নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানি না আমি কেমন লিখি, তবু কাচা হাতে একটু চেষ্টা করি লিখার। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে, সংশোধন করার পরামর্শ দিবেন বলেই আশা করি ।

রুজেল

অজানা অদেখাকে জানতে জানাতে

রুজেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর বিদায় ভাষণ

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১৮



" না জানা আনন্দে গো আজ আরাস্তা আরব ভূমি,
অ-চেনা বিহগ গাহে ফোটে কুসুম বে-মরসুমি!
আরবের তীর্থ লাগি ভিড় করে সব বেহেশত বুঝি,
এসেছে ধরায় ধূলায়, বিলিয়ে দিতে সুখের পুঁজি।"
যার কারনে আজ আরবভূমি গর্বিত তিনি হচ্ছেন সব মুসলমানের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। তিনি ধরায় এসেছেন তখন যখন মানুষ আল্লাহকে ভুলে পাপের পথে ডুবে চরম অবস্থায় উপনীত হয়েছে। পৃথিবীতে যখন ধর্মের গ্লানি দেখা যায় তখন পথভ্রষ্ট মানুষকে সৎপথে আনার জন্য আল্লাহ এই পৃথিবীতে একজন করে মহাপুরুষ প্রেরণ করেন। পৃথিবীতে যেসব মহাপুরুষ সত্যের বাণী প্রচার করে বিপথগামী মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) ছিলেন তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি বিপথগামী মানুষকে দিয়েছেন ইসলামের পথে সত্যের সন্ধান।

" রবিউল আউয়াল চাঁদে শুল্কা নবমির তিথিতে
ধেয়ানের অতিথ এল সেই প্রভাতে এই ক্ষিতিতে!
মসীহের পঞ্চশত সপ্ততি এক বর্ষা পরে
সোমবার জ্যেষ্ঠ প্রথম ধরায় মানব ত্রানের তরে,
আসিলেন বন্ধু খোদার মহান উদার শ্রেষ্ঠ নবী।"
শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) আরব দেশের মক্কা নগরে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ২৯ শে আগস্ট ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্ম লাভ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম বিবি আমেনা। কিন্তু তিনি লালিত পালিত হয়েছেন ধাত্রি হালিমার গৃহেও। ছোটবেলা থেকে তিনি এতটাই সত্যবাদী ও পরোপকারী ছিলেন যে সবাই তাঁকে আল-আমিন (বিশ্বাসী) বলে ডাকত।

হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর পিতার অবস্থা ভাল না থাকায় তাঁকে মেষ চরায়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হত। ২৫ বছর বয়সে খাদিজা নামে মক্কার এক ধনবতী মহিলাকে তিনি বিয়ে করেন। কারণ বিবি খাদিজা তাঁর অতুলনীয় সততা ও বিশ্বস্ততায় মুগ্ধ ছিলেন, এছাড়া তিনি ছিলেন বিধবা। বিয়ের পর ৪০ বছর বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় জিবরাইল (আঃ) এর মারফত নবুওয়্যাত প্রাপ্ত হন। নবুওয়্যাত লাভের পর আল্লাহ তায়ালার হুকুমে চির সুন্দর, শাশ্বত ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থায় ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। ফলশ্রুতিতে মহানবী (সঃ) রাসুলুল্লাহ উপাধি লাভ করেন।

ইসলামের দ্রুত প্রসার হওয়ায় এবং বিভিন্ন গোত্র হতে মদিনায় দলে দলে লোকে আসতে থাকায় মহানবী (সঃ) বুঝতে পারলেন যে, তাঁর কর্তব্য শেষ হয়েছে। তাই তিনি হিজরি দশম সনে হজ্জ করার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। এটি ছিল তাঁর জীবনের শেষ বা বিদায় হজ্জ। হজ্জ পালনের পর আরাফাত পাহাড়ের উচ্চ স্থানে জাবালে রহমতে দণ্ডায়মান হয়ে নবীজি (সঃ) উপস্থিত লক্ষাধিক মুসলমানকে উদ্দেশ্য করে মর্মস্পর্শী ভাষণ দান করেন যা বিদায় হজ্জের ভাষণ নামে পরিচিত। বিশ্ব ইতিহাসে এ ভাষণ মানবাধিকারের সনদ হিসেবে বিখ্যাত। কারণ এ ভাষণে মহানবী (সঃ) জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে মানুষের অধিকারের শাশ্বত বাণী উল্লেখ করেছেন। নিছে বিদায় হজ্জের প্রদত্ত ভাষণের সংক্ষিপ্ত সার উল্লেখ করা হলঃ

১) "হে মানব সকল, আমার কথা মনোযোগের সাথে শুনে রেখ, কারণ আমি আগামী বছর তোমাদের সাথে সমবেত হতে পারব কিনা জানি না। আজকের এদিন, এ স্থান, এ মাস, যেমন পবিত্র তেমনই তমাদের জীবন ও সম্পদ পরস্পরের নিকট পবিত্র"।
২) " মনে রাখবে, অবশ্যই একদিন সকলকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে, সেদিন সকলকে নিজ নিজ কাজের হিসাব দিতে হবে"।
৩) "দাস-দাসিদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, তোমরা যা আহার করবে, পরিধান করবে, তাদেরও তাই আহার করাবে ও পরিধান করাবে"।
৪) " নারীর উপর পুরুষের যে রুপ অধিকার আছে, পুরুষের উপর নারীরও সে রুপ অধিকার আছে"।
৫) "সকল প্রকার সুদ, ঘুষ দেওয়া নেওয়া থেকে বিরত থেকো"।
৬) " আমিই শেষ নবী, আমার পর আর কোন নবী আসবে না"।
৭) "একের অপরাধে অপরকে শাস্তি দেয়া যাবে না"।
৮) " তোমার যারা উপস্থিত আছো, যারা অনুপস্থিত তাঁদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দেবে"।

মহানবী (সঃ) জোর দিয়ে বলেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না, নিজের ধর্ম নিজে পালন করবে। যারা অন্য ধর্ম পালন করে, তাঁদের ওপর তোমাদের ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো না। মহানবী (সঃ) চারটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বলেন ---
# আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কারো এবাদত করো না ।
# অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করো না।
# পরের সম্পদ আত্মসাৎ করো না।
# কারো ওপর অত্যাচার করো না।

তিনি আর বলেন, তোমাদের কাছে আমি দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি
১) আল্লাহর বাণী ( আল কুরআন)
২) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ রাসুলের জীবনের আদর্শ
মহানবী (সঃ) তাঁর ভাষণ শেষ করলেন এবং বিদায় বলে প্রস্থান করলেন।

হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর জীবনে কোন প্রকার লোভ, মোহ বা ক্ষমতার লালসা তাঁকে সংকল্প থেকে কখনও বিচ্যুত করতে পারেনি। তিনি সত্যিই ছিলেন একজন মহৎ মানুষ। আর যে কাজ সমাধার জন্য এই মহাপুরুষ পৃথিবীতে এসেছিলেন তা সুচারুভাবে সমাধা করে তিনি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে চিরবিদায় নেয়। পরিশেষে বলা যায় যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর পবিত্র বাণী, তাঁর উজ্জ্বল আদর্শ সমগ্র বিশ্বমানবের জন্য আদর্শস্বরূপ ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.