![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বৈষম্যের ভেতরে সাম্য, অসুন্দরের ভেতরে সৌন্দর্য খুঁজে ফিরি।
একজন অভিজিৎ ও সময়ের ঘণ্টি
গোলাম রব্বানী
১.
এই ছাব্বিশ তারিখের আগেও হাতে গোনা ক’য়েকজন অভিজিতের নাম জানতো। তাঁকে রাজনীতিক মহাজনেরা চিনতেন না। টক’শো করতো না, ফলে উঠতি বা পাকা – কোন আঁতেলের পর্যায়েও সে পড়তো না। কোন নায়ক, গায়কও না যে উঠতি যুবতীরা তাঁর ছবি দিয়ে মোবাইলের স্কৃন সেভার বানাবে। ঢাকায় একটা শিক্ষিত পরিবারে বেড়ে ওঠা মেধাবী এই তরুন প্রযুক্তিবিদ: চাকুরি, ডলার, বাড়ি, মডেলের গাড়ির পেছনে না ছুটে জ্ঞানের পিছু ধরেছিলেন। তাঁকে তিন ধরনের মানুষে চিনতো। এক. যাঁরা দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান এবং হ্যাঁ, ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতেন; তাঁদের সবাই না, কেউ কেউ। দুই. তাঁর সহকর্মীরা, যারা জীবিকার সূত্রে জৈবপ্রকৌশল নিয়ে কাজ করতেন। আর তিন. তাঁর পরিবার ও বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব।
অভিজিৎ এমন একটা দেশে এমন একটা সময়ে বেড়ে উঠেছেন যখন প্রত্যেক সরকার প্রগতি, মুক্তচিন্তা, হিন্দু-মুসলমানের সহাবস্থানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বরং ধর্ম-ব্যাবসায়ীদের(কেউটে সাপের) মুখে চুমু খেয়ে এরা সবাই ক্ষমতায় এসেছে, দুধ-কলা দিয়ে বড় করেছে। অন্যদিকে যাঁরা প্রগতি, মুক্তচিন্তা বা ধর্মীয় সহাবস্থানের কথা মনে করিয়ে দিতে কলম তুলে নিয়েছে তারা-ই বলির পাঁঠা হয়েছেন। খুন হয়েছেন হুমায়ুন আযাদ, মোহাম্মদ ইউনুস, এম তাহের, এ কে এম শফিউল ইসলাম, জিয়াউদ্দীন জাকারিয়া, রাজিব হায়দার, আশরাফুল আলম, আরিফ রায়হান দ্বীপ, জগতজ্যোতি তালুকদার, জাফর মুন্সী এবং সাম্প্রতিক অভিজিত রায়। এছাড়া অনেকেই হুমকির মুখে রয়েছেন, কেউবা দেশ ত্যাগ করেছেন। প্রত্যেক সরকার এইসব হত্যার বিচার হবে, অপরাধী ধরা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ব্যাস, ও পর্যন্তই। সবাই জানে কারা খুন হয়, কে খুন করে, এমনকী কবে নাগাদ করা হয়ে থাকে। মানুষ এটাও জানে এসব খুনের বিচার হবে না।
অভিজিতের লেখা সম্পর্কে যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক দু’চারজন যেমন খোঁজ খবর রাখতেন, তার চেয়ে ঢের বেশি খোঁজ রাখতো মৌলবাদীরা। তারাই তাঁর লেখাকে ভয় পেত, অনেকেই না পড়েই ভয় পেত এবং কেবল তারাই তাঁর শত্রু ছিলো। কিন্তু লেখার জবাব লিখে, প্রতিযুক্তি দিয়ে ওরা উত্তর দিতে পারে না। লিখতে গেলে যে ঈমানি এলেমের দরকার, যে কল্বের দরকার তা তাদের নেই। কারণ তারা মুর্খ, ফলে অভিজিতের যুক্তির কাছে হিংস্রতা, খুন-ই মৌলবাদীদের একমাত্র উত্তর। অভিজিতের শত্রুরা তাই চিহ্নিত এবং এদের ক্ষমতা, হিংস্রতা ও আক্রমনের প্রকৃতি এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে অভিজিত নিজেও যে জানতেন না, তা নয়। তাঁর মতো অন্যান্য সবাইকে তিনি সতর্ক করে দিতেন, সাবধানে থাকতে বলতেন। কিন্তু শত্রুকে আক্রমন করার জন্য অস্ত্র তুলে নেয়া অথবা অবসম্ভাব্য আক্রমন থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করার কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবতেন না। তিনি মৌলবাদীদের আক্রমন করার পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকায় আসতে পারতেন। বাদ জুম্মা এক মাহফিলে গিয়ে স্টেজের ডজনখানেক হুজুরের গর্দান ফেলে দিতে পারতেন। পরদিন আমেরিকার ফ্লাইট ধরে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু সেই চিন্তা তাঁর কখনো আসে নি, আসতে পারেও না। আহত তৃষ্ণার্ত হরিনের থেকেও তিনি তাই ঝুঁকিতে ছিলেন। জন্মভূমি যে মৃত্যুকুপ হতে পারে, এটা মানলেও সেই মৃত্যুকুপ তাওয়াফ করা থেকে অভিজিত নিজেকে ঠেকাতে পারেনি।
ফেসবুক থেকে জানা গেছে তিনি বাংলাদেশে আসছেন। আসছেন চিহ্নিত মৌলবাদীদেরকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে নয়, নিজের দুই দুটো বই বের হয়েছে সেই পুলকে। বইগুলো মেলায় স্টলে উঠবে, দুই একজন তাঁর বই কিনতে যাবে। কেউ লেখকের বা বইয়ের নাম ধরে আছে কি না জিজ্ঞেস করবে, প্রকাশক চকচকে বই বের করে দিবেন। বইটা হাতে নিয়ে মলাটের এপাশ-ওপাশে হাত বুলিয়ে মানিব্যাগ থেকে টাকা গুনে দিয়ে ভিড়ে মিলিয়ে যাবে। প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে লেখকের এই দৃশ্য দেখার চেয়ে আনন্দের আর কী থাকতে পারে? আর কেউ যদি লেখকের কথা জিজ্ঞেস করে এবং স্টলের ভিতর বসা লেখককে দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করে তাঁর লেখার প্রশসংসা করে, অটোগ্রাফ চায়? একজন লেখকের জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তির আর কী থাকতে পারে! অভিজিতের খুনিরা জানতো: সে বাংলাদেশে আসছে, বই মেলাতে যাবে না, তা হবে না। গেলে বডিগার্ডও রাখবেন না, পকেটে মেশিন এর বদলে বরং বৌ নিয়ে ঘুর ঘুর করবেন। সস্তায়, নির্ঝঞ্ঝাটে এমন একটা মাথা কুপিয়ে ভাঙ্গা, ঝুনা একটা নারকেল ভাঙ্গা থেকে সহজ। হজম করে ফেলা আরও সহজ। নাস্তিক ছাপ আগে থেকে মারা আছে, ফলে সরকার বা আমজনতা কেউ টু শব্দটি করবে না। বরং নামাজী জনগণ ভেতরে ভেতরে বলবে কাফেরটা মরেছে, যে মেরেছে সে আস্ত একটা জান্নাতুল ফেরদাউস পাকাপোক্ত করে নিলো। ফজরের নামাজ শেষে দু’হাত তুলে মুনাজাতে বলবে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকেও যেন এমন একজন নাস্তিক, কাফেরকে কতোল করবার তৌফিক দান করেন।
২.
প্রথম দুই চারদিন অভিজিতের খুন নিয়ে রাজনীতি হয়নি, টু-শব্দও হয়নি। তার পর বরাবরের মতো বিভিন্ন ছাতার নিচ থেকে লোকজন বের হতে শুরু করেছে। সবাই খুনের বিচার চায়। কিন্তু কেউ খুনের কারণ খুঁজতে চায় না। কারনটা যে খুব অজানা, তা কিন্তু নয়। কারনটা নিয়ে কথা বলতে গেলেই অভিজিতের গন্ধটা গায়ে মেখে যাবে, সহজ কথায় নাস্তিকতার ছাপ লেগে যাবে। কেউ নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের তকমা নিয়ে বাজারে, চায়ের দোকানে, মসজিদে যেতে চায় না।
কারা এই ছাপগুলো মারে? দূরের কেউ নয়, সে আপনার আপনজনেরাই। আরেকটু সাহস নিয়ে কথা বলতে থাকলেই সেই ছাপ ছড়িয়ে যায় লোক থেকে লোকান্তরে। যতই মানুষটার মাথা থেকে চির পরিচিত ভুতগুলো খসে পড়তে থাকে, চিন্তাটা ততই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে, ততই দেয়াল উঠে যেতে থাকে চার পাশে। সমাজ আড়চোখে তাকাতে শুরু করে এবং অচিরেই নাকের ডগায় বসে থেকেই সে ভিন গ্রহের প্রানীতে রূপান্তরিত হয়। এখানে সমাজ- স্কুলের বুড়া ইংরেজি মাস্টার নয়, সন্ধ্যায় বাজারে চা’খাবার মানুষগুলো। এদের হাতেই আপনার আমার ছেলেপুলেরা বড় হয়ে ওঠে। শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়তে যায়।
৩.
সেখানে শিরদাঁড়া ফুলিয়ে ঈমাম শাশিয়ে দেন গান শোনা, সিনেমা দেখা হারাম। বিয়েতে আতশবাঁজি ফোটানো হারাম। যাত্রা, সার্কাস দেখতে যাওয়া হারাম। গান শেখানো, নাটক করতে শেখা হারাম। কবিতা পড়া হারাম। বাদ্য বাজানো হারাম। মেয়েদের খোলা পুকুরে গোসল করতে যাওয়া হারাম। বিকেলে খেলতে যাওয়া হারাম। ফুটবল হচ্ছে শয়তানের ডিম। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেছেন তোমাদের বাড়ির ‘মেয়েছেলে’দেরকে সামলে রাখো। তুমিই বাড়ির প্রধান, কেয়ামতের দিন তোমাকেই তোমার স্ত্রী-ছেলেমেয়ের কাজের হিসাব দিতে হবে। এইসব হারাম কাজের ফলে ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে। কাল পরকালের মাঠে, হাশরের ময়দানে নিজেদের সাথে তাঁদের পিতা-মাতাদেরও দোজখে নিয়ে যাবে। আজ জুম্মাবাদ বাড়ি গিয়ে ঘরের মেয়েছেলেদের, বাচ্চাদের তওবা করাবেন। ওয়াদা করাবেন সবাই কুরআন মুখস্ত করবে, হাদিস পাঠ করবে, সময় পেলেই নফল নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে এবং অন্যকে ডাকবে। ভালো কাজে আহ্বান করবে। তাতে দু’জাহানের অশেষ নেকি হাসেল করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সব্বাইকে সেই তাওফিক দিন। সবাই বলুন আমিন (বারাকাল্লাহু লানাওয়া লা ফি কুরআনুল মাজিদ, ওয়াল ফুরকানিল হামিদ। ইন্নাহু তায়ালা, যাওয়াদুন, কারিমুন, ওয়া মালিকুন, ওয়া বাররুর রাওফুর রাহিম)।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আরব বা পশ্চিমা যে দেশেই হোক না কেন মুসলিম পরিবারে ঈমামের প্রভাব অসীম। তাছাড়া সমাজিক বিন্যাসে মুফতি, মাওলানা, হাজী, কুতুব, আলেম এমনকি মুয়াজ্জিনদের অবস্থানও অসাধারণ চোখে দেখা হয়। পাড়ার বিয়েতে, ঈদের সময়, মিলাদে, নির্বাচনের জনসভায় তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধায় উদ্বেলিত হতে দেখা যায়। রমজানের সময় হলে এসব অনুভুতি আরো প্রকট আকার ধারণ করে। অথচ এরা কেউই দুই চার পাতা না বোঝা ভাষায় কুরআন-হাদিস ছাড়া কিচ্ছু পড়েনি। পড়ার প্রয়োজনও মনে করে না। আসলে তেমন কিছু না থাকলেও ওটাই সর্বজ্ঞানের ভাণ্ডার বলে দাবী করা হয়। এসব গণ্ডমুর্খ হুজুরেরা মুসলমান সমাজে সবচেয়ে উপরে অবস্থান পায়। সমাজের চোখে আলেম-ওলামাদের যে সম্মান সেটার লোভ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও সামলাতে পারেন না। উপরুন্তু সুযোগ বুঝে বিজ্ঞানকে ধর্মের গ্লাসে বা ধর্মকে বিজ্ঞানের গ্লাসে উপস্থাপন করার মজাটা এরা বরং শুধু আলেম-ওলামাদের চেয়ে বেশি ভোগ করতে পারে। এরাই বাদ এশা জলশায় জিহাদের ফজিলত বর্ণনা করে, এরাই দেখিয়ে দেয় ইসলামের শত্রুদের। এখান থেকেই সন্তর্পনে সবচেয়ে মেধাবী, সাহসী ও সুঠাম ছেলেটাকে বেছে নিয়ে স্পেশাল তালিম দেয় আল্লাহর সৈনিক হবার। রাতের অন্ধকারে সবাই যখন ঘুমিয়ে, তখন তাহাজ্জত নামাজের নামে সে তালিম নিতে থাকে। জন্মগ্রহন নেয় জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ, আনসারুল্লা বাংলা টিম, হিজবুত তাহরিরের মতো সশস্ত্র আত্মঘাতী সংগঠন।
৪.
কিন্তু একজন মুসলিম কেন এরকমটি চাইছেন? কারনটি ব্যক্তি নির্ভর নয়। একটা পুরুষ যখন ছওয়াবের আশায় সব ধরনের আনন্দ উতসব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, একজন মহিলা পরকালে বেহেস্তের আশায় যখন সারা জীবন সব ধরনের চাহিদাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কালো কাফনে মুড়ে ফেলে, একজন শিশু ধর্মীয় বিদ্বেষের ভিতর বেড়ে ওঠে এবং ভালো-মন্দ বিচারের মানসিকতায় ধর্মকেই একমাত্র মাত্রা হিসেবে গণ্য করতে শেখে তখন সেই সমাজের ‘ধর্মীয় (পড়ুন ইসলামিক) অনুভুতি’ মারাত্মক অবস্থা ধারণ করতে বাধ্য। আমাদের ছোট বড় যে কোন সিদ্ধান্ত এবং কাজের পেছনে যে ‘কারণ’, তা যখন কেবলমাত্র ধর্ম থেকে উদ্ভুত হয় তখন সংস্কৃতির অন্যান্য সব উপাদানের সাথে সংঘাত দেখা দেয়। হুজুরেরা এর দ্বারাই প্রভাবিত এবং অন্যকে দাওয়াতের নামে, ছোয়াব ও জান্নাতের নিয়ামতের দোহাই দিয়ে এই পথে প্রলুব্ধ করে। মানুষ এই হাজার হাজার বছরের অভিযাত্রায় বিশ্বাস ও যুক্তির ঘেরাটোপ থেকে বাইরে বের হতে পারেনি। ব্রেন-ওয়াশিং কাজটা তাই ধর্মকে ব্যবহার করে হুজুরেরা যতটা সহজে পারে, বিজ্ঞান বা যুক্তি দিয়ে তা প্রগতিবাদীরা ততো সহজে পারে না। আজও পরিবারের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেটা যখন ভালো রেজাল্ট করে, সাথে সাথে নামাজ পড়ে, ধর্মের সাথে বিজ্ঞান মিলিয়ে মুখরোচক ব্যাখ্যা দেয় তখন সে রাতারাতি সমাজে সেলিব্রেটি হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান জানা ও বিজ্ঞান মনষ্ক হওয়া এক কথা নয় কিন্তু বাস্তব সমাজে ধর্মের মোড়কে যারা বিজ্ঞানকে তুলে ধরতে পারে তারাই সবচেয়ে সফল। এদের কাছেই অভিজিতকে হত্যা করা ফরজে আইন। এদের কাছেই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য দাওয়াত ও জিহাদ।
অভিজিতের খুনের পরে যাঁরা এর বিচারের পাশাপাশি, কারণটা খুঁজে দেখতে চাইছেন, তাঁরা-ই বাংলাদেশের শেষ বুদঃবুদ। এরা খুব বিচ্ছিন্ন, ফলে দুর্বল। ওহাবিরা যে কাজ ২০১৪ সালে করছে ইরাকে, সিরিয়ায়, ইউরোপে বা আমেরিকায়; অভিবক্ত ভারতে দেড়শ’ বছর আগে থেকে একই ভাবে একই কাজ করে আসছে। বাংলাদেশ যে কারনে জন্মেছিলো সেই কারনের উপরে ওহাবিদের আঘাত চিরদিন ছিলো এবং থাকবে। এখানে মুক্তচিন্তা, সহাবস্থান, প্রগতিশীলতা কোনদিন ভাত পায় নি, পাবেও না। কিন্তু অভিজিতেরা তা বোঝে না। ওরা খুন হবার জন্যেই জন্মায়।
২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:২১
এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: "একজন মহিলা পরকালে বেহেস্তের আশায় যখন সারা জীবন সব ধরনের চাহিদাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কালো কাফনে মুড়ে ফেলে"- এই বাক্যকে কি একটু বিশ্লেষণ করে দেবেন প্লীজ!!!
বিশেষ করে "কালো কাফন" অংশটা----------
৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩৩
বিলোয় বলেছেন: অভিজিৎ রায় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করত , এটা যদি মুক্তচিন্তা হয় তো আমি আপনাদের পক্ষে নেই। নাস্তিক হওয়া বা না হওয়া আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, ধর্মীয় স্বাধীনতায় আঘাত হানার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?
৪| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩
গোলাম রব্বান বলেছেন: জুলিয়ান ভাই, আমাদের প্রত্যেকটা কাজের জন্য যদি আমরা নিজেরাই দায়বদ্ধ বলে ধরি তাহলে আমার মা কী পোশাক পরছেন এটা তাঁর সিদ্ধান্ত। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ কাজ করেছে তার তো একটা ব্যা্খ্যা আছে, কী বলেন? কারনটা যদি ইসলামিক অনুষঙ্গ-ই হয় তাহলেও তো সেটা একটা কারন? একজন মানুষ যখন ইসলামের নিয়ম মেনে তাঁর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে খাটো করে তখন সংস্কৃতির উপাদানের সাথে ধর্মীয় আইনের সংঘাত দেখা দেয়। দেয় কী না? আপনি প্রশ্নটাও করেছেন কারণ আপনার কাছে কথাটা খুব অস্বাভাবিক ঠেকেছে। স্বাভাবিক না ঠেকার এই কারণটা কিন্তু আপনার চারপাশের দৈন্দন্দিন অভিজ্ঞতা ভিত্তিক। এবারো মাথার উপর দিয়ে গেলে আপনার এন্টিনা মেকানিক এর কাছে যেতে হবে। কগনেটিভ সাইকোলজির উপর বাংলায় তেমন বই নেই। আপনার আগ্রহ থাকলে আমি কিছু বই দিতে পারি। নেবেন?
৫| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৫২
এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ভাই, আপনার রিকমেন্ডেড বই গুলো যদি আমাকে সেকুলারিটির শিক্ষা দেয়, তাইলে দরকার নেই। আমি ধর্মিয় আনুশাসনের কাছে পরাধীন থাকতে চাই। এটাই আমার চয়েজ।
আপনাদের মত অতি উন্নত মডার্ন প্রাণী হবার দরকার নেই আমার। যেখানে যুক্তির কাছে, আর কথার মারপ্যাচে ধর্ম পালাবার পথ পায় না।
আমি ভাই আপনাদের ভাষায় ব্যাকডেটেড প্রাণী । ধন্যবাদ
৬| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮
গোলাম রব্বান বলেছেন: বিলোয় ভাই, খুব ভালো কথা বলেছেন। আপনার স্বাধীনতাটাই কেবল দেখলেন? অভিজিতের টা? তাঁর কথাটার জবাব কথা ও যুক্তি দিয়ে দিলে তো সে হেরে যায়, মেনে নেয়, শেখে। কিন্তু মেরে ফেলে রাখাটা একটা লেখার প্রতিউত্তর ধরে নেয়াটা কাদের কাজ? আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
৭| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:২৭
বিলোয় বলেছেন: অভিজিতের ইসলাম সম্পর্কিত প্রশ্ন আর অভিযোগ গুলো দেয়ার জন্য ইসলামিক কলামিস্ট ব্লগারগণ সর্বদাই নিয়োজিত ছিলেন। তারা সকল প্রশ্নের সুষ্ঠু উত্তর দিতেন। আপনি সদালাপ ব্লগ সহ আরও কিছু ইসলামিক ব্লগ সার্চ করে দেখুন। এসএম রায়হান, ফারাবি সহ অনেকেই তাদের জ্ঞান দিয়ে মেহনতের মাধ্যমে জবাব দিতেন।
একজন মানুষ যদি ইসলাম ধর্মকে আক্রমন করে কলম দিয়ে, তবে কলমের মাধ্যমেই তার উপযুক্ত জবাব দেয়া হয়। আমাদের ইসলামিক কলামিস্ট রা ঠিক তাই করেছেন। তবে আমরা জানি না অভিজিতকে কে বা কারা ঠিক কি কারণে হত্যা করেছে। তবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। আর হত্যাকাণ্ডের জন্য ইস্লামিস্ট দের একতরফা দোষারোপ করাও যুক্তিযুক্ত নয়, আগে প্রকৃত খুনি বের করুন, তাকে উপযুক্ত জবাব দিন। আমরা আছি আপনাদের সাথে। কথা ক্লিয়ার?
৮| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০
বিলোয় বলেছেন: চলতি মাসের (ফেব্রুয়ারি ২০১৫) ১৩ই তারিখে নর্থ কেরোলাইনায় একজন ইসলাম বিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ নাস্তিকের হাতে ৩ জন মুসলিমের নির্মম হত্যা নিয়ে একটি লেখা সদালাপে দিয়েছিলাম, তা এখনো প্রথম পাতায় রয়েছে সেখানে মুক্তমনাদের ব্যাপারে বলেছিলাম, "আমরা কখনো মনে করি না যে এই ঘটনার জন্য গোটা নাস্তিক সম্প্রদায় দায়ী অথবা তাদের কেউ এর জন্য এপোলোজেটিক হতে হবে” মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত রায়ের হত্যার ব্যাপারে আমাদের সেই একই নীতি –একই কথা।
মুক্তমনাদের ধর্মবিদ্বেষ-প্রসূত প্রোপাগান্ডা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক লেখা রয়েছে। মুক্তমনার অনেক কর্মকাণ্ড সামাজিক সংহতির জন্য ভাল ছিল না। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ ধ্বংস করে 'বৈজ্ঞানিকভাবে' সমাজ ব্যবস্থার পুনর্প্রতিষ্ঠার প্রয়াস শান্তির পরিবর্তে কেবল দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ ও দানা-দানিই সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য আমরা উগ্র-নাস্তিকতার বিপক্ষে, যা অন্ধ, যা বিজ্ঞানবাদের ভাঁওতাবাজিতে মানবতাবিমুখ। তবে, এই নাজুক প্রেক্ষিতে ও মুহুর্ত্তে, অভিজিত রায়ের হত্যার সঠিক তদন্ত হোক, অপরাধীদের বিচার হোক -এটাই প্রথম কথা।
৯| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
দধীচি বলেছেন: অভিজিত রায়ের মুক্তমনা-জাতীয় অনেক কর্মকাণ্ড উগ্রবাদী ছিল, ইসলাম বিদ্বেষী ছিল; তিনি ও উগ্র অনেকেই carefully selected marginal text ভাঙচুর করে ইসলামের নবীকে (সা.) নিয়ে, তাঁর স্ত্রীদেরকে নিয়ে, মুসলিম সমাজ নিয়ে, কোরান হাদিস নিয়ে, ইতিহাস নিয়ে, ইচ্ছেমত ব্যাখ্যা জুড়ে দিয়ে, যথেচ্ছভাবে যেরূপে একটি জনগোষ্ঠীকে vilify করে যাচ্ছিলেন তা ছিল তাদের নিজেদের সাম্প্রদায়িক প্রেক্ষিত যার মাধ্যমে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য এবং জগত থেকে ধর্ম-নির্মূল করার উদ্দেশ্য ছিল, যা কখনো সামাজিক সৌহার্দ, সংহতি ও ভালবাসার অনুকূল হয় নি এবং হবার মতও ছিল না। নিজেদের বৈজ্ঞানিক অবস্থান দেখাতে মুসলমানদের নবীতে (সা.) বিশ্বাস, তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ইত্যাদি নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক লেখা, তাদের কোরানের আয়াতই তাদেরকে সন্ত্রাসী করে -এসবের মধ্যে শান্তির বাণী নেই। কারো নাস্তিক্যবাদ এগুলো ছাড়াই করে গেলে তাতে উগ্র ও সাংঘর্ষিক পদক্ষেপ এড়িয়ে চলা যায়। কিন্তু এসব কর্ম-তৎপরতা যে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করবে। আর যারা দ্বিতীয় আরেকটি যুদ্ধের নামে চরম উদ্যমে সর্বত্র ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের ব্যাপারে একথা বলার চেষ্টা করেছি যে তাদের সমাজ পরিবর্তনের (social change) থিওরি ভুল, বিশেষ করে দীর্ঘ সূত্রিতায়।
১০| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮
দধীচি বলেছেন: সমাজ পরিবর্তের যেসব থিওরি ও উপাদান সমাজ বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আলোচিত হয় তার মধ্যে যুদ্ধ ও দ্বান্দ্বিক (war and conflict) থিওরি অন্যতম। সমাজে ধীরে ধীরে, লিনিয়ার (linear social change) পদ্ধতিতে, যে পরিবর্তন আসে তা অত্যন্ত স্লো (ধীরগতির) দেখা যায়। তারপর সেই পরিবর্তন কোনদিকে যাবে –তার কোনো সঠিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে, যুদ্ধের মাধ্যমে যে পরিবর্তন আনা হয় তাতে বিজয়ী পক্ষের ইচ্ছে, তাদের ধ্যান-ধারণা, তাদের ন্যায়নীতি, তাদের আদর্শ চাপিয়ে দেয়া যায়। অতীতের অনেক যুদ্ধে এর উদাহরণ রয়েছে। যুদ্ধে সমাজের অবস্থা তোলপাড় হয়। বিজয়ীর কাছে পরাজিতরা নতজানু হতে হয়। বেশি দূরে না গিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সামাজিক বাস্তবতা দেখুন। নিত্যদিনের আরব দেশের অবস্থা দেখুন। উইপন অব মাস ডিস্ট্রাকসনের নামে (weapon of mass destruction) যে নির্মম ও বিধ্বংসী যুদ্ধ পরিচালিত হয় সেই যুদ্ধের বিপক্ষে বড় বড় বিজ্ঞানী (ইউরোপের এবং বিশেষ করে ইংল্যান্ডের) যারা ইরাকের রিসার্চ কাজে সহায়তা করেছিলেন তারা হাতে পায়ে ধরে বলেছিলেন ওখানে উইপন অব মাস ডিস্ট্রাকনের কিছু নেই –কিন্তু যারা যুদ্ধ চেয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য ছিল অন্যটা –সমাজ পরিবর্তন। আর তাদের সেই এজেন্ডা এখনো চলছে।
কিন্তু যে জিনিসটি পরিবর্তনবাদীদের খেয়ালে নেই তাহলো অর্জিত পরিবর্তন কালের আবর্তনে টিকে থাকে না। এবং বিশেষ করে যে জাতির বিশেষ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে –তাদের আরকিটাইপল কনসাসনেস (archetypal consciousness) উহ্য করা যায় না। ওরা আবার তাদের মূলের দিকে ফিরে যায়। প্রথম মহাযুদ্ধের পর তুর্কির কি দশা ঘটানো হয়েছিল সেই কথা চিন্তা করুন। আর আজ দেখুন ৯২ বছর পর কি হয়েছে। রাশিয়ায় কি হয়েছিল? আজ দেখুন কি হয়েছে। আজকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় যুদ্ধের কথা ভাবুন। দেখুন এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে কত প্রাণ নিঃশেষ হয়েছে; কত লোক পঙ্গু হয়েছে; কত বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হয়েছে; কত লোকের জীবন বিপন্ন হয়েছে; কত টাকা উজাড় হয়েছে; এই যোদ্ধাদের জ্ঞানের দিকে তাকান; (ময়দানের যোদ্ধাদের); তাদের যুক্তির দিকে তাকান; তাদের ভাষার দিকে তাকান –দেখবেন, ওরা কৌশলে আবেগ তাড়িত স্থূলদৃষ্টির লোক, অন্যের বুঝিয়ে দেয়া যুদ্ধ করছে। ধর্ম মানুষকে প্রতিশোধ আবেগপ্রবণ থেকে বাঁচিয়ে প্রেম ও ভালোবাসার যে আবেগ সঞ্চালন করে, যে যুক্তি দেখায় এই শ্রেণী সেই যুক্তির পরিবর্তে উল্টো যুক্তি পর্দার পিছনের ভিন্ন শ্রেণীর কাছ থেকে ধারণ করেছে; যেমনটি সব যুদ্ধের পিছনে থেকে প্রায়ই হয়ে থাকে –ইরাক যুদ্ধ সাক্ষাত উদাহরণ। আজ বাংলাদেশের সার্বিক নৈতিক অবস্থার দিকে তাকান; আইনের দিকে তাকান; অপরাধের দিকে তাকান; স্বাধীনতার পর থেকে অপরাধের ফিরিস্তি দেখুন। তারপরও যদি আপনি ধাপ্পাবাজি বুঝতে না পারেন, তবে আপনার আর বুঝার দরকার নেই, আপনি নিজেই সেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। But remember, it’s a war of social change, it’s a war to bring modernity, not simply to bring technological change, but with it, the positivist philosophy of modernity devoid of religion, the philosophy of the Ovijits.
তবে মনে রাখতে হবে, মুক্তমনারা তাদের দ্বিতীয় যুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মকে রাষ্ট্রীয় শক্তি দিয়ে কোণঠাসা করতে পারলেও এটা সুদীর্ঘকাল ব্যাপী ঠিকে থাকবে না। এটা কেবল একটি নির্দিষ্টকালে খুন, খারাবী ও ধ্বংসের মাধ্যমে আপাতত প্রতিষ্ঠিত হবে। অধিকন্তু রাষ্ট্রীয় শক্তির মাধ্যমে প্রতিপক্ষের হাজারজন মেরে ফেললেও আপনার পক্ষেরও ১০/৫ জন মরবে। আজ আমেরিকা-চালিত বৈশ্বিক যুদ্ধে আমেরিকান আহত-নিহত সৈন্যসংখ্যার দিকে তাকিয়ে দেখুন।
আমরা মুক্তমনাদের ধর্ম-নির্মূলের কর্মকাণ্ড ও প্রোপাগান্ডার রূপ প পদ্ধতি দেখে স্থানভেদে এটাকে সাম্প্রদায়িক এবং স্থানভেদে ফ্যাসিস্ট বলেছি।
১১| ১৮ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০
সাঈদ মোহাম্মদ ফাহিম আবরার বলেছেন: মৌলবাদীদের নাম দিয়ে ইসলাম কে ধবংস করার জন্য আপনারা যে সেক্যুলারিজমের বীজ ছড়াচ্ছেন সেটা বুঝতে এদেশের ৯১ভাগ্ধর্ম্প্রাণ মুসল্মান্দের বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। সব শিয়ালেই মুরগী স্বাধীনতা চায়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১৮
এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: আমার জ্ঞান খুব বেশি গভীর নয়, আপনার কথাগুলো তাই মাথার দেড় হাত উপর দিয়ে গেল।
আপনি আসলে কথার প্যাচে কি যে বোঝাতে চাইলেন, তা আপনিই ভাল জানেন।
মনে হল, ইসলামের বিধি নিষেধ গুলোর প্রতি আপনার একটু আস্থা কম আছে। আধুনিক বিজ্ঞান কি ধর্মহীনতা শিক্ষা দেয় নাকি?
আপনি অভিজিৎ কে সম্মান করেন, তার প্রতি আপনার সহমর্মিতা আছে ১০০ পারসেন্ট , তাই তার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের অবস্থান আপনাকে রাগতে বাধ্য করে।
আপনি যদি তাদের দুর্বলতার জায়গা নিয়ে অস্বাভাবিক খোঁচাখুঁচি করেন কোন কারন ছাড়াই, তাইলে সেই ঝুকি কেন নেবেন না!!!