নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বাংলা

রুবেল সাইফ

যান্ত্রিক জীবনের ধরা বাধাঁ নিয়মের শিকল ছিড়াঁর যখনই সুযোগ ঘটে তখনই বেড়িয়ে যাই দেখতে আমার দেশ, বাংলাদেশ কত সুন্দর।

রুবেল সাইফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদজননী জাহানারা ইমাম-এর আহ্বায়ন (১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৬

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ঘোষণা
২৬ মার্চ গণআদালতে গোলাম আযমের বিচার হবে


একাত্তরের মক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংসতম গণহত্যাযজ্ঞের প্রধান দোসর, ঘাতক রাজাকার আলবদর, আলশামস বাহিনীর প্রধান, পাকিস্তানের নাগরিক গোলাম আজমকে জামাতে ইসলামী তাদের আমীর বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এক অঘোষিত যুদ্ধের সূচনা করেছে। যে ২৮ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল গোলাম আযম তাদেরই একজন এবং এই কারণে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। অবশ্য গোলাম আযম এর জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত ছিল না বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দ্বিগুণ উৎসাহে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালিয়েছে। এই চক্রান্তেরই অংশ হিসেবে পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযম তিন মাসের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসে এবং এদেশের নাগরিকত্ব দাবি করে। সরকার তার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও গোলাম আযম জামাতের অঘোষিত নেতা হিসেবে এদেশে থেকে যায় এবং দাবি করে যে সে জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক এবং বাংলাদেশে তার নামে বিভিন্ন কর খাজনা ইত্যাদি দেয়া হয়।
তার এই অযৌক্তিক দাবি সম্পর্কে এ কথা পরিষ্কারভাবে বলা দরকার, গোলাম আযমের জন্ম বাংলাদেশে হয়নি, হয়েছিল বৃটিশ ভারতে। জন্মসূত্রে সে বৃটেনের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে। পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে পাকিস্তানের জন্য আমৃত্যু লড়াই করার ওয়াদার কারণে তার পাকিস্তানী নাগরিকত্ব পোক্ত হয়েছে, কোন ভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নয়। গোলাম আযমের যুক্তি মেনে নিলে ৪৭-এ দেশভাগের পর যে দুই কোটি মানুষ এদেশ থেকে ভারতে চলে গিয়েছে তারাও ফিরে এসে এদেশের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে। খাজনা, ট্যাক্স ইত্যাদি প্রদানের সঙ্গেও নাগরিকত্বের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ যে কোন ব্যক্তি কোন দেশে ছয় মাসের বেশি থাকলে এবং সেই দেশের জনসেবা কার্যক্রমের সুযোগ গ্রহণ করলে তার জন্য খাজনা বা ট্যাক্স দিতে হয়। ট্যাক্স দিলে যদি নাগরিক হওয়া যেতো তাহলে প্রবাসী লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী অনায়াসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বা আমেরিকার নাগরিক হয়ে যেতো।
গোলাম আযমের বিচার হওয়া দরকার (১) একাত্তরের নৃশংস গণহত্যাযজ্ঞের প্ররোচনা দানের জন্য (২) ঘাতক বাহিনীসমূহকে হত্যা, নারী নির্যাতন ও লুণ্ঠনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য (৩) স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে দেশের যে শ্রেষ্ঠ সন্তানরা যুদ্ধ করেছিল তাদের ‘জারজ সন্তান’ ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের প্রচেষ্টার জন্য (৪) বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার জন্য (৫) বাংলাদেশে বসে স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য (৬) গত দশ বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে ছাত্র, যুব, মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করছিল তাদের অনেককে হত্যা করার জন্য (৭) বিদেশী নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে বেআইনীভাবে বসবাস করে এদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য (৮) সম্প্রতি বর্মী সামরিক জান্তার নির্যাতনের সুযোগ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনকে কেন্দ্র করে এক আন্তর্জাতিক চক্রান্তে লিপ্ত হওয়ার জন্য (৯) ফ্যাসিবাদ ও নাৎসীবাদে বিশ্বাসী মওদুদীর মতবাদকে ইসলামী মতবাদ হিসেবে প্রচারের জন্য এবং (১০) পবিত্র কোরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে মসজিদগুলোকে দলীয় রাজনীতি প্রচারের কেন্দ্র বানিয়ে ধর্মপ্রাণ জনসাধারণকে প্রতারিত করার জন্য।
জনতার রুদ্ররোষ থেকে আত্মরক্ষার জন্য গোলাম আযম জামাতে ইসলামীর আমীর হয়েই ঘোষণা দিয়ে একাত্তরের ঘাতক বাহিনীর রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের পুনগর্ঠিত করছে, জামাত শিবির কর্মীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছেযাতে দেশে একটি গৃহযুদ্ধ বাঁধানো যায়।
অতীতে বহুবার এই ঘাতকের বিচার ও বহিষ্কারের দাবি করা হলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করে নি। একজন বিদেশী নাগরিক ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশে কিভাবে অবস্থান করতে পারে এবং কিভাবে স্বাধীনতাবিরোধী এক ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিচালনা করতে পারে এটা দেশবাসীর কাছে বোধগম্য নয়। সরকারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই গণআদালতে গোলাম আযমের বিচারের ঘোষণা দিয়েছেন দেশের সহস্রাধিক বিশিষ্ট নাগরিক এবং প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, যুব, নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং আলেমদের সংগঠন সহ সর্বস্তরের জনসাধারণ আমাদের এই সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁদের সমর্থন জানিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করছেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ঘোষণা করেছে আগামী ২৬ মার্চ ’৯২ প্রকাশ্য গণআদালতে গোলাম আযমের বিচার হবে। এই গণআদালত দেশের প্রচলিত আদালতের প্রতি কোন চ্যালেঞ্জ নয়, স্বাধীনতার শত্রু এই ঘাতকের বিরুদ্ধে জনগণের রায় ঘোষণার জন্যই এই আদালত গঠন করা হচ্ছে। এই ধরনের গণআদালত পৃথিবীর বহু সভ্য দেশেই বিভিন্ন সময়ে গঠন করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য এবং তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর ধিক্কার প্রকাশের জন্য।
আমাদের এই আন্দোলন কোন ক্ষমতা দখলের বা সরকার বদলের জন্য নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলমত নির্বিশেষে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য। কারণ এই ফ্যাসিস্ট ঘাতকদের প্রতিহত করতে না পারলে আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুধু ব্যাহত হবে না, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও বিপন্ন হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল ও মতের ছাত্র, যুব, নারী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন সহ সর্বস্তরের পেশাজীবী সংগঠন এবং আলেম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, যাঁরা আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে ইতিমধ্যে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন এবং করতে যাচ্ছেন, তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করুন এবং ২৬ মার্চের কর্মসূচিকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
(সংগ্রহিত)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৫২

রুবেল সাইফ বলেছেন: দুখিত আমার মনে বুলে মন্তব্যটি ডিলেট হয়ে গেছে। এতে কেউ কিছু মনে করবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.