নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিদ্বন্দ্বী

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৫

ডান চোখের ব্যাথাটা অনেকদিন পর হলো আবারো ফিরে এসেছে । কোন কাগজে কিংবা টেলিভিশনের মতো কোন যন্ত্রের উপরে চোখ গেলেই ব্যাথাটা তীব্রভাবে শাসায় । আবার সেই অহিংস হুমকিকে উপেক্ষা করে তাকিয়ে থাকতেও বেশ আনন্দ পাওয়া যায় । অক্ষমেরা অর্থহীন নানা কিছুতেই নিজেদের জেদকে সাড়ম্বরে প্রকাশিত করে ।
সামান্য একটা চোখের ব্যাথার প্রত্যাবর্তন থেকে এরকম ভারী দার্শনিক ব্যাখ্যায় বোরহান অভিভূত হয়ে পড়ে । তার মনে হতে থাকে যেই ক্ষুদ্র , গুমোট ঘরটিতে একটি অপদার্থের মতো খেয়ে পরে সে জীবনধারণ করে আছে কিন্তু প্রকৃতার্থে জীবিত নেই সেই ঘরটিতে আলো বাতাস খেলতে শুরু করেছে । যেন জানালাবিহীন ঘরটির একেকটি অদৃশ্য জানালা বিভিন্ন উন্মাতাল বাতাসের সুরকে অনুভব করতে আরম্ভ করেছে । বড্ড বিস্ময়কর এই অনুভূতি । একেবারেই জানান দিয়ে আসেনি ।
গুরুত্বহীন কিছু কাগজে অনাদরের সাথে কলমের খসখস শব্দে কিছু লিখতে গেলে উপরে চোখ পড়ে যায় । বড় ঘড়িটা ডান দিকে একটু কাত হয়ে আছে । কিছু ধুলো জমেছে । বোরহান একবার ভাবলো হাত দিয়েই মুছে দেয় । পরক্ষণেই সেই চিন্তাটি বাদ দিয়ে যা করছিলো তাই করতে লাগলো । চোখের পাতা কিছুটা ছোট হয়ে আসলে স্কুলের অংকের শিক্ষক রাজেশ স্যারের কথা মনে পড়ে । তার কাছে কম মার খায়নি শেষ মুহূর্তে এসে অংক ভুল করবার জন্য । প্রায়শই বেঞ্চে কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতেন আর অন্যদের দেখিয়ে দেখিয়ে বলতেন ' এই বোরহান গাধাটাকে তোরা সবাই দেখ । শুরু থেকেই সব ঠিক করে শেষে এসে ভুল করে । ৮২ কে লেখে ২৮ , ৫৩ কে লেখে ৩৫ । শেষ যার খারাপ হয় তার জীবনে কিচ্ছু হয়না । "
বোরহান প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতি রোমন্থনে আন্দোলিত হয়না । স্যারের নিজের শেষটাই বড্ড করুণ ছিলো । গলায় ফাঁস দিয়ে যে মরেছে তার সমাপ্তিটা স্মরণযোগ্য হয় কি করে ? ভাবতে ভাবতে আরেকবার ঘড়িটার দিকে চোখ গেলো । বড় কাঁটাটার দিকে নির্ণিমেষ তাকিয়ে থাকতে থাকতে বোরহানের ভেতরটা যেন বেরিয়ে আসবে এমন দশা । কত ধীরস্থিরভাবে পথ ফেলছে , ইপ্সিত লক্ষ্যে চলতে যার কোন ক্লান্তি নেই । বোরহান মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইলো । হঠাৎ তার উপর কোত্থেকে একটা উড়ন্ত তেলাপোকা এসে বসলো । বোরহানের কোন ভাবান্তর হলোনা । একটা আর্দ্র বাতাসের শহরে যেখানে তার মতো অজস্র প্রাণ ম্যাড়ম্যাড়ে নাতিশীতোষ্ণ জীবনে অনাবিল উত্তাপের সন্ধানে ক্লান্তিকর একেকটি প্রহর কাটিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর সেখানে উড়ন্ত তেলাপোকা কি এমন আতঙ্কের জন্ম দিতে সক্ষম ?
তেলাপোকাটিও বোরহানের এই উদাসীনতায় বিশেষ একটা মনোঃক্ষুন্ন হলোনা । মেরুন রঙের পুরনো দেয়াল ঘড়িটি , যার আশেপাশে অনেকদিন হলো কোন হাত পড়েনি তার উপর নিজের প্রয়োজনে কিংবা আনন্দে সে বিচরণ করতে লাগলো । সেও সম্ভবত বুঝে গিয়েছে এই মুহূর্তে তাকে দেখতে থাকা সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা শরীরটি আদপেই ভীতিকর কিছু নয় । বরং অনেকটাই উপেক্ষনীয় । নীল রঙের কাঁচের চুড়ি পড়া একজন বোরহানকে যেমনটা ভেবে এই সময়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ।
ডান চোখের ব্যাথা নিয়ে একটি পুরনো দেয়াল ঘড়ি , একটি উড়ন্ত তেলাপোকা আর হাতে ধরে থাকা কিছু অক্ষম ক্রোধসর্বস্ব কাগজ আর সেই নীল রঙের চুড়ি পরিহিতার মাঝে কাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে আরো কিছু অনিবার্য প্রহর মনে মনে নিজেকে সম্রাট ভেবে কাটিয়ে দেওয়া যায় তা ভাবতে ভাবতে বোরহানের হাত ক্রমশ কাগজগুলোর থেকে শিথিল হতে থাকে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.