নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি জন্মভুমি বাংলাদেশ ।অসহ্য মনে হয় যে কোন অন্যায়-কে।অসততার সাথে আপোষ নয় কখনই।
যুদ্ধ মানবসভ্যতার এক অমোঘ নিয়তি হিসেবে টিকে আছে যুগ যুগ ধরে। মানুষ যেদিন থেকে আহার অনুসন্ধানের বাইরে ব্যক্তিস্বার্থে হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করেছিল সেদিন থেকেই মূলত যুদ্ধের সূত্রপাত। এরপর থেকে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে জাতিতে জাতিতে লড়াই অব্যাহত আছে। ভূমির লড়াইয়ের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো এখন লড়াই করছে জ্বালানি তেলের জন্য, অথবা বলা ভালো তেলের রাজনীতিই এখন বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করছে। কিন্তু এই তেলের লড়াইও শেষের দিকে প্রায়। তাই এবার যুদ্ধের নয়া ইস্যু হলো ‘পানি’। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমশ মিঠাপানির উৎসগুলো লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এই লবণাক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন কৃষিব্যবস্থা হুমকির মুখে পরছে, তেমনি মানবজীবনও টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তাই পানি নিয়ে ইতোমধ্যেই অনেক স্থানে শুরু হয়ে গেছে আধিপত্যবাদী লড়াই।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লি। এই রাজধানী থেকে অল্প দূরেই অবস্থিত সঙ্গম বিহার নামের একটি অঞ্চল, যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। সঙ্গম বিহারে গেলে আপনি প্রথমেই যে দৃশ্যের মুখোমুখি হবেন তা হলো, পানির জন্য দীর্ঘ লাইন। সরু গলিগুলোর ভেতরে মানুষগুলো তাদের বিভিন্ন পাত্র নিয়ে দাড়িয়ে আছে পানির জন্য। প্রথম দেখায় মনে হবে যেন, তারা সরকারি পানির গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু কিছুটা সময় দিলেই খেয়াল করবেন হঠাৎ করেই কেউ একজন চিৎকার করে উঠলো, ‘ওই আসছে রে, আসছে’।
পানিবাহী ট্রাক থেকে একজন তরুণ পাইপে করে পানি সরবরাহ করে দেয়। প্রতিটি পরিবার একটি পানির ড্রাম ভরে নিতে পারে এই ট্রাক থেকে। কিন্তু এই এক ট্রাক পানি দিয়ে পাঁচ লাখ জনগোষ্ঠির কিছুই হবার কথা নয়। তাই মাত্র পনেরো মিনিটে ট্রাক খালি হয়ে গেলেও, অজস্র খালি পাত্র নিয়ে তখনও রাস্তায় শোরগোল করতে থাকে পানি না পাওয়া মানুষের দল। আবারও এই পানি পাওয়ার জন্য সঙ্গম বিহারবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে অনেকটা দিন। কারণ টানা দশদিন অন্তর অন্তর এই পানির ট্রাক আসে সঙ্গম বিহারে।
TRUCকিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অল্প পানি দিয়ে কি করে বিহারের অধিবাসীরা জীবনের আনুষঙ্গিক কাজগুলো করে। এটাতো পরিষ্কার যে এক ড্রাম পানি দিয়ে একদিনের বেশি দুইদিন চলা সম্ভব নয়। তাহলে কি করে চলে ওই মানুষগুলোর। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে কথা হয় বাসিন্দা রূপা ঝা’র সঙ্গে। তিনি জানান, ‘এই অল্প পানি কিভাবে এতোদিন ধরে চলবে। আমাদেরকে ব্যক্তিগত পানি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পানি কিনতে হয়। পানি সহজলভ্য কিন্তু তার জন্য চাই পর্যাপ্ত মূল্য।’
দিল্লির বিশ শতাংশ মানুষ পানির ট্যাংকারগুলো থেকে পানি পায় না। কিন্তু দিল্লিতে পানির চাহিদা এবং যোগানের মধ্যকার পার্থক্য হলো নিদেনপক্ষে ৭৫০ মিলিয়ন লিটার প্রতিদিন। আর এই কারণেই দিল্লিবাসীকে কালোবাজারের উপর ভরসা করতে হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে পানি বিক্রেতা কিংবা ‘পানি মাফিয়া’দের কাছ থেকেই বাধ্য হয়ে পানি কিনতে হয় সাধারণ মানুষদের।
এবিষয়ে সঙ্গম বিহারে অবস্থানরত সামাজিক উন্নয়নকর্মী অনুজ পোরওয়াল বলেন, ‘এখানে এটা সবসময়ই ঘটে। কিছু নেটওয়ার্ক আছে যারা পানি চুরি করেন এবং ওই পানিই আবার যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়। তাদের পেছনে পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও আছে। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না।’ যদিও এই অভিযোগগুলো স্থানীয় পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রশাসন আমলেই নেয় না।
দিল্লিতে পানি মাফিয়ারা প্রতি দুইশ লিটার পানি বিক্রি করে আনুমানিক ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। নগর কর্তৃপক্ষ যে পানি তার নাগরিকদের জন্য ফ্রি দেয়, সেই পানিই আবার মাফিয়ারা বিক্রি করে সাধারণ মানুষের মাঝে। এক একটি পরিবারকে তাদের মাসের পানি চাহিদা মেটাতে বাড়তি সাড়ে ছয় হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়, যা অনেক পরিবারের পক্ষেই দেয়া সম্ভব হয় না।
©somewhere in net ltd.