নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী

এভাবেই ভালোবাসা পুড়ে পুড়ে যায়..

রোদেলা

আমার আকাশ মেঘে ঢাকা \nজমতে থাকা আগুন ;\nহঠাত আলোর পরশ পেলেই \nঝরবে রোদের ফাগুণ।

রোদেলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ট্রান্সপোর্ট রঙ্গ//

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:২০


“আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের যাদু এনেছি
ইরান তুরান পাড় হয়ে আজ তোমার দেশে এসেছি...”
জ্বীনা ,কারো দেশেই যাচ্ছিনা।রূপ হারানো নগরের বাসিন্দা আমি কামলাগিড়ি করতেই অফিসে যাচ্ছি।আমাদের এলাকার যে রূপ ছিল তা স্টেডিয়াম নামক গেমস জোন হবার সাথে সাথেই হারিয়ে গেছে।ভেবেছিলাম,নানান রকম খেলা হবে এখানে –নানা দেশ থেকে লোক আসবে ।বিশাল বিশাল রাস্তা,মনের আনন্দে রিক্সার হুড ফেলে পেয়াড়া খেতে খেতে ঘুরে বেরাবো।সেই ১৯৯০ সালের কথা,এখন পুরোটাই ইতিহাস।রিক্সাতো রিক্সা ,একটা মানুষ ডাকলেও এই এলাকায় কাউকে পাওয়া যেত না,চিড়িয়াখানা কাছে ছিল বলে বন্ধুরা আজিমপুর থেকে আসতে আসতে বলতো-চিড়িয়া দেখতে যাই।এখন দিন বদলে গেছে,শত শত রিক্সা হাওয়া খেতে খেতে আমাদের মুখের সমুখ দিয়ে উড়ে উড়ে যাচ্ছে।মিরপুর এক যাবে জিজ্ঞেস করতেই পল্লবী মুখো যাত্রা করে দিল,ভাবটা এমন ওই দিকটায় জগতের সব যাত্রীরা তাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে।সামনে মনিপুর ১,২ নাকি ৩ ঠিক মনে করতে পারছিনা,মিরপুরে এই স্কুলের যে কয়টা ব্রাঞ্চ আর বাবা মারা কেন যে জীবন ও যৌবন দিয়ে ফেলছে এখানে তা কেবল তারাই ভালো জানেন।
আরো এক খানা আছে ,তার আবার দুইটা ব্রাঞ্চ।মিরপুর কমার্স কলেজ,যেখানে এক সময় বুদ্ধিজীবীদের হাড় গোড় পাওয়া গিয়েছিল সেখানে স্কুল –কলেজ-গার্মেন্স দেখতে দেখতে চোখটা সয়ে গেছে।তবে দুটো জিনিস ঠিক তেমনি আছে,রাস্তার কোল জুড়ে বিরাট আয়তনের ডাস্টবিন আর কবসস্থান।রাজধানী শহরের বড় রাস্তায় ময়লা ফেলার জায়গা-এমন চমৎকার আইডিয়া বাংলাদেশ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষেই করা সম্ভব।শুনেছি এই দিয়ে নাকি অতিশীঘ্র বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হবে-ওহ ,ভাবতেই ভালো লাগছে।
-মামা যাবেন নাকি সনি হলের উলটা পাশে?
আমার প্রস্তাব শুনে খানিক সময় নিল রিক্সা মামা।তারপর বললো-আচ্ছা চলেন।
-তা মামা কতো ভাড়া নেবেন?
-দিয়েন,৭০ টাকা।
-ও মামা,আমিতো রিক্সা যোগে শ্যামলী যাইতে পারবোনা,ইহা ভি আই পি রোড ।আপনি আমাকে মেহেরবানী করিয়া এক নম্বর অব্দি নিয়া গেলেই হইবে।
-হ কইলামতো যামু,৭০ টাকা লাগবো।
এবার রাগে আমার গা গির গির করছে ,কিন্তু হাতে সময় কম; ৯ টায় না ঢুকতে পারলে বসের গোল্লা গোল্লা চোখতো দেখতেই হবে ,সাথে উপহার সরূপ তিন দিন লেটের জন্যে এক দিনের বেতন কাটা।
আমি অতিসশয় ধৈর্য্য নিয়ে বললাম-তা মা্মা,আপনি অত্র এলাকায় কবে থেকে রিক্সা চালান?
-এই সপ্তাহেই আইসি।
-মানে,আপনি এই রোযা উপলক্ষে অধিক টাকা উপার্জনের জন্যে ঢাকা শহরে নতুন আসিয়াছেন এবং ৩০ টাকার ভাড়া ৭০ টাকা হাঁকিতেছেন?আচ্ছা মামা,আপনি ট্রাক চালাইতেসেন না কেন,ওতে আরো লাভ বেশী,পয়সাতো পাবেনি ,সাথে দুই চারটা চাকার নীচে পিসিয়া ফালাইতেও পারিবেন।
এবার রিক্সা মামা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।আমি জোড়ে জোড়ে বললাম-তোমারে এই রিক্সা চালাইতে কে দিসে,আমার সময় থাকলে মালিকের কাছে জিজ্ঞেস করতাম।কিন্তু,আমার টাইম নাই।তুমি এক্ষন এই রিক্সা নিয়া গ্যারেজে রাখো,নাইলে তোমার কপালে খারাপী আছে।
সৃষ্টিকর্তা আমাকে নারী হিসেবে পয়দা করাতে রিক্সা মামা বেঁচে গেল,পুরূষ হলে ওরে আজকে নির্ঘাত মারতাম।
বাসা থেকে বের হয়েছি আটটায়,মিরপুর এক পৌঁছতেই লাগলো ৪০ মিনিট।সুতরাং বসের গোল গোল চেহারার কথা আর ভেবে কাজ নেই,যা থাকে কপালে।আগে বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতাম,এখন থাকিনা ।কারন ডিরেক্ট ভাড়ার ইন ডিরেক্ট সার্ভিস আমাকে মোহমুগ্ধ করেছে।তা্র উপর ভুলেও যদি ইঞ্জিনের সীট ছেড়ে পিছনে কোন মেয়ে বসে তাহলেতো সেই দিন হাজারটা কথা শুনতে হয়-মেয়েদের জন্যে সামনে সিট আছে না,তাহলে পিছনে বসলেন কেন ?লে হালুয়া,ড্রাইভারে্র পাশে চারটা (যদি শুটকী হয়) আর পায়ের কাছে তিনতা।ট্রান্টসিলভা হলে ৯ তা সীটের মাথার ওপর লেখা-“প্রতিবন্ধী এবং মহিলাদের জন্যে বরাদ্দ।“তাও অনেক সময় ওই বরাদ্দকৃত সম্পত্তিরো ভাগ পাওয়া যায় না,যেমন আইনেই বলা আছে মেয়েরা এক তৃতীয়াংশ বাবার সম্পত্তি পাবে।এখন কার স্বামী হতে কে কি পেল সেই বিবেচনা আইনের কাজ না,তেমনি ঢাকা শহরে নারী কর্মজীবির সংখ্যা কতো তা গননা করাও বাস মালিক সমিতির কাজ না।তাই বাদুর ঝুলনতো আর দিতে পারবোনা,লেগুনাই ভালো।মাঝে মাঝে গেটের মধ্যে চার পাশটা দাঁড়ালে উলটে যায়- জোড়ে টানে তাই ভালো।
বাসস্ট্যান্ড থেকে এই জিনিস কোন দিনো পাওয়া যাবে না,তাই চক্ষু হাসপাতালের সামনে যে ইউটার্ন থাকে তার মধ্যেই নয় জন যাত্রী অপেক্ষা করতে লাগলাম।এ এক আজব নগরী যেখানে সবার কাজের সময় বেশিরভাগই এক ,স্কুল-কলেজ-অফিস সবই ৯ টায়।স্কুল-কলেজের আন্ডা বাচ্চাগুলা কেন এতো সকালে এমন কষ্ট করে ঘামতে ঘামতে স্কুলে যাবে তা আমার বোধের বাইরে।এদের কি আর্লি টু রাইজের সাথে,এ ট্রাফিক জ্যাম ইন ঢাকা সিটি শেখানো হচ্ছে নাকি?এক সমইয়ে হওয়াতেতো বাবা মাও তাদের স্কুলে দিয়ে অফিস ধরতে পারছেনা।এই সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দেখি উলটো পথে ঝিগাতলার লেগুনা আমাদের দিকেই আসছে,কঠিন অপেক্ষার প্রহর শেষ হতেই দেখি ভেতরে অলরেডি আটজন,তারমানে চারজনের মধ্যে এখন চলবে তীব্র লড়াই।এতোগুলো পুরুষ মানুষের মাঝে আমি এক ৫৬ কেজি নারী,কেমনে লড়ি?আমার অবস্থা বেগতিক দেখে একজন যুবক জায়গা করে দিল-আপা আপনি যান,আমি পরেরটায় যাবো।ধন্যবাদ বলে ভেতরে বসতে গেছি ,কিন্তু কোন ছেলেই সড়ে বসবে না।এমনিতেই আমি যথেষ্ট লম্বা ,এখন এই ১১ জনকে পাড় হয়ে আমাকে ভেতরে বসতে হবে।এ আর এক যন্ত্রনা,খেয়াল করে দেখেছি এই ধরনের পরিস্থিতিতে আজকাল হেল্পাররা আর কিছু বলে না।একবার একটা মেয়ে খুব বৃষ্টিতে ভিজছিল,ধানমন্ডিতে ।হেলপার মেয়েটিকে বাসে উঠানোর সাথে সাথে ছেলেরা চিৎকার করতে লাগলো-এই আর মহিলা উঠাইসনা।আমি খুব অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছি-কেন,উঠবেনা কেন?কিছু পাওয়া না গেলে মেয়েরা বাড়ি ফিরবে্না?
-আর বইলেন না,মেয়েগো নিয়া নানা প্যাচ,গায়ে একটু ধাক্কা লাগলেই চিল্লা পাল্লা করে।
-গায়ে ধাক্কা লাগলেই করে ,নাকি ধাক্কা দিলে করে,কথাটা বুঝে বলেন।
এবার আমার যা দশা হলো,চিড়া চ্যাপ্টার মতো কোন রকম খালি সীটে শরীর ঠেকালাম।এমন করে নিজের বাপ ছাড়া জীবনে কারো সাথে প্রকাশ্য দিবালোকে বসি নাই।বেগম রোকেয়া নারীর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে কি বিপদেইনা আমারে ফেললো।অশিক্ষিত থাকতাম,ঘরে বাসন মাজতাম-কোন টেনশন ছিল না।বার বার হাতের ব্যাগ দিয়ে বাম পাশে ঠেলছি।কারন আমি বসেছি একদম ভেতরে ডানপাশে,আমার বামপাশে যে ভদ্রলোক দেখতে তিনি তার ডান হাতের কনুই দিয়ে আমার বুকে ধাক্কা দিচ্ছেন।বিষয়টা আমি খুব ভালো করেই টের পাচ্ছি,এমনিতেই সিয়াম সাধনার মাস।দেশে রোযদারের অভাব নেই,এর মধ্যে কার সংযম আছে আর কার নেই এই বিচার করার মালিকতো আমি না।আমি হলাম মহা পাপী,কারন আমার গায়ে বোরখা নেই,আমি রোযাও করিনা।অতএব এমন ধাক্কা ,পিঠের উপর অনায়াসে হাত দেওয়া ,কোমরে হাত দেওয়া -এইগুলা আমাদের হজম করতেই হবে।
মিরপুর রোডের সমস্ত সার্ভিস এখন এক নম্বরে,এমন কি উত্তরা যাবার জাবালেনূর ও প্রজাপতি পর্যন্ত। আজকাল কুতকুত খেলা হলেও এই স্টেডিয়ামেই হয়,আর এইটাতো সাক্ষাৎ টাইগারের লড়াই।জীবনের সব লড়াই কি আর স্টেডিয়ামে হয়,কিছু লড়াই হয় নিজের সাথে।কিছু লড়াই থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।অফিসে দেরী হলে বস শূন্য অফিসে কতটা দেরী করানোর পায়তারা খোঁজে সে গল্পতো আরো অনেক পুরোন,এইসব আর নতুন করে তুলে ধরবার কি আছে।
যাই হোক মহামান্য মেয়র আনিস ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়া খুব দরকার।ভোটের আগে দেখতাম বেশ কয়েকটা সাইকেলের বহর ,ওখান থেকে একটা ধার দিলে অন্তত কোন অপরিচিত লোকের গায়ের সাথে গা লেপ্টে আমাকে অফিস যেতে হবেনা।আর বেতন যা পাই তাতে করে ভেস্পা কেনার সাহসো পাচ্ছিনা।উড়ন্ত সাইকেলে প্যাডেল মাড়িয়ে যদি কিছু সময়ের জন্যে মুক্তির আনন্দ নেই-তাতে কি এমন ক্ষতি।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:১২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: উহ হাঁপিয়ে উঠলাম! অনেকদিন পর পোস্ট দিলেন বোধহয়

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩৫

রোদেলা বলেছেন: B-)

২| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩৫

উর্বি বলেছেন: -আর বইলেন না,মেয়েগো নিয়া নানা প্যাচ,গায়ে একটু ধাক্কা লাগলেই চিল্লা পাল্লা করে।
-গায়ে ধাক্কা লাগলেই করে ,নাকি ধাক্কা দিলে করে,কথাটা বুঝে বলেন।
----------
তিতা সত্য ... এম্নেই বলে ওই লোক গুলা :(

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৪৩

রোদেলা বলেছেন: তিতা সত্য

৩| ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: পাচ্ছিনা।উড়ন্ত সাইকেলে প্যাডেল মাড়িয়ে যদি কিছু সময়ের জন্যে মুক্তির আনন্দ নেই-তাতে কি এমন ক্ষতি।[/sb



আগত অনাত দিনগুলো যাপিত ক্ষনগুলোর চেয়ে ভাল কাটুক।

২৫ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬

রোদেলা বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন ইমতিয়াজ ১৩।

৪| ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: আরে আপনি দেখি আমাদের এলাকার মানুষ। ইফতারের দাওয়াত দেন :-B

২৫ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

রোদেলা বলেছেন: উররেব্বাস দারূনতো,তাহলে আপ্নের বাসার ঠিকানা লিখে দেন,আমি নিজে এসে দাওয়াত দেবো।

৫| ২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৬

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: সাইকেলের প্লান ভালো করেছেন। আমারও দরকার হবে কিছুদিন পর

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:২২

রোদেলা বলেছেন: পেলান তো আনিস ভাই বহুত করসিলেন,আমার মাথায় সাইকেল টাই নিরাপদ দূষন মুক্ত মনে হইলো-এই আর কি।

৬| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: রঙ্গ কই, পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল।

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

রোদেলা বলেছেন: এইটাই বিরাট রংগ

৭| ০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১২

অবিবাহিত জাহিদ বলেছেন: Amr darona mayder jonno alada bus service thakla valo hoito

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪

রোদেলা বলেছেন: বাস আছে,কিনতু দেখা মিলেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.