নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় প্রকৌশলী। অন্তর্মুখী। কবিতা ভালোবাসি ভীষণ। লিখিও

ঋতো আহমেদ

আমার হাতের দিকে বাড়ানো তোমার হাত। হাতের ভেতরে শিখা, শত্রুতার এমন রূপ! কামনা বিভীষিকা

ঋতো আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হৃৎপিণ্ডে বিঁধে আছে জীবনের আমৃত্যু প্রত্যয়

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৩



'আর অনেকভাবে বিফলতায় বিসর্জনে ডুবে অনুভব করেছি নদীতে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার গয়নার মতো আমার অস্তিত্ব কবিতা হয়ে ভেসে উঠতে চায়। কবিতায় কোনও চৌকো আকৃতির রত্নভর্তি সিন্দুক নয়, দিগন্তের দিকে ঢেউ খেলানো অদৃশ্য বাতাসকেই আমি খুঁজি যদিও জানি তার দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।.. কবিতা নিয়ে আমি কিছু করতে পারি না, করতে চাই না, শুধু পৌঁছতে চাই সেই সমুদ্রের কিনারায় যার একদিকে জীবন ও শিল্প অন্য দিকে শূন্যতা যেখানে কল্পনা মুহুর্মুহু অবিরাম নিজেকে সৃষ্টি করে চলে। ঘটনাচক্রে আমার জীবনে কবিতার বিকল্প আর কিছু নেই, ওই একটিমাত্রই আমার পথ ও পাথেয়।'— এইরকমই বলছিলেন কবি দেবারতি মিত্র তাঁর কবিতাসমগ্রের ভূমিকায়। আর, আমাদের কথা হচ্ছিল কবিতার বইয়ের ভূমিকা নিয়ে। আমাদের মানে, এমদাদ রহমান আর আমার। শুধু কবিতা নয়— কবিতা, গল্প বা উপন্যাসের বইয়ের ভূমিকা কেমন হওয়া ভালো? কে লিখবেন এই ভূমিকা? লেখক, না অন্য কেউ? কথা হচ্ছিল গত কয়েকদিন যাবৎ ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ঘুরতে থাকা পাকিস্তানী কবি সারা শগুফ্তার কবিতার বই ’আঁখে’-র একটি ভূমিকা নিয়েও। ১৯৮৪ সালে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন এই কবি। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় এই বই। বড়োই মর্মস্পর্শী ওই মুখবন্ধ ‘পহেলা হরফ’ পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল। মন্তব্য ছিল, ‘এর মতো কবিতার বইয়ের ভূমিকা আর কী হতে পারে!’, ‘চমকে গেলাম.. একটা জ্যান্ত দহন যেন সারা গায়ে চরে বেড়ালো..।’, ‘ভয়ংকর এক সত্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল এই লেখা।’ আবার প্রতি-মন্তব্যও ছিল এইরকম, ‘এই ভূমিকাটি কবিতাগুলোকে পাঠে প্রভাবিত করবে খুব। কবিতার চেয়ে ভূমিকাই মূখ্য হয়ে ওঠার প্রবল আশঙ্কা রয়েছ বলতে হয়।’ এমদাদ বলছিলেন, ‘কবিতার বইয়ের ক্ষেত্রে কবি তার কবিতা-ভাবনা বলতে পারেন, গল্পের বইয়ের শুরুতেও লেখকের কথা রাখা যায়। ’বইপত্র’ থেকে আমি ইন্ডিয়ার প্রতিক্ষণ প্রকাশিত গল্প সিরিজের কিছু বই কিনেছিলাম, প্রতিটি বইয়ে লেখক তার লেখার জগৎ উন্মোচন করেছেন।’ কিন্তু, লেখক নিজে না লিখে, অন্য কেউ ভূমিকা লিখে দিলে? ‘হ্যাঁ, অন্য কেউ লিখলে সেটা গুরুত্ব হারায়, কবিতার ক্ষেত্রে অবশ্য যদি আল মাহমুদ বা শঙ্খ ঘোষ কিছু লিখে দেন অথবা জয় গোস্বামী— তাহলে তো কথাই নেই। যেমন হুয়ান রুলফোর বিশ্বখ্যাত উপন্যাস ’পেদ্রো পারামো’র ভূমিকা লিখে দিয়েছেন মার্কেস। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে এর সাথে ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যও থাকে, প্রকাশকরা চান বিখ্যাত লেখকদের ভূমিকা লেখা থাকলে বইটি চলবে ভাল।’ এজন্যই বলছি, ভূমিকা বা মুখবন্ধের মূল লেখাকে প্রভাবিত করার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। ‘সেক্ষেত্রে মুখবন্ধ পাঠকের শেষে পড়া উচিৎ।’ ২০১৯ সালের শুরুতে কবি শ্বেতা শতাব্দী এষ্-এর কবিতার বই ‘ফিরে যাচ্ছে ফুল’ প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে বইটির প্রারম্ভে ‘ভূমিকার বদলে’ শিরোনামে একটি লেখার প্রথম বাক্যটি ছিল, ‘শ্বেতার কবিতা পড়লে মনে হয় শুনছি মাটিলগ্ন নিমগ্নতা ও বিষাদের দিঘল-লয় সুর।’.. এইভাবে পুরো একটা গদ্যই লেখা ছিল নির্ঝর নৈঃশব্দ্য’র। পড়তে গিয়ে আশ্চর্য রকম ভালো ওই কবিতাগুলোর শুরুতেই অমন একটা স্তুতিময় গদ্য আমার বড়োই বেমানান আর উটকো মনে হয়েছিল। আমি বলতে চাইছি, ভূমিকায় ওরকম কথা কেন থাকতে হবে যা মূল লেখাকে প্রভাবিত করতে পারে? এ তো পাঠককে নির্দেশিত দিকে ভাবতে প্ররোচিত করে। পাঠকের নিজস্ব চিন্তার বিস্তারের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। কারো লিখে দেয়া ভূমিকা বা স্তুতি বাক্য গুলো পড়ে পাঠকের নতুন ভাবনার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় বলেই মনে হয় আমার। যদি কিছু বলতেই হয় তো মূল লেখার একেবারে শেষে হয়তো বলা যেতে পারে। কেননা, পাঠক ভুল পথে চালিত হতেই পারেন। মুখবন্ধের সুন্দর সুন্দর কথাগুলো যখন নিজের পাঠের সাথে না মেলে তখনই লেখক সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় পাঠকের। কবিতাগুলো তো নিজেরাই কথা বলে। আলাদা করে আর কিছু বললে তো কবিতাগুলোকেই ছোট করা হয়। যেন কবিতায় বলা যাচ্ছে না সবটুকু কিংবা কবিতাকে চিনিয়ে দিতে হচ্ছে; ওরা নিজস্ব দ্যুতিতে উদ্ভাসিত হতে পারছে না। এমদাদ বললেন, ‘হ্যাঁ এটাই। কবিতা নিজেই বলবে।’

কী বলবে কবিতা? কবিতা কী বলে?

আসুন, একবার হেঁটে আসি, সম্পূর্ণ মায়া আর রহস্যে আচ্ছন্ন এক জগতের গহিন আর সুনিবিড় ছায়াপথে। নিরবচ্ছিন্ন আলো ও অন্ধকারের নিঃসঙ্গতায়। যেখানে ইন্দ্রিয়াতুর আর বেদনাঘন লাবণ্য ও বিষাদ ক্রমশ মিশে যায় এসে নিঃশর্ত মমতা আর স্নেহে। সেই ১৯৭১ সালে যখন প্রথম আমরা এই পথের দেখা পাই— সেই অন্ধস্কুলে ঘন্টা বাজিয়ে যার শুরু— এরপর থেকে ধীরে ধীরে সেই পথ এগিয়ে যায় যেন চেনা/অচেনা মানুষ, জীবজন্তু, গাছপালা, রোদবৃষ্টি, আকাশবাতাসের অন্তর্জীবন, গোপন বেদনা আর স্বপ্নানুভূতির ভেতর দিয়ে আমাদের নাড়াতে নাড়াতে। নির্জন হ্রদের ধারে, জোড়া নীল পাহাড়ের করবী উজ্জ্বল খাঁজে আমাদের প্রথম সকাল হয়। আমরা দেখতে পাই আকাশে হাওয়ার ঝলক উড়ছে। দেখতে পাই শঙ্খের মতন শান্ত মসজিদের চূড়ায় ঝরে পড়ছে ধু ধু লালীমা— ঝরে পড়ছে পাহাড়ি ফুলের গাছেও। দেখতে পাই সবুজ স্বচ্ছ আলোভরা নিটোল ফলের ভারে নুয়ে, কমনীয় প্রণতির মতো স্নিগ্ধ এক জলপাই গাছ, হ্রদের শীতল জল ছুঁয়ে আছে।—

সেইখানে দেখি তুমি অসম্ভব গাঢ় মমতায়
মেদুর লাবণ্যঘন মাটি;
জলপাই গাছটির সূচিকন চুলের মতন
অসংখ্য শিকড় একা বুকে করে শুয়ে আছ।
মাঝে মাঝে এ রকম এক একটি সকালে
মনে হয় বেঁচে আছি, খুব ভালো লাগে।

(মাঝে মাঝে সকাল হয়/অন্ধস্কুলে ঘন্টা বাজে)

সেইখানে দেখি তুমি অসম্ভব গাঢ় মমতায় মেদুর লাবণ্যঘন মাটি— যেন কবিতা নয়, অদ্ভুত সুন্দর এক দৃশ্যের চিত্রায়ণ চলছে। চোখের সামনেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সব। ওই হ্রদ, ওই যে পাহাড়, ওই মসজিদের চূড়ো, জলপাই গাছ, লাবণ্যঘন মাটি আর অসংখ্য শিকড়। আহা! খুব ভোরে ঘুম ভাঙতেই এই রকম একটা সকালের দৃশ্য দেখে হৃদয় ভরে যায় স্নিগ্ধতায়। খুব ভালো লাগে। ভেতরে ভেতরে শিহরণ জাগে। প্রাণের সঞ্চার টের পাওয়া যায়। মনে হয় বেঁচে আছি।

১৯৭১ পূর্ববর্তী সময়ে যখন দেবারতি মিত্র কলেজে পড়তেন তখনকার লিখা কবিতা এটি। কিন্তু এই দৃশ্য তিনি কোথায় দেখলেন? কলকাতায় কি এমন হ্রদ বা পাহাড় কোখাও আছে? এ নিশ্চই সম্পূর্ণ তাঁর কল্পনাপ্রসূতও নয়। তিনি কি ইস্তাম্বুলে ছিলেন কখনও? অন্তত সেই সময়ে? হয়তো ছিলেন না। আমার জানা নেই এ মুহূর্তে। তবে, ইস্তাম্বুলের কথা কেন আসছে বলি। সুলতান সুলেমান আর হুররেম-এর কথা মনে আছে নিশ্চই। কয়েক বছর আগে দীপ্ত টিভিতে বাংলায় ডাবিং করা এক তুর্কি টিভি-সিরিয়াল দেখাতো। বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। ইস্তাম্বুল হচ্ছে সেই শহর যেখানে ছিল সুলতান সুলেমানের রাজধানী। যার তিনটি দিকেই বেষ্টন করে আছে বিশাল জলরাশি। আর রয়েছে পাহাড়। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে অনেকগুলো পাহাড় আছে। জোড়া পাহাড়ও আছে। আছে বিশাল বিশাল গম্বুজ আর ৬ মিনার সমৃদ্ধ সেই উসমানীয় সাম্রাজ্যের মসজিদ। সিরিয়ালের শুরুতেই টাইটেল সঙ-এর সাথে আমরা দেখতে পেতাম এই দৃশ্য। দু’পাশের পাহাড়ের পাদদেশ বরাবর সমুদ্র চলে গেছে। আর ওই যে ৬ মিনারের সুলতানী মসজিদ,— এই রকম একটা দৃশ্যের কথাই মনে পড়ছিল আমার যখন কবিতাটি পড়ছিলাম। সেইখানে, সেই পাহাড়ের পাদদেশে, জলের ধারে, যেন সেই ১৫ শতকের কোনো কোনো ভোরে পৌঁছে যাই আমি। সেখানে সেই জলপাই গাছ আর তুমি। তুমি মানে মাটি। মেদুর লাবণ্যঘন মাটি।— আচ্ছা এই পুরো কবিতাটির শেষ দিকে এসে কবি মাটিকেই কেন তুমি সম্বোধন করছেন? পাহাড়, জল, লালীমা, জলপাই গাছ— এতো প্রাণময় সবকিছুর মধ্যে তিনি মাটিকেই পরম আপন করে পেলেন? কিন্তু কেন? এই জন্যই কি যে, গাছটির অসংখ্য শিকড় তো মাটিই মায়ের মতো মমতায় বুকে আগলে রাখছে? পৃথিবীর আলোয় বাতাসে অন্ধকারে জীবনের ভিত্তি হয়ে সৃষ্টি করছে অমন অপরূপ দৃশ্যের।

কতো আর বয়স হয়েছিল তখন তাঁর— ২২/২৩? প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা এটি। বিস্মিত হতে হয়। মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে ‘মেদুর লাবণ্যঘন মাটি’ কথাটি। আমি হাতড়ে বেড়াই আমার স্মৃতি। আমার জীবন অভিজ্ঞতা। এমন মাটি কি কখনও দেখেছি আমি? মেদুর মানে তো ঘোরও বোঝায়। যে মাটির দিকে তাকালে এক ধরনের ঘোর অনুভূত হয়, এও কি তাই? আবার, মেদুর মানে যে শ্যামবর্ণ— তা তো বোঝা যাচ্ছে। মেদুর কথাটায় কোমলতা আর স্নিগ্ধতাও রয়েছে। তাহলে এমন শ্যামবর্ণ কোমল স্নিগ্ধ লাবণ্যে ভরা মাটি আমি কোথায় দেখেছি? যার দিকে তাকালে মমতার ঘোর সৃষ্টি হয়। আমি ভাবতে থাকি। ভাবতে থাকি কমনীয় প্রণতির মতো নুয়ে পড়া স্নিগ্ধ এক জলপাই গাছকেও।

বেপথু সবুজ নাকি এইখানে
খেলা করেছিল—
পড়ে আছে কাঁচপাতা
লঘু সূক্ষ্ণ পাথরের ঝুরিফুল
ভগ্নাবশেষ।
নিখুঁত গঠিত মূর্তি
যেন এইমাত্র
শিল্প
শেষ টানে এঁকে রেখে গেছে
অকুণ্ঠিত বনের অলীক।

(অলীক জঙ্গল/যুবকের স্নান)

এইখানে নাকি সবুজ খেলা করছিল। কেউ একজন গল্প করেছে, অথবা জনশ্রুতি রয়েছে এমন হয়তো। বলেছে এইখানে বেপথু সবুজ নাকি খেলা করেছিল— এইখানে মানে কোথায়? সবুজ কোথায় খেলা করে? সবুজ মানে তো গাছ-গাছালীর সবুজ— প্রকৃতি। এ কি কোনো বন/জঙ্গলের কথা বলা হচ্ছে? সবুজের খেলা করা বলতে যে দৃশ্যটি চোখের সামনে ভেসে উঠে তা হলো বহমান বাতাসের দোলায় বৃক্ষরাজির আলোড়ন। কম্পমান পত্র-পল্লব। জঙ্গল বলতে মনে আসে আমাদের শহরের সবচেয়ে কাছের সেই মধুপুর জঙ্গল। আনারসের জঙ্গল। বার্ষিক বনভোজনের জঙ্গল। ছোট বেলায় বহুবার গিয়েছি। জঙ্গলের ভেতর মাঝে মাঝে রয়েছে সমতল ভূমি। সাধারণত ধানের চাষ হতে দেখেছি ওসব জায়গায়। আর কিছু কিছু আছে পিকনিক স্পটের মতো। এখনকার ন্যায় তো আর এতো আয়োজন আর সাজসজ্জা ছিল না তখন। কেবল দু’চারটে সামিয়ানা টাঙিয়ে শুরু হয়ে যেত বনে ভোজনানুষ্ঠান। বয়েজ্যেষ্ঠরা গল্পগুজব আর তরুনরা গান-বাজনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। আর আমরা যারা ছোট ছিলাম, আমাদের মনে খেলা করতো দারুণ সব কৌতুহল। জঙ্গল দেখার আগ্রহ। বানর, বাঘ, হরিণ থেকে শুরু করে আরো কতো কী যে দেখবো বলে আমাদের হৃদয় আর দৃষ্টি একদমই স্থির রইতো না। কিন্তু, কোলাহলময় এলাকায় কি আর ওদের দেখা মেলে। এরই মধ্যে আমরা ছোটরা কেউ কেউ খেলতে খেলতে এদিক সেদিক হেঁটে যেতাম। বনের ভেতর আঁকাবাঁকা মেঠো পথ। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। ঠিক মনে নেই কবে, তবে সেই রকমই একবার, তখন একটু বড় ক্লাসে উঠেছি বোধয়,একা একাই আনমনে কোথাও পৌঁছে গিয়েছিলাম, যেখানে গাছের প্রকাণ্ড একটা ডাল ভাঙা পড়ে ছিল। সবুজ কাঁচা পাতাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এদিক সেদিক। সেখানে সেই গাছের ভাঙা শাখায় জুত করে বসার একটা জায়গা খুঁজে নিয়ে বসে পড়লাম। চিকন কাঠি কুড়িয়ে নিয়ে মাটিতে এটাসেটা আঁকলাম আবার মুছেও দিলাম। কতোক্ষণ ছিলাম মনে নেই। তবে, ঝোপের ভেতর আওয়াজ শুনে হঠাৎ যে বাঘ বা বানরের ভয় পেয়ে উঠে আসিনি তা বলতে পারবো না। ‘পড়ে আছে কাঁচপাতা/ লঘু সূক্ষ্ণ পাথরের ঝুরিফুল’— বসে থেকে কিংবা ফিরে আসতে আসতে দেখেছিলাম-কি এইসব পাথরের ঝুরিফুল? ছোট ছোট পাথরে গাঁথা মালা। ভগ্নাবশেষ। কেউ কি এসছিল এখানে? গলায় সূক্ষ্ণ পাথরের মালা পরা ছিল। গাছ-গাছালীর পাতায় পাতায় খেলেছে, সময় কাটিয়েছে অনেকক্ষণ। তারপর হয়তো কোনো কারণে মালাটি ছিঁড়ে গেছে। সেই ছেঁড়া মালার পাথুরে পুঁতিগুলো পড়ে ছিল মাটিতে এদিক সেদিক। পড়ে ছিল কাঁচপাতা। না, তেমন কিছু মনে আসছে না।

আচ্ছা(!), এই সবুজ তো সেই সবুজও হতে পারে— তারুণ্যের সবুজ— যৌবনের সবুজ। বেপথু সবুজ— মানে তো জঙ্গলে অভিসারে আসা যুবক যুবতীর প্রেমের কথাও হতে পারে। পরস্পর আলিঙ্গনে, প্রেমের খেলার আলোড়নে আচমকা ছিঁড়ে যায় গলার মালা, ছিঁড়ে পড়ে গাছের কাঁচা পাতা। আহা, কবিতার কয়েকটি পঙক্তি নিয়ে কতো ভাবনাই না আসে! ’নিখুঁত গঠিত মূর্তি/ যেন এইমাত্র/ শিল্প’— এমনভাবে আঁকা হয়েছে যেন নিখুঁতভাবে গঠিত এক মূর্তির মতোই এটি জলজ্যান্ত। এতো জীবন্ত যে, মনে হচ্ছে এইমাত্র আঁকা হয়েছে এমন এক শিল্পকর্ম। কিন্তু, কিছু কি বুঝা যাচ্ছে? কিসের মূর্তির কথা বলা হচ্ছে? ‘শেষ টানে এঁকে রেখে গেছে/ অকুণ্ঠিত বনের অলীক।’ এই-যে প্রেমের খেলার দৃশ্য— মুক্ত, দ্বিধাহীন এই বনের এই যে অবাস্তব চিন্তা এই যে কাল্পনিক ঘটনাটি মনে মনে দৃশ্যায়ণ করে নেয়া— এ যেন এক নিখুঁত মূর্তির মতোই শিল্পিত— এইমাত্রই যার সৃষ্টি। শেষ টানে শিল্পীর চিত্র যেমন পূর্ণতা পায়— তেমনই।

ঘুম ভেঙে জেগে দেখি
সারি সারি নাগেশ্বর গাছ
বিরাট অদ্ভুত বিজনতা
উজ্জ্বল নিস্তব্ধ ফুল—
চিরকাল এই চিরকাল।

(অলীক জঙ্গল/যুবকের স্নান)

তাহলে এই-যে বেপথু সবুজের খেলা, পাথরের ঝুরিফুল, নিখুঁত গঠিত মূর্তি— এগুলোর সবই অলীক! ঘুমের ভেতরে অন্য জগতে ঘটে যাওয়া ঘটনা? নাকি ঘুম আর বাস্তবের সমন্বয় এই কবিতা? ঘুম ভেঙেই চোখে পড়ে সারি সারি নাগেশ্বর গাছ। নাগেশ্বর। চিরসবুজ এক বৃক্ষ। প্রকৃতির সৌন্দর্যে‌ অনন্য মাত্রা যোগ করা এই গাছই প্রথম চোখে পড়ে আমাদের। জনমানব নেই। বিরাট অদ্ভুত বিজনতা। তারপর কল্পনায় ভেবে নেয়া বেপথু সবুজের খেলা আর অকুণ্ঠিত বনের অলীক। প্রকৃতির দারুণ এক দৃশ্য রচনা করা হয়েছে এই কবিতায়। চোখের সামনেই যেন দেখতে পাই উজ্জ্বল নিস্তব্ধ ফুল। নৈঃশব্দ্যের ফুল। স্তব্ধ। কথা না-বলেও কথা বলে। কোনো আওয়াজ নেই। ঘ্রাণই তার শব্দ। সৌন্দর্যই তার অক্ষর। বনের এই-যে ছবি, এ-তো কেবল কোনো মুহূর্তের ছবি নয়। এ ছবি— এই দৃশ্য যেন শাশ্বত কালের। চিরকাল বন যেন এমনই। ’চিরকাল এই চিরকাল।’

সম্রাটত্ব কে না চায়, কে না চায় জ্যোতির্জ্যোতি বিকীর্ণ যৌবন
নিরলস দীর্ঘ ঋজু অশ্বারোহী সৈনিকের মতো দৃপ্ত বন
রাজদণ্ড হয়ে সূর্য যেখানে নীরবে ঘুরে আসে—

(আত্মবৃত সফলতা/অন্ধস্কুলে ঘন্টা বাজে)

কবিতায় তাঁর অসাধারণ উপমার প্রয়োগ আমাকে মুগ্ধ করে। দু’অক্ষরের একটি শব্দ ’বন’, অথচ তাঁর কবিতায় এই বনই হয়ে উঠছে নিরলস, দীর্ঘ, ঋজু অশ্বারোহী সৈনিকের মতো দৃপ্ত। ভাবুন তো একবার: ঘোড়ার পিঠে চড়ে আছেন একজন সৈনিক। যিনি শিরদারা সোজা করে বসে আছেন ঋজু। দীর্ঘদেহী এবং নিরলস। এই রকম অসংখ্য সৈনিকের মতোই সারি সারি বৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে বনে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সেই বন। ঘন সেই বনের উপর দিকটায় তাকালে গাছপালার ফাঁক দিয়ে সূর্য দেখা যায়। চলতে চলতে সূর্যের রশ্বি হঠাৎ হঠাৎ-ই নেমে আসে নিচে। চোখে ঝলক লাগিয়ে দেয় চাবুকের মতো। যেন রাজদণ্ডের মতোই নীরবে মাটি ছুঁয়ে যায়। শুধু প্রকৃতি আর প্রেমের কবিতা নয়— জীবনের এবড়োখেবড়ো পথ, জীবনের বিষ, অভিশাপ, না-পাওয়ার বেদনাও অব্যর্থ ভাবে উঠে এসেছে তাঁর কবিতায়।

ছোট ছোট নীচ কাঁটা গায়ে একবার বিঁধে গেলে
ভিতরের দিকে তাকে টেনে নেয় ত্বক,
অস্থিমাংসমজ্জা আরও সযত্নে লালন করে বিষ
হঠাৎ পচনশীল ক্ষত ফুটে ওঠে।

স্বপ্ন নয় মৃত্যু নয় সহিষ্ণুতা সে বড় পামর,
তার চেয়ে চাবুকের দাগ ভালো
অন্ধকার খুঠুরিতে পাথর ভাঙাও ভালো
জলহীন অনাহরে রোজ তিলে তিলে
অতিকায় ঘোর লাল বীভৎস চাঁদের অব্যর্থ শিকার হয়ে ওঠা।

(এর নাম কৃতঘ্নতা/যুবকের স্নান)

জীবনের কোনো কোনো পর্যায়ে এসে আমাদের এমনও কি মনে হয় না কখনো যে সহিষ্ণুতা এক ধরনের মূর্খামী? স্বপ্ন দেখা ভালো, মৃত্যুকে আলিঙ্গন— সেও ঠিক আছে। কিন্তু এই যে সহিষ্ণুতাকে গুণ বলে মহৎ কিছু বলে বিবেচনা করা হয়— কোনো কোনো মানুষের আচরণে কখনো কখনো আমাদের মনে হতেই পারে তা মূর্খতা। মনে হতে পারে এর চেয়ে মার খাওয়া ভালো, অন্ধকার কুঠুরিতে জেলের ঘানি টানাও শ্রেয়। কিন্তু এই ’জলহীন অনাহরে রোজ তিলে তিলে/অতিকায় ঘোর লাল বীভৎস চাঁদের অব্যর্থ শিকার হয়ে ওঠা’ ব্যাপারটা কি? ছোট ছোট নীচ কাঁটা আমাদের আঘাত দেয়। কেউ কেউ নোংরা ভাবে একটু একটু করে মনে কষ্ট দেয় আমাদের। সেগুলো এমনই নোংরা যে মনের মধ্যে চোরা কাঁটার মতো বিঁধে থাকে। মনকে কলুষিত করে ফেলে। তারপর আস্তে আস্তে মনের ভেতরেই জমে জমে ঘনীভূত হয়ে একসময় পচনশীল কুৎসিত ফোঁড়ার মতোই আত্মপ্রকাশ ঘটায়। জীবনকে বিষিয়ে তোলে। ’চোরাকাঁটা পেলে ত্বক বিষবাষ্প পেলে শ্বাসনালী’ টেনে নেয়। অলক্ষ্য, কিন্তু জীবনের কী অমোঘ সত্যের উচ্চারণ যেন!

এর নাম কৃতঘ্নতা, এর নামই সাক্ষাৎ নরক,
চোরাকাঁটা পেলে ত্বক বিষবাষ্প পেলে শ্বাসনালী
জীবনের দিকে ঠিক আগে টেনে নেয়।

(এর নাম কৃতঘ্নতা/যুবকের স্নান)

শব্দ আর ধ্বনির ঝংকারে তিনি আমাদের এইসব পথের ভেতর দিয়ে নিয়েও শেষ পর্যন্ত জীবনের দিকেই টেনে নিয়েছেন অবশ্য। যেমন নিচের কবিতাটি পড়তে পড়তে আমরা যেই টের পাই বহু ঘাত প্রতিঘাত আর সময়-পথ অতিক্রম করে এসে জীবনের সেই অপ্রাপ্তির অভিজ্ঞান, ব্যর্থতার অব্যর্থ চয়ন।— ঠিক তার পরপরই পাখির আনন্দের মতোই দারুণ প্রাণোচ্ছলতায় বেরিয়ে পড়ছি আমরা পৃথিবীর পথে। জাগতিক জীবনের আশ্চর্য সৌন্দর্যে‌। পাহাড়ের আলোছায়ায় ঘাসবনে। আর রাত্রিবেলা অসংখ্য বোধ আমাদের মাথায় এসে ভিড় করে। অন্ধকারে হারিয়ে গেলে যেমন ছোট ছোট জোনাক পোকা তাদের ছোট ছোট আলোয় আমাদের পথ দেখায়, তেমনি বিভিন্ন রকম চিন্তা/বোধ তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোয় আমাদের পথ দেখায়। জীবন-পথ। অন্ধকারে জোনাক জ্বলার যে সৌন্দর্যের কথা আমরা জানি, সেই সৌন্দর্যের দৃশ্যই যেন আমাদের মাথার ভেতর সৃষ্টি হয় অসংখ্য বোধের ঝলকে।

হয়ে উঠতে গিয়েও কিছু হয়ে ওঠা হয়না,
তুমি দেখি বুঝেছ আমার এই সন্দেহ, এই অস্পষ্টতা।
তবুও পাখির স্ফুর্তি, বেরিয়ে পড়ছি ভোরবেলা—
আজকাল সন্দেহ হয় সত্যিই সে কোথায়?
আমি জড়িয়ে থাকি পাহাড়ের আলোছায়ায় গাছতলায় ঘাসবনে,
অসংখ্য বোধ রাত্রিবেলা যেন জোনাকপোকা জ্বলে।

(সত্যিই কে আছে/রা)

আরেকটি কবিতা পড়ি আসুন, যেখানে রয়েছে মাকড়সার গরলের মতো মেঘ—

এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত আট

প্রথমেই আটের সংখ্যাতে পৌঁছে দেখি
কালো নিসিন্দার বনে
মাকড়সার গরলের মতো মেঘ
খেয়ে ফেলেছে রোদ্দুরের প্রাণ।
দু’-ধাপ পিছিয়ে আসি ভয়ে—

(সংখ্যার পৃথিবী/ভূতেরা ও খুকি)

সত্যিই কে কথা বলে! কে সাড়া দেয়! রবীন্দ্রনাথ এবং জীবনানন্দ? হ্যাঁ, সহজভাবেই আমাদের মনে আসে এই দুই নাম। কিন্তু এঁদের ভেতর দিয়ে অদ্ভুতভাবে ফুটে উঠতে থাকে যে ফুল, সে-ই তো আমাদের জন্য এইসব জীবনের আশ্চর্য সৌন্দর্যের কবিতাগুলো লিখে রেখেছেন। আমরা পাঠকেরা কবিতা ভালোবাসি। আমাদের যাপন, কবিতায়। পাঠের মাধ্যমে আমাদের মন ও মনন প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। আমরা ভাবতে শিখি। আমাদের চোখের সামনে খুলে যায় সেইসব অসংখ্য পথ। আমরা দেখতে পাই ‘বাইরে ব্রহ্মাণ্ড আমার ফুসফুসের মতো দপদপ করে।’ আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় মহামায়া—

’কয়েকটা কাগজ দেবে? ঠোঙা করব।’
মহামায়া এসে দাঁড়াল—
বড় বড় চোখ যেন পদ্মপুকুরের তলার মাটি,
না-কাটা শিলের নোড়ার মতো গড়ন, মেয়েটা বেঁটে শ্যামবর্ণ,
সংসার ওকে দিয়ে অনেক বাটনা বেটে নিয়েছে।

— হ্যাঁ রে ছেলেমেয়েরা কেমন আছে, ওদরে কী খেতে দিস?
— কী আবার খাবে?
চাল, আলু, পেঁয়াজ আমার ঘরে সব সময়,
মুগির নাড়িভুঁড়ি ২০টাকা কিলো—
ঐ এনে তরকারি করে দিই।
— তোর মা?
— আলু ভাতে ভাত।
— চোখে দেখতে পায় এখন?
— না, আমাকে খেয়ে বুড়ি তবে যাবে।

মহামায়া কিছু ভাবে না।
ব্রহ্মাণ্ডকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে দিনরাত একটার পর একটা
ঠোঙা বানিয়ে যাচ্ছে।
আমরা নিছক পণ্যদ্রব্য,
আর সে যা জানে তাই।

(মহামায়া/রা)

নানা সময়ের নানান বৈচিত্র এসে ধরা দেয় দেবারতি মিত্র’র কবিতায়। আমরা সেই বৈচিত্রের ভেতর দিয়ে একটা সূর্যাস্ত থেকে আরেকটা সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেতে যেতে আকাশ তারায় তারায় টইটুম্বুর হয়ে ওঠে, যেন সমুদ্র উপচে পড়ছে দুঃখনদী, মৃত্যুনদী, হাসিনদী, স্বপ্ননদী। শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না। আরও সময় চলে যায়। নিজের মুখ ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে। আশপাশের ঘটনা ও পরিস্থিতি নিয়ে বেশি ব্যাপৃত হয়ে পড়ি। নিজের কথা প্রায় মনেই পড়ে না।

দেবারতি মিত্র তাঁর সেই ভূমিকায় আরও বলছিলেন, ’মাঝে মাঝে এও ভাবি, কবি যদি তাঁর ব্যক্তিগত সত্তাকে অনেকখানিই ভুলে থাকেন, তবে কি তিনি সার্থক কবিতা লিখতে পারেন?’ এ অবশ্য অন্য প্রশ্ন। এ নিয়ে কথা বলা যাবে অন্যদিন। তবে আমাদের কথা শুরু হয়েছিল কবিতাবইয়ের ভূমিকা বিষয়ে। কথা হচ্ছিল সারা শগুফ্তার ভূমিকাটি নিয়ে। সতর্ক হওয়ার কথা বলছিলাম। বলছিলাম কেবল সতর্ক হতেই চাইছি, যে প্রভাব পাঠককে প্ররোচিত করতে চাইবে যে প্রভাব পাঠকের ভাবনার পথকে সংকুচিত করে তুলবে, তার থেকে আমাদের সতর্ক হওয়া চাই।

আর এমদাদ রহমান বলছিলেন, "তোমার কথাও ঠিক আছে ঋতো। ওই ভূমিকাটি আমিও পড়েছি। পড়ে ভেতরে চিৎকার টের পেয়েছি। হ্যাঁ, এই ভূমিকা কবিতা পাঠকে প্রভাবিত করবে, কিছুটা হলেও; আবার দেখো, কবিতাকে কতো কী প্রভাবিত করে। কবিতার নাম প্রথমেই কবিতার পাঠে প্রভাব ফেলে। তারপর কবিতাবইয়ের নামও কবিতাকে, তার পাঠকে প্রভাবিত করে। আবার কবিতাবইয়ের পর্বগুলোও প্রভাবিত করে। কবির নাম এবং কবিখ্যাতির প্রভাবও কম না। এখন তুমি কোন কোন প্রভাবককে অস্বীকার করবে? এতকিছু মাথায় নিয়েই তো আমরা পাঠের দিকে যাই...”


— ঋতো আহমেদ, ৩রা সেপ্টেম্বর ২০২০।

ছবি: সারা শগুফ্তা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভালই লাগছিল কিন্তু শেষ করতে পারলাম কই।
লেখা আরো ছোট করবেন প্লিজ।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৪

ঋতো আহমেদ বলেছেন: কিছুটা যে পড়েছেন সেইতো অনেক বরকত ভাই। ধন্যবাদ আপনাকেও সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
পুরোটাই পড়লাম। আর ভালো লেখা বড় হলেও পড়তে আমার সমস্যা নাই।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৫

ঋতো আহমেদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নূর ভাই। শুভ কামনা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.