নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার অদ্রীর শুক্রবার //

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৭


কাল রাতেই বিরাট একটা নিয়ত করেছিলাম –আজ কিছুতেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবোনা।বই মেলা হইসে তো কি হইসে শুক্কুর বার বলে কথা।আরাম কইরা ঘুমাবো।কিন্তু বুয়াতো জানেনা আমি রাত তিনটায় ঘুমাতে গেসি,খালি আমি না আমার কন্যাও আমার সাথে সমান তালে রাত জাগে।ঘুম ভাংলো হাড়ি পাতিলের আছাড়ের শব্দে।তিনজন মহিলার সংসার,বাসন-কোসন তেমন জমে না।তারপরো বুয়া এমন বিকট শব্দ শুরু করলো যেন দুনিয়ার তাবত কাজ সে কইরা ফেলসে।তার সাথে যুক্ত হলো আম্মার আওয়াজ-এই তোমারেনা বললাম ,এমনে বেলো।এতো মোটা মোটা চাপড়ি বানাও কেন?
অবস্থা যখন এই রকম তখনি মোবাইলটা ভন ভন শুরু করলো।ওপ্রান্ত থেকে –কবি,সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গালাম?
-নারে ভাই,তুমি আবার ঘুম ভাঙ্গাবা কি ?এই শহরে ঘুম থেকে ওঠার জন্যে বহুত দ্রব্যাদি আছে।
-তুমি আজ বই মেলায় যাবা না?
-নাহ,পড়ে পড়ে ঘুমাবো।কাল যাবো ।
-ঠিক আছে তবে ঘুমাও বন্ধু।কাল যদি যাই তবে দেখা হবে।
এর মধ্যেই অদ্রী উঠে গেছে-মা,আজ কি তুমি অফিস যাবা ?
-না মা, আজ আমি সারাদিন তোমার সাথে থাকবো।
-তাহলে বাবান আসলে আমরা তামান্না পার্কে যাবো।(এই বাবান এক অদৃশ্য মানব)
বলাই বাহুল্য এই বয়সে অদ্রীর ভাষা গত কোন সমস্যা হয় না।যা একবার শুনে তাই স্পষ্ট ভাবে উচ্চারন করে।সে আনন্দ চিত্তে কাপড় বের করা শুরু করলো।কারন,বাইরে যাবার ড্রেস কোড তার নিজেরি থাকে ,আমি কেবল কেনার জন্যে জন্মাইসি।এর মধ্যে আম্মাও একখান সু-সংবাদ শুনাইলেন-“তাড়াতাড়ি উইঠা গোসল কর।সারাদিন কারেন্ট থাকবোনা।“এ আর নতুন কি,প্রায় প্রতিদিন কার ঘটনা।কি শীত –কি গ্রীষ্ম।
বুঝলাম মাথা মুড়ি দিয়া আর লাভ নাই।কিন্তু অদ্রীকে নিয়ে যাবো কোথায়?ওই এক বেরীবাঁধ আর কতো যাওয়া যায়।ভাবলাম কিছু কেনা কাটা করি।শপিং ব্যাপারটা আমার কাছে খুব কঠিন একটা কাজ মনে হয়।
সিনেমা হলে আমি একা যেতে পছন্দ করি ,কিন্তু শপিঙ্গে যেতে একজন সাথে লাগে।তাই খালাতো বোন কে সঙ্গী করলাম।সারা রাস্তা অদ্রী আমার কোল থেকে নামলো না।কারন ওর ধারনা আমি সুযোগ পেলেই অফিস চলে যাবো।আমাকে আকড়ে বলতে লাগলো-তুমি আজ অফিস যাবা নাতো।
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম।মেয়েটা কখনোই সকালে খায় না।একটা মিষ্টির দোকানে ঢুকে দই নিলাম,দুই চামচ খাওয়ার পর ওর চোখ পড়লো কেকের উপর।ব্ল্যাক ফরেস্ট যেন ইশারা দিয়ে আমাদের ডাকছে।সম্ভব না,মাসের শেষ।তা ছাড়া এমন কারো জন্ম দিন নাই যে ঐ জিনিষ কিনে কেটে খাওয়া যায়।
আমি বললাম-মা,চলো পাটিশাপটা খাই ?
কিন্তু অদ্রী যেটা বলে সেটাই করতে হবে।গো ধরে বসে আছে ।একটা প্রেস্টি নিলাম,এক চামচ মুখে দিতেই সে আবার বললো –আমি খাবার খাবো।
-মা,তুমিতো খাবারি খাচ্ছো।
-না,ওই খাবার খাবো।
মিষ্টির দোকানের হাজার রঙের খাবার দেখে ওর ছোট মনে নানান আশা উঁকি দিচ্ছে।এবার নিলাম লাড্ডূ।
ওটা দুই চামচ মুখে পুড়ে দিলাম।এবার অদ্রীর চোখ আরো আগ্রহ সহকারে দোকানের কাঁচের ভেতরের অংশটা পর্যবেক্ষন করছে।ভয়ে আমার ভেতরটা শুকিয়ে উঠছে।এবার আবার কি চাবে কে জানে।আমি বোনকে ইশারা দিলাম বের হয়ে যেতে।অদ্রীকে বললাম-চলো মা,এবার আমরা কেনা কাটা করি।
মেয়ে আমার অতি উতসাহে মার্কেটে ঢুকে পড়লো।যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়।যে দরজাটা দিয়ে মার্কেটে ঢুকলাম তার ডান পাশেই খেলনা দিয়ে সাজানো বাহারী দোকান।সবি ৭/৮ বছরের বাচ্চাদের সাইকেল জাতীয় খেলনা।আমি অদ্রীকে সরিয়ে বা দিকে কস্মেটিক্সের দোকানে ঢুকে পড়লাম।পার্পেল কালারের লিপ্সটিক দিতে বলে আড় চোখে অদ্রীকে দেখছি।সে বড় বড় বলের দিকে তাকিয়ে আছে।হাতের পাতায় লিপ্সটিক ঘষে কালার পছন্দ করার অভ্যেস আমাদের বহু দিনের।হঠাত অদ্রী পেছন থেকে প্রশ্ন করলো-তোমরা লিপ্সটিক ঠোঁটে না দিয়ে হাতে দিচ্ছো কেন?
ওরে আমার পাকনা বুড়ী –বলেই কোলে তুলে নিলাম মেয়েকে।আমার পাকনা বুড়িটা দিন দিন পেকেই যাচ্ছে ।
বিঃদ্রঃ গত ৫ তারিখ অদ্রীর জন্ম দাতাকে কোর্ট ডেকে পাঠালো বাচ্চার ভরন-পোষনের জন্য।ম্যাজিস্ট্রেট জিঙ্গেস করলেন-আপনি বাচ্চার জন্যে মাসে কতো দিতে পারবেন?
জনাব মাথা উঁচু করে বললেন-এক হাজার টাকা ।এই কথা শুনে আমার হাসা উচিত না কাদা উচিত ঠিক বুঝতে পারলাম না।ম্যাজিস্ট্রেট অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন-আপনি চিকিতসা করতে মালয়শিয়া যান আর নিজের মেয়েকে মাত্র এক হাজার টাকা দিতে চান?এক হাজার টাকায় কি খাওয়াবেন মেয়েকে?আর এটা আপনার মেয়েতো?
সে খুবি অসহায় গলায় উত্তর করলো-আমি খুব অসুস্থ,দেন দেনা করে চলছি।এর চেয়ে বেশি আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না।
আমি তখন টাকা পয়সা নিয়া চিন্তা করতেসিলাম না।আড় চোখে তাকে দেখছি আর ভাবার চেষ্টা করছি-এই লোক যে দুই বছর হয়ে গেলো নিজের মেয়েকে দেখছে না এই নিয়ে কিছু বলবে কিনা।ভাবলাম অদ্রীকে দেখতে চাইবে।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো-দেখি,আব্বা আম্মাকে জিঙ্গেস করে ওরা কতো দিতে পারবে।
ম্যাজিস্ট্রেটের কন্ঠে খুব অনাগ্রহ ভেসে এলো-দেখেন,আপনার বাবা মাকে নিয়ে আসেন।কিন্তু ,বাচ্চার ভরন পোষন আপনাকেই দিতে হবে।
মনে হলো এখানে কিছু বলার দরকার।আমি দু’জনকেই থামিয়ে দিয়ে বললাম-এতো বছর মেয়েকে পালতে পারসি,বাকী জীবনটা অবশ্যই পারবো।মাননীয় ম্যাজিস্ট্রেট ,আপনি আমার মেয়ের পুরো কাস্টোডি আমাকে দিয়ে দিন।একে বলেন আমার মেয়ের উপর কোন দিন কোন অধিকার নিয়ে না আসতে ।
সে দিন খুব কেঁদেছিলাম।নিজের জন্যে না,কেঁদেছি আমার মেয়েটার জন্যে।ক্লাশ এলিভেনেও আমি বাবার কোলে বসে ভাত খেতাম।আমার অদ্রীর যখন ঘোড়া ঘোড়া খেলার বয়স তখন সে কেবল জাদুর বক্সের ভেতর খুঁজে ফেরে কোন এক অচেনা বাবান কে।আর যখনি জিঙ্গেস করে-আমার বাবা কোথায়?আমি বলি-বিদেশে।
সেই বিদেশ যে কোন দেশ তা আর মেয়েটা বুঝে উঠতে পারেনা।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হুমমম| আপনার সারাদিনের কথা পড়ে এছাড়া আর কিছু বলার নেই| যাই হোক| অদ্রী মানে কি? নতুন শুনলাম শব্দটা| নামটা কিন্তু বেশ, রোমান্টিক

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৯

রোদেলা বলেছেন: অদ্রীয়ানা-গ্রীক রমনীদের নাম
ছোট করে অদ্রী ডাকি।ধন্যবাদ।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩০

দীপংকর চন্দ বলেছেন: সেই বিদেশ যে কোন দেশ তা আর মেয়েটা বুঝে উঠতে পারেনা।

শূন্য লাগছে ভেতরটা!

অনিঃশেষ শুভকামনা সকলের জন্য।

ভালো থাকুক। সবাই। সবসময়।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫১

রোদেলা বলেছেন: আপনিও খুব ভালো থাকুন।

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ট্রাজেডি । হৃদয় নাড়া দিল ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫২

রোদেলা বলেছেন: পড়েছেন ,ভালো লাগছে ।

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০২

অরিজিনাল বড় মামা বলেছেন: নিষ্ঠুর বাস্তবতা। মনে কষ্ট লাগে।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৭

রোদেলা বলেছেন: এমন বাস্তবতার সংখ্যা কেবল বাড়ছে।

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২০

শায়মা বলেছেন: আপুনি!:(

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০১

রোদেলা বলেছেন: মন খারাপ করার কিছু নেই শায়মা।

৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০১

আবু শাকিল বলেছেন: লিখছি আর ব্যাক স্পেস দিচ্ছি।
কি লিখব বোঝতে পারছি না।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০১

রোদেলা বলেছেন: লিখোনা, অনেক আদর দিও অদ্রীকে তাতেই হবে।

৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: মন খারাপ করা গল্প।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৯

রোদেলা বলেছেন: কোন কোন গল্প মন খারাপ করা হতে হয়।

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪১

এম এম করিম বলেছেন: অদ্রীয়ানার জীবনটা হোক স্বপ্নের মতো ।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৮

রোদেলা বলেছেন: ্দোয়া করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.