নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যাপিত সময় ৩ ( ২য় পর্ব )

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

গত কাল বিকেলে একটু বের হয়েছিলাম,এই ঘোরাঘোরি আর কি ।শাড়ি পড়তে গিয়ে আবার মনে হলো –ইশ পাশে একটা মানুষ বড্ড প্রয়োজন।অন্তত সূতি শাড়ীর ভাঁজ ঠিক করার জন্যে হলেও।হা হা হা ...রুমে ফিরে কাঁচের চুড়িগুলো খুলতে গেছি অমনি চুড়ি গুলো ভেঙ্গে একাকার,সাথে বা’হাত কেটে রক্তারক্তি অবস্থা।স্যাভলন আনতে কাকে পাঠাবো,আমি কাউকে বিরক্ত করতে পছন্দ করিনা।তাই একখান কবিতা লিখে ফেললাম এক হাতেই।তারপর খাইলাম ঝাড়ি-এতো দুঃখ বিলাস কেন,এবার ক্ষান্ত হউ।
প্রিয় মানুষগুলো আমার লেখায় এত দুঃখ খুঁজে পায় কেন ,আমি বুঝিনা।আজ সকালেই যায় যায় দিনে আমার কবিতা বেরিয়েছে সাহিত্য পাতায়।কোন দুঃখ বোধ নেই লেখার কোথাও।কাউকে ভালোবেসে তাকে সুখী দেখতেই আমি সব সময় পছন্দ করি ,এ আমার কাছে নতুন না।বিয়ের তিন বছর পর গিয়েছিলাম হানিমুনে –সেন্তমার্টিন।২০০৩ সালে নিঝুম দ্বীপের চেহারা ছিলো অন্যরকম,একদম শুনশান।অদ্ভূত একটা বাতাসের গন্ধ ছিলো সারা আকাশ জুরে।সেই বাতাসের মিষ্টি পরশ আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেলো,সারাদিন উনি ঘুমালেন।আর আমি লিখলাম এলোমেলো কথামালা,না তখন ব্লগ ছিলো না ,ডায়রিতেই লিখতাম।আর সন্ধ্যে নামলেই দু’জন খেতে যেতাম বীচের সামনের খোলা রেঁস্তোরায়।একবার কি হলো-আমি চিংড়ি নিয়েছি ,যেই না খেতে বসেছি অমনি দেখি একটা লোক কট মট করে কাকড়া ভাংছে।সেই গন্ধে আমার কি যে বমি।মেজর সাহেবতো ভয়ে অস্থির হয়ে গেলেন-এখন আমাকে তিনি কি খাওয়াবেন।চিড়া –মুড়ি খেয়েই কাটিয়েছিলাম এক দিন।তারপর কান ধরেছি –আর না।তবে নিঝুম দ্বীপের সেই নীল নীল জল গুলোর কিছু ছবি এখনো এলবাম জুরে আছে।
এমন অনেক সুখ স্মৃতি আমার স্টকে আছে।যেমন প্রথম মা হবার এক অদ্ভূত অনুভূতি।পেট ফুলে টুই টুই অবস্থা।বাচ্চার নার্ভ বন্ধ হয়ে গেছে ,কিন্তু আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা।কেবল শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ভীষন।বাবুর দাদী আমার অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি সি এম এইচ নিয়ে গেলেন, অনেক আদর করতেন আমাকে ।বিশেষ করে বাবুর দাদা আমার ব্যাপারে বেশী কেয়ারিং ছিলেন,উনাকে আমি কিন্তু এখনো আব্বা বলেই ডাকি।সি এইম এইচ-এ তখোন এতো সব যন্ত্র-পাতি আসেনি,তবে অভিজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন অনেক।ফাইভ ফিঙ্গার না সিক্স ফিঙ্গার করলো-ঠিক বুঝতে পারলাম না।বলে দিলো-ও টী করতে হবে।না হলে বাচ্চার গলায় যে ভেইন পেঁচিয়ে গেছে তাতে মা-সন্তান কাউকেই বাঁচানো যাবে না।মুহূর্তের মধ্যে ঢাকা শহরের যতো আত্বীয় ছিলো সবাই সি এম এইচ এসে উপস্থিত হলো।সামান্য ইঞ্জেকশন দিতেও এখনো আমার ভীষন ভয়,আমি কি করে অপারেশন রুমে পড়ে ছিলাম-কে জানে।প্রায় আধা ঘন্টার অপারেশন শেষে একজন ভাই আমার কাছে এসে বললেন-আপনার অনেক সুন্দর একটা ছেলে হয়েছে ভাবী।আমার কানের কাছে সেই কথাটা আজো বাজতে থাকে।লাল টুক টুকে ছেলে আমার তোয়ালে পেঁচানো তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারলাম –আমার প্রতি সমস্ত ভালোবাসারা আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে।বংশের বড় ছেলের ঘরে বড় ছেলে,তার জন্যে আয়োজনের কোন কমতি ছিলো না।যখন যা চেয়েছে বাবু তাই পেয়েছে,একবার এমন হলো –রাত প্রায় বারোটা বাজে ,সব দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।কিন্তু নাতি বলেছে চকলেট খাবে,আমার শশুর দোকান খুলিয়ে নাতির জন্যে চকলেট আনলেন।আমি ছেলের বাবাকে বললাম-এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি, ছেলে যদি আকাশের চাঁদ চায়,তাকে কি তাই দিতে হবে নাকি?
-বাদ দাওতো,একটা মাত্র নাতি।যা ইচ্ছা করুক,উনারা আর বাঁচবেন কতো দিন।শখ মিটাক।
সেই শখ মিটাচ্ছে আমার ছেলে ।এখন বয়স চৌদ্দ,হাত দিয়ে ভাত খাবে না সে।কম্পিউটারের সামনে বসে থাকবে ,দাদী লোকমা তুলে দেবে ,সে ঘন্টা ভরে খাবে।অতিরিক্ত আদর কাউকে কাউকে পরনির্ভরশীল করে দেয় –তা আমি বুঝতাম অনেক আগ থেকেই।ছোট বেলায় আব্বা আমকে আম ,তরমুজ,আঁখ এই জাতীয় খাবার ছিলে কেটে দিতেন,আমার ভাইরা কিন্তু নিজেই সব ছিলে খেতো।হাস্যকর বিষয় হচ্ছে –-এখনো আম ছিলে খেতে আমার অনেক কষ্ট লাগে।কারন হচ্ছে অভ্যাস।কাজ না করলে হাত গু্লোই এক সময় আন্দোলন শুরু করে।উফ,কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম।বলছিলাম ছেলের কথা,আমাদের বাড়িতে যে ছেলেটাকে কাজের জন্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাকে ওরা ব্যাটম্যান বলতো।কেন বলতো সেটা আজো জানিনা,ছেলেটার কাজ ছিলো মেজর সাহেবের ড্রেস গোছানো,বাজার করা আর বাবুর সাথে খেলা।এক দিন লক্ষ কোরলাম-বাবু ছেলেটার সাথে তুই তুই করে কথা বলছে আর বিভিন্ন রকম আদেশ করছে-এই পানি আন,আমার জুতা দে -এইসব।আমিতো পুরাই বোকা-তুমি ওকে অর্ডার করছো কেন?
-কেন,বাবাযে করে।
-আশ্চর্য,তোমার বাবা যা করবে তাই তুমি করবে নাকি?তুমি ওকে ভাইয়া বলে ডাকবে,আর নিজের পানি নিজে ভরে খাবে।
পরে এই বিষয়টা নিয়ে আমি অনেক বার কাউন্সেলিং করেছি।সব বাসায় যে বাচ্চারা ব্যাটম্যানদের তুই তাই করে-তা না।আমার বাসায় ঘটনাটা ঘটছে ,কারন বাবুর বাবা ছেলের সামনেই কাজ গুলো করছে।এটা যে ইচ্ছে করে করছে তাও না,বহু দিনের অভ্যেস।তাই হয়তো ছাড়তে পারছেনা,তবে ছেলেটার জন্যে তার মায়া কোন অংশেই কম ছিলো না।আমরা শপিঙ্গে গেলে ওর জন্যে বরং আগে কাপড় উঠতো তার হাতে।এটা নিয়েও আমার বিরোধ ছিলো-যার যতোটুকু প্রাপ্য তাই দাও,বেশি দিতে যেও না।পরে আর হজম করতে পারবেনা।চোখ ফুটে যাবে।
একদিন ছেলেটা তার খুব দামী একটা ঘড়ি নিয়ে পালিয়ে গেলো।
আচ্ছা,আমি যেন কোথায় ছিলাম?হুম,ওইযে মিশনের ছুটিতে।তখন বাবু অনেক খানি বড়,নিজে নিজে অন্তত জুতো জোড়া পড়তে শিখেছে।উনি দেশে আসার পর আমার যে কাজটা আগে করতে হলো তা হলো-সি এ টি ছাড়তে হলো।মধ্য রাতে বাড়ি ফেরা যাবে না,মোবাইলে কেউ কল করতে পারবেনা,বাইরে গেলে অবশ্যই বসের(জামাইয়ের) পার্মিশন লাগবে।
কঙ্গো থেকে আনা সমস্ত গিফট একটা একটা করে খোলা হচ্ছে আমার সামনে ।আমি বসে বসে দেখছি।প্রথমেই দুটো এল সি ডি টিভি বের হলো।আমিতো অবাক-দুটো কেন,আমাদের বাসায়তো একটা টিভি অলরেডি আছেই।
-এটা মেজর শারমিনের জন্যে।
-ওহ।
আবার প্যাকেট খোলা হচ্ছে,আমি উতসুক হয়ে আছি-না জানি কি বের হয়।কিন্তু দেখি খালি শোপিস তাও আবার জোড়া জোড়া।আবার প্রশ্ন কোরলাম-এইগুলা আবার কার জন্য?
আবার উত্তর এলো –শারমিনের জন্য।
বুঝছি,এখন যা যা বের হবে তার অর্ধেক আমার বাসার জন্য আর অর্ধেক শারমিনের জন্যে।শোপিস দেখা বাদ দিয়ে জনাবের কাপড়ের ব্যাগ খুললাম-ধুঁতে দিতে হবে।ওমা কাপড়ের সাথে একটা বিছানার চাদর বের হয়ে এলো।আফ্রিকাতে আবার এদেশের চাদর পাওয়া যায় নাকি,কই আমার জানা ছিলো নাতো।চাদরটা এতোটাই দমড়ানো যে বোঝাই যাচ্ছে ওর উপরে ভালোই ধস্তা ধস্তি হয়েছে।আমি ওইটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে প্রশ্ন কোরলাম-এইটা কার,তোমার কাছে কেমনে আসলো ?
খুবি নির্লিপ্ত চেহারার উত্তর-এটা শারমিনের চাদর ,উনার ব্যাগে জায়গা হচ্ছিলো না।তাই আমার ব্যাগে রেখেছে।
-তুমি জুনিওর দেরকে কবে থেকে উনি উনি করো?
-অন্য ইউনিটেরতো তাই।
-একজন মহিলা কলিঙ্গের বিছানার চাদর তোমার ব্যাগে।একজন পুরুষ কলিগ তোমার বউকে বাড়ি অব্দি এগিয়ে দিলেই তার সাথে বিছানায় যাওয়া হয়।তাহলে এটাকে কি বলবো আমি?ডি এন এ টেস্ট করাবো?
এই সব অসংলগ্ন উদ্ভট কথার কোন উত্তর দেবার প্রয়োজন তার আদৌ ছিলো না।তবে চাদরটা আমি না ধুয়েই রেখে দিলাম।আমাকে সত্য জানতে হবে।
আজ আমি সেই সব দিনের কথা মনে করে কাঁদছি,কিন্তু সত্যি বলছি সে দিন আমার চোখে এক ফোটাও জল ছিলো না।আমি তাকে অনুসরন করলাম,জীবনে এই প্রথম ভালোবাসার মানুষকে প্রচন্ড ঘৃনা ভরে অবিশ্বাস করতে লাগলাম আমি।সন্ধ্যায় সেই গিফটগুলো গাড়িতে তুলে নিলেন তিনি,মেজর শারমিনের বাসায় গিয়ে নিজের হাতে টি ভি সেট করে দিলেন।ফিরলেন বেশ রাত করে।প্রায় ছয় মাস পর ও দেশে ফিরেছে,খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার কাছে আসার কথা ।এর আগে এমন হয়েছে আমার অনিচ্ছাতেও তার সাথে সহবাস করতে হয়েছে,অনেকটা স্বামী হবার প্রচন্ড দাবী নিয়েই সে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তো।চুপচাপ পড়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকতো না তখন।
কিন্তু আজ রাতের চিত্র একদম উল্টো ।
কোন বিষয় নিয়ে বলতে গেলেই শুনতে হতো-তুমিতো ব্লাডি সিভিলিয়ন,তুমি কি বুঝবা ?আমিও পাল্টা বলতাম-তাহলে তোমার মা কি?
আমার হে্নো সাহস তাকে হিংস্র বাঘ করে তুলতো,হাতের কাছে যা পেতো তাই ছুড়ে মারতো।একবারতো রীতিমতোন গলায় ছুড়ি চালিয়ে দিচ্ছিলো,সে যাত্রা বুয়া এসে বাঁচিয়েছে।কোন বিষয় নিয়ে আর্গুমেন্টে যাওয়া তার পছন্দ না,তাই অপেক্ষা করতে থাকলাম প্রমানের জন্যে।
পরদিন সকালেই আমার জি পি সিম বের করে নিজের মোবাইলে ভোরে নিলো।হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে চলে গেলো সার্ভেন্টস রুমের বারান্দায়।অফিসার মানুষ ,ওই পথে যাবার কথা না।তাই আমিও অনুসরন করলাম,কাঠের দরজার এ পাশ থেকেই স্পষ্ট শুনলাম তাদের কথোপকথোন।ওপাশে কি বলছে তা আমার জানা নেই,তবে এ পাশ থেকে বলা হচ্ছে-জান সোনা,আই মিস ইউ।দেখা হবে।।
কথাটা তখনো তার ঠোঁটে লেগে ছিলো,কিন্তু আমি এগিয়ে গেলাম।খুব ঠান্ডা মাথায় হাত বাড়িয়ে বললাম-তোমার কথা শেষ হয়েছে?আমার সিমটা ফেরত দাও।তোমার জান সোনার সাথে কথা বলতে হলে অবশ্যই নিজের সিম দিয়ে বলবা।আমার টা না।
সে একটু থত মত খেয়ে গেলো,কিন্তু ধরা খাবার লোক সে না।আমি এক জীবনে তার এতগুলো জান সোনা পেয়েছি যে কে যে আসল আর কে যে নকল তাই বুঝতে পারিনি।আমার বাসায় যে সুন্দর মেয়েটা খেতে আসতো,আড্ডা মাড়তো সে তার ইউনিটের অফিসার ছিলো,এখন অবশ্য মেজর হয়েছে।তার সাথে যে ঢোলে পড়া সম্পর্ক তাকেই মনে হলো জান সোনা,আবার চিটাগাং থেকে যে মেয়েটা মধ্য রাতে কল করতো ,আমি ধরলেই চুপ-তাকেও মনে হতো জান সোনা।মেজর সাহেব যখন গিফট কিনতেন তখন আমিসহ কেউ বাদ যেতো না,কিযে দামী দামী সব গিফট ।মনে হতো আমিই আসলে জান সোনা।আমি বিরাট কনফিউজের মধ্যে পড়ে গেলাম।
তবে নম্বরটা খুঁজে পেতে আমার খুব কষ্ট হয়নি,শক্তিমান বন্ধুদের ছড়াছড়ি এই শহরে ।২৪ ঘন্টার মধ্যেই জেনে গেলাম –এবার কার জান সোনা হলেন মেজর শারমিন।যার সাত বছরে একটা বাচ্চা ফোটানোর ক্ষমতা হয়নি,সে মিশন থেকে ফিরেই মা হতে চলেছেন।আর সেই সুখবর ছড়িয়ে পড়েছে পুরো সি এইম এইচে।
জাজুসি করাটা আমি শিখেছিলাম আমার জামাইয়ের কাছ থেকেই ,কিভাবে ই-মেইল হ্যাক করতে হয়,কি ভাবে হাইড করা ফোল্ডার ওপেন করতে হয় –এইসব।কিন্তু বিধাতা আমাকে এতোদূর যেতে দেননি,আমি কিছু করার আগেই তাদের অন্তরংগ ছবি ভেসে উঠলো সাদা স্ক্রীনে।কাপড় খোলা থেকে শুরু করে সবি দেখলাম--থ্রী এক্স দেখতে যে এতো মজা ,তাও আবার নিজের কাছের মানুষের।আমার একটুও বমি আসলোনা,হাত পা বরফের মতোন ঠান্ডা হয়ে গেলো।আর খালি মনে হলো –আমি কে ?কে আমি?
আমি কিন্তু তখনো বিছানার চাদর ধুতে দেই নি,ওটা নিয়ে শাশুড়ি আম্মাকে দেখালাম যিনি আমাকে অনেক আদর করতেন,যিনি আমি চলে আসবার পর হাউ মাউ করে কেঁদেছেন,যিনি –আমি রাতে দুধ না খেয়ে ঘুমাতে গেলে খুব রাগ করতেন,তার কাছেই গেলাম-মা,আপনার ছেলের সাথে একটা মেয়ের এই ধরনের সম্পর্ক আছে ।এখন আমার কি করা উচিত আপনিই বলেন।
প্রথমতো উনি এইসব বিশ্বাস করেন না,সব-ই আমার মনের ভুল বলতে থাকেন।আমি মেজর সাহেবের সমস্ত ম্যাসেজ আমার মোবাইলে সেইভ করে রেখেছিলাম-ওখানে কান লাল করার মতো কথাবার্তা।তাই দেখালাম,তখন একটু দমে গিয়ে বললেন-ছেলেদের এমন সমস্যা থাকতেই পারে,দেখো তুমিতো মা –একটু বাবুর কথা চিন্তা করো।
এইবার প্রথম ক্রুদ্ধ হলাম আমি ,ভীষন রকম বেয়াদপ হয়ে গেলাম-আপনার স্বামী যদি আপনার সাথে এমন করতো তবে আপনি কি করতেন ?
এখানে একটু বলে রাখা ভালো।আমি আমার শশুরের মতোন ঠান্ডা এবং বিনয়ী মানুষ কম দেখেছি।তার মধ্যে কিছু গোড়ামী থাকলেও ছেলে মেয়ের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবার লোক তিনি নন।এর আগে যতোবারি আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি ততোবার তিনি বুঝিয়েছেন,আমাকে সহনশীল হতে বলেছেন-দেখো,তোমরাতো ভালোবেসেই বিয়ে করেছো,একটু সময় নাও -দেখো হয়তো ও একদিন তোমার কাছেই ফিরে আসবে।
হুম আমি সময় নিয়েছিলাম।চাদরটা খুব ভালো করে ধুয়ে আয়রন করে মেজর শারমিনের চেম্বারে গেলাম,ওর শরীর তখন ভারী হতে শুরু করেছে।ওর স্বামী হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে,মানুষটাকে দেখে এতো মায়া লাগলো-এতো বছর পর বাবা হবার আনন্দ তার চোখে মুখে খেলা করছে।আমি কিছুই বললাম না।বেরিয়ে আসার সময় ইংলিশে টেক্স পাঠালাম-অভিনন্দন তোমাকে ,তোমাদের অনাগত সন্তান ঠিক কার মতো দেখতে হবে আমি জানিনা।তবে যার মতোন হোক খুব ভালো থাকো।আর এর জন্যে মেজর সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ।
সবাই বুঝে ফেললো-এবার আমি আর থাকছিনা,কোন শক্তিই আর আমাকে ঠেকাতে পারবেনা।আকাম যাই করুক, ছাত্র হিসেবে ও ছিলো খুব সাংঘাতিক, এক চান্সেই স্টাফ কলেজে চান্স পেয়ে গেলো।আমাকে তখন পা ধরা ধরি অবস্থা-দেখো,তুমি থাকো।আর কারো জন্যে না হোক ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও থাকো।
-ছেলের মুখের দিকে তাকাবো কেন,ছেলেতো আমার কাছেই থাকবে।
-তুমিতো কিছু করোনা, এতো বড় ছেলেকে পালবা কেমনে?ওর স্কুলের খরচ জানোনা তুমি?য়ার আইন তোমাকে ছেলে দেবে না।
-ওকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াবোনা,বাংলা মিডিয়ামে পড়াবো-সমস্যা কি?আর এখানে আইন টানছো কেন?
-দেখো,আমার স্টাফ কলেজ সামনে ।কেরিয়ারের জন্যে বিরাট একটা টার্নিং।এখন যদি তুমি চলে যাও তাহলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।
-কারো জন্যেই কিছু আটকে থাকেনা,তোমার কলেজ তুমি করো আমাকে আমার মতোন থাকতে দাও।
-আচ্ছা,ঠিক আছে।আমি তোমার কোন ব্যাপারে আর নাক গলাবো না।তুমি অন্য ঘরে থাকবা।আমি ভুলেও তোমাকে বিরক্ত করবো না।
আমার ওকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলো,তল্পি তল্পা গোছালাম।গন্তব্য স্টাফ কলেজ, মিরপুর -১২।বেশ একটা স্বস্তি ছিলো বাপের বাড়ির কাছে ,বন্ধুরা কাছে ধারেই থাকে।কিন্তু ওখানকার নিয়ম অনেক কড়া।দুপুর তিনটার সময় এই দেশ- ওই দেশ এমন অনেক প্রোগ্রাম হতো।এই জন্য সারাক্ষন তক্কে তক্কে থাকতে হতো কখন তৈরি হতে হয়।তবে অনুষ্ঠান গুলো আমি খুব এঞ্জয় কোরতাম,নিজেই অনেক প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করেছি।অভিনয় করেছি,আবৃত্তি করেছি,ভাবীদে্র সাথে আড্ডা মেরেছি ঘন্টার পর ঘন্টা।বেশির ভাগি শাড়ি আর স্বামীর গল্প।আমার কাছে শাড়ির গল্প অনেক-কারন আমার কালেকশনে শাড়ির অভাব নাই।কিন্তু স্বামীকে নিয়ে গল্প করার মতো একটা কথাও আর অবশিষ্ঠ নেই।এই মেকি মেকি জীবন থেকে আমাকে সাময়িক মুক্তি দিলো ফেইবুক,তাও আবার চুরি করে।রোদেলা নীলা নামে ইয়াহুতে একটা আইডি খুললাম, তারপর ফেইসবুক।যতবার সাইনইন করতাম ওর ল্যাপ্টপ থেকে ততোবারি হিস্ট্রি ডিলিট করতে হতো,কি যে একটা ঝামেলা।ও মুখে যতোই বলুক আমাকে স্বাধীনতা দেবে,তা সে পারতো না।খালি আমার মোবাইলে এসে হানা দিতো যখন তখন-ডায়াল লিস্ট বিশটা কিনা তাও চেক করতো ,আমার কবিতায় খুঁজে বেড়াতো –লোমশ হাত নিয়া লিখসো দেখলাম,এইটা কার হাত ?
আহাম্মক কি আর গাছে ধরে,কারো হাত ভেবেই কবিকে তার কবিতা লিখতে হবে এই থিউরী কাকে কে দিলো কে জানে।ব্লগ সে বুঝতো না,কিন্তু ফেইসবুকে সে মাষ্টার।আর বাবু যখন স্কুলে চলে যেতো আমি আমার একটা ছোট্ট জগত তৈরি করে নিতাম-এটাকে বলে নিজেস্ব বলয়।ওখানে আমি রোদেলা,অন্যপ্রান্তে আকাশ।এই আকাশ যে কে তা আমি কখনো জানার চেষ্টা করিনি।তার সাথে আমার কথা হতো ই-মেইলে,ম্যাসেঞ্জারে।মাঝে মাঝে হার্ট শেইপ পাঠাতো সে ইথার তরঙ্গে ,তাই দেখে আমার সমস্ত মন মুগ্ধতায় ভরে যেতো।কখনো কেউ বার্তা লিখতো কানাডার নায়াগ্রা জল প্রপাত থেকে,কেউবা বাকিংহাম প্যালেস থেকে ,কেউ আবার ইংল্যান্ডের রানীর দেশ থেকে।কি তাদের নাম ছিলো,কিবা তাদের পরিচয়-কিছুই জানতাম না।খালি কথা বলতে থাকতাম।কত যে কথা,এক জীবনে এতো কথা আমার জমা ছিলো কে জানতো।
ওদিকে টম কিন্তু ঠিকি ওত পেতে আছে,আমি যেই পাসোয়ার্ড দিচ্ছি তা সেইভ হয়ে যাচ্ছে।আমার আবেগ ঘন কথা গুলো রেকর্ড হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ড্রাইভে।নিজের অপরাধ হালকা করার ভালো একটা অস্ত্র হাতে নিয়েছে মেজর সাহেব।
আমি তার জালে ধরা দিলাম,আমার কল্পনার আকাশ তখন কোন দেশে তাও আমি ঠিক জানিনা।কিন্তু তাকে ভার্চুয়াল ছোঁবার দায়ে কাড়াদন্ড পেলাম আমি।জীবনে এক নজর দেখলামো না,কিন্তু আমার লেখা ই-মেইল গুলো প্রিন্ট করে করে আমাকেই শোনানো হচ্ছে ।সেগুলো পাবলিশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে -সেকি এক ভয়ানক অবস্থা।
আসলে নিজেকে অপরাধী ভাবার কোন কারন আমার ছিলো না।যৌনতা আমাকে তাড়া করে ফিরলেও আমি যৌনতার কাছে কখনো মাথা নত করিনি-তা আমি বড় গলায় বলতে পারি।তখন যেটা হচ্ছিল সেটাকে হেলুসিনেশন অথবা আবেগের অতি মাত্রায় বহিঃপ্রকাশ বলা যেতে পারে।বাস্তবেই আমার অনেক বন্ধু,জৈবিক চাহিদা পূরন করার সমস্ত পথ আমার খোলা।কিন্তু আমার ভালো লাগতো পুরুষ মানুষের ওই মিষ্টি মিষ্টি কথা আর অযাচিত স্বপ্ন দেখানো।আমি পিসির সামনে কতো রাত ভোর করেছি তার কোন সঠিক হিসাব নেই,কখনো সারা রাত কথা বলে।আবার কখনো লিখতে লিখতে আজান দিয়েছে।
বাবু ছোট বেলা থেকেই এতোটা দাদী ঘেঁষা ছিলো যে শুক্র-শনি হলেই তাদের বাড়ি।আমার ওদের বাড়িতে যেতে আর ভালো লাগতো না,এইসব নিয়ে অনেক ঝগড়া –চিৎকার চেঁচামেচি হয়েছে।আমি কেবল মুক্তির অপেক্ষায় থেকেছি ,আর কিছু না।বিডি জবসে এর মধ্যে সি ভি দিতে শুরু করলাম,কারন স্টাফ কলেজের এক বছর শেষ হলেই আমার ছুটি।কিছু করেতো খেতে হবে।তখন মনে হতো কাজ পাওয়া কতো সহজ।ব্যাপারটা আসলে এতো সহজ নয়,ঢাকা শহরে চাকরী পেতে হলে ভালো যোগ্যতা লাগে।ভালো লিংক লাগে।আমার তখন সমস্ত লিংক বন্ধ।
২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানায় ঘটে যাওয়া ঘটনা পুরো দেশবাসীকে থমকে দিলো।থমকে দিলো আমাকেও,ভাবনার মধ্যে ফেলে দিলো-শুধুমাত্র সৈনিকরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমি মানতে নারাজ।এইগুলা অবশ্য আপাত দৃষ্টিতে আমার মাথা ব্যাথার বিষয় ছিলো না,তবে ৫৭ জন তরতাজা সেনার রক্ত আমাকে কাঁদালো।আমি লিখলাম –“সেনানিবাস এবং আমরা “।ওটা ছাপা হয়েছিলো প্রথমআলোর সম্পাদকীয় পাতায়।ওখানে উল্লেখ করেছিলাম-সৈনিকদেরদের প্রতি অফিসারদের এবং মিসেসদের কিছু দূর্ব্যভারের ইতিহাস।আবার কেউ ভেবে বোসবেন না যে এই কারনেই তাদের উপর হামলা হয়েছিলো।এর দায় একজন আর একজনের ঘাড়ে দিয়ে বেড়াচ্ছে ,অনেক অফিসারের চাকরী পর্যন্ত চলে গেছে।কারন এই দেশে সত্য বলতে নেই,সত্য বললেই ধরা।
এমন গুরুত্বপূর্ন পাতায় লেখা বের হবে এমনটা আমি নিজেও আশা করিনি,সবাই না বুঝলেও আমার ঘরের লোক ঠিকি টের পেলেন –রোদেলা নীলাটা আসলে কে?তার স্টকে যতোগুলো গালি ছিলো তার একটাও মাটিতে পড়লো না।এর আগে একবার নাটরের বাসায় এমন উচ্চস্বরে আওয়াজ বাইরে চলে যাওয়াতে ডিজিএফআই-এর অফিসার ওকে ডেকে পাঠিয়েছিলো।আমাকেও অনেক জেরা করেছিলো –আমার স্বামী আমাকে মাড়ে কিনা।এইসব জানতে।আমি সোজা সিও ভাবির কাছে গিয়ে রিপোর্ট করেছিলাম।সেই নোট তার ফাইলে আছে।তাই আজকে আর গায়ে হাত তুললো না।অপমানের পর অপমান করতে লাগলো।মনে হল্লো-লেখা লেখির মতোন পাপ দুনিয়াতে আর একটাও নেই।কোন ছেলের সাথে রাত্রি যাপন করলেও সে মনে হয় আমাকে মাফ করতো কিন্তু সেনানিবাস নিয়ে লেখাতে তার ইগোতে এতোটা লাগলো কেন তাই বুঝতে পারলাম না।
আসলে ও ধরেই নিয়েছিলো-আমি খুব সাধারন একটা জীবন যাপন করবো।সকালে উঠে নাস্তা বানাবো,দুপুরে স্বামী সন্তানের জন্যে অপেক্ষা করবো।তারপর নাক ডেকে ঘুমাবো,বিকেলে লিপস্টিক লাগিয়ে শং সেজে তার হাত ধরে হাসি হাসি মুখ করে পার্টিতে যাব।কিন্তু আমিতো তার ভাবনার বৃত্তের অনেক বাইরে,আমি থাকি ঘরে –কিন্তু চিন্তারা থাকে অন্য কোথাও।কোথায় ,তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনা।
এইচ বি ও দেখলে সে এমন অবাক হতো –তুমি এই সব চ্যানেল বুঝো নাকি,তুমি দেখবা জি –টিভি নইলে স্টার প্লাস ।ঋতূপর্ন ঘোষ,গৌতম ঘোষ আর অপর্না সেনের ছবির কালেকশন দেখে একদিন ব্যঙ্গ করে বললো-তুমি কি বাংলা ছবি বানাবা নাকি,যে হারে আর্টফিল্ম দেখো।ঠুমরি শুনতাম বলে কতোনা হাসাহাসি-আমি নাকি অযথাই ভাব নিচ্ছি।যে মানুষটা আমকে স্বাধীনতা দেবে বলে নিয়ে এলো সে আমার চিন্তার গতি পথ এমন ভাবে রোধ করে দিচ্ছে যে আমি আর নিতে পারছিলাম না।বন্ধের দিন হলেই বসুন্ধরা সিটি ,নয়তো শপিং।এই শপিঙ্গের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা ধরে গেলো।বানিজ্য মেলার নাম শুনলে েখনো গায়ে জ্বর আসে,এতো হাঁটতে পারতো লোকটা।খুটিয়ে খুটিয়ে জিনিষ কিনতো,আমার বাড়ির কাজের লোকো বাদ যেতো না সেই লিস্টে।ভাইয়া ভাবীর জন্যে গিফট আর গিফট।এদিকে আমি মারা যাচ্ছি আত্ব দগ্ধে আর সে তখন আমার মায়ের কাছে রাজপুত্র।যে মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে আমি যাচ্ছিলাম তা কা্রো বোঝার কথানা।নামছি এ সি গাড়ি থেকে,পরনে দামী শাড়ী ,মুখে প্লাস্টিক হাসি।কেমনে বলি-মাগো,আমি ভালো নেই।
আর্মিতে বিয়ে করার জন্যে যেমন কিছু নিয়মের মধ্যে যেতে হয় তেমনি বিয়ে বিচ্ছেদের জন্যেও কিছু যুক্তিযুক্ত কারন দেখাতে হবে।ওতো কখনোই আমাকে ডিভোর্স দেবেনা ,তা আমি বুঝে গেছি।এভাবেই রাখবে চাপের মধ্যে।মুক্ত হতে হবে আমাকেই।ভাইয়া কে বললাম-সেতো কিছুতেই স্বাক্ষী দেবে না।মিরপুর এলাকার কাজী অফিস গুলোতে পর্যন্ত বলা হয়ে গেছে-আমার নামে কেউ গেলে ডিভোর্স ফাইল করতে না।
তার কু-কর্মের সব ইতিহাস আমার হাতে আছে।কিন্তু অইগুলো প্রকাশ করা মানে ছেলের ভবিষ্যত নিজের হাতে ধ্বংস করা ।হাজার হলেও আমার সন্তান তার নামি বহন করবে বাকী জীবন।এর মধ্যে আমি বাবুকে নিয়ে আমার নিজের ফ্ল্যাটে উঠেছি যেটা জন্মসূত্রে পাওয়া ।একটা চাকরীও পেয়েছি লিব্রা ইনফিউশনে সেলস এডমিন পোস্টে।বেতন তেমন ভালো না,তবে বাসার কাছেই অফিস।সকালে বাবুকে স্কুলে পাঠিয়ে আমি অফিস চলে আসি।এখানে একটা কথা বলা ভালো যে সন্তানের জন্যে তার যে মায়া তা ছিলো উল্লেখ করার মতোন।আমি বলতাম –ছেলে হা করলেই তুমি দেখি হেমায়েতপুর এনে দিবা।আমার ছেলে সেই হেমায়েতপুর মিস করতে লাগলো,সেই খোলা মাঠ,বন্ধু-বান্ধব,রাত জেগে গেমস খেলা।বাবা তার জন্যে সব পাঠিয়েছিলো,কিন্তু আমিতো আমার ঘরে কিছুতেই এ সি লাগাতে দেবোনা-ওই যে ইগো আছেনা,ওটা প্রচন্ড রকম পেয়ে বসলো আমাকে।আর তার স্বীকার হলো বাচ্চা ছেলেটা।আমি ছেলেকে পালতে পারবোনা-এই কথাটাই বার বার আঘাত করছিলো,আর আমার মোবাইলে হাজার হাজার গালি আর বাজে কথায় ভরে যাচ্ছিলো।কিছুক্ষন পর পর অজানা নম্বর থেকে ফোন আর হুমকি ধামকী-“তোর ল্যাঙ্কটা ছবি আমি ইউটিউবে ছাইড়া দিমু।“
এইসব আমাকে আর স্পর্শ করে না,আমি প্রচন্ড এক রোখা একটা মানুষ।যা ছেড়ে গেছি, গেছি-আর কেউ নেই যে আমাকে ফেরাতে পারবে।কারন আমি জানি –আমার আছে কঠিন মানসিক শক্তি,যে শক্তিতে আমি অনেকটা পথ একাই চলতে পারবো।কিন্তু মাঝে মাঝে তার কিছু অহেতুক উস্কানী আমাকে খুব ভাবাতো-“দেখিস মাগী,তোরে কেউ বিয়া করবোনা,তরে চুইদ্যা রাস্তায় ফেলায় থুইবো।“
ভাষার হেন ব্যবহার আমি প্রথম শিখছি,আরও অনেক আছে-সবতো আর এই ভাবে লেখা সম্ভব না।এটা একটা নমুনা মাত্র।আমি বুঝলাম –এবার আমাকে তার বিরুদ্ধে নালিশ করতেই হবে ।তা না হলে এর কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।
একদিন বাসায় ফিরে দেখি যে রুমটায় বাবু থাকতো সে রুমে কিছুই নাই,কম্পিউটার ,বাবুর ব্যাডমিন্টন ,বল –কিছুই না।এমন কি আমার ছেলেটাও নাই।আমি খুবি অবাক হয়ে আম্মাকে প্রশ্ন করলাম-আম্মা,বাবু কই?
-ওর বাসায় চলে গেছে।
-ওর বাসা মানে?এইটা তাহলে কার বাসা?
-এটা ওর নানার বাসা।ও ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে সব কিছু নিয়ে চলে গেছে।
আমার দশ বছরের ছেলে আমাকে কিছু না বলেই তার বাবার কাছে চলে গেছে।প্রথমটায় আমি একটু ধাক্কা খেয়েছিলাম,পরে নিজেকে বুঝিয়েছি-আমি তাকে ভালো রাখতে পারিনি।এই পরিবেশের সাথে সে্তো অভ্যস্থ নয়,পরে একবার ওর বাবাই ওকে নিয়ে এসেছিলো।কিন্তু আমি রাখিনি,কারন আমার মনে হয়েছে –বিলসী জীবন থেকে সরিয়ে রাখার দায়টা ছেলে একদিন আমাকেই দেবে।
আমি শূন্য ফ্ল্যাটে একা একা বসে থাকলাম, এতোটা অসহায় আগে লাগেনি কোন দিন।
চলবে ...
-

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: চলুক। :)
প্রথম পর্বটা পড়তে হবে। পড়ে আসি। :)

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২১

রোদেলা বলেছেন: ঠিক আছে রাজপুত্র,পড়ে এসো।

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৭

ধূসরছায়া বলেছেন: আরামের বলয় থেকে বের হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারার মতো সাহসী কাজে সফল হোন। :)

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

রোদেলা বলেছেন: তা যা বলেছেন ধূপছায়া।শুয়ে বসে নিশ্চিন্তে জীবনটা কাটাতেই পারতাম।

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৮

তিথীডোর বলেছেন: পড়তে পড়তে রাগে, দুঃখে, কস্টে মন তিতিয়ে উঠছে!...ইশ কি যন্ত্রনাটাই পেয়েছো আপু তুমি! ভালো থেকো, আর সবসময় মনে আমরা তোমার ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডরা সবাই পাশে আছি! I salute your courage!

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০০

রোদেলা বলেছেন: সেই কবে থেকে লেখা আরম্ভ করেছি ব্লগে।একদিন ব্লগে না বসলে মনে হয় বন্ধুরা কি লিখছে জানা হলো না।বন্ধুদের জন্যেই বেঁচে আছি,শক্তি পাই এই সব ভার্চুয়াল বন্ধুদের কাছ থেকেই ।তা না হলে কেবল মাত্র লেখাকে সম্বল করে কেউ ঘর ছাড়তে পারতো না।

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০৪

রোদেলা বলেছেন: সেই কবে থেকে লেখা আরম্ভ করেছি ব্লগে।একদিন ব্লগে না বসলে মনে হয় বন্ধুরা কি লিখছে জানা হলো না।বন্ধুদের জন্যেই বেঁচে আছি,শক্তি পাই এই সব ভার্চুয়াল বন্ধুদের কাছ থেকেই ।তা না হলে কেবল মাত্র লেখাকে সম্বল করে কেউ ঘর ছাড়তে পারতো না।

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:৪৬

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করেও এখনো টিকে আছেন দেখে অবাকই লাগছে। লড়াইটা করতে হয়েছিল একজন মেজরের সাথে। চাট্টিখানি কথা না। সৎ এবং সাহসী হলে দুর্বল এবং কাপুরুষরা এক সময় পিছিয়ে পড়বেই। পিছিয়ে পড়া সেই কাপুরুষ মেজরের যে চরিত্র চিত্রণ করেছেন, তাতে করে তাকে মানুষ বলা অন্তত শোভা পাবে না। আগামী পর্বেও চোখ থাকবে। অপেক্ষায় রইলাম রোদেলা। শুভ কামনার নিরন্তর।

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:০৫

রোদেলা বলেছেন: আসলে আমার এই লেখাটার উদ্দেশ্য কিন্তু কাউকে হেয় করার জন্যে না।সে আমার ছেলের বাবা,তাকে আমি কখনো অসন্মান করবোনা।কিন্তু শুধু মাত্র ক্ষমতার চাদরে ঢাকা পড়ে ছিলো তার মনুষত্ব।ক্ষমতা যে কেবল পেশায় সে তা ভুলে গিয়েছিলো,তাকে আমি বার বার পোষাকের বাইরের মানুষ করবার চেষ্টা করেছি।সে বোঝেনি।এখন তার চাকরী নেই,ব্যবসা করছে।এখনকার চিত্র আর তখনকার চিত্র খুবি ভিন্ন।নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এই সব লেখা চলে এসেছে।হয়তো সামনে আবার লিখবো,ভালো থাকুন।

৫| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১৯

এম এম করিম বলেছেন: আপনার সেই সময়ের কথা পড়ে খুব কষ্ট লাগলো।

আপনি যে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছেন, সেজন্য আপনাকে অভিনন্দন। আশা করি সামনের পথটা মসৃন হবে।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:০৯

রোদেলা বলেছেন: হুম করিম ভাই।আমি যখন ও বারি থেকে বেরিয়ে আসি দুশ্চরিত্রহীন মহিলার খেতাব আমার গলায় পড়ানো হয়,এমন কি আমার মাও আমার পাশে ছিলেন না প্রথম দিকে।দিনের পর দিন আমি কষ্ট করেছি।নিজেকে একটা জায়গায় দাড় করাতে পেরেছি।এখন আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না।এভাবেই থাকতে চাই আজীবন।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্যে।

৬| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: আপুনি কি যে বলব বুঝতে পারছিনা। একজন মেজর যে কিনা নিয়মের মধ্যেই তার জীবনটা পরিচালিত করেন। কিন্তু আমি বলব আপনি আমাদের সমাজের তথাকথিত ভদ্রমানুষের লেবাসে ঢেকে নিজে জঘন্য কাজে নিয়োজিত করে তাদের মুখোশটা খুলে দিয়েছেন। মাথা নত করেননি, নিজের ছেলেটিকে অবলীলায় সপে দিয়েছেন। আপনি কলম ধরেছেন। কিন্তু আমাদের সমাজে এমন নারীর সংখ্যা ভরি ভরি।বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের যদিও কাজটা সহজ নয়। পাশে আছি লিখুন আপনি

৭| ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:১২

রোদেলা বলেছেন: নাসরিন,আমি বার বার বলেছি সমস্যাটা পদবীর নয়।অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা তাদের স্ত্রীদের যোগ্য সন্মান দেন,এটা হচ্ছে মানষিকতায়।আর ছেলেকে রাখার অর্থনৈতিক সামর্থ থাকলে আমি কখনোই দিতাম না,আমার বাবা নেই।এই বাড়িটা ছিলো বলেই হয়তো লোড়তে পারছি।সব মেয়ের এমন ভাগ্য হয়না বোন।ভালো থেকো।

৮| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১৭

মেজর মন্ট্রিল বলেছেন: রোদেলা ভাবী,
আপনি যা বললেন, আমিও তো আপনাকে তাইই বলেছি, যা হয়ত আপনি বুঝেননি...
পেশার খোলস থেকে বের হয়ে এসে আপনার লেখা লিখুন। লেখার মাঝে পেশা উল্লেখ করে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন? মেজর শব্দটা আমাকেও তাড়িত করত না, যদি না তা আপনাকে তাড়িত করত, যা আপনার লেখার মাঝে বেশ বুঝতে পারছি। আপনার দেয়া উদাহরণ দিয়েই আপনাকে একটু ভাল করে বুঝাই...

আপনি রিকশাওয়ালা বলে কাউকে গালি দিলে, তাকে রিকশাওয়ালার পর্যায়ে নিয়ে গেলেন কি না নিলেন, তারচেয়ে বড় ব্যাপার আপনি পুরো রিকশাওয়ালা শ্রেণীকে গালির পর্যায়ে নিয়ে গেলেন।
যা আপনার নীচু মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
রিকশাওয়ালারাও মানুষ, তারা মোটেও গালি হিসাবে ব্যবহারের জন্য নয়। অর্থাৎ আপনার দেয়া উদাহরণটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

তেমনি, “মেজর” শব্দটি দেশের একটি খুবই সম্মানিত, উপরের শ্রেণীর একটি পদবী। যা উল্লেখ করে আপনি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন না। পাঠকেরা আপনার ঘটনার সত্য মিথ্যা যাচাই করবে না, কিন্তু আপনার উল্লেখিত পেশার ওপর একটা বাজে ধারণা তাদের মনে জন্ম নেবে। মনে রাখবেন, যখন দেশ সংকটের মধ্য দিয়ে যায়, তখন সারা দেশের সকল কার্যক্রম এই মেজরদের উপর দিয়েই যায়। বাইরের সাধারণ মানুষ কোন কিছু বোঝার আগেই এই মেজররাই দেশকে সেই সংকটের মধ্য থেকে বের করে আনে। দেশের অন্যান্য সকল পদ ও পদবী, এমনকি প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীও এই মেজরদের অধীনেই দিন-রাত পার করে। তো সেই মেজরকে নিয়ে এরকম অসম্মানী লেখা আপত্তিকর...

আপনার স্বামীর ওপর ক্ষোভ আপনি তাঁকে নিয়ে লিখুন, তার পেশা বা পদবী কি দরকার?
আর আপনি যে ধরনের ঘটনা উল্লেখ করছেন, তা এই পেশার বাইরে সারা বাংলাদেশে ভুরি ভুরি রয়েছে, অহরহ ঘটছে। কর্মীকে ঘৃণা করার আগে উচিৎ কর্মকে ঘৃণা করা... কিন্তু আপনার লেখায় আপনি কর্মীকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।

শেষে আপনার জন্য কিছু নসিয়ত...

জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীই হবে নারী...
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, আমি জান্নাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম, তাদের অধিকাংশই দরিদ্র লোক এবং জাহান্নামের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম, তাদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক।
(মিশকাত)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা রাসূল করীম (সাঃ) ঈদ কিংবা কোরবানির সালাত আদায়ের জন্য ঈদগাহ পানে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মহিলাদের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সম্বোধন করে তিনি বললেন, হে নারী সমাজ! তোমরা সদকা করতে থাক। কেননা, আমি জাহান্নামে নারীদের আধিক্য দেখেছি। মহিলারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর কারণ কি? তিনি বললেন, তোমরা প্রচুর পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে থাক।
(বুখারী,মুসলিম)

তাই ভাবী, স্বামীকে অভিশাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার ও ভালোবাসার মধ্যে থাকুন। স্বামীর দোষত্রুটি গোপন রাখুন, ইন শা আল্লাহ, আল্লাহও আপনার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।

২০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪৫

রোদেলা বলেছেন: কোন ব্লগারের সামনে ডাক্তার –ইঞ্জিনিয়ার –উকিল থাকেনা।আপনার সামনে মেজর লেখা থাকে।আরে ভাই এটা লেখার জায়গা।পেশা পিঠে নিয়ে ঘুরলে আমাদের কাতারে জীবনেও আসতে পারবেন না,আর আপনার খেরো খাতা শূন্যই পড়ে থাকবে।আর যদি আমার পিছনে লাগার এতো শখ আপনার তো লেগেই থাকুন।আমারতো এখানে সবে সাত বছর কাটছে,বাকী জীবনটা একটা লেজ নিয়েই না হয় কাটালাম।ধন্যবাদ।

৯| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৬

আরাফাত হোসেন অপু বলেছেন: পরকীয়া.............পরনারী.......গোপন কামনা........নষ্ট হচ্ছি আমরা...নষ্ট হচ্ছে আমাদের সংসার গুলো....অনিশ্চিত আমাদের প্রজন্মের ভবিষ্যত.........আপনি নারী বলে কেউ হয়ত আপনাকে সমবেদনা জানাবে...কেউ ভিতরে ভিতরে আপনাকেই দুষবে....কেউ আপনাকে নিয়েই গোপন কামনা পুষবে...কেউ আপনাকে হয়ত আবার স্বপ্ন দেখাবে....তবে আপনার ভিতরের গোপন কষ্ট গুলো কেউ সারাতে পারবেনা..কখনোও না.......আপনার অনিশ্চিত পথের যাএা শুভ হোক!!!!!!!!!!!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.