নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি জন্মভুমি বাংলাদেশ ।অসহ্য মনে হয় যে কোন অন্যায়-কে।অসততার সাথে আপোষ নয় কখনই।
১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ আক্রমণ করার সিদান্ত নেয়া হল। আক্রমণের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হল। খুব সতর্ক অবস্থায় তাদের প্রশিক্ষণের কাজও সমাপ্ত হল। বিনয়-বাদল-দিনেশ বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে বিদায় নিলেন। ৮ ডিসেম্বর এ্যাকশনের জন্য তিন বিপ্লবী প্রস্তুত। ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ এর একটি কক্ষে কারা বিভাগের সর্বময় কর্তা ইনসপেক্টর জেনারেল কর্নেল সিম্পসন তার কাজকর্ম পরিচালনা করতেন। তার ব্যক্তিগত সহকারী জ্ঞান গুহ পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনা করছেন। বেলা ঠিক ১২ টার সময়। সামরিক পোশাক পরে তিনজন বাঙালী যুবক এসে কর্নেল সিম্পসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তারা সিম্পসনের চাপরাশীকে (সহকারী) ঠেলে কামরার ভিতরে প্রবেশ করেন। হঠাৎ পদধ্বনী শুনে কর্নেল তাদের দিকে তাকান। বিস্ময়-বিমূঢ় চিত্তে দেখতে পান সম্মুখে মিলিটারী পোশাক পরে তিনটি বাঙালী যুবক রিভলবার হাতে দণ্ডায়মান। মুহূর্তের মধ্যে বিনয়ের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় “প্রে টু গড কর্নেল। ইওর লাষ্ট আওয়ার ইজ কামিং।” কথাগুলি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তিনটি রিভলবার হতে ছয়টি গুলি সিম্পসনের দেহে ভেদ করে। সিম্পসন লুটিয়ে পড়ে মেঝের উপর। এরপরই গুলির আঘাতে আহত হন জুডিসিয়েল সেক্রেটারী মি. নেলসন। এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করতে করতে আততায়ীরা পরবর্তী লক্ষ্য হোম সেক্রেটারী আলবিয়ান মারের কক্ষের দিকে অগ্রসর হন। ততক্ষণে এই আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ছুটে আসেন পুলিশ-ইনস্পেক্টর জেনারেল মি. ক্র্যাগ ও সহকারী ইনসপেক্টর জেনারেল মি. জোনস। তারা কয়েক রাউণ্ড গুলিও ছুড়েন। কিন্তু বিনয়-বাদল-দীনেশের বেপরোয়া গুলির মুখে তারা দাড়াতে পারলেন না। প্রাণ নিয়ে পালালেন। সমস্ত ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ জুড়ে তখন এক বিভীষিকাময় রাজত্ব। চারিদিকে শুধু ছুটাছুটি। কে কোন্ দিকে পালাবে খুঁজে পায় না। শুধু কলরব-কোলাহল- চিৎকার। শুধু এক রব বাঁচিতে চাও তো পালাও। ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ আক্রমণের সংবাদ পেয়ে পুলিশ কমিশনার টেগার্ট আসেন। ডেপুটি কমিশনার গার্ডন আসনে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে। পাদ্রী রেভারেণ্ড জনসন ‘ড্রেন-পাইপে’র মধ্যে পালিয়ে থাকলেন। জুডিসিয়েল সেক্রেটারী মি. নেলসন, মি. টয়নয় প্রমুখ অনেক ইংরেজ রাজপুরুষ আহত হলেন। আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ডেকে আনা হইল গুর্খা বাহিনীকেও।
অন্যদিকে তিনটি বাঙালী তরুণ, হাতে শুধু তিনটি রিভলবার। আর অপরদিকে রাইফেলধারী সুশিক্ষিত গুর্খাবাহিনী। আরম্ভ হল ‘অলিন্দ যুদ্ধ’। ইংরেজ মুখপত্র ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকার ভাষায় ‘বারান্দা বেটল’। দীনেশের পিঠে একটি গুলি বিদ্ধ হল। তিনি তাতে ভ্রুক্ষেপও করলেন না। অসংকোচে গুলিবর্ষণ করতে লাগলেন শত্রুকে লক্ষ্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিনয়-বাদল-দিনেশের হাতে গুলি ছিল, ততক্ষণ কেহই তাদের আক্রমণ করে প্রতিহত করতে পারেননি। একপর্যায়ে তাদের গুলি নিঃশেষ হল। গুর্খা ফৌজ অনবরত গুলিবর্ষণ করে চলল। তখন তিনজন বিপ্লবী একটি শূন্য কক্ষে প্রবেশ করে সঙ্গে আনা ‘সায়নাইড’-বিষের পুরিয়াগুলি মুখে দিলেন। বিষ-ক্রিয়ায় অতি-দ্রুত জীবনপ্রদীপ নিবে না যাওয়ার আশংকায় এবং মৃত্যুকে নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেকেই নিজ নিজ ললাট লক্ষ্য করে রিভলবারে রাখা শেষ গুলিটি ছুঁড়ে দিলেন। বাদল তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেন। বিনয় ও দীনেশ সাংঘাতিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মেঝের উপর পড়ে রইলেন।
ভীষণভাবে আহত বিনয় ও দীনেশকে একটু সুস্থ করে ইংরেজ বাহিনী তাদের উপর চালাল প্রচন্ড অত্যাচার। এরপর উভয়কেই পুলিশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ কমিশনার টেগার্ট এতদিন পরে বিনয়ের উপর আক্রোশ মিটানোর সুযোগ পাইলেন। অচেতন বিনয়ের হাতের আঙ্গুলের উপর বুট দিয়ে সবগুলি অঙ্গুলি ভেঙ্গে ফেলে বীরত্ব প্রদর্শন করলেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:০০
বাংলাদেশী দালাল বলেছেন:
দীনেশের পিঠে একটি গুলি বিদ্ধ হল। তিনি তাতে ভ্রুক্ষেপও করলেন না। অসংকোচে গুলিবর্ষণ করতে লাগলেন শত্রুকে লক্ষ্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিনয়-বাদল-দিনেশের হাতে গুলি ছিল, ততক্ষণ কেহই তাদের আক্রমণ করে প্রতিহত করতে পারেননি।
লেখাটা ভালো লাগছে।