নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বনারী দিবস এবং আমরা //

০৯ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৩৬



নারী দিবস, বন্ধু দিবস অথবা ভালোবাসা দিবস –এইগুলো আমার কাছে আলাদা কোন মাত্রা রাখে না।কারন প্রতিটা দিনি সবার জন্যেই থাকা উচিৎ ।এগুলোকে বিশেষত্ব দেবার নিশ্চই কারন আছে,কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি-যদি আমার পাশের মানুষ টাকে আমি ভালোবাসতে পারি ,তার জন্যে মমতা জাগাতে পারি তাহলে আলাদা ভাবে কোন দিবস তৈরি করতে হয় না।হোক সে আমার বন্ধু, হোক কলিগ ,কিংবা প্রিয়জন।নারীর জন্য যুগের পর যুগ যে আলাদা হিসেব কষা হয়েছে তার উপরই দৃষ্টিপাত কোরবার জন্যেই বোধ করি এতো ঘটা করে এই দিবস কে উতযাপন করা হয় ।আর আমাদের দেশে এর মাত্রাতো একদম চোখে পড়ার মতোন।
আজ সকাল থেকেই নারী দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন রকম এসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।বলাই বাহুল্য ,দৌড় ঝাপ করে আমার কাজ করতে কিন্তু ভালোই লাগে।যেখানে বেশীরভাগ মেয়েরা একটু স্বস্তিতে ঠান্ডা গাড়িতে ঘুরতে চায় ,সেখানে আমি লোকাল বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতেই বেশি আরাম বোধ করি।অনেকটা কুকুরের পেটে ঘি সয় না অবস্থা।সকাল সকাল চলে গেলাম নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ,এবারের সেমিনারের বিষয়টা খুব অন্যরকম লাগলো-পুরুষ প্রধান সংস্কৃতির কারনে নারী নারীকে পিছু টানে।নারী যে নারীকে পিছু টানে –এই ঘটনা অস্বীকার করার কোন কারন নেই।আর তার জন্যে দায় ভাড়টা অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষকে নিতেই হবে।কিন্তু আশার কথা হচ্ছে এই জাতীয় আলোচনার মূল বক্তারা কিন্তু পুরুষই হন,আয়োজক থেকে আরম্ভ করে পাব্লিকেশন সবি পুরুষদের হাতেই।শুধুমাত্র পেশার কারনে তারা নারীদের এভাবে সন্মানিত করেন এটা সব সময় ঠিক না,অনেক পুরুষকে দেখেছি মেয়েদের জন্যে নিজের জায়গাটি ছেড়ে দিতে ।তারা ঘরের ভেতর সহধর্মিনীর জন্যে কতোটা জায়গা ছেড়ে দেন তা আসলে আমরা কেউ জানি না ,জানাও হবে না কোন দিন।দরিদ্র ঘরের মেয়েরা যেমন নির্যাতনের পর রাস্তায় নেমে আসে, শিক্ষিত বা মধ্যবিত্ত পরিবারে তা দেখা যায় না।তবে এখন তার চিত্র অনেক খানি বদলে গেছে বলে আমার বিশ্বাস।“পোষালে ঘর ,নইলে তুই পর”।
নিজের ক্যাম্পাসে পা রাখলে আজো কেমন নস্টালজিক হয়ে পড়ি,কেবল মনে হয় আহা যদি আবার ভর্তি হতে পারতাম।তাহলে আর অংক নিয়ে পড়তাম না,ইংলিশে ভর্তি হতাম।আমাদের আহমেদ রেজা স্যারের সাথে দেখা হবার পর থেকেই এই চিন্তাটা আমার মাথায় ঢুকেছে।উনি যেমন চমৎকার ইংরেজী বলেন তেমন অদ্ভূত সুন্দর তার বাংলা উচ্চারন।ভি সি ম্যাডামের অফিসে বার বার আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন-ইনি অনন্যা পত্রিকাতে আছেন,লেখালেখি করেন। আমি প্রতিবারোই উত্তর দিলাম –আমি জাবির এক্স স্টুডেন্ট ।এটা শুনে একজন বড় আপা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন-তুমি জাবির স্টুডেন্ট ,এটাই তোমার পরিচয়।আর কিছু দরকার নেই।
তবে মেয়ে হবার যে চরম ফ্যাসিলিটি আছে তা স্বীকার করতেই হয়।আমি এমন সব অফিসে হুট হাট ঢুকে পড়ি যেখানে কখনোই নিজের পরিচয় দিতে হয় না,কেউ আমার ভিজিটিং কার্ডও চায় না।যেটা ছেলেদের জন্যে খুব কঠিন।আজ তার ব্যতিক্রম হয় নি।সেমিনার শেষ হবের আগেই বেশ কয়েকটা প্রেস বিঞ্জপ্তি পেয়ে গেছি।
ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় স্যার আমাকে তার ছাত্রীর গারিতে তুলে দিলেন।ভুল বললাম ছাত্রীর বাবার গাড়িতে তুলে দিলেন,তিনি পেশায় বিচারপতি।আমি একটু নড়ে চড়েই বসলাম-তোমার নাম কি ?
-নবনীতা ।
খুব অবাক হলাম-আঙ্কেল কি ল নিয়ে পড়েছেন নাকি বাংলা সাহিত্য নিয়ে ?
খুব আড্ডা হলো সারা রাস্তায়।ও কেবল অনার্স দিয়েছে,প্রথমটায় ভেবেছিলো আমি বুঝি এখনো পড়ছি।ওহ নবনীতা তোর মুখে ফুল চন্দন পড়ুক।১৫ বছর হয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস ছেড়েছি।
আর একটা এসাইনমেন্ট ছিলো “আমরাই পারি” পারিবারিক নির্যাতনের প্রতিরোধ জোটের।ওটা গত রাত ১২ টা থেকে শুরু হয়েছিল,তাই উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়নি।তাই ফোনে ফোনেই কাজ সেড়ে নিলাম।
তাদের স্লোগান ছিলো-সহিংসতামুক্ত মানবিক রাজনীতি চাই ,সকল পর্যায়ে নারী পুরুষের সম অংশীদারিত্ব চাই।এই চাওয়া গুলো অবশ্য নতুন কিছু না,এভাবেই আমরা চেয়েই চলেছি চিরটাকাল ।মানবিক রাজনীতি বা সম অংশীদারিত্ব কোন জায়গাতেই সহিংসা থাকুক তা আমাদের কারোই কাম্য নয়।আর এই শব্দ গুলো যেন শব্দের গোলকধাঁধায় আটকে না যায় সে দায়িত্ব কিন্তু উপর মহল কে নিতে হবে,যতই আমরা রাত ভর প্রদীপ জ্বালাই না কেন।
বিকেলের আয়োজনতো ছিলো বেস জমজমাট ।নারী পক্ষের , এবারের স্লোগান-“দেশে গনতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে নারী সমাজের আহবান এবং জি এম ও ফসল,তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার ও চাষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।“বোঝাই যাচ্ছে দেশের একটি বিরাট গোষ্ঠি জাগ্রত হয়ে গেছে ।শুধুমাত্র নারী -এই শব্দটার মধ্যে আর আমরা আটকে নেই।ফটোগ্রাফার লয়েডকে বললাম –চলো,বিকালটা সুন্দর কিছু ছবি তুলে কাটাবে।সে প্রথমে একটু কাচু মাচু করলো,তাকে মজা করে বললাম-চলো,অনেক সুন্দর মেয়ের ছবিও তুলতে পারবে।লয়েডের সাথে আমার সম্পর্ক্টা ঠিক কলিগ না,বড় বোন যেমন ছোট ভাইকে শাসন করে –আদর করে তেমনটাই।
লয়েড মহানন্দে তার বিরাট সাইজের ক্যামেরা নিয়ে রওনা হলো,আর এসাইন্মেন্টের পর কি কি খাওয়াতে হবে তার আবদার করতেও ভুললো না।রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে দেখি-এতো বিশাল ব্যাপার,ব্রীজের মাথা থেকে মেয়েদের লম্বা লাইন শেষ হয়েছে আর্ট গ্যালারীর শেষ অব্দি।ক্যামেরাম্যান দেখি সাথে সাথেই সিরিয়াস-ক্লিক ক্লিক করছে তার ক্যামেরার লেন্স।আমি খুব মজা পাচ্ছিলাম,এত মেয়ে এক সাথে,পাশ দিয়ে শত শত গাড়ি চলে যাচ্ছে,এর মধ্যেই নারী পক্ষ বেশ অনেক গুলো ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে আছে।এক ফাঁকে প্রেস রিলিজ হাতে নিয়ে নিলাম,ওটা এডিট করে দিতে হবে।কারন অনেক গুলো বিষয় একসাথে,আমাদের ম্যাগাজিনে জায়গাই হবে না।ছবিতোলার এক ফাঁকে মনে হলো আইস্ক্রীম খাওয়া দরকার,স্লোগান দিচ্ছে আপারা আর গলা শুকাচ্ছে আমার।বেলিসিনো পাওয়া গেলো,আমার প্রিয় ভ্যানিলাও পাওয়া গেলো।এরমধ্যে দেখি ফটোগ্রাফার হাওয়া ,কিছুক্ষন পর আবিষ্কার করলাম লয়েডের ক্যামেরা ভর্তি অসাধারান কিছু ছবি।সত্যি নারী সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ সৃষ্টি।চমতকার নৃত্যের ছবিগুলো অন্তত তাই বলে দিচ্ছে,আমি বিস্বয়ে তাকিয়ে আছি-মেয়েগুলো এতো সুন্দর।এই মেয়েগুলো আজ বাদে কাল অন্যের ঘরে যাবে,ওদের গায়েও কি কেউ আঘাত করবে,কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেবে কিংবা অপমান করবে ?উহ আমার অদ্রিয়ানার কথা মনে পড়ছে বার বার,মোবাইল বের করে মেয়েটার মুখ দেখে নিলাম।তখনি পাশ থেকে গানের সুর ভেসে এলো –-আমার মুক্তি আলোয় আলোয় ...
আপাতত আমাদের মুক্তি পেট পূজায়,সারাদিন অনেক কাজ করেছি।এখন কিছু খাওয়া দরকার,রবীন্দ্র সরোবর রবীন্দ্রনাথ দেখে গেলে খুব ভালো কাবাবের কবিতা লিখতে পারতেন।অসাধারন কাবাব পাওয়া যায় এখানে ,আমরা গলা সমান কাবাব খেয়ে ফেললাম।লয়েড একটা কোক নিলো,আমি বললাম-তুই জানস , এইটা তেলাপোকা বাইটা বানায়।ও হেসে বললো-আজকে তেলাপোকাই খামু আপা,তাইলে সাঁতার শিখতে পারুম।
সন্ধ্যা নেমে আসছে ,সেই সাথে করুন হচ্ছে বাঁশির সুর।উঠে পড়লাম,অদ্রীয়ানা আমাকে ডাকছে ।ঢাকা শহরে কখন হরতাল থাকে আর কখন থাকে না আমি বুঝতে পারিনা।সেই মহান জ্যামে আটকালো আমাদের রিক্সা।
নতুন ড্রাইভার ,সমানে বেল দিয়ে যাচ্ছে।আমি ওকে ডেকে বললাম-তুমি্ কি রিক্সারে আকাশ দিয়া নিয়া যাইবা? সে খুবি লজ্জিত ভঙ্গিতে পেছনে তাকালো।আমরা যে দিন দিন সহনশীলতা হারিয়ে ফেলছি তা নিজেরাও জানিনা।সবাই এক সাথে রাস্তা পাড় হতে চায়,সবাই বাস দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে ।কে কার আগে যাবে তার এক ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা চলছে।কিন্তু কে কার চাইতে ভালো হয়ে চলতে পারে তার কম্পিটিশনটা কোথাও নেই।আর এতো সামান্য রিক্সা চালক।
শেষ অব্দি আমার প্রিয় সার্ভিস –দ্যা সুপার লোকাল ৯-তে গুটি শুটি হয়ে বসে পড়লাম।সামনেই বসে আছে একজন মধ্যবয়সী মহিলা,কোলে একটা বাচ্চা,পাশেই আর একটা ।দুইটাই ঘুমে পড়ে আছে মায়ের কোলে,মহিলা তার ডান হাতের উপর বাচ্চাদুটোকে নিয়ে সেই আজিমপুর থেকে মিরপুর যাচ্ছেন।এখানে একটু যুক্ত না করলেই নয়,আমি এক হাতে লিখছি আর অন্যহাতে অদ্রীকে বুকের মধ্যে লেপ্টে ঘুম পারাচ্ছি।আসলে নারী মানেই –মমতা,ধৈর্য্য ,শক্তি আর মনোবলের এক অদ্ভূত সমন্বয় ।
বেশ একটা ভাল লাগা নিয়ে বাড়ির মোড়ে চলে এসেছিলাম।ঠিক তখনি একটা কুতসিত গালি আমাকে চোমকে দিলো।একটা ছেলে্র কানে ফোন,বলছে – অই ...গী ,আমি কই তা জাইনা তুই কি করবি?
এই দৃশ্যটা আমাদের খুব পরিচিত যাকে আমরা পারিবারিক ঝামেলা বলে এড়িয়ে চলি।বেশিরভাগ পুরুষ ধরেই নেই তার কর্মকান্ড সম্পর্কে স্ত্রীর জানার কোন অধিকার নেই।সে থাকবে ঘরের ভেতর,শোভা বর্ধনের বস্তু হয়ে।আমি আর কি করবো –এই সব কুরুচিপূর্ন গালি-গালাজতো আর নতুন না।শুনতে শুনতে গায়ের চামড়া বহু আগেই গন্ডার হয়ে গেছে । মোবাইলের ওই পাশের মেয়েটার মুখ কল্পনা করতে করতে বাড়ি ফিরলাম।আহা,মেয়েটাকি এখনো তার স্বামির জন্যে অপেক্ষা করছে।যে মানুষটা কখনোই ঘরে ফেরেনা , তার শরীর ঘরে ফিরলে কি বা প্রাপ্তি তাতে ?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩

বাঘ মামা বলেছেন: আপনার এই লেখাটা আমার চোখে পড়েনি কেনো বুঝতে পারলামনা, ভালোই বলা যেতো এই টপিকে................


হুম ফিরবো আবার,,,,

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.