![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাবনা লিপিকার
অদ্ভুত এই পৃথিবীতে আমরা মানুষগুলোও খুবই অদ্ভুত। ছোট্ট একটা জীবনে আমরা কতটাই নাটকীয়তার মধ্যে জীবন-যাপন করি। আজকের কাছের মানুষটিকে কাল দুরে সরিয়ে দিই। সময়ের আবর্তে সাপের মত আমাদের জীবন চরিত্রের খোলস পরিবর্তন করি। মানুষ জম্মের পরে একে অপরের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন গড়ে উঠে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের বন্ধন বলা যেতে পারে, প্রথমতঃ রক্তের বন্ধন, ইহা আবার দুই প্রকার হতে পারে, পিতৃকুলের বন্ধন যেমন-মা,বাবা, ভাই,বোন, সন্তান, দাদা, দাদী, চাচা, চাচত ভাইবোন ফুফু ও ফুফাত ভাইবোন ইত্যাদি। মাতৃকুলের বন্ধন যেমন- নানা, নানী, মামা, খালা, খালাত ভাইবোন, মামা ও মামাত ভাই বোন ইত্যাদি। দ্বিতীয়তঃ সম্পর্কের বন্ধন যেমন- বন্ধু, চাচী, ফুফা, খালু, স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ী, শালা ও শালী প্রভৃতি।
এই তিনটি পর্যায়ের সম্পর্কের মধ্যে মানুষ জীবনযাপন করে। সবচেয়ে নিকট সম্পর্কিত পিতৃকুলের সম্পর্কেকে ধরা হয়। যদিও জীবনের চলার পথে সম্পর্কের গভীরতার ব্যারোমিটার উঠানামা করে। বন্ধু কখনো ভাই বোনের চেয়ে আপন হয়। খালা মামা কখনো ফুফু ও কাকার চেয়ে মমতাময় হয়। সন্তান একসময় মা-বাবার চেয়ে আপন হয়। অদ্ভুত এই পৃথিবীতে আজ যে সবচেয়ে আপন আগামীকাল সে পর হয়ে যায়। যাদের পরিচয়ে পরিচিত সেই রক্তের সম্পর্কের সাথে আত্মার সম্পর্ক কখনো গড়ে উঠে না। বরং যতই দিন যায় ততই দুরত্ব বাড়ে।
যে মা অতি আদরে বড় করেছেন, যে বাবা কঠোর প্ররিশ্রমে লালন করেছেন, অতি আপন বাবা-মায়ের বৃদ্ধ বয়সে আমরা হয়ে যাই পর। যখন নিজের সন্তান ভুমিষ্ট হয় তখন উপলব্ধি করতে পারি যে তারা কতটা ত্যাগ সহ্য করেছেন। আমরা কি তাদের আমাদের সন্তানের মত যত্ন করি? একই মায়ের গর্ভে যে ভাইবোনের জম্ম, এক সাথে বড় হই, কারো কষ্ট কেউ সইতে পারিনা। সেই পরম সম্পর্ক একসময় কাঁটায় রূপান্তরিত হয় সম্পত্তির কারনে। রক্তের বাঁধনের আপন ভাইবোন ভেবে কেউ কাউকে এতটুকু ছাড় দেয়না। আপন রক্তের ভাই বা বোনের ছেলেমেয়ে নিজের সন্তানতুল্য, কিন্তু আপন সন্তানের মত ভাবিনা। আমরা আমাদের সন্তানের সমস্যা সমাধানের জন্য যতটা ব্যতিব্যস্ত হই, ভাতিজা ভাতিজি বা ভাগিনা ভাগ্নির জন্য তেমনটা হইনা। মিছেমিছি পয়সা খরচ মনে করি।
যে স্ত্রীকে বাবা-মা অতি আদরে পূত্রবধু করে ঘরে তোলে। সে প্রিয় স্বামীর বাবা-মায়ের সাথে দুব্যবহার করে। সন্তানের সেবাদানকারী স্ত্রীকেও কখনো মা-বোনের বঞ্চনার স্বীকার হতে হয়। আপন সন্তানের প্রতি অবিশ্বাস থেকে দুরত্ব বৃদ্ধি পায়। ভালবাসার আধার প্রিয় মিত্র স্ত্রীও বন্ধন ছিহ্ন হলে, হয়ে যায় চরম শত্রু। কাগজের চুক্তির ব্যত্যয় ঘটলে স্ত্রীকুলের সকল আত্মীয়ের বন্ধন নিমিষেই যবনিকা ঘটে। বন্ধনের অপর নাম বন্ধু, সেই বন্ধুকে কখনো আমরা ত্যাগ করি স্বার্থের প্রয়োজনে।
কোনকোন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে আমরা সম্পর্কের মাপকাঠি নির্ধারণ করি। যা কখনো ঠিক নয়। আসলে উপরে বর্ণিত কোন কিছুই ঠিক নয়। ছোট্ট একটি জীবনে থাকুক সকল বন্ধন অটুট। কেউ কারো অপ্রিয় না হয়ে মধুর সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ করি নিজেকে। প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুও পারেনা আমাদের বন্ধন ছিহ্ন করতে, কারণ কবরের নামফলকেও বাবার নাম উল্লেখ থাকে।
©somewhere in net ltd.