নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যাপিত সময় //

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:২০



আজ দিনটা শুরুই হয়েছে খুব মন খারাপের মধ্য দিয়ে।প্রতিদিন আমি চেষ্টা করি অদ্রী ঘুম থেকে উঠে যাবার আগেই যেন বাড়ী থেকে বের হতে পারি ।কিন্তু চায়ের কাপে যেইনা চুমুক দিয়েছি অমনি মেয়ে তার চকলেট পুতুল বগলে চাপিয়ে হাজির-আজ তুমি অফিস যাবা না।ওকে সাইজ করার একটা বুদ্ধি আমার সব সময় রেডি থাকে।সেটাই ঝারলাম-অফিসে না গেলে টাকা পাবো কই,টাকা না পেলে তোমার জন্য চকলেট আনবো কিভাবে?নাহ ,আজ কিছুতেই এই সব কৌশল কাজে লাগছে না।মেয়ে আমার গাট হয়ে কোলে বসে আছে।অবশেষে মেয়ের চিৎকারের মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসতে হলো।কানে বাজতে থাকলো তার কান্না।
পেট্রোল বোমা নিয়ে যে আতংক সৃষ্টি হয়েছিলো তা বুঝি আজ একদম কেটে গেছে।লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বাসে উঠলাম,নাহ বসার মতোন খালি সিট একটাও নেই।হঠাত কম বয়সি একটা ছেলে উঠে বসতে দিলো,আজকাল এই বিষয়টা তেমন দেখা যায় না।মেয়েদের জন্যে বরাদ্দ করা সিট দখল করে ছেলেরা বসে থাকে,কিছু বলতে গেলে বলে-আপনারা যখন আমাদের সিটে বসেন তখন কি আমরা উঠায় দেই?খুব যৌক্তিক কথা।মাঝে মাঝে উত্তর দেই,মাঝে মাঝে দেই না।কারন আমরা যারা বাইরে কাজ করি এই সব এখন মামুলী ব্যাপার।
অপেক্ষা ব্যপারটা খুব যন্ত্রনার।দুপুর দুটোর দিকে আমি সেই ভয়ঙ্কর যন্ত্রনার মধ্যে পড়ে গেলাম।কারন এই সময় অনলাইনে আমি ম্যাসেজ লিখি ,ওপাশ থেকে উত্তর আসে।আর এই উত্তর আসাটা আমার অভ্যাসের মধ্যে পড়ে গেছে।ওর সাথে পরিচয় আমার খুব বেশি দিনের না,কিন্তু ঘুনাক্ষরেও মনে হয় না মানুষটা এতো দূরে থাকে।আমার অপেক্ষা এক সময় উপেক্ষায় পরিনত হয়।আজ আর কোন রিপ্লাই আসে না।একটা বয়স ছিলো যখন প্রিয় মানুষ উত্তর না দিলে রাগারাগি করতাম, ঝগড়া করতাম।তখন অধিকার ছিলো,এখন অধিকার নেই।এখন উপেক্ষাগুলো কেবল বুকের ভেতর ছুঁড়ি চালায় না,পাশাপাশি আত্বসন্মানে আঘাত করে ভীষন।আর এই আত্বসন্মানই আমাকে সংসার জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
অফিসে কাজ করার কোন আগ্রহ পাচ্ছিনা,বিকেল চারটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম।ঢাকা শহর জুড়ে বন্ধুর কোন অভাব নেই আমার।যেখানে ইচ্ছে আমি যেতে পারি,হৈ চৈ করতে পারি।কিন্তু কিছুই আর ইচ্ছে করেনা এখন।ভাবলাম পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করি।এতে অন্তত ত্বকের স্নিগ্ধতা বাড়ুক,মনের স্নিগ্ধতা নিয়ে বসে থেকে লাভ নেই।
সারাদিন আমার কাছে কোন ফোন আসেনি।যেইনা মাথায় তেল দিতে আরম্ভ করেছি ওমনি অফিস থেকে ফোন।যা ভয় করেছিলাম ঠিক তাই হলো।আমি অফিস থেকে আগে কখনো বের হই না।সে যাই হোক ওটা ম্যানেজ করা গেল।কিন্তু পর পর আবার ফোন,ফোনটা যে কতো বড় দরকারী যন্ত্রনা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।কিন্তু এটা বন্ধ রাখা মানে দুয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া।আমার মোবাইল সদ্য ছিনতাই হয়েছে,কিন্তু সিম পুরোন হওয়াতে কল আসছে-আমি চিনতে পারছিনা।আমি ফোন ধরেই বললাম-কে বলছেন প্লিজ ?
একটা অনলাইন নিউজ পেপার থেকে ফোন এসেছে।মোটামোটী র‍্যাঙ্ককিঙ্গে ভালো।তারা আমাকে তাদের সাথে কাজ করতে বলছে।কারন আমার সি ভি গত বছর দেওয়া ছিলো।আমি বেশ ভদ্রতা দেখিয়ে বললাম-আমি অনন্যাতে খুব ভালো জায়গায় আছি।ম্যাডাম যতো দিন বের করে না দিচ্ছেন,বেরুচ্ছিনা।আপনি কষ্ট করে লিঙ্কটা দিয়ে রাখেন।পরে সম্ভব হলে জানাবো।ওপাশের ভদ্রলোক কি উত্তর আর দিবেন।ধন্যবাদ বলে ফোন রেখে দিলেন।পার্লারে সব মেয়েদের নাক বোঁচা।সবাই চাকমা এখানে।আমার মাথা যে বানিয়ে দিচ্ছে সে মহা আগ্রহ করে আমাকে দেখছে।আবার ফোন বাজলো,এখন আর ধরতে ইচ্ছে করছেনা।নম্বরতো সবি অচেনা।কিন্তু কাজের কল হ্মা, না ধরলে বিপদ।ফোন কানে দিয়ে বললাম-হ্যালো,কে বলছেন ?ওপাশ থেকে কেমন একটা আঞ্চলিকতার কন্ঠ ভেসে এলো-আমাকে চিনেন নাই,আমি বেলায়েত।
বেলায়েত নামে কোন মিনিস্টার আছে কিনা যাকে আমার চেনা খুবি প্রয়োজন ?এই প্রশ্ন আর করা হলো না।উনি নিজেই গড় গড় করে বলে গেলেন-আমাদের মিটিং সাক্সেস্ফুল আপা।দুই দিনের মধ্যেই চ্যানেল অন এয়ারে যাবে।আপনেকে একটা ই-মেইল দিবো ,আপনের সিভি পাঠায় দিবেন।আমরা এখন গুছিয়ে ফেলসি,আপনাকে্তো আর যে সে পজিশনে বসানো যায় না।
এবার মনে পড়েছে।এই লোকের ব্যাপক ক্ষমতা(গোপাল পার্টির লোক)।আমার এক বন্ধু তাকে বলেছে-চ্যানেলে কাজ করার খুব আগ্রহ আমার।একদিন দেখা হয়েছিলো বড়জোর আধ ঘন্টার জন্যে।সেদিনি আমার অফিসের কার্ড তাকে দিয়ে এসেছিলাম।যথারীতি আমার পার্স ছিনতাইয়ের ঘটনাও তার জানা।তিনি আগ্রহ করে আবার জিজ্ঞেস করলেন-ইন্ডিয়ার ভিসা কি হয়েছে আপনার?
ভালো,ব্যাটার সব মনে আছে।আমি বললাম-হয় নাই।তার আগেই পাসপোর্ট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিলো।তবে ফেরত পেয়েছি।এবার তার আনন্দ যেন আর ধরেনা-আপনে কোন চিন্তা করবেন না,পাসপোর্টের কপি আমাকে দেন আপনের ভিসা দুই দিনে হয়ে যাবে।
আমি জানি, দুই দিন না-এই লোক চাইলে ভিসা দুই ঘন্টায় হয়ে যাবে।আমি ঠান্ডা স্বরে বললাম-আচ্ছা,আমি ই-মেইল করে দেবো।আবার প্রশ্ন-তা ,ছুটি নিচ্ছেন কবে?আকাশ থেকে পড়ার পালা এবার-কেন,ছুটি কেন?
-ভিসা করবেন ছুটি নিবেন না?
-আমি এখন দেশের বাইরে যাবো না,যখন যাবো তখন ছুটি চাইলেই ম্যাডাম দিয়ে দেবে।অসুবিধা নাই।
-তাহলে একদিন ছুটি নেন ।
-ছুটি দিয়ে কি হবে ?
-চলেন আমরা ঘুরে আসি।
এই লোকের সাহস দেখি ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে,আমিও ফোন ছাড়ছিনা।নাক বোঁচা মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছে।কারন ও এখন আমার মুখে ফেসিয়াল প্যাক দেবে।আমি ঠিক কি বললে যুঁতসই একটা উত্তর হবে তাই নিয়ে ভাবছি।
তার আগ্রহ মনে হয় একটু কমলো-সারাদিন না হলেও চলবে,এই ধরেন ছয় ঘন্টার জন্যে। আসে পাশেই একটু ঘুরলাম আর কি।
-শোনেন,আমি জীবনে অনেক ঘুরেছি।আমাকে বললেই আপনার সাথে ঘুরতে যাবো এটা আপনি ভাবলেন কিভাবে ?
-অসুবিধা কি?এই ধরেন সাভার,আমার একটা বাংলো আছে।আশুলিয়ার পাশেই ।খুব সময় লাগবেনা।
ওই শুয়োরের বাচ্চা।তোর গরম শরীর ঠান্ডা করতে যে আমার সময় লাগবেনা তা আমি জানি।কিন্তু কথাটা তাকে না বলে বললাম আমার সেই তথাকথিত বন্ধুকে।
-তুমি কি লোক জন কে বলে বেড়াচ্ছো আমাকে ফোন দিলেই আমি তাদের জন্যে অফুরন্ত সময় নিয়া হাজির হবো।প্রথমে সে কথাটা বুঝতে পারেনি।পরে বুঝেছে,ততোক্ষনে আমি ফোন রেখে দিয়েছি।
চাকমা মেয়েটা খুব ভয়ে ভয়ে আমার মুখে মাস্ক লাগাচ্ছে।আবার যন্ত্রনা বেজে উঠলো।আমার চোখ এখন পুরো বন্ধ।বন্ধ চোখেই হ্যালো করলাম।
-তুমি কোথায় বাংলা একাডেমী?
আমার এই শিক্ষকের ধারনা আমি সারাদিন বই মেলায় বসে বই বিক্রী করি।
-না স্যার,আমি পার্লারে সাজগোজ করি।
-ও তাহলে থাক।তোমাকে বিরক্ত করলাম।
এই মানুষটার কন্ঠ চিনতে আমার কোন দিনো ভুল হয় না।এতো চমৎকার বাংলা বলতে পারেন,তাও আবার জাবির ইংরেজির প্রফেসর।যার কথা সারাদিন শুনলেও ক্লান্তি আসবেনা।আর এতোটাই শান্ত যেন শিতল বাতাস বইছে চারদিকে।আমি কোন দিন স্যারকে জোরে কথা বলতে দেখিনি।হাসেন খুব প্রান খুলে।
যাই হোক,ফেসপ্যাক দেওয়া শেষ।এই সময় কথা বলা একদম মানা।কিন্তু আমার ভেতরেতো অস্থিরতা –অনলাইনে পাইনি,যদি ফোনে কল আসে।যদিও আমার ফোনে ভুলেও ও কখনো কল দেয় না।
যন্ত্রনার বাক্সটা আবার বেজে উঠলো।চোখের উপর শশা দেওয়া,কিছুই দেখিনা।অন্ধের মতোন ফোন কানে দিলাম।ওহ খোদা,সেই পারভেজ ।২০১১ সাল থেকে আমাকে কল দিয়েই যাচ্ছে।ওর ধৈর্য দেখলে নিজেরি ঈর্ষা হয়।এই বয়সের ছেলেরা এতোটা কাল ধরে কেবল এক কাপ চা খাওয়ানোর জন্যে এক জন মাঝ বয়সী মহিলাকে ক্রমাগত ফোন দিয়ে আসতে পারে ?আমি জানি ,ফোন রেখে দিলে ও আবার কল দিবে।এমন হাজারবার ঘটেছেও।আজো তাই ঘটলো-আমি ব্যস্ত পারভেজ,পার্লারে আছি।পরে কথা বলব।
-আমিতো মিরপুর দশেই আছি।
-মিরপুর দশে কম করে হলেও রাত আটটায় ত্রিশ হাজার মানুষ থাকে।
এর পর আরো তিন বার ফোন বাজলো।জানি ওটা একি নম্বর।স্মার্ট ফোনে কল আসলে সাইলেন্ট করার কায়দাটা আমার শেখা লাগবে।স্যামসাং-E 50.
প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রনা আর ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরছি।কিন্তু তিন বছরের কান্নারত মেয়ের মুখ আর দেখার ইচ্ছা নেই ,৭০ টাকা দিয়ে একটা রঙ পেন্সিল কিনলাম ।৭০ টাকা দিয়ে কলা কেনাও এর চেয়ে ভাল,কারন মেয়ে এই গুলা দুই ঘন্টা সময় নিবে না ভাংতে।ভাঙ্গুগ।কতো কিছুইতো ভাঙ্গে।আর সামান্য পেন্সিল।
গোসল করার জন্যে পানির মোটর ছাড়তেই বিদ্যুৎ ভাই চলে গেলেন।আম্মা যেন খুব খুশি-
মিষ্টি কুমড়া কাটসি,আর মুরগী ভিজাইসি।কারেন্ট আসতে আসতে ওই গুলা বসায় দে।
আমি জানি মুরগীর এক পিসো আম্মা মুখে দেবে না,আর তার জিরো ফিগার নাত্নী জীবনেও তা ছুঁবে না।আমি ঢূল ঢুল শরীরে রান্না করবো।কিন্তু দায়িত্ব আমার পিছু ছাড়বে না।
রাত দশটায় আমার ছোট ভাই স্কাইপে তে এলো ক্যালিফোর্নিয়ায় বসে।আমার এই ভাইটি অনলাইন হলে আমি আর আম্মা ওযুত –নিযুত স্বপ্ন দেখি।কারন আমার ভাই এবার সিঙ্গাপুর সেটেল্ড হচ্ছে।সাত সমুদ্র পাড়ি দেবার জন্যে আমাদের আর লাইনে দাঁড়াতে হবে না।বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর কোন বিষয় না।
রাত যতো বাড়ছে অদ্রীয়ানার নাচানাচি ততো বাড়ছে।তার জন্যে আনা হলুদ বলটা হারিয়ে গেছে সেটার জন্যে বায়না ধরেছে।আরে মেয়ে,তোর বাবাই তোর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তাই নিয়ে আমি প্রথমটায় কতো অবাক হয়েছি।একটা লোক তার সন্তান কে না দেখে কি করে দু্টো বছর কাটিয়ে দিচ্ছে এবং সামনে দিন গুলো এমন ভাবেই যাবে তাই মেনে নিতে পারছিলাম না।এখন সব কিছু অভ্যেস হয়ে গেছে।একবার কি হলো,টি ভি সি দেখে অদ্রী জিঙ্গেস করে বসলো-আমার বাবা কোথায়?
আমি বললাম –বিদেশ।
আমি তিন বছরের বাচ্চা মেয়েটার মস্তিষ্ক নিয়ে প্রবল খারাপ একটা খেলা খেললাম।ফেইসবুকে ওই মানুষটার ছবি দেখিয়ে বললাম-এটাই তোমার বাবান।খুব শখ করে বলেছি,তা না।মেয়েটা খুব জালাচ্ছিলো তাই মনে হলো ও যেহেতু ওর বাবাকে চেনেই না সেহেতু এটা বললে আর কোন সমস্যা নেই।
কিন্তু সমস্যাটা যে এতো প্রখর হবে বুঝতে পারিনি।আমি ফেইস বুকে অনলাইন হলে তার ম্যাসেজ বক্স ওপেন হয় এবং অদ্রী বাবান বাবান বলে চিৎকার করতে থাকে।এটা ও প্রান্তে শোনা যায় না।আমি মনে মনে একটা অংক কষতে থাকি।অংকের ছাত্রী ছিলাম-হিসেবে কোন দিন ভুল হয় নি।কিন্তু জীবনের হিসেব কষতে গিয়ে আমি বিরাট বিরাট ভুল করে ফেললাম।
রাত ক্রমশ বাড়ছে।সবাই এখন ঘুমের দেশে।আমিও শুয়ে আছি,ভাবছি ফেইস বুক ওপেন করবো কিনা।ওটা এখন আমার রক্তে মিশে গেছে।ভয় পাচ্ছি –যদি আমার ম্যাসেজের কোন উত্তর না আসে তখন কি করবো ?
ফোন করবো?টেক্সট পাঠাবো?ছোট হতে হতে আর কতো ছোট হবো আমি?
এতোটাই ছোট যেন নিজেকেই একদিন নিজে চিনতে না পারি?
আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারছিনা-কি করলে এই অদৃশ্য আলিঙ্গনের ডাক আমি উপেক্ষা করতে পারি ।।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.