![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সহজ সরল ব্যাক্তিগত
ভাবে এবং আপনার দ্বারা অন্যের কোন প্রকার ক্ষতি না হলেই হইল এমন চিন্তাভাবনা নিয়ে যারা মানুষকে বিলিভ করে তারাই খারাপ
লোকজন দ্বারা ক্ষতির সন্মুখিন হতে পারে তাই তারা আবার উঠে দাড়াতেও পারে । ভুল থেকে শিক্ষা নিন আর নিজেকে সংশোধন
করার সুযোগ থাকে । খারাপ এবং নোংরা মানসিকতার মানুষের খপ্পরে বা ফাঁদে পড়লে বোঝা যায় সেখান থেকেও আপনি উঠে
আসতে পারবেন যদি আপনি লয়াল কিংবা সৎ থাকেন। খারাপ লোকজন আপনাকে হিংসা করবে জ্বলবে আবার ছাইও হয়ে যাবে
নিশ্চিত থাকুন ।আল্লাহ ভরসা ।
আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। উনি সব দেখেন ,শোনেন এবং জানেন । এই বান্দার জন্য কোনটি মঙ্গলজনক।
একজন সহজ সরল পথের মানুষ যে দার্শনিক হতে পারেন তার প্রমাণ ডায়োজিনিস | মানুষটার ধন, সম্পদ, ক্ষমতা বলতে আমাদের
সমাজে যা বুঝায় তার কিছুই ছিলোনা | একটা লাঠি, হারিকেন, শরীরে জোড়াতালি লাগানো সামান্য কাপড় আর একটা খাবারের পাত্র
ছিল তার সম্পদ | মানুষটাকে অনেক সময় কুকুর বলে কেউ কেউ বিদ্রুপ করতো | হয়তো সে জানতো মানুষ তাকে গালি দিচ্ছে,
অপমান করছে, তুচ্ছ ভাবছে, তাতে কি, এই কুকুর হওয়াতেই সে গর্ববোধ করতো | হয়তো তিনি বুঝেছিলেন, মানুষ মানুষের বিশ্বাস
ভঙ্গ করতে পারে কিন্তু কুকুর কখনো বিশ্বাস ভঙ্গ করেনা |
কখনো কখনো কুকুর বিশ্বাসের পরীক্ষায় মানুষের চেয়ে অনেক বড় হয় | সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি"
কবিতার দু' তিনটে লাইনের সাথে এই বিষয়টার খুব মিল আছে, যেখানে তিনি বলেছেন, "আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে,
হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে |"
ডায়োজিনিস জানতেন, কুকুর হলে মানুষকে চেনা যায়, মানুষ নামের মানুষ বলে পৃথিবীতে আর কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা তা পরখ
করে দেখা যায় | দিনের বেলায় হারিকেন জ্বালিয়ে তিনি রাস্তায় বের হতেন | চারপাশের মানুষ এই ধরণের পাগলামো দেখে মুখে হাসি
চেপে রেখে ভাবতেন লোকটার মতো এতো বোকা বুঝি আর কেউ নেই | একটু ঠাট্টা-বিদ্রুপের স্বরে তারা জিজ্ঞেস করতো, কি ব্যাপার
মহাশয়, এই দিন দুপুরে হারিকেন জ্বালিয়ে কোথায় যাচ্ছেন | লোকটাও খুব সহজ সরল ভঙ্গিতে বলতো, "আমি আসলে মানুষ খুঁজছি,
গ্রিসের কোথায় গেলে মানুষ পাওয়া যাবে, আমাকে কি একটু বলতে পারবে |"
এমন একটা ঘটনাকে আজব বলে মনে হতে পারে, সেটা মানুষের নিজের ভাবনা | সেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে যখন নতুন ভাবনা
জন্ম নেয় তখন দর্শনের জন্ম হয় | যে মানুষটা এমন অদ্ভুত ধারণাকে আঁকড়ে ধরে মানুষের দুনিয়ায় মানুষ বলেই গণ্য হননা, সে
মানুষটাই দার্শনিক | সূর্যের আলোয় মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যতক্ষণ হারিকেনটাতে তেল থাকে ততক্ষন হারিকেনের আলোয় মানুষকে
খোঁজা যায় |
সূর্যের আলো যতক্ষণ থাকে ততক্ষন মানুষের কাছে আলোর কোনো মূল্য থাকেনা | তখন হারিকেন জ্বালিয়ে মানুষকে বুঝাতে হয়,
মানুষের কাছে সূর্যের আলো কতটা অসহায় | পৃথিবীতে সবকিছু খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু একজন সৎ মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন |
কেউ একজন তাকে প্রশ্ন করেছিল, এতো জ্ঞানের কথা বলে বেড়ান আপনি, কিন্তু এতে তো কোনো কাজ হচ্ছেনা মানুষ তো ভালো
হচ্ছেনা | এমন কি হতে পারে খারাপ মানুষদের প্রভাবে আপনি নিজেই একদিন খারাপ হয়ে যাবেন ? ডায়োজিনিস খুব শান্ত কণ্ঠে
বললেন, সূর্যের আলো নর্দমার মধ্যেও পরে, এতে কি সূর্য দূষিত হয়ে যায় |
ডায়োজিনিসকে সবাই বোকা আর পাগল ভাবলেও তিনি জানতেন তিনি সত্যের পথে আছেন | সত্যের পথে থাকলে মাথার উপর ছাদ
থাকেনা, উৎসব, আনন্দ থাকেনা, তবে জীবনবোধ থাকে, অনুভূতি থাকে, আবেগ থাকে, ভালোবাসা থাকে, নিজেকে ভিক্ষুক বানিয়ে
সারা পৃথিবীর মানুষের ভিতরে যে মানবতাবোধ নেই তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর দর্শন থাকে |
সারা পৃথিবী জয় করে, ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করেও আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ডায়োজিনিস হতে চাইতেন | আলেকজান্ডার বলতেন,
"আমি যদি আলেকজান্ডার না হতাম, তবে ডায়োজিনিস হতে চাইতাম !" এই ছোট ও তাৎপর্যপূর্ণ কথাটি বুঝিয়ে দেয় সরলতার মধ্যে
যে অসীম শক্তি নিহিত আছে তা ক্ষমতার মধ্যে নেই |
তারপরও মানুষ ক্ষমতাবান হতে চায়, অর্থবান হতে চায়, লোভের বালুচরে হারিয়ে যেতে চায় | সবকিছুই অন্ধ মোহের মতো, যেগুলো
মানুষের ভিতরের মানুষটাকেই কেড়ে নেয় |
ডায়োজিনিস মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, "আমি মরে গেলে তোমরা আমার শরীরটাকে শহর থেকে দূরে ফেলে এসো, জন্তু জানোয়াররা
যেন তা খেতে পায়।" নিজের শরীরের চেয়ে যে মানুষটা অন্যের খাদ্য হতে চেয়েছিলো, সেই মানুষটাই জানতো জ্ঞানের তপস্যা করতে
গিয়ে দু'মুঠো খাবারের জন্য তাকে কতটা লড়াই করতে হয়েছিল |
মানুষটার শরীরের মৃত্যু হয়েছে, সময়টাও কোথাও না কোথাও হারিয়ে গেছে অথচ মানুষটার জ্ঞান আজও দর্শন হয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা
উঁচু করে বেঁচে আছে | ক্ষমতার মৃত্যু আছে, জ্ঞানের মৃত্যু নেই |
©somewhere in net ltd.