নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামলা যখন হামলা //

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৫৮

বার কাউন্সিলের পেছন দিকটায় আজ একদম হৈ চৈ নেই।রাস্তার লম্বা জ্যাম পেরিয়ে এখনো বোধ করি সবাই সময় মতো আসতে পারেনি।আমি আজ খুব সকালেই চলে এসেছি-আমার মামলাটার আজ নিষ্পত্তি হবার কথা।গত প্রায় দু’বছর ধরেতো বাচ্চার জন্যে মেইনটেনেন্স চেয়ে আবেদন করে বসে আছি।প্রতি পক্ষের উকিল প্রতিবার আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে আর কেবল জানতে চাইছে –আমি কি করি।আমার চরিত্রের ভ্যারেন্ডা ভাজার জন্যে তার সেকি পায়তারা ।“আমি লেখক”-এই উত্তরটা নিশ্চই তার জন্যে খুব মোক্ষম অস্ত্র হয়ে যাবে , তাই কখনো জানাইনি আমি আসলে কে।আমার উকিলো জানেন না আমার পুরো পরিচয়।এন জি ও’র মাধ্যমে মামলা করেছি,আমি চাই তারাই পুরো বিষয়টার সমাধান করুক।

১৯৯৩ সালের জুন মাসে আমার তিন বছরের মেয়ের জন্মদাতা (বাবা বলতে পারছিনা,কারন গত দুই বছরে সে মেয়ের মুখ দেখেনি)যখন ওকে নিয়ে চলে যায় অন্যথায় , তখন আমার পাগল হয়ে যাওয়া ছাড়া কোন গতি ছিল না।শেষ অব্দি ১০০ ধারার ওরায়েন্ট করে সিনেমাটিক স্টাইলে বেবিকে নিজের কোলে ফেরত পেয়েছিলাম।তখন উক্ত এন জি ও’র একজন বলিষ্ঠ কর্মী আমার পাশে ছিলেন এবং পাশে ছিলেন আমার ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ বন্ধুরা।তাদের সহায়তা ছিল বলেই আমার মেয়েকে নিয়ে নিরাপদে ফিরতে পেরেছি।স্বল্প বেতনের চাকরী করলেও আমার ঘরে এমন দীনতা নেই যে বাচ্চার ভরন পোষন চাইতে হবে ,কিন্তু আমার চিন্তাটা ছিল অন্যরকম।আমি সত্যিকার অর্থেই চেয়েছিলাম মেয়ে তার বাবার সান্নিধ্য পাক এবং বাবা তার সাধ্য অনুযায়ী মেয়েকে খরচ দিক।কিন্তু গত দুই বছরে কিছুই হয়নি,উল্টো সে কাস্টডি চেয়ে মামলা করেছে।

ঘড়ির কাটা এখন ১১ টা ,আমি অপেক্ষা করে আছি আমার ডাক পড়ার আশায়।আমার পাশে একজন খুব রুগ্ন ক্লান্ত মহিলা এসে বসলেন।কোলে একটা মেয়ে বাচ্চা।ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা।মহিলাটি অসহায়ের মতোন বলতে থাকলেন-আপা,আমার উকিল এই ফাইলটা দিয়া চইলা গেসে।আমার কেস কি কোর্টে উঠবো না?

-চলে গেসে কেন?

-খালি টাকা চায়,যতো বার আসি ততোবার দুই হাজার তিন হাজার করে টাকা চায়।আমি এতো টাকা কই পামু?মেয়ে পেটে থাকতে জামাই বাপের বাড়ীত দিয়া চইলা গেসে।এখন আমার কেস চালাইব কে?

আমি কি বলবো ,সারাদিন উকিল ব্যরিস্টারদের সাথে কাজ করি।বড় বড় সেমিনার এটেন্ড করি তাও আবার নারী বিষয়ক সেমিনার ,তাই আমার মামলা ঝুলে আছে।বিবাদী দিনের পর দিন টাইম পিটিশন দিয়ে যাচ্ছে,আর কোর্ট সেটা এক্সেপ্ট করছে।আর আমি অপরাধীর মতোন উত্তর দিয়ে যাচ্ছি।আমার চরিত্র যে দুধে ধোঁয়া তাই প্রমান করে যাচ্ছি ।বাচ্চার দিকে পুরো মনযোগ আছে,মা হয়ে তারি প্রমান দিয়ে যাচ্ছি ।আমি রাত বিরেতে বাড়ী ফিরিনা তাও বলতে হচ্ছে।তবু আমি সাহস দিলাম-আপনি পেশকারকে পুরো ঘটনা বলেন।জাজ একজন মহিলা ,উনি নিশ্চই আপনার বিষয়টা বুঝবেন।

প্রতি মাসে একবার করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কোর্টে হাজির হই।যদিও আমি বাদী ,তারপরো আমাকেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলতে হয় –যাহা বলিব সত্য বলিব,কোন কিছু মিথ্যা বলিবো না।চারপাশে যারা উপস্থিত থাকে তারা ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে ,মনে হয় চিড়িয়াখানা থেকে সদ্য বেরিয়ে এসেছি।বিবাদী পক্ষের উকিল পান চিবাতে চিবাতে আমাকে প্রশ্ন করেন-ভালো আছেন ?আমি এর কোন উত্তর দেই না,আমার উকিল সামনে থেকে ইশারা দিয়ে আমাকে ক্রমাগত চুপ থাকতে বলেন।নিজেকে আসামী বলে মনে হয় ।আমার কথা আমিই বলতে পারবো না,আমার উকিলো বলবে না ।তাহলে বলবে কে ?

কে বলবে সেই চিন্তা আমি আজ আর করলাম না।আমার মেয়ের অধিকার আমাকেই চাইতে হবে।গালের এক পাশে পানের লোকমা ফেলে বিবাদী পক্ষের উকিল আমাকে প্রশ্ন করে-আপনি কখন অফিস টাইম কয়টা থেকে কয়টা ?

ত্যাড়ার মতোন উত্তর দিলাম-বেসরকারী অফিস যতক্ষন হয় ততোক্ষন।এজলাশে বসে থাকা সহোকারী জাজের ধৈর্য্য চূতি ঘটলো –ঠিক ঠাক উত্তর দিন।

-সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা।

-তখন আপনের মেয়ে কই থাকে ?

-আমার মার কাছে থাকে।

-আপনাদের ছাড়াছাড়ি হবার আগ পর্যন্ত আপনারাতো এক সাথেই ছিলেন?

-না ছিলাম না।একদম মিথ্যে কথা।

-আপনার ইদ্দতকালীন সময়ে ১০,০০০টাকা পাঠানো হয়েছিল ,আপনি ফেরত দিয়েছেন?

-জ্বী ,ওটা নেওয়া আমার জন্যে অসন্মান জনক ছিল।মাসে তিন হাজার করে ধরা হয়েছে।

-আপনি হ্যাঁ অথবা নায়ের মধ্যে জবাব দিন।

জাজ সহজ করে দিলেন-অপ্রতুল ছিল,তাই নিতে অনীহা ছিল।

ফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে উকিল সাহেব আবার প্রশ্ন করলেন-বাচ্চাকে তার বাবা যখন নিয়ে যায় তখন আপনি তাকে তার জিম্মায় স্বেচ্ছায় রেখে আসেন।সত্যি নাকি মিথ্যা?

-সম্পূর্ন মিথ্যা ,ইচ্ছা করে রেখে আসিনি।ওয়ারেন্ট ছাড়া আনা সম্ভব ছিল না।

এই মুহূর্তে সবাই হৈ হৈ করে উঠলো -এক শব্দের মধ্যে উত্তর দিন।আমি এক শব্দে কিভাবে বোঝাবো –দেড় বছরের শিশুকে তার জন্মদাতা না বলে নিয়ে গেছে এবং ৪২ দিন আমার মেয়ে বুকের দুধ খায়নি।না পেরে পুলিশ দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে তাকে নিজের জিন্মায় আনতে হয়,সেই জিম্মানামাও আমার কাছে আছে।

-আপনি লোক মারফত আমার ক্লায়েন্টকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পা ভেঙ্গে দেন।এরপর থেকে সে কোন কাজ করতে পারে না।

এটার উত্তর দেবার জন্যে আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম,কিন্তু জাজ তাকে আর সময় দিলেন না।তিনি পরবর্তী প্রশ্নে চলে গেলেন-মেয়েকে তার বাবা টাকা পাঠায় নিয়মিত।আপনি স্বীকার করুন।

-আমি কখনো পাইনি।তবে গত মাসে সে ১০০০ টাকা দেবে বলেছিল কোর্টে ,তারপর সে মালয়শিয়া চলে গেছে বলে আমি জানি।

এবার উকিল সাহেব খুব নড়ে চড়ে দাঁড়ালেন।আপনাকে আমি একটা উপদেশ দেই-আমার ক্লায়েন্ট বাচ্চার জন্যে কাস্টডি চেয়েছেন,যতোদিন না এই মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে আপনি কোন মেইনটেনেন্স পাবেন না।

এই বাক্যটা সে ভরা মজলীশে বলে পান চিবুতে চিবুতে বাইরে বেরিয়ে যায়।আমি তাকে অনুসরণ করলাম-আচ্ছা,তারে আমি মাইরা বিছানায় ফালায় দিসি,তাইলে বাচ্চা নিয়া সে কি করবো।পালবো কে ?ওর বাপ মারো তো মরা ধরা অবস্থা।

-কাস্টডি সেই পাবে,আপনে বিয়া করলে এমনিতেই বাচ্চা তার কাছে চইলা যাইবো।

-আরে ভাই,আমি কি আপনেরে আমার বিয়ার দাওয়াত দিসি নাকি ?

এই পর্যায়ে আমার উকিলদ্বয় আমাকে সরিয়ে দিয়ে তাকে কিছু একটা বলেন।আমি আর পিছনে তাকাই না।ঘন কোলাহলে হাঁটতে থাকি,চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ আমার মাথার উপর ভাসতে থাকে।আমি পুড়তে থাকি-ভেতরে এবং বাহিরে।

“নিজের কাঁধেই বোঝা হলো -

নিজের করা মামলা ;

কান্ড দেখে বুঝে গেছি

এ এক আজব হামলা।।“

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৫১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: :(

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭

হালিমা সাদিয়া বলেছেন: জানিনা কি বলা উচিত!

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: শুভকামনা রইলো।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৫২

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: সত্যি বলছি আমি পুরোটা পড়ি নি। পড়তে ইচ্ছে করে নি কেন জানি। যে মানুষ তার নিজের মেয়েকে দু'বছর না দেখে থাকতে পারে তার থেকে সব কিছুই আশা করা যায়। হীনতা তার ঐতিহ্য।

আপনার জীবন যুদ্ধে আপু একরাশ শুভ কামনা রইল। ভালো থাকুন বলব না।কিছু কিছু মানুষের শুধু ভালো থাকাটাই অধিকার। আপনি তাদের দলের।

৫| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: আমাদের দেশের এমন অবস্থার কবে যে পরিবর্তন হবে। ধিক্কার জানাই এই হীন মানসিকতার। আপনি আরও দৃঢ় হন। সত্য চির শাশ্বত। শুভকামনা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.