ে যাচ্ছে।এই যাত্রীর সাথে রউনা দিলে কোন দিন বাড়ি পৌঁছা যাবে কিনা সন্দেহ।

শ্রাবন কিছুটা আড়াল করে মেঘলাকে বললো -তুমি আজ রাতটা আমার বন্ধুর বাসায় থাকতে পারবা?কিন্তু চুরী করে থাকতে হবে যেন ওর বাবা মা যেন টের না পায়।
-এটা কি করে সম্ভব,ওর ঘরে কি বাথরুম আছে? সারা রাত কাটাবো কি করে?
-হুম,তা ঠিক।তাহলে একটাই উপায় আছ -হোটেল।
-কি ?
-চলো,আজ রাতটা আমরা হোটেলে কাটিয়ে দেই।ভোরে উঠে দু’জনি চলে যাবো। তোমার বাসায়তো জানে তুমি ভার্সিটিতে।
মেঘলা চুপ করে আছে। কিছু করার নেই। তারপরো শংসয় নিয়ে প্রশ্ন করলো-আমার কাছেতো অতো টাকা নেই, শুনেছি হোটেলে অনেক টাকা লাগে।
–হুম,আমার কাছেও নেই।আমরা দু’রুম নেবো না।এক রুমেই কাটিয়ে দেবো।
ভয়ে মেঘলার কন্ঠ শুকিয়ে আসছে, কিন্তু এটা ছাড়া কোন কিছু করারো নেই।এই রাতে কোন আত্মীয়ের বাসায় গিয়েও তো ওঠা যাবেনা।আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকাও মুশকিল যদি কেউ দেখে ফেলে।তড়িঘড়ি করে ওরা একটি রিক্সায় উঠে বসলো।
ময়মনসিংহ শহরটা শ্রাবনের চেনা, তাই পরিচিত একটা হোটেলে গিয়ে উপস্থিত হলো। মেঘলাকে বসিয়ে নিজেই ভেতোরে ঢুকলো,কিছুক্ষন না যেতেই শুখনো মুখে বেরিয়ে এলো। মেঘলার বুঝতে অসুবিধা হলো না-হোটেল ওয়ালারা তাকে না করে দিয়েছে।
কিছু দূর গিয়ে আর একটা মাঝারী মানের হোটেলে গিয়ে হাজির হলো দু”জন ।মার্কেট পেরিয়ে উপরের দিকে সিঁড়ি,তার গোড়ায় রিসেপশন।এ যেন হিন্দী ছবিতে দেখা কোন পরিবেশ।লম্বা লবীর মতোন একটা বারান্দা ,তার ঠিক মাথায় ডেস্ক।হাতের ল্যাগেজ মাটিতে রেখে শ্রাবন কথা শুরু করলো-আমি আমার ওয়াইফ কে নিয়ে বেরিয়েছিলাম।কিন্তু রাত হয়ে গেলো।আপনাদের এখানে সিঙ্গেল রুম খালি আছে?
রিসেপশনের জহুরী চোখ।দু”জন কে ভালো করে দেখে নিলো,তারপর মুচকি হেসে বললো-আছে,দক্ষিনের কোনায় একটা রুম খালি আছে।এসিও পাইবেন ২৪ ঘন্টা,কিন্তু দামটা একটু বেশি পড়বো।
শ্রাবন নিরুপায়,পকেটে যা ছিলো তাই দিয়ে এডভান্স করে দিলো।লোকটা হোটেল বয়কে ডেকে ওদেরকে রুম দেখিয়ে দিতে বললো।
শ্রাবন আর মেঘলা অনুসরন করলো ছেলেটাকে।ছেলেটার উতসুক চাহনী ওদেরকে আরো বেশি জরোসরো করে দিচ্ছে,কিন্তু রুমে প্রবেশের পরো যেন তার আগ্রহ যাচ্ছেনা।ঘুরে ফিরে খালি জানতে চাইছে-আপনেরা কোথেকে আরসুইন ?
-ঢাকা থেকে।
-কয় দিন থাকবাইন?
-হরতাল ভাংলে চলে যাবো।
-হরতাল কবে ভাংবু কেউ কি কইতে পাইরবান?আপনেরা রাইতে খাইতান না?
এবার চোখ পড়লো মেঘলার দিকে,ক্লান্ত শরীরে সে এলিয়ে আছে দেওয়ালে।শ্রাবন কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো-ভাত আনতে বলি?মেঘলা হাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
-সাথে কি খাবে , মুরগী নাকি মাছ?
-মুরগীই নাও।
শ্রাবন মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে কোন রকম ছেলেটাকে বিদায় দিলো।তারপর খুব দ্রুত দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিলো।বাইরে থেকে ছেলেটার উদ্ভট শীষ ক্রমশ কমে আসতে লাগলো ।
মেঘলাকে গোসল করতে বলে নিজে ফ্যানের নীচে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো শ্রাবন।

একেতো অচেনা পরিবেশ,তার উপরে অল্প পরিচিত বন্ধু।নিজেকে কিছুতেই স্বাভাবিক করতে পারছেনা মেঘলা।
শ্রাবন আবার তাড়া দিলো-কি হলো?তাড়াতাড়ি যাও,ছেলেটা খাবার নিয়ে আসার আগেই ফ্রেশ হউ।
মেঘলা গায়ের কাপড়টা বের করে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।কিযে নোংরা অবস্থা,কল খুলে দেখে টিপ টিপ করে পানি ঝরছে।কি আর করা,ওই পানিতেই কোন রকম গা ভিজিয়ে বেরিয়ে এলো।
মেঘলা যখন ফ্যানের নীচে দাঁড়িয়ে চুল শুকোচ্ছে তখন তার চোখ গিয়ে পড়লো শ্রাবনের চীত হয়ে শোয়া শরীরের দিকে।ছেলেটার গায়ে কাপড় নেই,ঠান্ডা বাতাসে কেমন ক্লান্তির চোখ বুজে শুয়ে আছে।খুব মায়া হলো মেঘলার, সাথে অনেকটা অপরাধবোধ।ওর জন্যেইতো এখানে এখন শ্রাবন।মেঘলা খুব যত্ন করে শ্রাবনের মাথায় তার ডান হাতটা রাখলো,আর বাঁ হাতটা অনায়াসে চলে গেলো বুকের ওপর।শ্রাবন চোখ মেলে তাকালো হঠাত, মেঘলার বাঁহাতটা নিজের গালের সাথে ছুঁয়ে দিলো।নিজের বাঁ হাত দিয়ে মেঘলার মুখের ওপর থেকে ভেজা চুল সরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।কতোক্ষন এভাবে কেটে গেলো বলতে পারেনা কেউ,হুশ ভাংলো তখন যখন দরজায় সজোরে কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে এলো।
দরজা খোলা মাত্র ছেলেটি ঘরে ঢুকেই বিছানার উপর একটা পেপার বিছিয়ে দিলো,খাবারগুলো রাখলো তার উপর।যাবার সময় এসিটা অন করে দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো-খাওয়া হইলে প্লেট বাইরে থুইয়া দিয়েন।অনেক রাইত হইসে,সক্কালে আসুম নে।আর সিটকিনিটা শক্ত কইরা লাগায় লইয়েন।
বলেই সেই বিশ্রী শীষ দিতে দিতে বেরিয়ে গেলো।শ্রাবন খেয়াল করলো ছেলেটা দু’রকম ভাষায় তাদের সাথে কথা বলছে।আসলে বোঝার চেষ্টা করছে তারা এই অঞ্চলের কিনা।
দরজা লাগিয়েই শ্রাবন ঢুকে পড়লো গোসলে।মেঘলা প্লেটে ভাত নিলো,সাথে কিছু সবজী আর মুরগী।গোসল সেরেই শ্রাবন আবার তাড়া দিলো-ভাত দাও,খুব ক্ষুদা লেগেছে।কি মনে করে শ্রাবনকে ভাতে হাত দিতে দিলো না মেঘলা,নিজেই যত্ন করে মেখে ওর মুখে দিতে লাগলো।মনে হলো এমন অমৃত সে কোন দিন খায়নি,কিন্তু মেঘলা বেশ বুঝতে পারছে খাবারটি আসলেও মুখে দেবার মতোন হয়নি।
বিছানার চাদরটা উলটে তার নীচে বালিশ দিয়ে দিলো শ্রাবন,বললো-তুমি ওই পাশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ো।আর আমি এই দিকে থাকি।বাথরুমের লাইটটা থাকুক।
মেঘলা জিজ্ঞেস করলো-মশা লাগবে না?
-মনেতো হয়না,সব জানালাইতো বন্ধ।
লাইট নেভানোর পর পুরো ঘর জুরে অন্ধকার নেমে এলো।
ঘন হতে থাকা অন্ধকারে ক্রমশ মিশে যেতে লাগলো দুটো মানব শরীর।
রাত্রি প্রায় শেষের দিকে,শ্রাবনের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল মেঘলা।আচমকা দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।শ্রাবন ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে চুপ করতে ইশারা করলো।কিছুক্ষন থেমে আবার সেই শব্দ।বুকের ভেতরটা কেমন হীম হয়ে গেলো মেঘলার।এ পর্‍্যন্ত পত্রিকার পাতা জুরে ধর্ষনের খবরতো কম পড়েনি।সেই খবরের লেখাগুলো চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।কেউ যদি এখন আক্রমন করে,তাহলে কি করার আছে শ্রাবনের।
এভাবে নিজেদের আলিঙ্গনে রেখে কখন যে ভোরের আলো ফুটে গেলো তা টের পায় নি ওরা।কাকের অবিরত কা কা শব্দে যেন হুঁশ হলো।শ্রাবন তাড়া দিলো-তাড়াতাড়ি রেডী হউ,শহর জেগে ওঠার আগেই আমাদের বেরুতে হবে।
এলোমেলো ছড়িয়ে থাকা কাপড়্গুলো দ্রুত গুছিয়ে নিল শ্রাবন।মেঘলাকে একটু আড়ালে রেখে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিতেই সেই ছেলেটিই মুখের সামনে পড়লো-ভাইজান,রাতে কিন্তু রেট পড়সিল।আমি না থাকলে কিযে হইতো।পুলিশ হুদাই ক্যাচাল করলো।
শ্রাবন দ্রুত তার হাতে ৫০০ টাকার নোট গুজে দিয়ে বললো-তুমি ল্যাগেজ নিয়ে নীচে যাও,ট্যাক্সি ধরো।আমি বিল দিয়ে আসছি।
ছেলেটা নেমে যেতেই মেঘলা ওর ব্যাগ থেকে ২০০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলো-রাখো,তোমার লাগবে।
হোটেলের ঝামেলা চুকিয়ে নীচে নামতেই চোখে পড়লো বেশ কয়েকটা সি এন জি দাঁড়িয়ে আছে।মেঘলা মাথায় ওড়না জড়িয়ে নিলো।যাই দাম করছে না কেন ড্রাইভাররা বেশ চড়া করেই চাইছে।মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী ওদেরকে চিনে গেছে।দাড়োয়ান মাশোয়ারা চাইতে ভুল করলো না।এক রাতের জরিমানা দিতে গিয়ে শূন্য পকেটে বাড়ি ফিরলো মেঘলা-শ্রাবন।
আষাড়ের ঘন বরষা ছাপিয়ে ভাদ্রের দাহ তপ্ত আকাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার তীব্রতা। মোবাইল হাতে বিষন্ন মেঘলা ঝুল বারান্দায় বসে আছে,এক মাস হয়ে গেলো শ্রাবন সেই যে গেলো আর তো ফোন দিল না।সেবার তিন দিন ছিলো বাড়ীতে,সারাক্ষন শ্রাবন শক্ত আলিঙ্গন ওকে আপমনা করে রেখেছিলো।
মা বার বার জিজ্ঞেস করছিল-কি হয়েছেরে,পরীক্ষার পড়া কেমন চলছে?
কোন উত্তর দেয় নি সেদিন মেঘলা।কেবল অপেক্ষা করেছে একটা ফোন কলের।কিন্তু সেই কল আজো আসেনি।
শ্রাবনদের ডিপার্ট্মেন্টে যাদেরকে চিনে তাদেরকে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করেছে-শ্রাবন ক্লাসে এসেছে?
কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর জোটেনি।স্মার্ট ফোনের বদৌলতে ফেইস বুক চোখের সামনে মেলাই ছিলো,কিন্তু ওর কোন এক্টিভিটি দেখা যাচ্ছে না।নিজ থেকে যে কল দেবে তাও পারছেনা,কেমন এক শংসয় সারাক্ষন আগলে রাখে মেঘলাকে।কিন্তু শ্রাবনকে ম্যাসেজ পাঠানো খুব জরুরী।পাশে রাখা প্রেগনেন্সি টেস্ট স্টিপ অন্তত তাই বলছে।
মুখে এমন অরুচী হচ্ছে যে খাবার মুখে দেওয়াতো দূরে থাক,নাকের সামনে কোন খাবারের গন্ধই সহ্য হচ্ছেনা।তাও আবার হলের খাবার।মেঘলা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা-কি করা উচিত।পরিচিত কাউকে বলতেও পারছেনা।রুমে একজন আছেন বয়সে সিনিয়র তাকে বলা যায়,কিন্তু সম্পর্কটা কার সাথে জানতে চাইলেই বিপদ।
মোবাইল ঘাটতে ঘাটতেই একটি পরিচিত নম্বর চোখের সামনে এলো-ডাক্তার দিলরুবা।একবার তলপেটে ব্যথা নিয়েই তার কাছে যেতে হয়েছিলো।হাসপাতালটা হোস্টেল থেকে খুব দূরে নয়।আর এই সব বিষয়ে দেরী করা যাবে না একদমই।
সন্ধ্যার কিছু আগেই মেঘলা পৌঁছে গেলো ডাক্তার দিল্রুবার চেম্বারে।ডাক্তার তাকে দেখেই চিনে ফেল্ল,সাম্নের চেয়ারে বস্তে দিয়ে প্রশ করলো_কেমন আছো?
-হুম ভালো।
এই ভালো বলাটা যে কেবলি কথার কথা তা বুঝতে আর বাকী রইলো না অভিজ্ঞ ডাক্তারের।
-কি হয়েছে তোমার?
-আপা,একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
-কি?
-আমি প্রেগনেন্ট।
-কি বলো?তা ছেলেটা কে?
-আমার ব্যাচ মেট।
-ও আসেনি সঙ্গে?
-এটাইতো সমস্যা আপা।ওর নম্বরে ওকে পাচ্ছি না।
-বলো কি ,এটাতো সাঙ্ঘাতিক অবস্থা।তা কয় দিন হলো?
-মনে হয় এক মাস।
-বুঝেছি,আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে।
-কিন্তু,তুমি এখন কি করতে চাও?
-আপা,আমি বাচ্চাটা রাখতে পারবোনা।
-এভাবেতো হবে না,এবরশন করতে হলে গার্ডীয়ান সাইন লাগবে।
-কিন্তু,আমার এখানে কেউ নেই।আর মাকে কিছুতেই এ কথা বলা যাবে না।
দিলরুবা কি যেন ভাবলেন কিছুক্ষন।তারপর নিজ থেকেই বললেন-দেখি,চলো কি করা যায়।
প্রাথমিক অবস্থায় থাকাতে অল্প সময়ের মধ্যেই ছুড়ি-কাঁচির হিসেব চুকে বুকে গেলো।কিন্তু মেঘলার মনের ভেতর যে হিসেব খেলা করছে তা কিছুতেই মিটছে না।বার বার কেবল শ্রাবনকে দেখতে ইচ্ছে করছে।ওর হাত স্পর্শ করে ঘুমোতে ইচ্ছে করছে।
রাত যতো দীর্ঘ হয়,ততো বেশি দীর্ঘ হয় মেঘলার বিষন্নতা।কি যেন নাই ,কি যেন নাই এমন এক উতকন্ঠায় কেটে যায় সময়।এমনি এক রাতে খুব বৃষ্টি নেমেছিলো,মেঘলা বিছানা ছেড়ে বাইরে হাত বাড়িয়ে পানির ঝাপ্টা নিচ্ছে ।এর মাঝেই বেজে উঠলো ফোন।বেশ আলসে লাগছিলো ধরতে,তার উপর মারাত্বক সব মেডিসিনের যন্ত্রনায় কাবু তার শরীর।তবু এতো রাতে কার কল ভেবেই ফোনটা কানে দিলো। অপরপ্রান্তের কঠস্বর নিমিষে পাথর করে দিল মেঘলাকে।
-কি করো তুমি?
-কে বলছেন?
-আমাকে চিনতে পারছোনা?
শ্রাবণকে না চেনার কোন কারন নেই মেঘলার।কিন্তু নিজের দূর্বলতা ওর সামনে মেলে ধরতে মোটেও ইচ্ছে করলো না।
শেষ অব্দি নিজের নামটা উচ্চারন করতে বাধ্য হলো-আমি শ্রাবন।
মেঘলা কেবল ছোট্ট করে “ও” শব্দটি উচ্চারন করলো।
মেঘলার কন্ঠের নির্লিপ্ততা কোন ভাবেই স্পর্শ করলোনা শ্রাবনকে।সে অনর্গল বলে গেল –জানো,একটা কান্ড ঘটায় ফেলসি।
ইচ্ছে না থাকলেও মেঘলা বলতে বাধ্য হলো-কি কান্ড?
-আচ্ছা,তুমি গেস করোতো কি হতে পারে?
কিছুই ভাবতে ইচ্ছে করছে না।কেবল চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে-এতো দিন কোথায় ছিলে তুমি?কোথায়?
কিছুই বলা হলো না।শ্রাবন বলতে লাগলো-জানো,আমার স্ট্যাটাস আপডেট হইসে,আমি এখন ম্যারিড।
-মানে কি?
-আরে বাবা,বিয়ে করেছি।তবে এখন ইচ্ছে ছিলো না।একদিন দুম করে দেখি বর্ষা আমার মেসে এসে হাজির।সে কি কান্না।ওকে তখন বিয়ে না করলে নাকি সুইসাইড করবে।বোঝ অবস্থা।
-বর্ষা কে?
-ও তোমাকেতো বলাই হয়নি ,বর্ষা আমার সেই বর্ষা যার সাথে সেই কলেজ লাইফ থেকেই আমার সম্পর্ক।
মেঘলা কি জিজ্ঞেস করবে-তাহলে আমি কি?তোমার এক্সিডেন্ট?শুধুই এক্সিডেন্ট?
কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না,ফোন রেখে দিতে ইচ্ছে করছে।পুরোন বমিটা আবার শরীর গলিয়ে উঠছে যেন।
অপরপ্রান্তের উতসাহী কন্ঠস্বর-কিছু বলছো না যে?
-কি বলবো,খুব ভালো করেছো।
–শুধুই এইটুকু।
-তবে আর কি।যে রোদের জন্মানোর কথা ছিল সেতো কবেই প্লাবনের স্রোতে ভেসে গেছে।য়ামার আর কিছু বলার নেই।
শ্রাবন ওপাশ থেকে আবার প্রশ্ন করলো-তুমি কি কিছু বলছ?
-নাহ,আমি কিছুই বলছিনা।আমার আর কিছুই বলার নেই।
----------------------------------------------------------------------
বানান ভুলের জন্য লেখিকা খুবি দুঃখিত।প্রুফ দেখার ওস্তাদরা ঠিক করে পড়বেন আশা করি।


মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার গল্প @রোদেলা +++++++

অনেক শুভকামনা :)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৯

রোদেলা বলেছেন: প্রথম মন্তব্যের জন্যে আপনাকে পুরষ্কৃত করা হোক –সঞ্চালকের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৪

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: কেন বলেন তো ! সঞ্চালককে কেন ! গল্প কিন্তু পুরোটাই পড়েছি । প্রথমে রোমান্টিক গল্প ভেবেছিলাম , শেষে এসে তা নিদারুন পরিণতিতে রুপ নিলো ।


সুন্দর থাকবেন ।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩

রোদেলা বলেছেন: গল্পটা দেবার পর খুব টেনশনে ছিলাম।আপনার মন্তব্য আমাকে নির্ভার করেছে,পুরষ্কার দেওয়া গেলে সত্যি দিতাম।

৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৪

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: গল্পটা খুব ভালো লেগেছে।

গল্পে ৪ নং প্লাস।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪

রোদেলা বলেছেন: ৪ নং ধন্যবাদ।

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮

মামুন রশিদ বলেছেন: গল্পটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল । মেঘলাকে সারাজীবন একটা গ্লানি টানতে হবে । জানিনা এক জীবনে সেই ভার সে নামাতে পারবে কিনা!

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৫

রোদেলা বলেছেন: হুম,ঠিক তাই।যখন সে পুনরায় মা হতে যাবে পেছনের অতীত তাকে তাড়া করবে,কিন্তু তা তাকে হজম করেই থাকতে হবে।

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: এখনকার বাস্তবনির্ভর গল্প ।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬

রোদেলা বলেছেন: সময়টাকে তুলে ধরবার এক সামান্য চেষ্টা মাত্র।

৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২১

ইমরান নিলয় বলেছেন: সুন্দর।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭

রোদেলা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৩৬

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক সাবলীল বর্ণনায় ফুটিয়ে তুলেছেন নিদারুণ বাস্তবতা!

শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ।

ভালো থাকবেন। সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.